ওমরাহ করার ফজিলত ও নিয়ম। ইহরাম কি?


ওমরাহ করার ফজিলত ও নিয়ম সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবো। যারা এ বিষয় নিয়ে খোঁজাখুঁজি করছেন তাদের আর কোন চিন্তা নেই। সম্পর্কে জানতে হলে এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আশা করা যায়, আপনি পুরোপুরি ভাবে বুঝতে পারবেন।

ওমরাহ করার ফজিলত ও নিয়ম

ওমরাহ কি? এ সম্পর্কেও আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবো। আজ এটি স্পেশাল হতে চলেছে। যাই হোক, আর কথা না বাড়িয়ে, চলুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। নিম্নে আলোচনা করা হলো।

ওমরাহ করার ফজিলত

ওমরাহ করার ফজিলত সম্পর্কে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এক ওমরাহ থেকে অপর ওমরাহ পর্যন্ত মাঝখানে সব কাফফারা। এবং তার প্রতিদান হিসেবে আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাত প্রদান করবেন। (বুখারী শরীফ)

আরো পড়ুনঃ সালাতুল হাজতের নামাজ

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রসূল (সাঃ) বলেন, তোমরা হজ্জ এবং ওমরাহ পাশাপাশি পালন করো। কেননা, এই দুইটা তোমাদের দরিদ্র থেকে মুক্তি ও গুনাহ থেকে মাফ করে দেয়। যেভাবে মরিচা পরা লোহা হাঁপরের আগুনে দিলে পরিষ্কার হয়ে যায়। তেমনি তোমাদের গুনাহ আল্লাহ তা’আলা পরিষ্কার করে দেন। (নাসায়ী শরীফ হাদিস ৩৬১০)

ওমরাহ কি?

উত্তর: ওমরাহ এর আভিধানিক অর্থ হলো কোন নির্দিষ্ট স্থান জিয়ারত করা, সফর করা ও ইচ্ছা করা। অর্থাৎ ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় কোন নির্দিষ্ট স্থান জিয়ারত করাকে ওমরাহ বলা হয়। ওমরাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ওমরাহ পালন করা ওয়াজিব। ওমরাহ এর মাধ্যমে বান্দার গুনাহ মাফ হয়ে যায়।

ওমরাহ এর নিয়ত কিভাবে করতে হয়?

ওমরাহ চারটি কাজের সমন্বয়। চারটি কাজ সঠিক ও সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ করলেই ওমরা পালন সম্পন্ন হয়। যেমন: 
  • ইহরাম বাধা বা পরিধান করা তাওয়াফ করা 
  • সায়ী করা 
  • এবং পুরুষের মাথা মুন্ডন করা 
  • আর মেয়েরা তাদের চুল ছোট করবে। 

এই চারটি কাজ সম্পূর্ণ করলেই ওমরাহ পালন হয়ে যাবে। এই চারটি কাজ অসম্পূর্ণ করলে ওমরাহ পালন হবে না। তাই এই চারটি কাজ অবশ্যই সঠিকভাবে পালন করতে হবে।

ইহরাম কি?

উত্তর: ইহরাম হলো ওমরাহ বা হজের পোশাক। অর্থাৎ ইসলামী শরীয়াতের পরিভাষায় ওমরাহ বা হজের জন্য সেলাই বিহীন যে কাপড় পরিধান করা হয় তাকে ইহরাম বলে। ইহরাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি ওমরাহর প্রথম কাজ। ইহরাম এর মাধ্যমে ওমরাহ পালন শুরু হয়।

ইহরাম পরিধানের পদ্ধতি

ইহরাম ঘর কিংবা বাহির থেকে অর্থাৎ মীকাত অতিক্রম করার পূর্বে পরিধান করতে হয়। পুরুষের জন্য দুটি ইহরান বাঁধতে হয়। একটি হচ্ছে লুঙ্গির মত আরেকটি হচ্ছে চাদরের মত। আর মেয়েদের জন্য সাধারণ পোশাক পড়তে হয়। ইহরাম ছাড়া ওমরাহ অসম্পূর্ণ।

আরো পড়ুনঃ মসজিদুল আকসার নির্মাণকাল

ইহরাম বাধার পর যেগুলো কাজ করা যাবে না। তা হলো-কোন প্রাণী হত্যা করা যাবে না, শরীরের লোম, নখ কাটা যাবে না। এবং শরীরে কোন সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না। আর মেয়েরা যাতে কোন পর পুরুষের দিকে দৃষ্টি না দেয় সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং অতিরিক্ত সাজসজ্জা করা যাবে না। তারা শুধু সাধারণ পোশাক ব্যবহার করবে।

আরো পড়ুনঃ নফল নামাজ পড়ার ফজিলত

ইহরাম বাধার পর তালবিয়াহ পাঠ করতে হবে। উচ্চারণ: ”লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাতা ওয়াল মুলক” ।

এই তালবিয়াহ পুরুষেরা জোরে জোরে পাঠ করবে। কিন্তু মহিলাদের আস্তে আস্তে পাঠ করতে হবে অন্য কোন পুরুষের কানে পৌঁছানো যাবে না।

তাওয়াফ কি?

উত্তর: তাওয়াফ হল বাইতুল্লাহ শরিফের চারপাশে ঘোড়া। তাওয়াফ করার জন্য আলাদা কোন দোয়া নেই। বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার বলে তাওয়াফ করতে হবে। বাইতুল্লাহ শরীফের চারপাশে সাতটি চক্কর দিবে। সাতটি চক্কর দেওয়ার পর তাওয়াফ শেষ হবে। তাওয়াফের সময় যেকোনো দোয়া আল্লাহ তা'আলা কবুল করেন।

তাওয়াফের সময় পুরুষেরা প্রথম চক্করে একটু জোরে জোরে হাটবেন। এরপর তার পরের চক্কর গুলো স্বাভাবিকভাবে হাঁটবেন। এবং তালবিয়াহ পাঠ করবেন। এবং মহিলারা স্বাভাবিকভাবেই হাঁটবেন। মহিলারা ইহরামের মধ্যে স্বাভাবিক পোশাক পড়বেন। এবং অতিরিক্ত সাজ সজ্জা থেকে বিরত থাকবেন। মহিলারা নীরবে তালবিয়াহ পাঠ করবে।

তাওয়াফ শেষ করার পরে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হয়। এরপর জমজম কূপের পানি পান করতে হবে এবং তা নিয়ে মুখমন্ডল ধুতে হবে। এরপর হাজারে আসওয়াদ পাথরে চুমা দিতে হবে। হাজরে আসওয়াদ পাথরে চুমা দেওয়ার সময় কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না।

সায়ী করা

উত্তর:সায়ী করা অর্থ হলো দৌড়ানো। অর্থাৎ সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে সায়ী করা বা দৌড়ানো। একবার সাফা থেকে মারওয়া এবং মারওয়া থেকে সাফা পাহাড়ে এভাবে সাতটি চক্কর দিতে হয়। সাফা মারওয়া চক্করের সময় দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। এটি ওমরাহ এর তৃতীয় নম্বর ধাপ।

মাথা মুন্ডন করা

এটি ওমরাহ এর চতুর্থতম ধাপ। পুরুষরা তাদের মাথামুন্ডন করবে অর্থাৎ তাদের সব চুল কেটে ফেলব। পুরুষরা যদি চুল সম্পূর্ণ মুন্ডন করতেন না পারে তাহলে চুল একটু ছোট করলেই হবে। আর মেয়েরা তাদের চুল ছোট করবে। এভাবে ওমরাহ পালন সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।

মৃত মা বাবার নামে ওমরাহ পালন করা যাবে কি?

উত্তর: অবশ্যই মৃত মা-বাবার নামে ওমরাহ পালন করা যাবে। তবে মা বাবা দুজনার জন্যই একসাথে পালন করা যাবে না। একজন ব্যক্তির জন্য একজনই ওমরাহ পালন করতে পারবে। কিন্তু অন্যান্য ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে পারবে।

জীবিত মা-বাবার জন্য ওমরাহ পালন করতে পারবে কি?

উত্তর: জীবিত মা-বাবার জন্য ওমরাহ পালন করতে পারবে কি পারবে না এ ব্যাপারে বিভিন্ন আলেমগণের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কোন কোন আলেমগণ বলেন, ওমরাহ পালন করা যাবে এবং কোন কোন আলেমগণ বলেন যাবে না। এমন যদি হয়ে থাকে যে মা-বাবা জীবিত আছে কিন্তু তারা অসুস্থ। সুস্থ হওয়ার মত কোন আশঙ্কা নেই তখন নিজের নামে ওমরাহ পালন করতে পারবে। এবং তাদের জন্য বেশি বেশি করে দোয়া করতে পারবে।

মহিলারা মাহারাম ছাড়া কি ওমরাহ পালন করতে পারবে?

উত্তর: ইসলামী শরীয়তের বিধান হল কোন নারীর যদি সফর করতে হয়। তাহলে তার সাথে মাহারাম ব্যক্তি থাকতে হবে। যাতে তার ব্যক্তিত্বে কোনো আচর না লাগে। কোন নারী মাহারাম ছাড়া ওমরাহ বা হজ্জে যেতে চাইলে তাহলে তাকে অন্য নারীর দলের সাথে যুক্ত হতে হবে। এটি ইসলামে জায়েজ আছে যাতে তার বিপদে অন্য নারীরা তাকে সাহায্য সহযোগিতা করতে পারে।

ওমরাহ এর ধর্মীয় গুরুত্ব

ইসলামে ওমরাহ এর ধর্মীয় গুরুত্ব অপরিসীম। এর মাধ্যমে মন পবিত্র হয়ে যায়। জীবনের গুনাহ গুলো মাফ হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’তোমরা হজ ও ওমরাহ পালন করো। এর মাধ্যমে দারিদ্রতা দূর হয় এবং পাপ মোচন হয়’’। (তিরমিজি)

আমাদের সমাজে সবাই মিলে একসাথে বসবাস করতে হলে একে অপরের সাথে অনেক অন্যায় অবিচার হয়ে থাকে। এতে করে আমরা অনেক ছোট বড় গুনাহ করে থাকি। এই ওমরাহ পালনের মাধ্যমে আমাদের জীবনের ছোট বড় গুনাহ গুলো আল্লাহ তা’আলা মাফ করে দেন।

ওমরাহ কারীর সওয়াব আল্লাহ তায়ালা মৃত্যুর পর কেয়ামত পর্যন্ত লিখতে থাকেন। মৃত্যুর পরও কয়েক ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালা কেয়ামত পর্যন্ত সওয়াব লিখতে থাকেন তাদের মধ্যে একজন হল ওমরাহ পালনকারী ব্যক্তি। তাই ইসলামে এর অনেক গুরুত্ব রয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা অনেক শিক্ষা গ্রহণ করে থাকি।

লেখকের শেষ কথা

উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যেতে পারে আমরা এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম এবং বাস্তব জীবনে আমলে আনতে স্বতঃস্ফূর্ত হব। এই ওমরাহ হজ আমাদের জীবনে বিরাট একটি প্রভাব ফেলে। এবং এর মাধ্যমে শিক্ষা অর্জন করা প্রয়োজন। আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে আমল এবং বাস্তব জীবনে ধারণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন

পাঠকদের লক্ষণীয় বিষয়, আমাদের এই আর্টিকেলে কোন প্রকার ভুল পরিলক্ষিত হলে অবহিত করবেন। আমরা তার সংশোধন করার চেষ্টা করব। এবং এই আর্টিকেলটি ভালো লাগলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url