হজরত ওমর ফারুক (রাঃ) জীবন কাহিনী
হজরত ওমর ফারুক (রাঃ) জীবন কাহিনী ৷ আপনি যদি এই বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন৷ তাহলে এই আর্টিকেলে আপনাকে স্বাগতম৷ তিনি ইসলামের মধ্যে প্রবেশের সাথে সাথে ইসলামের উন্নতি হতে লাগে। তিনি অত্যান্ত সাহসী ও দানবীর একজন ব্যক্তি ছিলেন। তাকে দেখে শয়তান ও ভয়ে পালিয়ে যেতো। নিম্নে এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো৷
হজরত ওমর ফারুক (রাঃ) জীবনী কমবেশি আমরা সবাই জানি। তিনি ইসলামের জন্য নিজের জান মাল বিলিয়ে দিয়েছেন। এবং তিনি অর্ধজাহানের খলিফা ছিলেন। তিনি খলিফা থাকা কালীন অপ্রয়োজনে রাষ্ট্রের একটি সুতার বস্ত্রও অপচয় করেননি। তার জীবনী আজঅবদি পর্য়ন্ত সাক্ষী হয়ে থাকবে ইতিহাসের পাতায়। নিম্নে আলোচনা করা হলো-
ভূমিকাঃ
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা৷ তিনি ছিলেন অর্ধ জাহানের শ্রেষ্ঠ শাসক এবং খলিফা৷ তার শাসন ক্ষমতা, রাজনৈতিক জ্ঞান, রাজ্য অবকাঠাম তার এই কীর্তি গুলো ইতিহাসের পাতায় চিরো স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমাদের মাঝে৷
আরো পড়ুন: নফল নামাজ পড়ার ফজিলত
ইসলাম গ্রহণের পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুইজন ব্যক্তির ব্যাপারে দোয়া করেছিলেন তার মধ্যে একজন ছিলেন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু৷ আল্লাহ সুবাহানাহু তা'আলা তাকে ইসলামের জন্য কবুল করেছেন৷ নিম্নে তা সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো
ওমর (রাঃ) পরিচিতিঃ
তার নাম ওমর, পিতার নাম খাত্তাব আর মাতার নাম হানতামা বিনতে হাশেম, বিশেষ কারণে তার দুইটা উপাধি ছিল, আমিরুল মু'মিনীন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু৷ এবং অপরটি ছিল ফারুক৷ ন্যায় পরায়ণতা কারণে তিনি ফারুক উপাধি পান৷ ফারুক শব্দের অর্থ সত্য-মিথ্যা পার্থক্যকারী৷
হযরত ওমর রা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মের ১০ বছর পর ৫৮৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন৷ শৈশব কাল থেকেই তিনি পিতার সাথে উটের রাখালের কাজে নিযুক্ত ছিলেন৷ মক্কার নিকটবর্তী "দাজনান" নামক মাঠের উট চড়াতেন৷
যৌবনকালঃ ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যৌবনকাল থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করেন৷ তিনি বক্তৃতা, বংশ তালিকা, যুক্তিবিদ্যা ইত্যাদি বিষয় শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি অত্যন্ত প্রখর মেধাবী ছিলেন।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণঃ
হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নবুওয়াতের ষষ্ঠ বছর ৬১৬ খ্রিস্টাব্দে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন৷ এ ব্যাপারে অনেক ইতিহাসবিদ উল্লেখ করেছেন৷
কেউ কেউ বলেন, তিনি নবুয়তের পঞ্চম বছর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন৷ আবার কারো কারো মতে, যখন ৪০ জন পুরুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি তখন ইসলাম গ্রহণ করেন৷ তারপর থেকে প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াতের কাজ শুরু হয়ে যায়৷
যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পাহাড়ের নিকটে অবস্থিত আরকামের ঘরে অবস্থান করছিলেন৷ সেখানে আল্লাহর রাসূলকে হত্যা করতে এসে হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ধর্ম গ্রহণ করেন৷
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে তার পারিবারিক বন্ধনঃ
হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর প্রিয় কন্যা হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে ৬২৫ খ্রিস্টাব্দে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিবাহ দেন৷ অপরদিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাতনি ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহার কন্যা উম্মে কুলসুমকে, হিজরী ১৭ সনে নগদ চল্লিশ হাজার দিরহাম প্রদান করে, তাকে বিবাহ করেন৷
মদিনায় হিজরঃ
হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রকাশ্যভাবে ২০ জন সাহাবী নিয়ে মদিনায় হিজরত করেন৷ তিনি হিজরতের পূর্বে প্রথমে কাবা ঘর তাওয়াফ করেন৷ এবং সমস্ত কুরাইশদের একত্রিত করেন৷
তিনি ওপেন চ্যালেঞ্জ করে বললেন, কে আছো? নিজ সন্তানকে এতিম, স্বীয় স্ত্রীকে বিধবা এবং মায়ের কোল খালি করতে চাও৷ সে যেন এই উপত্যকার অপর প্রান্তে আমার সাথে মুখোমুখি হয়৷ তার এই চ্যালেঞ্জ কেউ গ্রহণ করেনি৷ তিনি প্রকাশ্যভাবে দুঃসাহস দেখিয়ে মদিনায় হিজরত করেন৷
জিহাদে অংশগ্রহণঃ
হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বড় বড় বেশ কয়েকটি যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন৷ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তিনি ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহ করেন৷ ৬২৫ খ্রিস্টাব্দে ওহুদের যুদ্ধে৷ ৬২৭ খ্রিস্টাব্দে খন্দকের যুদ্ধে৷ ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে হুদায়বিয়ার ও খাইবারের যুদ্ধে৷ এবং ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে মক্কা বিজয়ের সময় তিনি অংশ নেন৷ এরপর বনু নাদির গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযানেও অংশ নিয়েছেন৷ তিনি তাবুক যুদ্ধে তার সম্পদের অর্ধেক দান করে দিয়েছিলেন৷
হযরত ওমর (রাঃ) বর্ণিত হাদিস সংখ্যাঃ
তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সর্বমোট ৫৩৯ টি হাদিস বর্ণনা করেন৷ তবে তিনি বেশিরভাগ রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে বেশি হাদিস বর্ণনা করতে পারেননি৷ তার বর্ণিত বেশ কয়েকটি হাদিস বুখারী এবং মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে৷
হযরত ওমর (রাঃ)-এর ইসলামের জন্য কিছু অবদানঃ
হযরত ওমর (রাঃ) ইসলামের জন্য অসংখ্য অবদান রেখে যান৷ তিনি যখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তখন থেকে ইসলামের উন্নতির সাধিত হতে থাকে৷ তার রেখে যাওয়া ইসলামের জন্য কিছু অবদান নিম্নে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো-
হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর পরামর্শে রাসুল (সাঃ) কাবা চত্বরে মুসলমানদের নিয়ে জামাতবদ্ধ ভাবে নামাজ আদায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন৷ আর এটা ছিল মুসলমানদের প্রথমবারের মতো কাবা চত্বরে প্রকাশ্যে নামাজ আদায়৷
হযরত ওমর রাঃ এবং আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ রা স্বপ্নের ভিত্তিতে নামাজের জন্য আজান চালু করা হয়৷
হযরত ওমর রাঃ পরামর্শে আবু বক্কর সিদ্দিক রাঃ প্রথমবারের মতো কুরআন সংকলনের উদ্দেশ্য গ্রহণ করেন৷ এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে জায়েদ বিন সাবেত রাঃ নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেন৷
হযরত ওমর (রাঃ)র শাসনামূলে তৎকালীন বিশ্বের দুই পরাশক্তি পারসিক সাম্রাজ্য এবং রোমান বায়জান্টানীয় সাম্রাজ্যকে তার নেতৃত্বে মুসলমানরা চূড়ান্তভাবে বিজয় লাভ করে৷ এবং এ সমস্ত অঞ্চলসমূহে মুসলিম শাসনের অধিপতি বিস্তার করেন৷
হযরত ওমর (রাঃ) ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেম ভ্রমণ করেন৷ এবং রোমানদের হাতে ধ্বংস প্রাপ্ত অসংখ্য নবী-রাসূলের স্মৃতিচারণ বাইতুল মুকাদ্দাস তথা মসজিদুল আকসা পুনর্নির্মাণ করেন
হযরত ওমর রা ন্যায়বিচারক ছিলেনঃ
হযরত ওমর (রাঃ) নিজের সম্পদ হতে আত্মীয়-স্বজন, গরিব, অভাবী, দুর্বল ব্যক্তিদের সাহায্য করতেন৷ তিনি এভাবে নিজের প্রিয় সম্পদ হতে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করতেন৷
এ ব্যাপারে পবিত্র আল কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেন-
তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত নেকি অর্জন করতে পারো না৷ যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের প্রিয় সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান করো৷ আর তোমরা যা দান করবে আল্লাহ সে ব্যাপারে বেখবর থাকবেন না৷ (সূরা আল ইমরান আয়াত ৯২)
হযরত ওমর (রাঃ) একজন বৃদ্ধ, অন্ধ ব্যক্তিকে ভিক্ষা করতে দেখলেন৷ সে ছিল একজন ইয়াহুদী৷ তিনি তাকে ভিক্ষা করার কারণ জানতে চাইলেন৷ সে বলল, আমি একজন বৃদ্ধ মানুষ, কাজ কাম করতে পারিনা৷ সে বলল, নিজের খরচ এবং জিজিয়া করের জন্য ভিক্ষা করতে হচ্ছে৷
তিনি তার হাত ধরে নিয়ে গেলেন এবং বায়তুল মালের দায়িত্ব রত ব্যক্তিকে সেখান থেকে তাকে কিছু সাহায্য করার কথা বললেন৷ তিনি বলেন, এরকম বৃদ্ধ অসহায় মানুষদের থেকে জিজিয়া কর মওকুফের ঘোষণা করে দিতে। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে এসেছে
নিশ্চয়ই দান খয়রাত ফকির মিসকিনদের জন্য (সুরা তাওবা আয়াত ৬০)
হযরত ওমর (রাঃ) চরিত্রঃ
ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ওমর রাঃ একজন কঠোর ব্যাক্তি ছিলেন৷ তবে ইসলাম গ্রহণ করার পর তিনি একজন দায়িত্বশীল, নম্র-ভদ্র ব্যাক্তি ছিলেন৷ তার চরিত্র ছিল ফুলের মত৷
তিনি খলিফা হওয়ার পর নিজের প্রতিশোধের জন্য কাউকে আক্রমণ করতেন না৷ তবে কেউ যদি ইসলাম পালনে কঠোরতা করত তাহলে তাকে উপদেশ দিতেন এবং শাসন করতেন৷ তিনি অসহায় ব্যক্তিদের খোঁজখবর নিতেন৷
একদা একদিন ওমর রাঃ কাছে জৈনক এক ব্যক্তি আসলেন৷ তিনি তখন জনগণের গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজে ব্যস্ত ছিলেন৷ সে ব্যক্তি এসে ওমর রাঃ তার সাথে যেতে বললেন তার একটি কাজ সমাধান করে দিতে৷ তিনি তাকে প্রহার করে তাড়িয়ে দিলেন৷
এরপর বললেন, ওমর যখন তোমাদের কাছে যায় তখন তোমরা পাত্তা দাও না, এখন কেন এসেছো৷ এর কিছুক্ষণ পর ওমর রাঃ ঐ ব্যক্তিকে ডেকে পাঠান৷ এবং তার হাতে একটি লাঠি ধরিয়ে দিয়ে বলেন, তুমি আমাকে প্রহার কর৷
কেননা আমি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি৷ পরবর্তীতে ওই ব্যক্তির কাজ তিনি সমাধান করে দেন৷ এইভাবে তার নম্র ভদ্রতা প্রকাশ পায়৷ খিলাফতের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি কারো সাথে কোনদিন কঠোরতা করেননি৷
ওমর (রাঃ) ইন্তিকালঃ
ওমর রাঃ ৩রা নভেম্বর ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে ২৬শে জিলহজ্জ ২৩ হিজরী৷ পিরুজ নাহাওয়ান্দি (আবু লুলু নামে পরিচিত) ক্রীতদাসের হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শাহাদাত বরণ করেন৷
তার হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ইতিহাসবিদরা তেমন কোনো কারণ খুঁজে পাননি৷ তবে তিনারা ধারণা করেন আবু লুলু তার মনিব মুগিরা তার কাছ থেকে বেশি কর ধার্য করতো৷ এ ব্যাপারে ওমর রাঃ সমাধান করে দিলেন৷
তিনি মনিব মুগিরার পক্ষে রায় দিলেন৷ এর জন্য আবু লুলু ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি মসজিদে নববীতে ফজরের নামাজের ইমামতির সময় পিছনের দিক থেকে ছরি আঘাত করে আহত করে৷
এরপর তিনি তিনদিন আহত অবস্থায় জীবিত ছিলেন৷ তারপর তিনি শাহাদাত বরণ করেন৷ সকলের অনুমতি ক্রমে, হযরত মুহাম্মদ সাঃ এবং আবু বকর সিদ্দিক রাঃ কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়৷
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url