বাদশাহ জুলকারনাইন ও ইয়াজুজ মাজুজের পরিচয়
বাদশাহ জুলকারনাইন ও ইয়াজুজ মাজুজের পরিচয় সম্পর্কে আমরা এই আর্টিকেলে জানব যারা এ সম্পর্কে জানতে চান তাদের জন্য এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে চলে নিম্নে আমরা এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ ৷
জুলকারনাইন ও ইয়াজুজ মাজুজের ইতিহাস সম্পর্কে আমরা জানতে পারবো৷ এবং তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য হযরত ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পৃথিবীতে পাঠাবেন৷ তাহলে চলুন, আর কথা না বাড়িয়ে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক৷
ভূমিকা
পবিত্র আল কুরআনের সূরা কাহাফের ৮৩ থেকে ৯৯ আয়াতে ন্যায় পরায়ন বাদশা জুলকারনাইন সম্পর্কে আলোচনা এসেছে৷ তিনি কোন নবী-রাসূল ছিলেন না৷ বরং তিনি ছিলেন একজন ন্যায় পরায়ণ শাসক৷ কথিত আছে, তিনি পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দেশগুলো বিজয় করেছিলেন৷
আরো পড়ুনঃ মসজিদুল আকসার নির্মাণকাল
তিনি অন্যায় অত্যাচারী বাদশা কে ধরে ধরে সাজা দিতেন৷ এরই মধ্যে ইয়াজুজ মাজুজ দ্বারা অত্যাচারিত এক জাতির সন্ধান পান৷ তিনি সেখানে একটি শিশা ঢালা প্রাচীর তৈরি করে দিয়ে তাদের হাত থেকে সে জাতিকে রক্ষা করেন৷
পৃথিবীর ইতিহাসে আজ অব্দি পর্যন্ত সেই প্রাচীর অক্ষত অবস্থায় রয়েছে৷ এবং কিয়ামত পর্যন্ত সে প্রাচীর অক্ষত অবস্থায় থাকবে৷ এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের সূরা কাহাফের ৮৩ থেকে ৮৬ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বর্ণনা করেছেন৷
ন্যায়পরায়ণ শাসক জুলকারনাইনের সম্পর্কে কুরআনে বর্ণিত
বাদশাহ জুলকারনাইনের ব্যাপারে হাদিসে উল্লেখ আছে- হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জুলকারনাইনের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে কিছু বর্ণনা তিনি তুলে ধরেন এ ব্যাপারে পবিত্র আল কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-
আরো পড়ুনঃ হজরত ওমর ফারুক (রাঃ) জীবন কাহিনী
হে মোহাম্মদ! তারা তোমার কাছে জুলকারনাইন সম্পর্কে জানতে চায়৷ তুমি তাদেরকে বলে দাও৷ আমি তার সম্পর্কে কিছু কথা তোমাকে শোনাচ্ছি৷ এরপরে আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন আমি থেকে পৃথিবীতে ক্ষমতা দিয়েছিলাম এবং আমি তাদের উপকরণ দিয়েছিলাম দিয়েছিলাম (সূরা কাহাফ আয়াত ৮৩-৮৪)
বাদশাহ জুলকারনাইনের সংক্ষিপ্ত পরিচয
বাদশাহ জুলকারনাইনের নাম সম্পর্কে অনেকের মাঝে মতভেদ রয়েছে৷ কেউ বলেছেন তার মাথায় দুই গুচ্ছ চুল ছিল৷ অথবা তার মাথায় শিং এর মত দুইটি চিহ্ন ছিল৷ অথবা তার মাথায় দুইটি বড় বড় ক্ষত ছিল৷
আবার কেউ কেউ বলেন, তিনি পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে পরিচালনা করেছেন এবং উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত হয়েছিল৷ তিনি একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দা ছিলেন৷
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) একটি বরাতে উল্লেখ করেছেন৷ বাদশাহ জুলকারনাইন ছিলেন মিশরের অধিবাসী৷ তার নাম সেকেন্দার৷ আবার তাকে আলেকজান্ডার নামেও ডাকা হয়৷ তিনি ছিলেন ইউনান এবং ইয়াসেফ ইবনে নূহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের সন্তান৷
জুলকারনাইন সম্পর্কে তাফহীমুল কুরআনে মোট চারটি কথা এসেছে
- তাকে ইহুদীরা শিংঙ্গা ওয়ালা উপাধি নামে ডাকত৷
- তিনি এক জাতিকে শিশা ঢালা প্রাচীর তৈরি করে দিয়ে ইয়াজুজ মাজুজের হাত থেকে সেই জাতিকে রক্ষা করেন।
- তার বিজয় অভিযান পূর্ব থেকে পশ্চিমে পরিচালিত হয়৷ এবং উত্তর দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত হয়৷
- তিনি একজন ন্যায়পরায়ন শাসক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন
ইয়াজুজ মাজুজের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
এক হাদিস থেকে ইয়াজুজ মাজুজের সম্পর্কে জানা যায়৷ হযরত আবু সাঈদ খুদুরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইয়াজুজ মাজুজ হলো আদি পিতা হযরত আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বংশধর৷ (এই হাদিসটি সহিহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)
আবার কেউ কেউ বলেন, ইয়াজুজ মাজুজ হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশধর দুটি জাতি৷ পবিত্র কুরআনে এদের ব্যাপারে স্পষ্ট কোন আলোচনা করা হয়নি৷ তবে হাদিসে এদের শারীরিক গঠন প্রণালী সম্পর্কে বলা হয়েছে৷ এরা এশিয়ার পূর্বাঞ্চলে বসবাস করে৷
তাদের আশেপাশের দেশগুলোতে বিশাল দলবদ্ধ নিয়ে আক্রমণ এবং লুটোরাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো৷ ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশের উভয়দিকে আক্রমণ করে মানুষদেরকে হত্যা করত৷ এরা খুব দুর্ধর্ষ ছিল৷ কোন মানুষ এদের সামনে দাঁড়াতে সাহস পেত না৷
ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কে কিছু কথা
কিয়ামত দিবসে বড় আলামতের অন্যতম আলামত ইয়াজুজ মাজুসের আবির্ভাব৷ তারা কিয়ামত দিবসে হযরত ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময় পৃথিবীতে আগমন করবে৷ তারা মানুষদের অন্যায় ভাবে হত্যা করার কারণে, ন্যায় পরায়ন বাদশাহ জুলকারনাইন তাদেরকে সুবিশাল শিশা-ঢালা প্রাচীরের অপর প্রান্তে আবদ্ধ করে রাখেন৷
তারপর সেখান থেকে তারা আজ অব্দি পর্যন্ত আর পৃথিবীতে আসতে পারেনি৷ আর এ ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা (সূরা কাহাফ এর ৯২ থেকে ৯৭ আয়াতে) আলোচনা করেছেন।
ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন তারা হযরত ঈসা আঃ এর আবির্ভাবের পরপরই প্রাচীর ছেদন করে পৃথিবীতে চলে আসবে এবং আল্লাহর আদেশে ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমিনদের নিয়ে তুর পাহাড়ে অবস্থান করবেন।
তাদের ঘাড় ও পিঠে এক ধরনের সংক্রমণ পোকার সৃষ্টি হবে৷ যার ফলে সবাই মারা যাবে৷ মৃত ব্যক্তি জমিনে পড়ে থেকে দুর্গন্ধ ছড়াবে৷ এ সময় আল্লাহ তাআলা মুষলধারে বৃষ্টি দিয়ে পরিষ্কার করে দিবেন৷ এভাবেই ইয়াজুজ মাজুজের ধ্বংস হয়ে যাবে।
ইয়াজুজ মাজুজ প্রাচীর ভেঙ্গে যেভাবে বেরিয়ে আসবে
জুলকারনাইনের নির্মিত সুদীর্ঘ বিশাল শিশা ঢালা প্রাচীরের মেয়াদ দীর্ঘকাল হওয়ার কারণে, ইয়াজুজ মাজুজ সম্প্রদায় পৃথিবীতে আসতে পারেনি৷ যার কারণে তারা সেখানে নিজস্বভাবে জীবন যাপন করছে৷ আর প্রাচীরকে ভাঙ্গার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে৷
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- অতঃপর ইয়াজুজ মাজুজ সম্প্রদায় সেই সুবিশাল প্রাচীর ছেদ করার কাজে লিপ্ত হয়৷ তখন তাদের মধ্য থেকে একজন বলে ওঠে আজ অনেক কাজ করেছি৷ আজ আর না! আগামীকাল করব৷ তখন আল্লাহ তাআলা সে প্রাচীরকে পূর্বের চেয়ে বেশি শক্ত করে দেন৷
যখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সেখান থেকে বের হওয়ার অনুমতি দিবেন৷ তখন তাদের মধ্য থেকে একজন বলে উঠবে৷ আজ অনেক কাজ হয়েছে! আল্লাহ যদি চাহেন তাহলে আগামীকাল ছেদ করব৷
অতঃপর আল্লাহ তাআলা প্রাচীর ভেঙ্গে পৃথিবীতে আসার অনুমতি দিবেন৷ মানুষ তাদের আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে দূরদূরান্তে চলে যাবে৷ তারা পৃথিবীতে কিছুদিন থাকার পর ধ্বংস হয়ে তাদের শরীর জমিনে মিশে যাবে৷ (তিরমিজি, মুসনাদে আহাম্মদ এই হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে)
লেখক এর মন্তব্য
পরিশেষে বলা যেতে পারে, জুলকারনাইন ও ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কে উপরোক্ত আলোচনা করা হলো৷ এর মধ্যে যাবতীয় ভুল ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে আপনারা আপনাদের সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে আমাদের জানিয়ে দিন৷ এবং আমরা আপনার মন্তব্যটি যত্ন সহকারে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ৷
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url