ছোট বাচ্চাকে ঠান্ডা লাগলে ঘরোয়া ভাবে কিছু চিকিৎসা জেনে নিন
ছোট বাচ্চাকে ঠান্ডা লাগলে ঘরোয়াভাবে কিছু চিকিৎসা সম্পর্কে আমরা জানতে পারবো। যাদের বাচ্চাদের এই সমস্যায় রয়েছে তাদেরকে এই আর্টিকেলে স্বাগতম। আজ আমরা এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে ছোট বাচ্চাকে ঠান্ডা লাগলে কি করতে হয় সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করব।
কারণে ছোট শিশু বাচ্চার কাশি হয়। এ সম্পর্কেও আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বিস্তারিত জানতে পারবো। এবং ঘরোয়া ভাবে চিকিৎসা করা যায় সে সম্পর্কেও জানতে পারবো। যাই হোক কথা না বাড়িয়ে চলুন, মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। নিম্নে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো।
ভূমিকা
ঋতু পরিবর্তনের সময় কম বেশি সকলেরই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আর শীতকালে ঠান্ডা লাগা এটি একটি কমন বিষয়। তবে সেটি দুই বছরের কম বাচ্চার জন্য আরো কষ্টদায়ক। কেননা, সে কোন কিছু বলতে পারেনা এবং শরীরের যত্নও নিতে পারে না। ঠান্ডার কারণে ছোট বাচ্চার সর্দি, কাশি, গলা ব্যথাসহ নানান রোগ হতে পারে। যার ফলে শিশু বাচ্চার অনেক কষ্ট হয়।
আরো পড়ুনঃ শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়
সর্দির কারণে ছোট বাচ্চার নাক বন্ধ হয়ে গেলে, নাওয়া খাওয়া এবং ঘুমালে অনেক অসুবিধা হয়। এবং ছোট শিশু বাচ্চার কাশির কারণেও গলা ব্যথা হয়। যেটি শিশুর জন্য অনেক মারাত্মক একটি রোগ। এজন্য ছোট বাবুর, ঘরোয়া ভাবে কিছু টেকনিক অবলম্বন করে এই সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো।
যে কারণে ছোট শিশু বাচ্চার কাশি হয়
বিভিন্ন কারণে ছোট শিশু বাচ্চার কাশি হতে পারে। যেমন গলাতে কফ জমে, বুকে ঠান্ডা লাগার কারণে, শ্বাসনালী ফুলে যাওয়ার কারণে, গলাতে শ্লেষ্মা জমে থাকলে। এই সমস্ত কারণে ছোট বাচ্চার কাশি হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ তেজপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
সর্দি বা ঠান্ডা লাগার কারণেঃ ছোট শিশু বাচ্চার ঠান্ডা লাগলে প্রথমে সর্দি হয়। সর্দি লাগলে নাকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। চোখ ও নাক দিয়ে পানি ঝরে। কখনো আবার সর্দির কারণে শরীরে প্রচন্ড জ্বরও আসে।
এনার্জির কারণে কাশিঃ অনেক শিশু আছে যাদের ছোটবেলা থেকেই এলার্জি। এলার্জির কারণে সর্বদাই সর্দি লেগেই থাকে। সর্দি ভালো করতে চাইলে, প্রথমে এলার্জি দূর করতে হবে। তাহলে সর্দির থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
হাঁপানিঃ হাঁপানি রোগের কারণে শিশুদের দিনে এবং রাতে, উভয় সময়ে সর্দি কাশি লেগে থাকে। এবং গলার মধ্যে শো শো শব্দ হয়। এইজন্য ঠান্ডার দিনে ছোট বাচ্চার ব্যাপারে অভিভাবকের সতর্ক থাকা উচিত।
আরো পড়ুনঃ ঘরোয়া ভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায় জানুন
নিউমোনিয়াঃ অনেকদিন যাবত ছোট্ট শিশু বাচ্চার ঠান্ডার কারণে প্রথমে সর্দি, তারপর কাশি, এরপর নিউমোনিয়ার মত বড় রোগ হতে পারে।
ইনফ্লুয়েঞ্জাঃ এই রোগের লক্ষণ হল, প্রথমে ঠান্ডা থেকে সর্দি তারপর গলা ব্যথা, এরপর নাক দিয়ে পানি পড়া, দ্রুত চিকিৎসা না করলে বড় আকার ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঠান্ডা প্রতিরোধের উপায় সমূহ
- এই শীতে ছোট বাচ্চাদের গরম কাপড় পরিধান করিয়ে দিন
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া
- মায়ের বুকের দুধ পান করানো
- তরল খাবার খাওয়া
- গরম পানি পান করানো
- মধু সেবন করা
- ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়া
- প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া
- খুরমা খেজুর খাওয়া
- সরিষার তেল হালকা গরম করে তার সাথে অলিভ অয়েল মিস করে বাচ্চার শরীরে মেসেজ করতে পারেন।
- সকালে সূর্যের আলো গ্রহণ করানো
- জিংন সেবন করা। যেটা মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী
ঠান্ডাতে যেসব জিনিস থেকে দূরে থাকতে হবে
- অ্যান্টিবায়োটিক
- ঘন ঘন ঔষধ খাওয়া অভ্যাস
- অ্যালকোহল পান
- স্যাঁতসেঁতে জায়গাতে না রাখা
- অতিরিক্ত ধূমপান
- মদ্যপান
ছোট বাচ্চার ঠান্ডা লাগলে ঘরোয়াভাবে কিছু চিকিৎসা
ছোট শিশু বাচ্চার ঠান্ডার কারণে সর্দি এবং কাশি হলে, আমরা প্রাথমিক অবস্থায় ঘরোয়া ভাবে কিছু চিকিৎসা নিতে পারে। এ চিকিৎসার ফলে আপনার ছোট বাচ্চা কোন বড় ধরনের ক্ষতি থেকে বেঁচে যেতে পারে। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
আরো পড়ুনঃ শোল মাছ খাবার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
মধু এবং আদার মিশ্রণে সিরাপ
সর্দি কাশির জন্য মধু এবং আদার মিশ্রণে সিরাপ ম্যাজিকের মত কাজ করে। ছোট বাচ্চার জন্য আরও বেশি উপকারী হবে। যারা এডাল তারাও এই সিরাপ ট্রাই করতে পারেন।
তৈরীর পদ্ধতিঃ প্রথমে ৪ চা চামচ মধু, ৪ চা চামচ আদার রস এবং প্রয়োজন অনুসারে হালকা পানি নিতে হবে। সব উপকরণগুলো একত্রে মিক্স করে হালকা গরম করে নিতে হবে। এই সিরাপ একটি বোতলে তুলে প্রয়োজন অনুসারে বাচ্চাকে পান করাতে হবে। তাহলে ঠান্ডার মতো জটিল রোগ থেকে রেহাই মিলবে।
লক্ষণীয় বিষয় হলো-এই সিরাপ শূন্য থেকে পাঁচ অথবা ছয় মাসের বাচ্চাদেরকে পান করাবেন না। যদি ছোট বাচ্চার ঠান্ডা জনিত সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। এই সিরাপটি ছয় মাস বয়সের বাচ্চা থেকে যেকোনো বয়সের মানুষ পান করতে পারেন। তাহলে ভালো একটি উপকার মিলবে।
রসুন ও আদার সিরাপ
আমরা রসুন রান্নার স্বাদ বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু রসুন বিভিন্ন ঔষধে ব্যবহার হয়ে থাকে। রসুনের গুনাগুন জানেনা এমন লোক খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। বিশেষ করে রসুন, সর্দি কাশি অথবা বুকে জমে থাকা কফগুলি বের করতে সাহায্য করে।
আদাও আমরা রান্নার মসলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আদাও হল একটি ঔষধি উপাদান। আদাও বুকে জমে থাকা কফ বের করতে সাহায্য করে। এবং রোগীকে প্রশান্তি এনে দেয়।
সিরাপ তৈরীর পদ্ধতি
প্রথমে একটি রসুন বেটে মিহি করে নিন। তারপর রসুনের সমান আদা নিয়ে ওপরের চামড়া ছাড়িয়ে নিন। ছাড়িয়ে নেওয়ার পর, আদাও মিহি করে বেটে নিন। তারপর দুই উপকরণের সাথে স্বাদ অনুযায়ী মধু মিক্স করুন। এরপর দিনে দুই অথবা তিনবার আপনার শিশুকে সেবন করান, এতে ঠান্ডা জনিত সকল সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
তুলসী পাতা ও মধুর সিরাপ
তুলসী পাতা সর্দি কাশিতে ভেষত ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। বেশিরভাগ কাশির সিরাপে তুলসী পাতার ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই সর্দি কাশিতে তুলসি পাতা আমরা সেবন করে থাকি।
মধুর ব্যবহার আমরা কমবেশি সকলেই জানি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত মধু এবং কালিজিরা সেবন করবে, সে মৃত্যু ব্যতীত আর কোন রোগে আক্রান্ত হবে না।
সিরাত তৈরির পদ্ধতি
প্রথমে কয়েকটি তুলসী পাতা বেটে এক চা চামচ পরিমাণ রস বের করে নিতে হবে। এরপর তার মধ্যে হাফ চা চামচ মধু দিয়ে মিক্স করতে হবে। তারপর হালকা কুসুম কুসুম গরম করে ছোট বাচ্চাকে দিনে দুই তিনবার সেবন করালে আশা করা যায়, ঠান্ডার মতো জটিল রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
সরিষার তেল, রসুন এবং কালিজিরা
সরিষার তেল, রসুন এবং কালিজিরার গুনাগুন সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি। বহুকাল থেকে এগুলোর ব্যবহার চলে আসছে। এই তিনটির মিশ্রণে, সর্দি-কাশি জনিত সমস্যা থাকলে নিয়মিত ব্যবহার করলে আশা করা যায়, এই রোগ থেকে মুক্তি মিলবে।
তৈরির পদ্ধতি
প্রথমে সরিষার তেলের মধ্যে কয়েক কোয়া রসুন থেতলিয়ে এবং কয়েক দ্বারা কালোজিরা দিয়ে, একটি পরিষ্কার পাত্রে রেখে ফুটিয়ে নিতে হবে। এবার একটু গরম (যতটুকু সহ্য হয়) থাকতে নাকের ছিদ্র দিয়ে উপর দিকে টানতে হবে। তারপর বুক, কন্ঠনালীতে, হাত ও পায়ের তালুতে দিয়ে মেসেজ করতে হবে। এভাবে বেশ কয়েকদিন করলে আশা করা যায়, ছোট বাচ্চার ঠান্ডা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
- যদি শিশুর সর্দি কাশি এবং জ্বর বেশি আকার ধারণ করে তবে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
- এক সপ্তাহ অর্থাৎ সাত দিন পর ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
- ১৫ দিনের মাথায় ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
- যদি বাচ্চার শ্বাস-প্রশ্বাসে কোন প্রকার আওয়াজ বা সমস্যা হয় তখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
- যদি ছোট বাচ্চার জ্বর সর্দি না কমে তাহলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
ছোট বাচ্চার সর্দি হলে ডাক্তারের পরামর্শ
- ১। প্রথমে বাবুর মাথা উঁচু করে শোয়ালে আরাম পাবে।
- ২। কুসুম কুসুম পানিতে এক চিমটি লবণ দিয়ে সেটা গলে গেলে ড্রপার দিয়ে বাচ্চার নাকের ছিদ্রতে দিতে পারেন। যতবার খুশি ততবার দিতে পারবেন।
- ৩। জুয়াইন বা আজওয়াইন মসলা করাইতে রসুন এবং সরিষার তেলে রোস্ট করে নিয়ে, একটি কাপড়ের পুটলিতে বেঁধে ঘুমন্ত বাবুর আশেপাশে রেখে দিলে তার গন্ধ নাকে গেলে তার নাক পরিস্কার হয়ে যাবে। অথবা তার বুকে পিঠে মালিশ করলেও নাক পরিষ্কার হবে।
- ৪। ক্যাপসিকাম ও সবুজ শাকসবজি বাবুকে নিয়মিত খাওয়ালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও ঠান্ডা জনিত সকল সমস্যা থেকে সমাধান মিলবে।
- ৫। ছোট বাচ্চার পায়খানা কষা হলে কিসমিস, পেঁপে এবং নাশপাতি রান্না করে খেতে দিলে বাচ্চার পায়খানা ক্লিয়ার হবে।
ডাক্তার আহমেদ নাজমুল আনাম (সহকারী অধ্যাপক, শিশু, কিশোর, নবজাতক ও শিশু হৃদরোগ এবং পুষ্টি বিশেষজ্ঞ)
ঠান্ডার প্রকারভেদ
শীতকালে ঠান্ডা লাগার স্বাভাবিক। এবং ঠান্ডা লাগলে বিভিন্ন রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে নিম্নে সেই লক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
জ্বরঃ ঠান্ডার কারণে শরীরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে। এমন সমস্যা হলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
কাশিঃ শীতকালে ঠান্ডার কারণে গলা ব্যাথাসহ শুকনো কাশি হতে পারে। বিশেষ করে এই সমস্যাটা শিশু বাচ্চাদের হয়ে থাকে। এতে ভয় পাওয়ার দরকার নেই। ঘরোয়া ভাবে কিছু চিকিৎসা অবলম্বন করলে এই রোগ থেকে উপশম পাওয়া যাবে।
ক্রপ কাশিঃ এই কাশি হলে গলা ব্যথা এবং গলা ফুলে যায়। গলা ফুলে যাওয়ার কারণে এক ধরনের শ্বাসনালীতে শব্দ হয়।
নিউমোনিয়াঃ শীতকালীন সময় ছোট শিশু বাচ্চাদের অনেক সমস্যা হয়। ঠান্ডা লাগার কারণে ছোট বাচ্চা সহ বড়দেরও নিউমোনিয়া হতে পারে।
হুপিং কাশিঃ শিশু বাচ্চার হুপিং কাশি হলে ঘন ঘন কাশি হয়। মূলত এই কাশি রাতের বেলায় বেশি হয়। ছোট বাচ্চার নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ হয়।
সিক্ত কাশিঃ এই কাশি মূলত গলাতে কফ জমে থাকার কারণে হয়।
নাক বন্ধ হয়ে যায়ঃ সর্দিতে ছোট বাচ্চার নাক বন্ধ হয়ে গেলে উপরোক্ত যে বিষয়ে বলা হয়েছে, তার ট্রাই করতে পারেন।
লেখক এর মন্তব্য
উপরোক্ত যে বিষয়ে আলোচনা করা হলো। যদি কোন ছোট বাচ্চার সর্দি-কাশি সমস্যা হয়ে থাকে। তাহলে উপরোক্ত বিষয়ে ট্রাই করতে পারেন। এবং যাদের ছোট বাচ্চা আছে তারা এই শীতে সাবধানে তাদেরকে রাখবেন। যেন কোনোভাবেই ছোট বাচ্চাকে ঠান্ডা না লাগে। আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। সকলের সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url