খাদ্যের প্রধান পুষ্টি উপাদান গুলো কি কি? তা জেনে নিই।
খাদ্যের প্রধান পুষ্টি উপাদান গুলো সম্পর্কে আমরা নিম্নে জানতে পারবো। যারা এ বিষয়ে জানতে আগ্রহী তাদেরকে এই আর্টিকেলে স্বাগতম। পারে আজ আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবো। তাই এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।
আমিষের অভাবে যে যে রোগগুলো হয়ে থাকে তা নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। এবং খাদ্যের উপাদান গুলো কি কি? এ সম্পর্কে নিম্ন আলোচনা। করব যাই হোক, কথা না বাড়িয়ে এ সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
খাদ্য কাকে বলে?
উত্তরঃ সাধারণত আমরা যা খাই তাকে খাদ্য বলে। বিজ্ঞানের ভাষায়, যে সকল দ্রব্য আহার করলে আমাদের দেহের ক্ষয় পূরণ, বৃদ্ধি সাধন, তাপ ও শক্তি বৃদ্ধি করে দেহকে সুস্থ রাখে এবং আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তাকে খাদ্য বলে। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য খুবই প্রয়োজন। খাদ্য ছাড়া আমরা বেঁচে থাকতে পারবো না।
আরো পড়ুনঃ রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
পুষ্টিকর খাদ্য কাকে বলে?
উত্তরঃ যে প্রক্রিয়ায় নিজ নিজ পরিবেশ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে গৃহীত খাদ্যের পরিপাক, আত্মীকরণ এবং অপাচ্য খাদ্যের বহিষ্কার ঘটিয়ে শুষ্ক ওজন বৃদ্ধি করে তাকে পুষ্টিকর খাদ্য বলে। পুষ্টিকর খাদ্য আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই আমাদের দেহকে সুস্থ-সবল রাখতে পুষ্টিকর খাদ্য নিয়মিত গ্রহণ করতে হবে। দেহকে সুস্থ সবল রাখতে পুষ্টিকর খাদ্যের কোন বিকল্প নেই।
খাদ্যের উপাদান গুলো কি কি?
উত্তরঃ খাদ্যের উপাদান ছয়টি:-
আরো পড়ুনঃ ঘরোয়া ভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায় জানুন
- ১। প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাদ্য
- ২। ফ্যাট বা চর্বি
- ৩। কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাদ্য
- ৪। ভিটামিন বা খাদ্য প্রাণ
- ৫। খনিজ লবণ
- ৬। পানি
এই ছয়টি উপাদান খাদ্যের মৌলিক উপাদান। এই ছয়টি উপাদান আমাদের দেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১। প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাদ্যঃ খাদ্যের ছয়টি উপাদানের মধ্যে এটি একটি। যে যে খাদ্যের মধ্যে প্রোটিন বা আমিষ আছে তা হলো-মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল ইত্যাদি। এর কাজ হলো শরীরের ক্ষয় পূরণ এবং বৃদ্ধি সাধন করে। তাই আমাদের শরীরের ক্ষয় পূরণ এবং বৃদ্ধি সাধনের জন্য প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাদ্য বেশি বেশি করে খাওয়া। এতে আমাদের দেহ সুস্থ এবং সবল থাকবে।
প্রোটিন বা আমিষের উৎসঃ দুই ধরনের আমিষের উৎস রয়েছে। যেমন: এটি হচ্ছে প্রাণীজ আমিষ এবং আরেকটি হচ্ছে উদ্ভিজ্জ আমিষ।
(ক) প্রণীজ আমিষঃ মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, কলিজা ইত্যাদি। এসব খাদ্য প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড রয়েছে। দেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয় পূরণের জন্য অ্যামাইনো এসিড অত্যন্ত প্রয়োজন। অ্যামাইনো এসিডের অভাবে দেহের নানা ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে। যেমন: মাথা ঘোরা ও বমি বমি ভাব হয় ইত্যাদি।
(খ) উদ্ভিজ্জ আমিষঃ ডাল, চিনাবাদাম, সিমের বিচি ইত্যাদি। এসব খাবারে আমিষের পরিমাণ একটু কম রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড থাকে না। তবুও এই খাবারগুলো দেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমিষের অভাবে যে যে রোগগুলো হয়ে থাকে
দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয় না, শিশুরা নানা পুষ্টি হীনতায় ভোগে, শিশুদের খাওয়ায় রুচি হয় না, মাংসপেশী দুর্বল হয়ে যায়, শরীরের রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়, দেহের চামড়া ও ত্বক খসখসে হয়ে যায়, দেহের রং নষ্ট হয়ে যায় এবং শরীরের ওজন কমে যায়। আমিষের অভাবে বয়স্ক লোকদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
২। ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাদ্যঃ এটি হলো তেল জাতীয় খাদ্য। যে যে খাদ্যের মধ্যে চর্বি রয়েছে তা হলো; ঘি, মাখন, তেল, ডালডা, বাদাম ইত্যাদি। এই খাবারের কাজ হল দেহের তাপ ও শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাদ্য বেশি বেশি করে খাব। চর্বি জাতীয় খাবার দেহে এসিড জোগাতে পারে এবং ভিটামিন দ্রবণে সক্ষম হয়। তাই দৈনিক আহার্যে চর্বিযুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
চর্বির অভাবে যে রোগগুলো দেখা দেয় তা হলো; ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়, দেহের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়, দেহে এসিডের অভাব হয়, শিশুদের একজিমা রোগ হয় এবং বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ইত্যাদি।
৩। কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাদ্যঃ ভাত, আলু, গম, জব, রুটি, চিড়া, মুড়ি ইত্যাদি। এগুলো হলো শর্করা জাতীয় খাদ্য। এর কাজ হল দেহের শক্তি উৎপাদন করা। আমরা প্রতিদিন যে খাবারগুলো খেয়ে থাকি তার মধ্যে শর্করার পরিমাণই সবচেয়ে বেশি। মানব দেহে সম্পূর্ণ পরিপুষ্টির জন্য শর্করা জাতীয় খাদ্য অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ। শর্করা জাতীয় খাদ্য খুব কম সময়ে দেহের তাপ উৎপাদন করে দেহ শক্তি যোগায়।
শর্করার অভাবে যে রোগগুলো দেখা দেয় তা হলো; শর্করার অভাবে অপুষ্টি দেখা দেয়, ক্ষুধা অনুভব করা, বমি বমি ভাব হওয়া, অতিরিক্ত শরীর ঘামানো ইত্যাদি হয়ে থাকে। বয়স, দেহের ওজন, উচ্চতা ইত্যাদি শর্করার ওপর নির্ভর করে।
৪। ভিটামিন বা খাদ্য প্রাণঃ ভিটামিনকে খাদ্যের প্রাণ বলা হয়। দুধ, ডিমের কুসুম, বিভিন্ন প্রকার ফলমূল, শাকসবজি ইত্যাদি প্রভৃতিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন পাওয়া যায়। দেহের ক্ষয় পূরণ, বৃদ্ধি সাধন, তাপশক্তি উৎপাদন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন রয়েছে যেমন; ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, এবং ভিটামিন কে ইত্যাদি।
ভিটামিন এঃ লাল শাক, পুঁইশাক, পালং শাক, টমেটো, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, মাছের তেল, পেঁপে, আম, কাঁঠাল ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে। এর কাজ হল দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখা, ত্বক সুস্থ রাখা, দেহের পুষ্টি সাধন করে এবং দেহকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন এ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়, চোখের পাতা ফুলে যায়, চোখের পানি শুকিয়ে যায় এবং সর্দি কাশি ইত্যাদি হতে পারে।
ভিটামিন বিঃ কলিজা, সামুদ্রিক মাছ, সিদ্ধ ডিম, দুধ, সিম ও মটরশুঁটি ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি রয়েছে। এর কাজ দেহে শক্তি উৎপাদন করা, লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি করে এবং অনুচক্রিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। ভিটামিন বি এর অভাবে বেশি বেশি রোগ হয়, বুক ধরফর করে এবং অতিরিক্ত পা ঘামে ইত্যাদি।
ভিটামিন সিঃ টক জাতীয় ফল যেমন আমলকি, আনারস, আমডা, পেয়ারা, কমলালেবু, লেবু, সবুজ শাকসবজি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, ইত্যাদি থেকে আমরা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পেয়ে থাকি। ভিটামিন সি এর কাজ হল মাংসপেশী ও দাঁত মজবুত করে চর্মরোগ রোধে সহায়তা করে। ভিটামিন সি এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়, আর দুর্বল হয়, ত্বক খসখসে হয়, ত্বকে চুলকানি হয়, শরীরের কোন অংশে ঘা দেখা দিলে তা তাড়াতাড়ি শুকায় না ইত্যাদি এসব রোগ হয়ে থাকে।
ভিটামিন ডিঃ দুধ, মাছের তেল, ডিমের কুসুম, মাখন, চর্বি ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি রয়েছে। এর কাজ হল দাঁতের কাঠামো গঠন করা, রক্তে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা। ভিটামিন ডি এর অভাবে হাত পায়ের গিট ফুলে যায়, বুকের হাড় এবং পাঁজরের হাড় বেঁকে যায়। এবং অল্প আঘাতে হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সকালের সূর্যের আলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে।
ভিটামিন ইঃ শস্য দানা, মাছ-মাংসের চর্বি ইত্যাদিতে ভিটামিন ই রয়েছে। ভিটামিন ই কোষ গঠনে সহায়তা করে। এর অভাবজনিত লক্ষণ খুব কম।
ভিটামিন কেঃ সবুজ শাকসবজি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ডিমের কুসুম, সয়াবিন তেল ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে আছে। এর কাজ হল দেহে প্রোটিন তৈরি করা এবং রক্ত জমাট বাধাতে সহায়তা করে। ভিটামিন কে এর অভাবে ত্বকের নিচে যে রক্তক্ষরণ হয় তা বন্ধ হয় না। অপারেশন করলে রোগীর রক্ত ক্ষরণ বন্ধ হয় না। এতে রোগীর মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৫। খনিজ লবণঃ যে যে খাদ্য খনিজ লবণ রয়েছে তা হলো মাংস, ডিম, দুধ, সবুজ শাকসবজি, ফল, খাবার লবণ, পটাশিয়াম, বিট লবণ ইত্যাদি খনিজ লবনের প্রধান উৎস। খনিজ লবণ দেহ গঠন ও দেহের অভ্যন্তরীণ কাজ নিয়ন্ত্রণ করে, দাঁত, লোহিত রক্তকণিকা গঠন করতে সহায়তা করে। । এটি দেহের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং শরীরের পানি ধরে রাখে।
খনিজ লবনের অভাবে যে যে রোগ গুলো হয়ে থাকে যেমন খনিজ লবনের অভাবে রিকেটস, স গলগন্ড গলগন্ড, রক্তস্বল্পতা ইত্যাদি রোগ হয়ে থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় শব্দ হয়, খাবার গিলতে কষ্ট হয়, শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে, ওজন হ্রাস পায়, বুক ধরফর করে এবং খাওয়ায় অরুচি হয় ইত্যাদি।
৬। পানিঃ আমাদের জীবন ধারণের জন্য পানি একটি অপরিহার্য উপাদান। আমাদের জীবনে পানির প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। পানি আমাদের দেহকে গঠন করতে সাহায্য করে। দেহের অভ্যন্তরীণ কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। পানির কাজগুলো হলো রক্ত সঞ্চালন করে, তাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং দেহের দূষিত পদার্থ অপসারণ করে।
দেহে কোন কারণে পানির পরিমাণ কমে গেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন; পানি স্বল্পতা, রক্ত সঞ্চালনে অসুবিধা বিপাকে ক্রিয়াতে ব্যাঘাত ঘটে, দেহের ওজন কমে যায় এবং পেশিগুলো অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে ইত্যাদি। এই সমস্যাগুলো যাতে না হয় সেজন্য আমরা বেশি বেশি করে পানি পান করব। তাহলে এই সমস্যা গুলো আর দেখা যাবে না।
রাফেজ বা আঁশযুক্ত খাদ্যঃ খাদ্যের ছয়টি উপাদানের পাশাপাশি আরেকটি উপাদান দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে হলো রাফেজ বা আঁশযুক্ত খাদ্য। বিভিন্ন ধরনের শস্য দানা, ফলমূল ফলমূল, শাকসবজির অংশকে রাফেজ বলে। রাফেজযুক্ত খাবারে কোন পুষ্টি উপাদান থাকে না। তবুও এটি দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যা শুধু আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে পাওয়া যায়।
স্নেহ জাতীয় খাবারের কাজ সমূহ
স্নেহ জাতীয় খাবার আমাদের দেহে অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। স্নেহ জাতীয় খাদ্যের অভাবে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন শরীরে শক্তির সরবরাহ হ্রাস পায়। ত্বক শুষ্ক ও মসৃণ হয়ে পড়ে। স্নেহ জাতীয় খাবারের উৎস মাখন, ঘি, চর্বি, সয়াবিন তেল, সরিষার তেল, সূর্যমুখের ফলের তেল, তিলের তেল, বাদাম, নারিকেল, ডালডা ইত্যাদি।
লেখকের শেষ কথা
অতএব, প্রতিবেলা খাবারে এই খাদ্যের উপাদান গুলো আমরা অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করব। খাদ্যের এইসব উপাদান গুলো দেহ গঠন, বৃদ্ধি সাধন, এবং ক্ষয় পূরণে সাহায্য করে থাকে। খাদ্য ছাড়া আমরা বেঁচে থাকতে পারিনা। খাদ্য আমাদের দেহের পুষ্টি চাহিদা এবং শক্তি যোগায়। কোন কোন খাদ্যে কোন কোন উপাদান রয়েছে ঠিক সেই অনুযায়ী আমাদের খাদ্য খেতে হবে। এতে আমাদের দেহ সুস্থ থাকবে।
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url