মহীয়সী নারী বিবি আছিয়ার জীবন কাহিনী
আজ মহীয়সী নারী বিবি আছিয়ার জীবন কাহিনী সম্পর্কে আলোচনা করব৷ স্বামী ফেরাউনের দেওয়া কষ্টের পর ও তিনি ঈমানের উপর অবিচল ছিলেন৷ এবং কুরআনে বর্ণিত অনুযায়ী তিনি একজন জান্নাতি নারী৷ নিম্নে বিবি আছিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো৷
ভূমিকা:
ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুজাহিম ছিলেন একজন দৃঢ়চেতা ঈমানদার নারী৷ তিনি ছিলেন প্রখর জ্ঞানের অধিকারী, আভিজাত্য ও অর্থ সম্পদে অতুলনীয়৷ তিনি ফেরাউনের রাজপ্রাসাদে আল্লাহর নবী মূসা (আঃ) এর লালন পালনের তত্ত্বাবধানে দায়িত্বে রত ছিলেন৷
আরো পড়ুনঃ হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর ইন্তিকাল (সম্পূর্ণ ঘটনা)
এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেন- ফেরাউনের স্ত্রী বললেন সে {মুসা (আঃ)}আমার ও তোমার চক্ষু শীতলকারী হবে তোমরা তাকে হত্যা করো না৷ হয়তো বা সে আমাদের উপকারে আসবে কিংবা আমরা তাকে সন্তান বলে গণ্য করব৷ তারা তা বুঝতে পারেনি৷ (সূরা কাসাস আয়াত-৯)
ঈমান আনার কারণে আসিয়ার শাস্তি:
ফেরাউনের ঘরে থেকে ও নিজেকে আল্লাহভীতি গ্রহণ করেন৷ রাজপ্রাসাদে সব রকম বিলাসিতা ত্যাগ করে স্বামীর ভয় ভীতি উপেক্ষা করে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনেন৷ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার কথা শুনে আছিয়ার প্রতি ফেরাউনের রাগ হয়৷ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার কারণে আসিয়ার সংগীতের ফেরাউন হত্যা করে৷
অতঃপর ঈমান ত্যাগ করতে আসিয়াকে নানাভাবে প্রস্তাব দিতে থাকে৷ কিন্তু সে নিরাশ হয়ে নিজের জীবনসঙ্গিনী বিবি আছিয়াকে কঠিন শাস্তি দেওয়া শুরু করে৷ অন্যদের চাইতে বিবি আফিয়াকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হয়৷ হাতে ও পায়ে লোহার পেরেক লাগিয়ে প্রহারে নির্দেশ দেওয়া হয়।
কঠিন নির্যাতনের পরও বিবি আসিয়া ধৈর্য্য হারা হননি৷ ফেরাউন বিবি আছিয়ার পুরো দেহ ক্ষতবিক্ষত করে দেওয়ার পরও নিজের ঈমানকে রক্ষা করেন৷ তিনি নিজের মধ্যে পাহাড়ের চেয়েও কঠিন ঈমান ধারণ করেন৷
তিনি ঈমানের ওপর সদা সর্বদায় অটল ছিলেন৷ আল্লাহ তাআলা বিবি আছিয়াকে বিশ্বজগতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নারীদের কাতারে তালিকাভুক্ত করে সম্মানিত করেছেন৷ বিবি আছিয়া নির্যাতন সহ্য করে শেষ মুহূর্ত ঘনিয়ে আসে৷
ইন্তিকালের সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন তিনি বলেছিলেন হে আল্লাহ, জান্নাতে আমার জন্য একটি ঘর তৈরি করে দিন৷ আমি যেন সে ঘরে শান্তিতে থাকতে পারি৷ আল্লাহ তাআলা তার দোয়া ও শেষ আকাঙ্ক্ষা কবুল করেন তিনি পবিত্র কোরআনে বলেন-
হে আল্লাহ, আমার জন্য জান্নাতে আপনার কাছে একটি ঘর নির্মাণ করুন ও আমাকে ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষা করুন এবং আমাকে জালেম গোষ্ঠী থেকে মুক্তি দান করুন৷ (সূরা তাহরীম আয়াত-১১)
বিখ্যাত তাফসীরে ইবনে কাসীর এর মধ্যে বর্ণিত আছে৷ আল্লাহ তাআলা তার দোয়া কবুল করে নেন৷ এবং জান্নাতে নিজের একটি বাড়ি দেখতে পান৷ নিজ চোখে বাড়ি দেখে তিনি হেসে দেন৷
এদিকে চরম নির্যাতনের পর আছিয়ার মুখে হাসি দেখে ফেরাউন ক্রোধে ফেটে পড়ে৷ আর বলতে থাকে, সে কি পাগল হয়ে গিয়েছে ? আমরা তাকে চরম শাস্তি দিচ্ছি৷ আর সে হাসছে৷ ক্ষোভে ফেরাউন একটুকরো কাজ নিক্ষেপ করে৷
তারপরে বিবি আছিয়া ইন্তিকাল করেন৷ তিনি পৃথিবীবাসীর জন্য রেখে যান ঈমানী দৃঢ়তার চির আদর্শ৷ পার্থিব জীবনের সমস্ত বিলাসিতা পরিত্যাগ করে পাড়ি জমান জান্নাতের পথে৷
জান্নাতি নারীদের মধ্যে একজন হলেন বিবি আছিয়া৷ আবু মুসা আশারি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পুরুষদের মধ্যে অনেকে পূর্ণ অর্জন করেছেন৷
তবে নারীদের মধ্যে পূর্ণ অর্জন করেছেন শুধু মরিয়ম (আঃ) এবং ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া৷ আল্লাহর রাসূল আরো বলেন, সারিদ যেমন আরববাসীদের কাছে শ্রেষ্ঠ খাবার তেমনি সব নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা৷ (মুত্তাফাকুন আলাই অর্থাৎ বুখারী, মুসলিমে বর্ণিত আছে)
ঈমানী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নারীদের একজন হলেন বিবি আছিয়া৷ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন৷ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জমিনের উপর চারটি রেখা টেনে বলেন তোমরা কি জানো এটা কি? সকলেই বললেন আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলই ভালো জানেন৷
তিনি বলেন জান্নাতবাসির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নারী হলেন ফাতেমা বিনতে মুহাম্মাদ, মরিয়ম বিনতে ইমরান, খাদিজা বিনতে খাওয়াইলিদ এবং ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়া বিনতে মুজাহিম (মুসনাদে আহম্মদ)
ফেরাউনের স্ত্রী হয়েও পৃথিবীর ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন৷ আল্লাহ তাআলা আমাদেরকেও একামতে দ্বীন পালনে অবিচল থাকার তৌফিক দান করুন৷ আমিন ৷
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url