হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর ইন্তিকাল (সম্পূর্ণ ঘটনা)- FutureLifeIt.com
হযরত ফাতেমা (রাঃ) ইন্তিকাল (সম্পূর্ণ ঘটনা) সম্পর্কে জানতে পারবো৷ আপনি কি এ ব্যাপারে জানতে চান? তাহলে সঠিক জায়গায় এসেছেন৷ তিনি ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সর্বকনিষ্ঠ কন্যা৷ নিম্নে আলোচনা করা হলো-
হযরত ফাতেমা (রাঃ) জীবনী সম্পর্কে আমরা কম বেশি সকলেই জানি৷ আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে তার জীবনী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ৷ তাহলে কথা না বাড়িয়ে চলুন, শুরু করা যাক।
পোস্ট সূচীপত্র.
ভূমিকা
তিনি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চতুর্থ এবং সর্বকনিষ্ঠ কন্যা ছিলেন ৷ তার মাতার নাম হযরত খাদিজাতুল কুবরা রাদিয়াল্লাহু আনহা ৷ তার উপাধি ছিল সাইয়েদাতুন নিসায়ী আহলিল জান্নাত, তহেরা, জোহরা, ইত্যাদি ছিল তার উপাধি ৷ তিনি হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সবচেয়ে প্রিয় কন্যা ছিলেন ৷
হযরত ফাতিমা (রাঃ)র জন্ম
তিনি প্রথম কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার পাঁচ বছর পর কাবা ঘর সংস্কারের সময় ৬০৫ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন ৷ তার জন্ম কাল সম্পর্কে বিভিন্ন রেওয়ায়েত থেকে পাওয়া যায় ৷ এক রেওয়ায়েত থেকে জানা যায়, নবী করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর নবুয়ত প্রাপ্তির পাঁচ বছর পূর্বে তার জন্ম হয়েছিল ৷
আরো পড়ুনঃ হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
আবার কেউ কেউ বলেন, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বয়স যখন ৩৫ বছর তখন তিনি জন্মগ্রহণ করেন ৷ অন্য রেওয়াত থেকে পাওয়া যায়, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়তের এক বছর পূর্বে তিনি জন্মগ্রহণ করেন ৷
ফাতেমা (রাঃ) ইন্তিকাল
১৩ই জুমাদিউল আউয়াল ১১ই হিজরী, ৫ই আগস্ট রোজ বুধবার ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে ইন্তিকাল করেন৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তিকালের ৭০ দিন, মতান্তরে ৮ মাস পর ইন্তিকাল করেন ৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তিকালের পর পরিবারের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম ইন্তেকাল করেন ৷
হযরত ফাতিমা (রাঃ) শৈশবকাল
জয়নব, রুকাইয়া, এবং উম্মে কুলস, এরপর ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা চতুর্থ কন্যা ৷ খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা অন্য সন্তানদের জন্য ধাত্রী রাখলে ও ফাতেমার জন্য ধাত্রী রাখেননি ৷ বরং নিজের কাছে রেখে স্বীয় তত্ত্বাবধানে লালন-পালন করেন ৷
আরো পড়ুনঃ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মাক্কী জীবন কাহিনী
শৈশব কাল থেকেই তিনি অত্যন্ত গভীর এবং নির্জন প্রিয় ছিলেন ৷ তিনি কখনোই ঘরের বাহিরে পা রাখেননি ৷ এবং কোন সময় কোন খেলা ধূলায় অংশ নেননি ৷ সর্বদায় মায়ের আশেপাশে থাকতেন এবং ঘরের কাজ করতেন ৷
হযরত ফাতিমা (রাঃ)র বিবাহ
মদিনায় হিজরতের সময় হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বালেগা হয়েছিলেন ৷ হাদিসের বর্ণনা মতে, হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহার বেশ কয়েক জায়গা থেকে বিয়ের সম্বন্ধ আসে ৷
তার মধ্যে একটি হলো, ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহার জন্য পায়গম পাঠালেন৷ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুই বললেন না, চুপ করে রইলেন ৷
বেশ কিছুদিন পর আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সম্পর্কে প্রস্তাব পাঠালে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাজি হয়ে যান ৷ এবং তাদের ধুম ধাম করে বিবাহ দেন ৷ এই বিয়েতে ৪০০ রুপার মিসকল মোহরানা হিসেবে ধার্য করা হয় ৷
হযরত ফাতিমা (রাঃ) বিয়ের পোশাক
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহার বিয়ের রাতে একটি পোশাকের ব্যবস্থা করেন ৷ কেননা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা তালি দেওয়া একটি জামা পরিধান অবস্থায় ছিলেন ৷ সে সময় একজন ভিক্ষুক এসে জামার আবদার করে ৷ তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই জামা ভিক্ষুককে দিয়ে দেওয়ার মনস্ত করেন ৷ এইজন্য আল্লাহ তাআলার সেই কোরআনের আয়াতটি মনে পড়ে যায় ৷ আল্লাহ তাআলা বলেন - অর্থাৎ তোমরা যা ভালোবাসো তা থেকে দান না করা পর্যন্ত কখনোই কল্যাণ পাবে না ৷ (সূরা আলে ইমরান আয়াত-৯২)
হযরত ফাতিমা (রাঃ)র বিবাহের উপঢৌকন
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কলিজার টুকরাকে যেসব উপঢৌকন দিয়েছিলেন তাহলে-
- ১| একটি জায়নামাজ
- ২| খেজুরের ছাল ভর্তি চামড়ার একটি বালিশ
- ৩| একটি মশক
- ৪| পানির জন্য দুটি পাত্র
- ৫| পালকি
- ৬| একটি টাফিক বা পেয়ালা
- ৭| নকশা করা একটি পালং
- ৮| উল ভরা মিশরী কাপড়ে প্রস্তুত বিছানা এবং
- ৯| দুইটি চদর
- ১০| পবিত্র বিবাহের ওলিমা
বিয়ের পর হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ওলিমার দাওয়াত এর ব্যবস্থা করতে বললেন ৷ মোহর আদায়ের পর টাকা বেঁচে গিয়েছিল ৷ তার দ্বারা ওলিমা করার জন্য নির্দেশ দেন৷ ওলিমার খাদ্য ছিল, পনির, খেজুর, জবের নান এবং গোস্ত ৷ হযরত আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত আছে যে, তৎকালীন যুগে এটা ছিল সর্বউত্তম ওলিমা ৷
হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহার সন্তান সমূহ
হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার মোট ছয় জন সন্তান ছিল ৷ তার মধ্যে তিনজন পুরুষ এবং তিনজন মেয়ে ৷ নিচে তা বর্ণনা করা হলো-
- ১| হযরত হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু
- ২| হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু
- ৩| হযরত মহসিন রাদিয়াল্লাহু আনহু
- ৪| হযরত উম্মে কুলসুম রাদিয়াল্লাহু আনহা
- ৫| হযরত রোকেয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা
- ৬| হযরত যয়নব রাদিয়াল্লাহ আনহা
হযরত মহসিন রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং হযরত রোকেয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা শৈশবকালেই মারা যায়৷ হযরত হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু, হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং হযরত উম্মে কুলসুম রাদিয়াল্লাহু আনহা নামকরা ব্যক্তিত্ব ছিলেন ৷ এদের মাধ্যমেই হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বংশধারা অব্যাহত রয়েছে ৷
হযরত ফাতেমা রাঃ জানাযা ও দাফন
ইনন্তিকালের পূর্বে হযরত আসমা বিনতে আমিস রাদিয়াল্লাহু আনহাকে ডেকে বলেছিলেন ৷ আমার জানাজা এবং দাফনের সময় পর্দার পুরো ব্যবস্থা রাখতে হবে ৷ এবং আমার গোসলের সময় আমার স্বামী এবং আপনি ব্যতীত কারো সাহায্য নেওয়া যাবে না ৷ দাফনের সময় বেশি ভিড় হতো দেওয়া যাবে ৷
দাম্পত্য জীবন
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন : আল্লাহর শপথ, আমাদের দাম্পত্য জীবনে আমি কখনো ফাতেমাকে রাগান্বিত এবং ফাতেমা ও আমাকে কখনো রাগান্বিত করেনি ৷ আমি যখনই ফাতেমার উপর দৃষ্টি রাখতাম তখনই আমার দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে যেত ৷ এবং মনে একটা প্রশান্তি পেতাম ৷
পর্দার ব্যাপারে সচেতন
ইমাম মুসা কাযেম রাদিয়াল্লাহু আনহু তার পিতা ও পিতামহদের কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন : " একদিন এক অন্ধ ব্যক্তি ফাতেমার ঘরে প্রবেশের জন্য অনুমতি চাইলে তিনি ওই অন্ধ ব্যক্তি থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখলেন ৷
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : হে ফাতিমা ! কেন তুমি নিজেকে গোপন করে রাখছো, সে তো অন্ধ, তোমাকে দেখছে না ? প্রতি উত্তরে ফাতিমা বলেন : যদিও ওই অন্ধ লোকটি আমাকে দেখছে না কিন্তু আমি তো তাকে দেখছি ৷
রাসূল (সাঃ) এর হাদিস
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমার মর্যাদা সম্পর্কে অনেক কথা বলেছেন ৷ চারজন নারী সমগ্র নারী জাতির মধ্যে সর্বোত্তম ৷ নিচে তা বর্ণনা করা হলো-
- মরিয়ম বিনতে ইমরান
- খাদিজা বিনতে খুওয়ালিদ
- এবং ফাতেমা বিনতে মোহাম্মাদ
- তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে ফাতিমা ৷
বুখারী শরিফের একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ফাতিমা আমার অস্তিত্বের অংশ ৷ যে তাকে রাগান্বিত করে সে আমাকে রাগান্বিত করে ৷
তিনি আরো বলেন, ফাতিমা কোন ব্যাপারে রাগান্বিত হলে আল্লাহ রাগান্বিত হন ৷ এবং ফাতিমার আনন্দে আল্লাহ আনন্দিত হন।
তিনি আরো বলেন, বেহেশতের সর্বপ্রথম আমার নিকট যে পৌঁছাবে সে হচ্ছে ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ৷ জান্নাতে একসাথে থাকব।
পবিত্র কুরআনে হযরত ফাতিমা (রাঃ) মর্যাদা
পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াতে হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহার মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে ৷ এর মধ্যে কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলো ৷
- ক. সূরা আহযাবে আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা করেন-
(সূরা আহযাব আয়াত-৩৩)
একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম উম্মে সালামা (রাঃ)র ঘরে অবস্থান করছিলেন তখন এই উপরোক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়৷
- খ. সূরা আলে ইমরানে হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহার এবং তার পরিবারের মর্যাদার কথা বলা হয়েছে ৷ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন:
অর্থঃ এই জ্ঞান এসে যাওয়ার পর এখন যে কেউ এ ব্যাপারে তোমার সাথে ঝগড়া করে, হে মুহাম্মাদ! তাকে বলে দাওঃ এসো আমরা ডেকে নেই আমাদের পুত্রগণকে এবং তোমাদের পুত্রগণকে। আর আমাদের নারীদেরকে এবং তোমাদের নারীদেরকে আর আমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের নিজেদেরকে ৷ তারপর আল্লাহর কাছে এই মর্মে দোয়া করি যে, যে মিথ্যাবাদী হবে তার ওপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক।(সুরা আলে ইমরান আয়াত-৬১)
আল্লাহর ভয় ও দুনিয়া ত্যাগ
অর্থাৎ এবং জাহান্নাম তাদের প্রতিশ্রুত স্থান। তার সাতটি দ্বার আছে ৷ যার প্রত্যেক দারের জন্য তাদের অন্তর্ভুক্ত স্বতন্ত্র দল থাকবে ৷ (আল কুরআন)
যখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ৷ কেননা তিনি আল্লাহকে ভয় করেন৷ এবং জাহান্নামের আগুন সহ্য করতে পারবেন না৷
উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এ সূরাটি অবতীর্ণ হলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন এ বছর আমার ইন্তিকাল হবে। একথা শুনে হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা কেঁদে ফেললেন। এ অবস্থা দেখে তিনি ফাতিমাকে কাছে ডেকে নিলেন এবং কানে কানে কি যেন বললেন, কান্না বন্ধ হয়ে গেল ৷ সেই কথা হল, আমার বংশধরদের মধ্যে তুমিই সবার আগে আমার সাথে মিলিত হবে। একথা শুনে হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা হেসে ফেললেন। (ইবনে আবি হাতেম ও ইবনে মারদুইয়া) প্রায় এই একই বিষয়বস্তু সম্বলিত হাদীস বাইহাকীতে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে উদ্ধৃত করেছেন।
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url