ছবিসহ রাজশাহী শহরের দর্শনীয় স্থানসমূহ

ছবি সহ রাজশাহী শহরের দর্শনীয় স্থানসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো। যারা এ সমস্ত বিষয় নিয়ে জানতে আগ্রহী, তাদেরকে আমাদের এই আর্টিকেলে স্বাগতম। এ আর্টিকেলের মাধ্যমে রাজশাহীর কিছু বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানতে পারবো। নিম্নে বর্ণনা করা হলো-

ছবিসহ রাজশাহী শহরের দর্শনীয় স্থানসমূহ

রাজশাহী শহরে ঘোরার অনেক জায়গা রয়েছে। মন খারাপ থাকলে সেখানে গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। তাহলে মনের মধ্যে একটি প্রশান্তি কাজ করবে। এভাবে আমরা রাজশাহীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখতে পারি৷ তাহলে চলুন, আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।

ভূমিকা

রাজশাহী একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক শহর৷ সমগ্র বাংলাদেশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী শহর। এবং রাজশাহী শহরকে শিক্ষা নগরী বলে অবহিত করা হয়। যা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও সুনাম অর্জন করেছে। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানসমূহের জন্য রাজশাহী সৌন্দর্যের প্রতীক বহন করে।

আরো পড়ুনঃ ইউসুফ (আঃ)এর জীবন কাহিনী

রাজশাহী শব্দটি দুই ভাষা থেকে উদ্ভব৷ "রাজ" সংস্কৃত এবং "শাহী" ফরাসি ভাষা থেকে উদ্ভব৷ এই দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত রাজশাহী৷ রাজা গনেশ্বরের সময় (১৪১৪ থেকে ১৪১৮) এর উদ্ভব ঘটেছিল। বোয়ালিয়া ও রামপুরা দুটি গ্রামের সমন্বয়ে রাজশাহী নামের উদ্ভব৷ বর্তমান এই শহরটি রাজশাহী নামেই জনপ্রিয়। বর্তমানে বোয়ালিয়া নামে একটি থানাও রয়েছে।

রাজশাহী শহরে ঘোরার জায়গা

বর্তমানে রাজশাহী শহরে ঘোরার জন্য অনেক জায়গা রয়েছে। মন মাইন্ড খারাপ থাকলে এই সমস্ত জায়গায় ঘুরলে অন্তরে অনেক প্রশান্তি মিলবে। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।

আরো পড়ুনঃ হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী।

১| আই বাঁধঃ রাজশাহী কোট থেকে অল্প কিছু পশ্চিমে অবস্থিত আই বাঁধ৷ পদ্মার ধারে অবস্থিত এর মনোরম পরিবেশ দেখে মন ছুয়ে যাবে। এবং আই বাঁধে Fry zone নামে একটি হোটেল রয়েছে। যেখানে সামুদ্রিক বিভিন্ন মাছ ভেজে কাস্টমারদের তারা সার্ভিস দিয়ে থাকেন।

আই বাঁধ

২| জয় সিলিকন টাওয়ারঃ

এটি আই বাঁধের পাশে অবস্থিত। বর্তমানে এটিও ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। এর সুবিশাল বিল্ডিং এবং এর সামনে বিশাল আঙ্গিনা দর্শনার্থীর মন কেড়ে নেবে। এই স্থানগুলি রাতের আলোক সজ্জায় আরো সুন্দর হয়ে ওঠে।

জয় সিলিকন টাওয়ার

৩| টি বাঁধঃ রাজশাহী শহরের দক্ষিণ পাশে পদ্মার ধারে অবস্থিত। অথবা রাজশাহী পুলিশ লাইনের দক্ষিণ এবং পূর্ব কন্যারে অবস্থিত৷ এটি ইংরেজি "টি" বর্ণমালার মত দেখতে। টি বাঁধের সৌন্দর্য হল "টি" এর  মাথায় ঢেউ উপচে পড়ে। এখানে লোকজন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘোরাঘুরি করে। এবং শুক্রবার  ছুটির দিন লোকে লোকালয় হয়ে যায়। এই স্থানের সৌন্দর্য সকলের মন কেড়ে নেবে।

টি বাঁধ

৪। পদ্মা গার্ডেনঃ পদ্মা নদীর কুল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে পদ্মা গার্ডেন। পদ্মা গার্ডেনের উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটার নিয়ে গড়ে উঠেছে বিনোদন কেন্দ্র। সেখানে ছোট ছোট রেস্তোরাঁও রয়েছে৷ আর সেখানকার সুন্দর পরিবেশ দর্শনার্থীর মন ভালো করে দেবে।
পদ্মা গার্ডেন
                                                            
৫। শহীদ জিয়া শিশু পার্কঃ রাজশাহী শহরের প্রাণ কেন্দ্রে গড়ে উঠেছে শহীদ জিয়া শিশু পার্কটি। এ পার্কের সবচেয়ে সুন্দর্য বহন করে দিঘির মাঝখানের কুমির পাহাড়টি। এবং এই পার্কটি খোলা থাকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। যার প্রবেশ মূল্য মাত্র ২৫ টাকা।
শহীদ জিয়া শিশু পার্ক

৬| প্যারিস রোড রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ঃ বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর রাস্তা গুলির মধ্যে এটি একটি অন্যতম রাস্তা। এই রাস্তায় (রাজশাহী শহরে বসবাসরত) ঘোরেরনি এমন লোক সংখ্যা খুবই কম। এই রাস্তার দুই ধারে সারিবদ্ধ হয়ে অনবর্দ্ধ দাঁড়িয়ে আছে সবুজের সমারহ গাছপালা গুলি।

৭| রাজশাহী কলেজঃ রাজশাহী শহরের সাহেব বাজার খ্যাত এর অল্প পশ্চিমে অবস্থিত এই কলেজটি। এই কলেজের বিল্ডিং প্রশংসার ও সৌন্দর্যের  দাবিদার। এর মূল ভবনটি এখনো পুরনো স্থাপত্য রীতিতেই রয়েছে। এই কলেজের প্রতিটি কারু কাজ ভ্রমণকারীর মন বিমোহিত করবে।

রাজশাহী কলেজ

৭| এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান পার্ক ও চিড়িয়াখানাঃ এটি রাজশাহী শহরের দক্ষিণে পদ্মার ধারে অবস্থিত।    এটি রাজশাহী শহরে শিশু পার্ক ও বিনোদনের অন্যতম স্থান। যার প্রবেশের মূল্য মাত্র ২৫ টাকা। কিন্তু বর্তমানে সংস্কারের কাজ চলমান থাকার কারণে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ।

এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান পার্ক ও চিড়িয়াখানা

৮। বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরঃ রাজশাহী শহরের প্রথম, সৌন্দর্য মন্ডিত স্থান হল বরেন্দ্র জাদুঘর। ১৯১০ সালে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়। এই জাদুঘর নির্মাণে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল নাটোরের দিঘাপতিয়া খেত শরৎ কুমার রায় এবং অক্ষয় কুমার মৈত্র।

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর

রাজশাহী জেলার দর্শনীয় স্থান

পুঠিয়া রাজবাড়িঃ রাজশাহী বিভাগীয় শহর হতে ৩০/৩২ কিলোমিটার পূর্বে নাটোর অভিমুখে পুঠিয়া উপজেলায় অবস্থিত। মহারানী হেমন্ত কুমারী দেবী ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে ইন্দ্র ইউরোপীয় রীতিতে, দ্বিতল বিশিষ্ট এই রাজবাড়ীটি নির্মাণ করেন।

সাফিনা পার্ক লিমিটেডঃ রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায় এই পার্কটি অবস্থিত। এই পার্কটি গোদাগাড়ী উপজেলা থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার উত্তরে দ্বিগ্রাম খেজুরতলায় অবস্থিত। প্রায় ৪০ বিঘা জমির উপর এই পার্কটি নির্মিত হয়। একই উপজেলার বালিয়াঘাটা গ্রামের দুই সহোদর ভাই সাইফুল ইসলাম ও ফজলুর রহমান এদের উদ্যোগে ২০১২ সালে এই পার্কটি নির্মাণ করা হয়।

এ পার্কে রয়েছে নানা ফুল ফল ও ঔষধি গাছ এছাড়াও শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে থ্রিডি মুভি, কিডস স্পোর্টস জোন, ট্রেন, নাগরদোলা ইত্যাদি৷  আরো রয়েছে ফোয়ারা ঝর্ণা, কৃত্তিম কুমির সহ নানা পশুপাখির আকর্ষণীয় ভাস্কর্য। সাফিনা পার্কের বিশেষত্ব হলো এ পার্কে দুইটি পিকনিক স্পট, একটি কনফারেন্স রুম এবং একটি মঞ্চের সুব্যবস্থা রয়েছে।

বাঘা মসজিদ রাজশাহীঃ রাজশাহী বিভাগীয় শহর হতে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে বাঘা উপজেলায় এই মসজিদটি অবস্থিত৷ প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক শাহী মসজিদটি ২৫৬ বিঘা জমির উপর অবস্থিত। ১৫২৩ খ্রিস্টাব্দে হোসেন শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা আলাউদ্দিন শাহের কনিষ্ঠ পুত্র সুলতান নুসরাত শাহ এই মসজিদটি নির্মাণ করেন।

এই মসজিদ ঘিরে রয়েছে একটি ঐতিহাসিক সুবিশাল দিঘী৷ যা প্রায় ৫২ বিঘা জমি নিয়ে বিস্তৃত। এই দিঘীর চারপাশ দিয়ে রয়েছে নারিকেল গাছের সারি৷ এবং বাধাই করা পাড়। শীতকালে অতিথি পাখির কল কাকলিতে মুখরিত থাকে দিঘীরপাড়।

রাজশাহীর বিখ্যাত খাবারের তালিকা

কালাই রুটিঃ রাজশাহীর বিখ্যাত খাবারের মধ্যে কালাই রুটি অন্যতম। ধনিয়ার পাতা, কাঁচামরিচ বাটা এবং পেঁয়াজ কুচি কুচি করে সরিষার তেল মেখে খাওয়ার মজাই আলাদা। তবে এর সাথে বেগুন ভর্তা দিয়ে খেতে আরো টেস্টি হয়।

কালাভুনাঃ রাজশাহীর আরেকটি বিখ্যাত খাবার হল কালাভুনা। যারা এই কালাভুনা খেয়েছেন তারাই এর স্বাদ বুঝবেন। যদিও এটি দেখতে কালো কিন্তু এটি একদম স্বাদে ভরপুর।

বট পরোটাঃ বট পরোটা খেতে অনেক সুস্বাদু এবং অনেক মজাদার। এর ঝাঁঝালো স্বাদ যেন এখনও মুখে লেগে আছে। এর নাম শুনলেই জিহ্বায় জল এসে যায়।

তন্দুর রুটিঃ রাজশাহীর আরেকটি বিখ্যাত খাবারের নাম তা হলো তন্দুর রুটি। নেহারি দিয়ে তন্দুর রুটি খেতে অনেক মজা লাগে। যারা একবার খেয়েছে তারা কখনোই এর টেস্ট ভুলতে পারবে না।

রাজশাহী বিভাগের জেলা সমূহ

রাজশাহী বিভাগ মোট ৮ জেলা নিয়ে গঠিত। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো
১. জয়পুরহাট
২. নওগাঁ
৩. বগুড়া
৪. সিরাজগঞ্জ
৫. পাবনা
৬. নাটোর
৭. রাজশাহী
৮. চাঁপাইনবাবগঞ্জ

রাজশাহী জেলার উপজেলা সমূহ

রাজশাহী জেলার মোট ৯ টি উপজেলা রয়েছে৷ নিম্নে তা আলোচনা করা হলো-

  • বাঘা উপজেলা 
  • চারঘাট উপজেলা 
  • পুঠিয়া উপজেলা 
  • বাগমারা উপজেলা 
  • দুর্গাপুর উপজেলা 
  • মোহনপুর উপজেলা 
  • তানোর উপজেলা 
  • পবা উপজেলা 
  • গোদাগাড়ী উপজেলা

রাজশাহী জেলার পৌরসভা সমূহ


রাজশাহী জেলা মোট ১৪ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। নিম্নে বর্ণনা করা হলো।

  • পুঠিয়া পৌরসভা
  • তাহেরপুর পৌরসভা
  • ভবানীগঞ্জ পৌরসভা
  • কাকনহাট পৌরসভা
  • কাটাখালি পৌরসভা
  • নওহাটা পৌরসভা
  • তানোর পৌরসভা
  • গোদাগাড়ী পৌরসভা
  • মুণ্ডমালা পৌরসভা
  • দুর্গাপুর পৌরসভা
  • আড়ানী পৌরসভা 
  • চারঘাট পৌরসভা
  • বাঘা পৌরসভা
  • কেশরহাট পৌরসভা

লেখকের শেষ কথা

পরিশেষে বলা যেতে পারে, রাজশাহী জেলার সম্পর্কে অল্প সামান্য আলোকপাত করেছি। আশা করি এটি পুরা পড়লে উপকৃত হবেন। এবং আমাদের আর্টিকেলের মধ্যে কোন প্রকার ত্রুটি বিচ্যুতি হলে, আমাদেরকে আপনার সুন্দর কমেন্টের মাধ্যমে অবহিত করতে ভুলবেন না। আমরা সেটি পরবর্তীতে সংশোধন করে দেয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url