হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মক্কা জীবনী

 ভূমিকা

হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আবির্ভাবের পূর্বে আরবসহ সমগ্র পৃথিবী  ছিল অন্ধকারে নিমজ্জিত ৷ মানুষ আল্লাহর বিধি-বিধান ও সত্য ধর্মের কথা ভুলে গিয়েছিল ৷ 

কুসংস্কার মিথ্যা ও পাপাচারে নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিল বিশ্বমানবতা৷ অত্যাচার, অনাচার, বর্বরতা ও মানবতাবিরোধী অনৈতিক কার্যকলাপে ছেয়ে গিয়েছিল সমস্ত সভ্যতা ও সমাজ ৷ 

মানবতার এ চরম  দুর্দিনে মক্কা নগরীতে আল্লাহ তা'আলা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করলেন বিশ্ব মানবতার মুক্তির ও শান্তির দূত হিসেবে ৷ তিনি মানবজাতিকে ন্যায়, সত্য এবং মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন ৷ 

হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমগ্র জীবনী ছিল অত্যন্ত পূত-পবিত্র এবং মানব কল্যাণ চিন্তায় পরিপূর্ণ৷ জন্ম থেকে নবুওয়াত লাভের পূর্ব পর্যন্ত ৪০ বছর এবং নবুওয়াতের পর মদিনায় হিজরত পর্যন্ত ১৩ বছর মোট ৫৩ বছর ৷ 

এ জীবনকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাক্কী জীবন বলে আখ্যায়িত করা হয় ৷ নবুওয়াতের পূর্ব পর্যন্ত তাঁর স্বজাতির মানুষরা তাঁকে আল-আমিন অর্থাৎ বিশ্বাসী বলে উপাধি দিয়েছিল ৷ 

কিন্তু নবুওয়াতের পর স্বজাতির স্বার্থবাদী মানুষরা তার সাথে ঘোর বিরোধিতা শুরু করে, নানা নিপীড়ন ও অত্যাচারে তারা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দিত ৷ 

মক্কাবাসীর অত্যাচার ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ করে তুলে তাঁর ও তাঁর অনুসারীদের জীবন ৷ আল্লাহ তাআলার আদেশে তিনি স্বদেশ ছেড়ে হিজরত করে চলে যান মদিনায় ৷ 

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মক্কা জীবনে ইসলাম প্রচার ও নির্যাতনের শিকার

ইসলামের প্রচার প্রসার

নবুয়তের পর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হলো৷ তিনি সত্য প্রচারের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেন৷ এ ব্যাপারে আল্লাহ সুবাহানাহুওয়া তা'য়ালা বলেন-

হে আমার রসূল ! আপনার প্রভু (আল্লাহ তা'য়ালা) আপনাকে যে সত্য বিধি-বিধান দান করেছেন, তা প্রচার করুন ৷ (সূরা মায়েদা আয়াত ৬৭) 

তারপর হতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য বিধি-বিধান প্রচার শুরু করলেন ৷ মহিলাদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন তার প্রিয়তমা স্ত্রী হযরত খাদিজাতুল কুবরা রাদিয়াল্লাহু আনহা ৷ বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু ৷ 

অল্পদিনের মধ্যেই হযরত ওসমান, আব্দুর রহমান, সা'দ, জুবায়ের, তালহা প্রমুখ সাহাবী ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আরোহন করেন ৷ প্রথম তিন বছর গোপনে ইসলামের দাওয়াত চলতে থাকে ৷ এ সময় আরো কয়েকজন সাহাবী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ৷

প্রকাশ্যভাবে ইসলাম প্রচার 

গোপনে প্রথম তিন বছর ইসলাম প্রচার শেষ হবার পর, চতুর্থ বছরের শুরুতেই প্রকাশ্যভাবে দাওয়াত আরম্ভ হয় ৷ সকল বাঁধা বিপত্তি ছেদ করে ইসলাম প্রচার হতে থাকে ৷ মুসলমানদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে লাগলো ৷ 

এ সময় দাওয়াতের কেন্দ্র ছিল "হযরত আরকাম রাদিয়াল্লাহু আনহুর" বাসস্থান৷ নবুওয়াতের চতুর্থ বছরের শেষের দিকে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ৷ তখন তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীদেরকে নিয়ে, কাবা চত্বরে আল্লাহর একত্ববাদের কথা ঘোষণা দেন ৷ 

এই ঘোষণার পর কাফেরেরা ভীষণ গোলমাল বাধিয়ে দেয় ৷ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হযরত হারেস ইবনে আবি মালা শহীদ হন  ৷ তিনিই ইসলামের প্রথম শহীদ ৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচা আবু তালিব এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন ৷

কুরাইশদের অত্যাচার

মক্কার কুরাইশরা কা'বার তত্ত্বাবধায়ক ছিল৷ কা'বাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি ৷ তাদের সাথে সামাজিক, ধর্মীয় ও অর্থ উপার্জনের বিষয়টি জড়িত ছিল ৷ তাই তারা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রচলিত ইসলাম ধর্ম মেনে নিতে পারল না৷ 

 প্রথম পর্যায়ে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ধর্মদ্রোহী, পাগল, জাদুকর ইত্যাদি বলে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতে লাগলো ৷ এতেও কোন কাজ না হওয়ায়, তারা তাকে নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরু করলো ৷ 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজরত অবস্থায় তার মাথার উপর উটের নাড়িভুড়ি ও ময়লা আবর্জনা নিক্ষেপ করল ৷ তার চলার পথে রাস্তায় কাটা বিছিয়ে রাখত ৷ এবং আবু জাহেল তাকে পাথর দিয়ে আঘাত করলো ৷ তিনি সকল বাঁধা বিপত্তি এবং ভয়কে জয় করে ইসলাম প্রচার করেই চললেন৷


হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মক্কা জীবনে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা

মুসলমানদের আবিসিরিয়ায় গমন

কুরাইশদের অত্যাচার ও নির্যাতনের মাত্রা ক্রমেই বেড়ে যায় ৷ তারা মুসলমানদেরকে প্রকাশ্য ইবাদত করতে বাধা দিত ৷ এমনকি কোরআনের একটি আয়াতও তারা পড়তে দিত না ৷ 

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের ওপর কুরাইশদের চরম অত্যাচার থেকে রক্ষার জন্য আবি সিরিয়ায় গমন করেন ৷ নবুওয়াতের পঞ্চম বছর রজব মাসে ৬১৫ খ্রিস্টাব্দে হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে বারোজন পুরুষ ও চারজন মহিলা আবিসিনিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য সর্বপ্রথম গমন করেন৷

খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী আবু সিনিয়ার বাদশা নাজ্জাশী ছিলেন ন্যায় পরায়ন শাসক ৷ তিনি নিপীড়িত মুসলমানদেরকে নিরাপদ আশ্রয় করে দেন৷ কুরাইশরা আবিসিনিয়া হতে মুসলিমদেরকে ফিরিয়ে আনতেন বাদশা নাজ্জাশী কাছে প্রতিনিধিদল পাঠায়৷

বেশকয়েক মাস পর মক্কার মুসলমানদের অবস্থা ভালো হয়েছে শুনে এ দলটি মক্কায় ফিরে আসেন৷ কুরাইশরা তাদের উপর আরো অধিক নির্মম নির্যাতন শুরু করে৷ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় ১৮ জন মহিলাসহ প্রায় ১০০ জন মুসলিমকে আবু সিরিয়ায় গমন করার জন্য পাঠান।

কুরাইশদের বয়কট

নবুওয়াতের ষষ্ঠ বছরে হযরতের চাচা হামযাহ এবং হযরত ওমর রাঃ ইসলাম গ্রহণ করেন ৷ এভাবে ক্রমশ ইসলামের শক্তি দ্রুত বাড়তে থাকে ৷ এ দেখে কুরাইশরা দিক-বেদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে৷ তারা নতুন করে ষড়যন্ত্র করার পরিকল্পনা করে ৷

সর্বপ্রথম অর্থনৈতিক ও সামাজিক বয়কট করে তারা ঘোষণা করে দেয় ৷ যতদিন পর্যন্ত ওই গোত্র মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বেচ্ছায় তাদের হাতে তুলে দেবে ততদিন পর্যন্ত বয়কট চলবে৷

 তারা মুসলমানদের সাথে কথাবার্তা বিয়ে-শাদী ক্রয় বিক্রয় সবকিছু বন্ধ করে দেয় ৷ ৬১৭ খ্রিস্টাব্দ হতে ৬১৯ খ্রিস্টাব্দ (নবুওয়াতের ৭ম থেকে ১০ম খ্রিস্টাব্দ) পর্যন্ত আবু লাহাব ছাড়া, মুত্তালিব ও হাশেমী বংশের সকল লোক, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণ (সিয়াবে আবু তালিব)   নামক উপত্যকায় সমাজচ্যুত অবস্থায় সীমাহীন কষ্টের মধ্যে দিন কাটান ৷

দীর্ঘদিন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহ মুসলমানগণ চরম অভাব অনটন ও অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকেন৷ সে সময় খাদ্যের অভাব দেখা দিলে, লোকজন গাছের পাতা, গাছের ছালের রস পান করেছিল ৷ 

অভাব অনটন এত পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছিল৷ ইতিহাসবিদরা বলেন- মা ছোট শিশু বাচ্চাকে দুধ পান করানোর ভয়ে নিচে সন্তানকে  হত্যা পর্যন্ত করেছিল ৷ এ অন্যায় অত্যাচার বুঝতে পেরে আরবের কয়েকজন হৃদয়বান ব্যক্তি হাশেমীদের প্রতি এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন ৷

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর দুঃখের বছর

হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীরা কুরাইশদের বয়কট থেকে পরিত্রাণের পর, প্রিয়জনদের হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েন ৷ 

নবুয়তের দশম খ্রিস্টাব্দে প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজাতুল কুবরা রাদিয়াল্লাহু আনহা কে এবং তার ৩৫ দিন পরে চাচা আবু তালিবকে চিরকালের জন্য হারালেন৷ দীর্ঘ ২৫ বছর খাদিজাতুল কুবরা রাদিয়াল্লাহু আনহা সংসার জীবনে এবং আপদে বিপদে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাশে থেকেছেন৷ 

 তার অবর্তমানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যথিত হয়ে  ওঠেন রসুলের চাচা আবু তালিব যদিও ইসলাম গ্রহণ করেনি ৷ তবুও তিনি ছিলেন রাসুলের অভিভাবক ও আশ্রয়দাতা৷ তার অভাবেও তিনি ভেঙ্গে পড়েন ৷ 

এই দুই জন পরম হিতৈষীকে হারিয়ে তিনি মর্মাহত হন৷ তাই এ বছরকে "আমূল হুজন" বা দুঃখের বছর বলে আখ্যায়িত করা হয় ৷

বায়াতে আকাবার শপথ এবং তার প্রেক্ষাপট

আকাবার শপথ ইসলামের ইতিহাসে তথা ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী একটি ঘটনা ৷ অধিকাংশ কুরাইশ যখন তার উপর ক্ষুব্ধ, সহযোগিতার সকল পথ যখন বন্ধ ৷ তখন বায়াতে আঁকাবার সূত্র ধরে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলাম প্রচারে এক পরিবেশ খুঁজে পান ৷

বায়াতে আকাবার প্রেক্ষাপট

চরম বাধা বিপত্তির মধ্য দিয়ে আকাবার শপথ অনুষ্ঠিত হয় ৷ এ সময় কুরাইশদের অত্যাচারে মক্কার প্রায় ৪০টি মুসলিম পরিবার আবিসিরিয়ায় হিজরত করেন ৷ তিনি মক্কার কুরাইশদের অত্যাচার সহ্য করছিলেন ৷ 

এমত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের চিন্তাভাবনা করলেন ৷ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যারা ভালোবাসেন এবং ইসলাম ও তার সার্বিক সহযোগিতার শপথ করতে এগিয়ে আসেন ৷

মক্কার অদূরে আকাবা নামক উপত্যকায় এর শপথ অনুষ্ঠিত হয় ৷ এজন্য একে আকাবার শপথ বলে৷ মোট তিনবার আকাবার শপথ অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷

১.আকাবার প্রথম শপথ

নবুওয়াতের দশম বছরে ৬২০ খ্রিস্টাব্দ আকাবার প্রথম শপথ অনুষ্ঠিত হয় ৷ হজ্জের মৌসুমে কিছু সংখ্যক লোক মদিনা থেকে মক্কায় এসে রাসূল সাঃ এর নবুওয়াত এবং ইসলাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে ৷ 

তারা এ ব্যাপারে কৌতুহল বোধ করে, আকাবা নামক স্থানে বসে তারা ৬ জন এ ব্যাপারে আলাপ আলোচনা করতে থাকে ৷ এমন সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেন ৷ এবং এ ব্যাপারে কতিপয় কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করে তাদেরকে শোনান ৷

তারা ইতিপূর্বে মদিনার ইহুদীদের কাছ থেকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর ব্যাপারে শুনেছিল ৷ তারা এইভাবে রসুলের সাক্ষাৎ পেয়ে একে অপরের দিকে তাকায়, আর বলতে থাকে ইহুদিদের আগে আমরা মর্যাদাবান হতে চাই৷ অতঃপর তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে রাসূলের নিকট আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেন ৷ ইতিহাসবিদরা বলেন একেই আকাবার প্রথম শপথ বলা হয়

২. আকাবার দ্বিতীয় শপথ

নবুওয়াতের একাদশ বছরে ৬২১ খ্রিস্টাব্দে আউশ ও খসরাজ গোত্রের মোট ১২ জন আঁকাবা নামক স্থানে সমবেত হন ৷ তারা রসূলের সাথে সাক্ষাৎ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ এবং শপথ গ্রহণ করেন ৷ এটাই আকাবার দ্বিতীয় শপথ ৷ তখন ইসলাম প্রচারের জন্য রসূল সাঃ আমর ইবনে মাকতুম এবং মাসআব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তাদের সাথে মদিনায় পাঠান৷

৩. আকাবার তৃতীয় শপথ নবুওয়াতের দ্বাদশ বছর ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনার ৭৩ জন মহিলা পুরুষ ইসলাম কবুল করে রাসূলের নিকট আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেন ৷ এবং মক্কায় আগমন করেন ৷ 

আকাবা নামক স্থানে তারা রাসূলের হাতে এ মর্মের শপথ গ্রহণ করলেন যে, আমরা আপনার ও ইসলামের হেফাজতের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করব ৷ যেভাবে নিজ পরিবার পরিজন এবং ইজ্জতের হেফাজত করে থাকি এটাই আকাবার সর্বশেষ শপথ ৷ এর পরের বছর রসূল মদিনায় হিজরত করেন ৷

আকাবার শপথের ধারা সমূহ

মদিনাবাসি আকাবার প্রান্তরে যে শপথ গ্রহণ করেছিল তার মূলধারা সমূহ নিম্নরূপ

১. আমরা এক আল্লাহর এবাদত করব ৷ তাকে ব্যতীত অন্য কাউকে বা কোন বস্তুকে ইলাহ বলে স্বীকার         করব না ৷

২. ডাকাতি, চুরি বা পরের ধন-সম্পদ অপহরণ করব না৷ 

৩. ব্যভিচারে লিপ্ত হব না ৷ 

৪. কারো প্রতি মিথ্যা দোষারোপ করব না, বা কারো চরিত্র নিয়ে বাজে মন্তব্য করবো না৷

৫. আমরা সৎকর্মে রসূলের আনুগত্য থাকব ৷

৬. কোন অবস্থায় সন্তান হত্যা করবো না ৷


হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)কে হত্যার ষড়যন্ত্র এবং মদিনায় হিজরত

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীদের উপর সর্বপ্রকার অত্যাচার নির্যাতন, নিপীড়ন, চালায় এবং ব্যঙ্গ বিদ্রুপও করে৷ কুরাইশরা তাদেরকে নানা রকম প্রলোভন দেখায়৷ কিন্তু ইসলাম প্রচার-প্রসার থেকে তাদেরকে বিরত রাখতে পারলো না৷ দিন দিন ইসলাম ধর্ম অবলম্বীদের সংখ্যা বেড়েই চলল ৷ ওদিকে মদিনা বাসীরা রসুল (সাঃ) ও ইসলাম গ্রহণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ৷ তাকে সেখানে যাওয়ার জন্য দাওয়াত দিয়েছে ৷ এসব কিছু দেখে কুরাইশরা রাগে ক্ষোবে ফুস ছিল ৷ 

তারা "দারুন নাদুয়া" নামক মন্ত্রণালয় সভায় মিলিত হলো ৷ সকল গোত্রের লোকেরা এ সভায় আগমন করলো ৷ আবু জাহেল প্রস্তাব করলো সকলেই মিলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একযোগে হত্যা করবে৷ 

ইতিমধ্যে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার পরিস্থিতি দেখে, তার সাহাবীদেরকে একে একে মদিনায় হিজরত করার নির্দেশ দেন ৷

এদিকে কাফেরেরা রসূলকে হত্যা করার দিনক্ষণ ঠিক করলো৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের এই ষড়যন্ত্র জানতে পারেন৷ তখন তিনি হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সাথে নিয়ে মদিনার উদ্দেশ্যে রওনা হন৷ 

যে রাতে কাফেররা রাসূলের বাসভবন ঘেরাও করেছিল৷ সে রাতেই বিছানায় নিজের জামাতা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শুয়ে রেখে বের হয়ে পড়েন৷ মক্কা থেকে মদিনার দূরত্ব প্রায় ২৫০ কিলোমিটার ছিল ৷ 

রাতের বেলায় বেশিদূর যাওয়া তিনি নিরাপদ মনে করলেন না৷ তাই তারা তিন দিন তিন রাত মক্কার অদূরে 'সাওর' নামক পাহাড়ের একটি নির্জন গুহায় আত্মগোপন করে রইলেন৷ 

তিনদিন উক্ত গুহায় অবস্থানের পর চতুর্থ দিন, সেখান থেকে বের হয়ে অতি সাবধানে ভিন্ন পথে মদিনার দিকে চলতে থাকেন ৷ 

যাত্রাপথে প্রিয় জন্মভূমির দিকে তাকিয়ে অশ্রুসিদ্ধ নয়নে তিনি বললেন- মক্কা, মক্কা আমার প্রিয় জন্মভূমি মক্কা! আমি তোমায় ভালোবাসি৷ কিন্তু তোমার কোলে আমাকে থাকতে দিল না৷ বাধ্য হয়ে তোমায় ছেড়ে চললাম৷ বিদায় বিদায়!

এদিকে কুরাইশরা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম কে না পেয়ে ঘোষণা করে দিল৷ যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ এবং আবু বক্করকে বন্দী করে আনতে পারবে৷ তাকে একশত উট পুরস্কার দেওয়া হবে৷ পুরস্কারের আশায় তাদেরকে ধরার জন্য অনেকেই তাদের পেছনে ছুটলো৷

আল্লাহর অনুগ্রহে সকল বাধা অতিক্রম করে তারা ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে সেপ্টেম্বর সোমবার  মদিনার কুবা পল্লীতে এসে পৌঁছেন৷ এরপর তিন দিনের মাথায় আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সেখানে এসে তাদের সাথে মিলিত হন৷

সেখানে তিনি চার দিন অবস্থান করেন৷ তিনি  সেখানে নিজের হাতে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন৷ নবুওয়াতের পর রসুলের হাতে এটাই নির্মিত প্রথম মসজিদ৷ তারপর তারা ২৭শে সেপ্টেম্বর ১২ই রবিউল আউয়াল শুক্রবার মদিনায় গিয়ে উপস্থিত হন৷ মদিনাবাসী সাদরে তাদের গ্রহণ করেন৷

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url