নফল নামাজ পড়ার ফজিলত

নফল নামাজ পড়ার ফজিলত। আল্লাহর নিকট বান্দার ক্ষমা প্রার্থনার যত মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো নামাজ৷ কিয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম তার নামাজ সম্পর্কে হিসেব নেওয়া হবে৷ নামাজের হিসেব সঠিক হলে তার সমস্ত আমল সঠিক হবে৷ আর নামাজ বাতিল হলে তার সব আমল বাতিল হবে৷ 

নফল নামাজ পড়ার ফজিলত

নফল নামাজের গুরুত্ব। নামাজকে প্রথমত দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়- ফরজ ও নফল৷ নফল নামাজের মাধ্যমে বান্দার ফরজ নামাজের ঘাটতিপূরণ হয়৷ এটি এমন এক মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত যার মাধ্যমে বান্দার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মিত হয়৷ নিম্নে নফল নামাজ ও তার কতিপয় কিছু বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা হলো-

নফল নামাজের গুরুত্ব 

নফল নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। নিম্নের তা আলোচনা করা হলো-

আল্লাহর অনুগ্রহ অর্জন

মানুষ যে সব আমলের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ ও ভালোবাসায় লাভবান হয় তন্মধ্যে নফল নামাজ অন্যতম এই নামাজের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর প্রিয় বান্দা দের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে এ মর্মে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে একটি হাদিস বর্ণিত আছে রাসুল সাঃ এরশাদ করেন-

অনুবাদঃ আল্লাহ তাআলা বলেন যে ব্যক্তি আমার কোন প্রিয় বান্দার সাথে হিংসা করল৷ আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম৷ আল্লাহ যেসব বিষয় ফরয করেছেন, তার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ্‌র নৈকট্য অর্জন করবে৷ বিভিন্ন নফল ইবাদতের মাধ্যমে সর্বদায় আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করে৷ অতঃপর আল্লাহ যখন তাকে ভালোবাসেন৷ তখন তিনি তার কান হয়ে যান৷ যা দিয়ে সে শ্রবণ করে৷ 

আরো পড়ুনঃ শিশুদের মসজিদে যাওয়ার হাদিস

চোখ হয়ে যান, যা দিয়ে সে দেখতে পায়৷ হাত হয়ে যান যা দিয়ে সে কোন কিছু ধারণ করতে পারে৷ পা হয়ে যান, যার সাহায্যে সে চলাফেরা করতে পারে৷ ওই বান্দা যখন আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ তাকে দান করেন৷ যদি কোন বান্দা আশ্রয় প্রার্থনা করে তিনি তাকে আশ্রয় দিয়ে থাকেন৷


ফরজ নামাজের ঘাটতি পূরণ


আল্লাহর অনুগ্রহ এবং ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ফরজ ইবাদত যেমন প্রয়োজন, তেমনি ফরজ ইবাদতের ঘাটতি পূরণ করার জন্য নফল ইবাদতের প্রয়োজন৷ আমাদের অনেকের ফরজ নামাজ ঘাটতি হয়ে যায়৷ অতপর হাশরের মাঠে ফরজ নামাজের ঘাটতি পূরণ হবে নফল নামাজ দিয়ে৷

আরো পড়ুনঃ হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর ইন্তিকাল (সম্পূর্ণ ঘটনা)

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন,

অনুবাদঃ কিয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে তার নামাজের৷ যদি তার নামাজের হিসাব সঠিক হয়, তাহলে সে সফলকাম হবে এবং মুক্তি পাবে৷ আর যদি নামাজ বিনষ্ট কারী হয় তাহলে সে ক্ষতিগ্রস্তর মধ্যে পতিত হবে৷ 

আর যদি ফরজ নামাজে কিছু কমতি হয় তখন আল্লাহ বলবেন দেখো আমার বান্দার কোন নফল আমল আছে কিনা? তখন নফল দিয়ে ফরজের কাজটি পূরণ হবে৷ বান্দার প্রতিটি আমলে অনুরূপ করা হবে যেমন নামাজ রোজা, যাকাত ইত্যাদিতে৷

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে জান্নাতে বসবাসের সৌভাগ্য অর্জন 

জান্নাতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে থাকা বড়ই সৌভাগ্য ও মর্যাদার বিষয়৷ এই সৌভাগ্যবান তারাই অর্জন করবে যারা অধিকহারে নফল ইবাদত করবে৷ 

রাবিয়া বিন কা'ব (রাঃ) বলেন, আমি রাতের বেলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে থাকতাম এবং তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এগিয়ে দিতাম৷ একদিন তিনি আমাকে বললেন, কল্যাণের জন্য কিছু চেয়ে নাও৷ 

আমি বললাম, আমি জান্নাতে আপনার সাথে থাকতে চাই৷ তিনি বললেন, এ ছাড়াও তুমি আরো কিছু চাও? আমি বললাম, এটাই আমি চাই তিনি বললেন, তুমি বেশি বেশি সিজদা করো

জাহান্নাম থেকে মুক্তি 

যারা ফরজ নামাজের সাথে সাথে নফল নামাজ আদায় করে৷ আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অত্যন্ত খুশি হন৷ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে দেন এবং জান্নাতের পথ সুগাম করে দেন৷ উম্মে হাবিবা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি যোহরের পূর্বে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করবে, তাকে কখনোই জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে না৷

আল্লাহ তাআলা প্রতিটি বান্দার উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিয়েছেন, এবং তার সঠিক সঠিক সময়েও তিনি বলে দিয়েছেন৷ এটা ছাড়াও কতিপয় নফল নামাজ রয়েছে যেটা অত্যন্ত গুরুত্ব এবং ফজিলতপূর্ণ৷

কতিপয় নফল নামাজের পরিচয় ও তার ফজিলত  

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মোট ১২ রাকাত সুন্নাতঃ মমিন বান্দা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মোট ১২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা আদায় করলে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হয়৷ এ ব্যাপারে উম্মে হাবিবা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে৷

ফজরের পূর্বে দুই, জোহরের পূর্বে চার, পরে দুই, মাগরিবের পরে দুই, এশার পরে দুই, ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যোহরের পূর্বে দু'রাকাত সহ সর্বমোট ১০ রাকাতের কথা এসেছে৷ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ দুনিয়া ও দুনিয়ার সবকিছু হতে উত্তম৷

তারাবিহ ও তাহাজ্জুদঃ নফল নামাজের মধ্যে অত্যন্ত মর্যাদাবান নামাজ হল রাতের নামাজ৷ তথা তারাবিহ ও তাহাজ্জুদ৷ রমজান মাসে এশার পর প্রথম রাতে পড়লে তাকে তারাবি বলা হয়৷ এবং শেষ রাত্রে পড়লে তাকে তাহাজ্জুদ বলা হয়৷ তবে এই সমস্ত নামাজকে কিয়ামুল লাইন বলা হয়৷ তথা রাতের নামাজ৷

রাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল তাহাজ্জুদ৷ মানব জীবনে ভুল-ভ্রান্তি ও নানা পাপে জর্জরিত৷ তাই পাপ থেকে মুক্তি পেতে সরাসরি আল্লাহর সাথে কথোপকথনের মাধ্যম হল তাহাজ্জুদের নামাজ৷ আল্লাহ সুবহানাল্লাহু ওয়া তা'আলা শেষ রজনীতে সপ্তম আসমানে নেমে আসেন, এবং বান্দাদের ডাকতে থাকেন৷ তিনি বলেন, কারো কোন সমস্যা নেই আমার কাছে চাও৷ আমি সকলের সমস্যা সমাধান করে দিবো৷ এইভাবে আল্লাহ তা'আলা বান্দাদেরকে ডাকতে থাকেন৷

তাহিইয়াতুল ওযু 

নামাজের জন্য শর্ত হলো, পাক-পবিত্র ও ওযু করা৷ আর প্রত্যেক ওযুর পর দু'রাকাত নফল নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব, যাকে তাহিয়াতুল ওযু বলা হয়৷

হাদিসে এসেছে, ওকবা বিন আমির রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে মুসলিম সুন্দরভাবে ওযু করে দাঁড়িয়ে একাগ্রতার সাথে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়৷

তাহিইয়াতুল মসজিদ 

মসজিদে প্রবেশ করে বসার পূর্বে দু'রাকাত নফল নামাজ আদায় করা সুন্নত৷ যাকে তাহিইয়াতুল মসজিদ বলা হয়৷

এ ব্যাপারে হাদিস শরীফে এসেছে, আবু কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন৷ রাসূল (সাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ মসজিদের প্রবেশ করলে দু'রাকাত নামাজ আদায় করার পূর্বে বসবে না৷ সে যেন বসার পর্বে দু'রাকাত সালাত আদায় করে নেয়৷

সালাতুল হাজত 

আল্লাহ তাআলা বলেন, হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর৷ নিশ্চয় তিনি ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন৷ (সূরা বাকারা আয়াত ১৫৩)

বৈধ চাহিদা পূরণের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে যে নামাজ আদায় করা হয়৷ তাকে সালাতুল হাজত বলা হয়৷ এজন্য শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর সালাম ফিরানোর পূর্বে প্রয়োজনীয় বিষয়ের কথা নিয়তের মধ্যে দোয়া পাঠ করতে হয়৷ দোয়াটি হলো-

اللهم ربنا اتنا في الدنيا حسنة وفي الاخرة حسنة وقنا عذاب النار

অথাৎঃ হে আল্লাহ! যে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতে ও আখিরাতে  মঙ্গল দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি দান করুন৷ 

লেখকের মন্তব্য 

নফল ইবাদত আল্লাহর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রিয় আমল৷ যারা মুমিন বান্দা, ফরজ নামাজের পাশাপাশি নফল নামাজ পড়ে৷ নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করার লক্ষ্যে, যারা কাজ করে তারাই দুনিয়া এবং আখিরাতে লাভবান হয়, ও জান্নাতের পথ সুগাম করে নেয়৷ এরাই জান্নাতে হাসতে হাসতে চলে যাবে৷ হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সবাইকে জান্নাতে যাওয়ার তৌফিক দান করুন৷  আমীন ৷


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url