মসজিদুল আকসার নির্মাণকাল

মসজিদুল আকসা তথা বাইতুল মুকাদ্দাসের ইতিহাসে নবী রাসুলের বরকতময় একটি দেশ৷ যেখানে অসংখ্য নবী রাসুল এসেছেন৷ আজ এই আর্টিকেল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব৷ যারা এ ব্যাপারে আগ্রহী তাদের জন্য এই আর্টিকেলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে৷

মসজিদুল আকসার নির্মাণকাল

মসজিদুল আকসার নির্মাণ কাল সম্পর্কেও আমরা এই আর্টিকেলের আলোচনা করব৷ তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে, মসজিদুল আকসা তথা বায়তুল মুকাদ্দাস ও মসজিদুল আকসার নির্মাণকাল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি৷ নিম্ন বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

ভূমিকা

জেরুজালেম নগরীতে অবস্থিত ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ, মসজিদুল আকসা তথা বায়তুল মুকাদ্দাস৷ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা'আলা মসজিদুল আকসার সম্পর্কে তুলে ধরেছেন৷ আর এখান থেকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মেরাজ সংঘটিত হয়েছিল৷

আরো পড়ুনঃ মহীয়সী নারী বিবি আছিয়ার জীবন কাহিনী

যখন ইসলামের সূচনা হয়েছিল তখন মুসলিমরা বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করতেন৷ তাই এই মসজিদটি প্রথম কেবলা নামে পরিচিত৷ বিভিন্ন মুসলিম এই পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন যেমন, উমাইয়া আইয়ুবী, ওসমানী সেলজুক সহ আরও অনেকে৷

আরো পড়ুনঃ সালাতুল হাজতের নামাজ

১০৯৯ খ্রিস্টাব্দে বায়তুল মুকাদ্দাসকে ক্রুসেডরা দখল করে নেয়৷ তারা পবিত্র বায়তুল মোকাদ্দাসে প্রবেশ করে এবং মুসলিমদের ওপর নির্মম অন্যায় অত্যাচার শুরু করে ৷

বায়তুল মুকাদ্দাসকে ১১১৯ খ্রিস্টাব্দে নাইটস টেম্পলাররা তাদের সদর দপ্তর করে৷ তারা এই মসজিদুল আকসাকে ঘোড়ার আস্তাবল ও রাজপ্রাসাদ হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে৷

সেই সময়ের একজন মুসলিম বীর যার নাম সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী, তিনি ১১৮৭ সালের ২রা অক্টোবর শুক্রবার জেরুজালেম ও বাইতুল মুকাদ্দাস জয় করেন৷ এটি ইসলামের ইতিহাসের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়৷

মসজিদুল আকসার নির্মাণকাল

বাইতুল মুকাদ্দাস এর নির্মাণকাল সম্পর্কে একটি হাদিস প্রমাণ আছে৷ হযরত আবু জর গিফারী রাদিয়াল্লাহু আনহু আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করলেন ইয়া রাসুল, আল্লাহ ইয়া হাবিব আল্লাহ,  বিশ্বের সর্বপ্রথম নির্মিত মসজিদ কোনটি?

তিনি বললেন, বিশ্বের সর্বপ্রথম নির্মিত মসজিদুল হারাম৷ তিনি বললেন তারপর কোনটি? তিনি বললেন মসজিদুল আকসা তথা বায়তুল মুকাদ্দাস৷ তিনি বললেন এই দুইয়ের মাঝে নির্মাণের পার্থক্য কত? রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বললেন চল্লিশ বছর (সহিহ বুখারী ৩৪২৫)

খ্রিষ্টপূর্ব  দুই হাজার বছর পূর্বে বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম ঐতিহাসিক মসজিদুল আকসা নির্মিত হয়৷ 

মসজিদুল আকসার আয়তন

ফিলিস্তিনের জেরুজালেম শহরে অবস্থিত বিশ্বের দ্বিতীয় মসজিদুল আকসার বিল্ডিং ১৪৪ একর ভূমির উপর অবস্থিত৷ যা প্রাচীনতম জেরুজালেম শহরের ১৬. ৬ ভাগের এক ভাগ৷ এর পূর্ব দিকে ৪৬২ মিটার৷ পশ্চিমে ৯৪১মিটার৷ দক্ষিণে ২৮১ মিটার৷ এবং উত্তরের ৩১০ মিটার প্রশস্ত৷

মসজিদুল আকসার স্থাপনা ব্যতীত উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ান ৭২ হিজরীতে সোনালী বর্ণের কুব্বাতুস সাখরা নির্মাণ করেন৷ এবং এর পাশে খলিফা ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল মালেক কিবলি মসজিদ নির্মাণ করেন৷

মুসলমানদের প্রথম কেবলা

ইসলামের প্রথম যুগে যখন রাসূল (সাঃ) এর উপর নামাজ ফরজ হয়েছিল৷ তখন তিনি সাহাবীদের নিয়ে মসজিদে আকসার দিকে মুখ ফিরে নামাজ আদায় করতেন৷ 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের পর মদিনায় ১৬/ ১৭ মাস বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ ফিরে নামাজ আদায় করেন৷ পরবর্তী সময়ে রাসুল (সাঃ) এর আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আল্লাহ তা'আলা কেবলা ঘুরিয়ে মসজিদুল হারামের দিকে করে দেন৷

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূল (সাঃ) মদিনায় অবস্থানকালীন বাইতুল্লাহ থাকা শর্তেও তিনি বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ ফিরে নামাজ আদায় করতেন৷ মদিনায় হিজরতের পর ১৬ মাস পর্যন্ত এভাবে নামাজ আদায় করেন৷ এরপর আল্লাহ তায়ালা কেবলা ঘুরিয়ে বাইতুল্লার দিকে করে দেন৷ (সহিহ বুখারী)

কেবলা পরিবর্তন

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পরও বাইতুল মুকাদ্দাস তথা মসজিদুল আকসার দিকে, মুখ ফিরে নামাজ আদায় করতেন৷ তিনি একদিন জিব্রাইল আলাইহিস সালামকে বললেন, আমি আশা করি, আল্লাহ যেন ইহুদীদের দিকে মুখ ফিরে নামাজ আদায় করতে না হয়৷ 

তিনি আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করলেন৷ এবং কেবলা পরিবর্তনের আশায় বারবার আসমানের দিকে তাকাচ্ছিলেন৷ তখন আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত অবতীর্ণ করে বলেন-

আমরা বারবার তোমাকে আকাশের দিকে তাকাতে দেখছি৷ নাও, এবার তোমার মুখ কিলার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে৷ যাকে তুমি পছন্দ করো মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও৷ আর তোমরা যেখানেই যাওনা কেন মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরে নামাজ আদায় করতে থাকো৷ 

এই সমস্ত লোক যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল৷ তারা খুব ভালো করে জানে যে, কিবলা পরিবর্তন হয়েছে৷ এসব রবের পক্ষ থেকেই এসেছে৷ এরা যা বলছে এবং করছে সব কিছু ব্যাপারে আল্লাহ গাফেল নন৷ (সূরা বাকারা আয়াত-১৪৪)

আর এটা ছিল সকল সম্প্রদায়ের জন্য পরীক্ষা৷ যারা ঈমান আনয়ন করে তার উপর অবিচল ছিল৷ তারাই কেবল মাত্র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল৷ এবং যারা মুনাফিক, মুশরিক, ইহুদী সম্প্রদায় তারা এটা বিশ্বাস করেনি৷

মুনাফিকরা বলতে লাগলো যে, প্রথম কেবলা সঠিক থাকলে সে এতদিন সত্যটা পরিত্যাগ করেছে৷ আর দ্বিতীয়টি সঠিক হলে প্রথমে সে বাতিলের উপর ছিল৷ এভাবে মুনাফিকরা আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের উপর মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে থাকে৷

এ ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা বলেন- নিশ্চয় এটা অর্থাৎ কিবলা পরিবর্তন অনেক কঠিন ব্যাপার৷ কিন্তু তাদের জন্য নয়, যাদেরকে আল্লাহ তা'আলা সঠিক পথ প্রদর্শন করেছেন৷ (সূরা বাকারা আয়াত ১৪৩)

এটা ছিল মুমিন বান্দার জন্য কঠিন পরীক্ষা৷ আল্লাহ তাআলা এ পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করেছেন কে রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করে৷ আর কে মুখ ফিরিয়ে নেয়৷ যেহেতু একটি কেবলার বিষয়৷ তাই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷

ইসরা ও মিরাজের ভূমিকা

ইসরা হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাত্রিকালীন ভ্রমণ৷ এটি ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা৷ যা মেরাজের ঘটনা নামে পরিচিত৷ এই রাতে জিব্রাইল আলাইহিস সাল্লাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সঙ্গে নিয়ে সাত আসমান ভ্রমণ করেন৷ এবং এই রাত্রে জান্নাত জাহান্নাম প্রদর্শন করানো হয়৷ তারপর তিনি আল্লাহর দিদার লাভ করেন৷

ফিলিস্তিনের জেরুজালেম শহরে অবস্থিত বাইতুল মোকাদ্দাস থেকে তিনি এ যাত্রা শুরু করেন৷ এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল নবীর নামাজের ইমামতি করেন৷ এ ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেন-

পবিত্র সত্তা তিনি, যিনি এক রজনীতে নিজের বান্দাকে বাইতুল্লাহ থেকে বাইতুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন৷ এবং সেখানকার ভূমি মহিমান্বিত ও বরকতময় করেছেন৷ তিনি এমন সত্তা, যিনি সব শোনেন এবং জানেন৷ (সূরা বনী ইসরাইল আয়াত-১)

অসংখ্য নবী রাসুলের স্মৃতি বিজলিত

অসংখ্য নবী রাসুল মসজিদুল আকসার আশেপাশে জন্মগ্রহণ করেছেন৷ আবার অনেক নবী রাসুল এমন ছিলেন যে, অন্য অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করার স্বার্থেও আল্লাহর হুকুম জেরুজালেমে হিজরত করেন৷ সেজন্যই এই স্থান অসংখ্য নবী রাসুলের স্মৃতি বিজলিত ছিল৷ 

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেন, আর আমি ইব্রাহিম ও লুত আলাইহিস সালামকে বাঁচিয়ে এমন দেশের দিকে নিয়ে গেলাম যেখানে আমি বিশ্ববাসীর জন্য বরকত রেখেছি৷ (সূরা আম্বিয়া আয়াত ৭১)

লেখক এর মন্তব্য

উপরোক্ত যে বিষয়ে অর্থাৎ মসজিদুল আকসা তথা বাইতুল মুকাদ্দাস সম্পর্কে আলোচনা করেছি৷ এর মধ্যে কোন কিছু বাদ পড়লে আমাদেরকে আপনার মূল্যবান কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে দিবেন৷ আর মুসলমানদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো মসজিদুল আকসা৷ এটার ব্যাপারে আমাদের প্রত্যেকেরই জ্ঞান রাখা আবশ্যক৷


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url