শিশুদের মসজিদে যাওয়ার হাদিস

শিশুদের মসজিদে যাওয়ার হাদিস। শৈশবকাল থেকে শিশুকে প্রতিটি অভিভাবকের উচিত আল্লাহর ইবাদতে আগ্রহী করে তোলা৷ ইবাদতে আগ্রহী করে তোলার অন্যতম একটি উপায় হল শিশুকে নিয়মিত মসজিদে নিয়ে যাওয়া৷ এবং ধর্মীয় আবহাওয়া মান রয়েছে এমন পরিবেশে নিয়ে যাওয়া৷ শৈশবকাল এমন একটি সময় সে সময় শিশুকে যা শেখানো হবে তাই সে শিখবে৷

নামাজের সময় কাতারে শিশুরা যেভাবে দাড়াবে। মুসলমানদের একটি ইবাদত খানা৷ এখানে প্রতিদিন পাঁচবার নামাজ আদায় করা হয়৷ নামাজের আগে পরে অনেকেই জিকির আজগার, তালিম, হাদিস পাঠ, ইসলামের সাহিত্য পাঠ, কেউবা আবার বসে বসে কোরআন তেলাওয়াতও করেন৷

নামাজের শিশুরা কাতরে যেখানে দাঁড়াবে

মসজিদ হল এমন একটি জায়গা যেখানে আল্লাহর ইবাদত এবং আল্লাহর একত্ববাদ প্রকাশ করা হয়৷ তাই মসজিদের এমন পরিবেশে নিয়মিত শিশুকে নিয়ে গেলে, তার মনে ভালো একটা প্রভাব পড়তে পারে৷ এবং অতি সহজে আল্লাহকে চিনতে পারবে৷

আরো পড়ুনঃ নফল নামাজ পড়ার ফজিলত

বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায়, অনেক সাহাবী শৈশবে মসজিদে এসেছেন৷ এ ব্যাপারে একটি হাদিস উল্লেখিত আছে৷ বিখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু শৈশবের স্মৃতি বর্ণনা করে বলেন- 

এক রাতে আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেছনে বাম পাশে নামাজে দাঁড়িয়ে ছিলাম৷ তিনি নামাজরত অবস্থায় আমাকে টেনে নিজের ডান পাশে দাঁড় করান৷ (সহীহ বুখারী প্রথম খন্ড হাদিস নং ২৫৫)

নামাজের সময় শিশুরা কাতারের কোথায় দাঁড়াবে, এই নিয়ে অনেক সময় বিভিন্ন আলোচনা ও বিতর্ক দেখা যায়৷ এ বিষয়ে ইসলামী আইন ও ফিকাহ শাস্ত্রবিদদের মতে- 

নামাজ সম্পর্কে কোন ধারণা নেই, এমন শিশুকে প্রাপ্তবয়স্কদের পিছনের কাতারে দাঁড় করানো উত্তম৷ তবে নামাজ সম্পর্কে কিছু ধারনা আছে এবং ভালো-মন্দ বুঝতে পারে, এমন শিশুকে নাবালেক হলে তাদেরকে কাতারে বড়দের সাথে দাঁড় করানো যাবে৷ এতে করে নামাজেরও কোন ক্ষতি হবে না৷

অনেক ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্রবিদ বলেছেন- ছোট্ট শিশুরা বড়দের কাতারের পিছনে দাঁড়ালে, যদি দুষ্টামি করার আশঙ্কা থাকে৷ সেক্ষেত্রে তাদেরকে বড়দের সাথে কিংবা বড়দের কাতারের ফাঁকে ফাঁকে দাঁড় করানোই উত্তম৷

তবে সাধারণ নিয়ম হলো, শিশুদেরকে পিছনের কাতারে দাঁড় করানো ভালো৷ আর একেবারে ছোট্ট হলে, কোন ধরনের বুঝ হয়নি এমন শিশুদের পারত পক্ষে মসজিদে নিয়ে না আসাই ভালো৷ (সহীহ মুসলিম প্রথম খন্ড হাদিস নং ১৮১) 

শিশুদের মসজিদে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন হাদিসে এসেছে

শিশুদের সাথে করে নামাজের নিয়ে যাওয়া উত্তম৷ এতে করে শৈশব জীবন থেকে মসজিদে সালাত আদায়ের অভ্যাস গড়ে উঠবে৷ সে কারণে রসুলের যুগে শিশুদের মসজিদে নিয়ে যাওয়া হতো৷ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুর কান্না শুনে নামাজ সংক্ষিপ্ত করতেন৷ (সহীহ বুখারী হাদিস নং ৭০৯ এবং সহীহ মুসলিম হাদিস নং ৪৭০)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাতিকে নিয়ে জামায়াতে নামাজ আদায় এবং তিনি তাদেরকে কোলে নিয়ে জুমায়ার খুতবাও দিয়েছেন৷ তিনি নাতিকে নিয়ে জামায়াতে নামাজ আদায় করেছেন৷

হযরত আবু কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কে ইমামতি করতে দেখেছি৷ তখন নাতী তার কাঁধে উঠে যেত৷ যখন তিনি রুকুতে যেতেনতখন তাকে রেখে দিতেন৷ এবং যখন সেজদা হতো উঠতে তখন তাকে পুনরায় কাঁধে ফিরিয়ে নিতেন৷ (মিশকাত শরীফ হাদিস নং ৯৮৪)

একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার নামাজে আসতে দেরী করলে, মসজিদে আগত শিশু ও নারীরা ঘুমিয়ে পড়েছিল (সহীহ বুখারী হাদিস নং ৫৬৬ এবং সহীহ মুসলিম হাদিস নং ৬৩৮)

অতঃপর এটা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সেসময় শিশুরা মসজিদের নিয়মিত যেত৷ রাসুলের হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সে সময় থেকে ছোট বাচ্চাদের মসজিদে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে৷ তবে কোন শিশুর অনিয়ন্ত্রিত আচরণ যদি মুসল্লিদের জন্য কষ্টদায়ক হয়ে যায় তবে ওইসব শিশুদের মসজিদে আনা থেকে বিরত থাকাই উত্তম৷

লেখকের মন্তব্য

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ছোট বাচ্চাদের মসজিদে নিয়ে যাবেন। তারাই আগামীর ভবিষৎ। তারাই পরবর্তী মুসল্লী। এরই মধ্য দিয়ে আমরা ছোট বাচ্চাদের ভালো বাসলে আল্লাহ খুশি হন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url