হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মাক্কী জীবন কাহিনী
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মাক্কী জীবন কাহিনী ইতিহাস কালজয়ী একটি ঘটনা৷ তার জীবনী ইতিহাসের পাতায় অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে আজকের এই আর্টিকেলটি আমাদের প্রত্যেকের পড়া উচিত নিম্নে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো-
হযরত মুহাম্মাদ সাঃ এর মাক্কী জীবন কাহিনী আমাদের প্রত্যেকের জানা আবশ্যক৷ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মানুষের জন্য কল্যাণ এবং হেদায়েতের পথ দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন৷ আলোচনা করা হলো-
জন্ম ও বংশ পরিচয়
হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা নগরীর, বিখ্যাত কুরাইশ বংশে বনি হাসিম গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন ৷ তিনি ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবারে জন্মগ্রহণ করেন ৷ তার পিতার নাম আব্দুল্লাহ এবং মাতার নাম আমিনা ৷ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের পূর্বেই তার পিতা ইন্তিকাল করেন ৷
আরো পড়ুনঃ
জন্ম নেওয়ার পূর্বেই আমিনা, দাদা আব্দুল মুত্তালিব কে খবর পাঠান ৷ আব্দুল মুত্তালিব তখন খুশি হয়ে শিশু মুহাম্মাদ (সাঃ) কে কোলে তুলে নেন ৷ এদিকে আকাশ থেকে গায়েবী আওয়াজ এসে আব্দুল মুত্তালিব কে বলে, আমেনার গর্ভে যে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে তার নাম রেখে দিবে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)৷
দুগ্ধ পান
সর্বপ্রথম তার মা আমিনা তাকে দুগ্ধ পান করান ৷ এরপর আবু লাহাবের বাদী শুয়াইবা দুগ্ধ পান করান৷ হাওয়াযীন গোত্রের বাণী সা'দ এর মহিলা হালিমাতুস সা'দীর ঘরে দুগ্ধ পান করার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ দুগ্ধ পানকালে হালিমা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বরকতময় কিছু ঘটনা ঘটে৷
হালিমার বর্ণনার সূত্রে বিখ্যাত ইতিহাসবীদ ইবনু ইসাহাক বলেন, হালিমা এবং তার স্বামী তার দুগ্ধ পোষ্য শিশু সন্তানসহ বনু সা'দ গোত্রের একদল মহিলার সঙ্গে অর্থের বিনিময় দুধ পান করাবে এমন শিশুর খোঁজে মক্কায় যান ৷
হালিমা বলেন, আমি একটি সাদা মাদি গাধার পিঠে সাওয়ার হয়ে যাচ্ছিলাম ৷গাধাটার ওলানে দুধ ছিল না৷ আমার বাচ্চাকে দুধ পান করানোর জন্যও আমার বুকে দুধ ছিল না ৷ আমাদের সাথে থাকা গাধাটিও ছিল অত্যন্ত দুর্বল ৷ এইজন্য আমরা কাফেলার পিছনে পিছনে চলতে থাকি ৷
তারপর আমাদের কাফেলায় এমন কোন মহিলা ছিল না যে, শিশু মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুগ্ধ পান করার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়নি ৷ সবাই নিতে অস্বীকার করলো৷
কারণ শিশু মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন এতিম ৷ আর এতিমের পক্ষে থেকে বেশি টাকা দেওয়া সম্ভব ছিল না ৷ এই ভেবে শিশু মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিতে অস্বীকার করল৷
আমাদের কাফেলার সবাই দুগ্ধ পান করানোর জন্য শিশু নিয়ে রওনা হয়ে যায় ৷ কেবলমাত্র আমি এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবিক্রিত অবস্থায় থেকে যাই ৷ পরবর্তী আমি আমার স্বামীকে বললাম ৷ আমাদেরকে শূন্য হাতেই ফিরতে হবে ? তার চেয়ে এতিম সন্তানকে নিয়েই বাড়ি ফিরি।
মজার বিষয় হল, যখন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে বাড়ি ফিরি ৷ তখন আমাদের গাধাগুলো কমজোরি ছিল ৷ আমাদের গাধার ওলানেও দুধ ছিল না৷
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে ফেরার সময় আমাদের গাধাটি শক্তিশালী হয়ে যায় ৷ এবং গাধার ওলানে দুধ চলে আসে ৷ আমি এবং আমার স্বামী এ বিষয়টা দেখে আশ্চর্য হয়ে যাই৷ এইভাবে আরও বরকত প্রকাশিত হয়৷
হালিমাতুস সা'দি আরো বলেন, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বাড়িতে আসার পর, আমাদের ছাগলের পালগুলোতে তেমন বরকত ছিল না ৷ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসার পর থেকে আমাদের ছাগলের পালগুলোতে বরকত বেড়ে যায় ৷
দাদা ও চাচার তত্ত্বাবধানে লালন-পালন
মাতা পিতার ইন্তিকালের পর শিশু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দাদা আব্দুল মুত্তালিব লালন-পালনের দায়িত্ব নেন ৷ তিনি তাকে খুব স্নেহ করতেন ৷
এমনকি নিজের ছেলেদের উপরও তাকে প্রাধান্য দিতেন ৷ তাকে নিজের আসনে বসাতেন ৷ দাদা আব্দুল মুত্তালিবের ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত শিশু মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার তত্ত্বাবধানে ছিলেন৷
দাদা আব্দুল মুত্তালিবের ইন্তিকালের পর তার চাচা আবু তালেব তার লালন পালনের দায়িত্ব নেন ৷ তখন শিশু মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বয়স ছিল মাত্র আট বছর ৷ তিনি চাচা আবু তালিব ছাগল লালন পালন ও শাম দেশে ব্যবসার কাজে সহযোগিতা করতেন ৷
হযরত খাদিজা (রাঃ) সাথে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বিবাহ
হযরত খাদিজাতুল কুবরা রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন একজন বিধবা সতীসাধ্বী নারী ৷ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যবসায়ের গুনাগুন এবং চারিত্রিক গুণ দেখে তাকে বিবাহের প্রস্তাব পাঠান৷ তার বান্ধবী নাফিসা বিনতে মুনাব্বিহ এর নিকট ব্যক্ত করলেন৷
এবং বিষয়টি নিয়ে মোহাম্মদ সাঃ এর নিকট আলোচনা করার জন্য বললেন ৷ মোহাম্মদ সাঃ এই প্রস্তাব গ্রহণ করলেন ৷ এবং চাচা আবু তালেবকে জানালেন ৷ চাচা আবু তালেব এ বিয়েতে সম্মতি দিলেন ৷ এবং তাদের ধুমধাম করে বিবাহের আয়োজন করলেন ৷
হযরত জিবরাঈল (আঃ) এর হেরা পর্বতে আগমন
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হেরা গুহায় ধ্যানরত অবস্থায় আল্লাহর ফেরেশতা জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আসলেন ৷ জিব্রাইল আলাইহিস সাল্লাম তার নিকট এসে বললেন "তুমি পড়ো" তিনি বললেন আমি তো পড়তে পারি না ৷
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন "লা আদরি" আমি কিছুই জানিনা ৷ এইভাবে তিনবার পড়তে বললেন তিনি একই কথা বললেন৷ শেষে জিব্রাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন ৷ এবং পড়তে বললেন ৷ তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়তে আরম্ভ করলেন৷
তখন সূরা আলাক এর ৫ আয়াত জিবরাঈল আমিন পড়লেন ৷ এবং তার সাথে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেন ৷ পাঠ করুন পালনকর্তা নামে যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন ৷ যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট বাধা রক্ত থেকে ৷ এভাবে শেষ পর্যন্ত তিনি পাঠ করলেন ৷
ইসলাম প্রচারে নবী করীম সা এর ভূমিকা
হেরা পর্বত থেকে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাড়িতে ফিরে এসে, তার স্ত্রী হযরত খাদিজাতুল কুবরা রাদিয়াল্লাহু আনহা কে সমস্ত বিষয় খুলে বললেন ৷ খাদিজাতুল কুবরা রাদিয়াল্লাহু আনহা সমস্ত বিষয় বিশ্বাস করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ৷ তারপর থেকেই মক্কার কাফেরদের ভয়ে মাত্র তিন বছর গোপনে দাওয়াতের কাজ চলতে থাকে ৷
তারপর পুরুষদের মধ্য থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন আবু বক্কর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ৷ উনারা ইসলাম ধর্ম প্রচারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ৷ যখন ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ৷ তারপর থেকে ইসলামের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয় ৷ তখন আর গোপনে নয়, প্রকাশ্যে ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু হয়ে যায় ৷
সাফা পর্বতে আগমন
একদিন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পাহাড়ে আগমন করলে ৷ এবং বললেন (ইয়া সুবাহা) এই কথা তিনবার বলে কুরাইশ বংশীয় সকলকে আহবান করলেন ৷
মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা শুনে সকলেই সেখানে সমবেত হলেন ৷ তখন তিনি সকলকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহর একত্ববাদ, পরকালীন জীবন এবং স্বীয় নবুওয়াতের উপর বিশ্বাস স্থাপনের জন্য সকলকে আহ্বান জানালেন৷
সাফা পর্বত থেকে তিনি আরো বলেন, আজ আমি তোমাদেরকে একটি বিপর্যয়ের কথা বলবো, আমি যদি বলি, ঠিক আমার পিছনে একদল শত্রু অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তোমাদেরকে আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে ৷ তোমরা কি একথা বিশ্বাস করবে ? সকলেই এক বাক্যে বলে উঠলেন, আপনি তো কখনোই মিথ্যা কথা বলেননি অবশ্যই আমরা আপনার কথা বিশ্বাস করছি ৷
সেখানে আরও উপস্থিত ছিল আবু লাহাব ৷ সে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো ৷ (হে মোহাম্মদ! আমাদেরকে এখানে জমা করেছো ধ্বংস হওয়ার জন্য) এ কথা শুনে উপস্থিত সকলেই আবু লাহাবের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ৷ এরপর আল্লাহ তাআলা সূরা অবতীর্ণ করে বলেন ৷ ধ্বংস হোক আবু লাহাবের হাত ৷ (সূরা লাহাব)
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url