চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানতে পারবো। যারা দীর্ঘদিন সময় ধরে চর্মরোগে ভুগছেন তারা সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজ আমরা এই আর্টিকেলে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
নিমপাতার কয়েকটি ঔষধি গুন ও উপকারিতা সম্পর্কে নিম্নে জানতে পারবেন। নিম পাতার আরো পুষ্টিগুণ রয়েছে সেগুলোও জানতে পারবেন। যদি নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আরো জানতে চান। তাহলে এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। যাই হোক, কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ভূমিকা
চুলকানি একটি চর্ম রোগ, কমবেশি সকলেই এই রোগে আক্রান্ত। আমরা চুলকানির জন্য জীবনে কত না ঔষধ সেবন করেছি। কিন্তু কোন তেই কিছু হয় নাই। ঔষধ খেতে খেতে তার প্রতি একটা অনীহা এসে গিয়েছে। আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে একটি ঔষধি পাতার কথা বলব যা ব্যবহার করলে অবশ্যই ফল পাওয়া যাবে। তা হলো পাতা নিমপাতা।
আরো পড়ুনঃ তেজপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
নিম পাতা তেলে ভেজে খেতে পারলে অনেক উপকার রয়েছে। এটাতে রয়েছে ভিটামিন ‘ই’ যা ত্বক এবং চুলের ম্যাজিকের মত কাজ করে। এছাড়াও নিম পাতা সংক্রামন রোগ থেকে মুক্তি দেয়। এবং যারা চুলকানি ও চর্ম রোগে ভুগছেন, তারা প্রতিদিন খাদ্যাভাসে নিমপাতা ঔষধি হিসেবে রাখতে পারেন। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
নিম পাতার কয়েকটি ঔষধি গুণ ও উপকারিতা
নিম পাতা এমন একটি ঔষধি পাতা যা চুলকানি সহ নানান কাজে আমরা ব্যবহার করে থাকি। নিম গাছের কাঠও ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নিম্নে নিম পাতার কয়েকটি গুণাগুণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
আরো পড়ুনঃ ছোট বাচ্চাকে ঠান্ডা লাগলে ঘরোয়া ভাবে কিছু চিকিৎসা জেনে নিন।
১। চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার
চুলকানি এবং চর্ম রোগ একটি কমন বিষয়। এমন রোগে যদি আপনি আক্রান্ত হন তবে ভয় পাবার কোন কারণ নেই। নিয়মিত বেশ কয়েকদিন নিম পাতা ব্যবহার করলে আপনি এরূপ রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।
ব্যবহারের পদ্ধতি
কিছু নিম পাতা বেটে নিন। বাটা নিম পাতা যেখানে যেখানে সমস্যা রয়েছে সেখানে লাগিয়ে দিন। এইভাবে নিয়মিত কয়েকদিন ব্যবহার করলে চুলকানি এবং চর্ম রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
২। ত্বকের উপকার
নিম পাতা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এটাতে রয়েছে ভিটামিন ‘ই’ যার চর্ম রোগ থেকে রক্ষা করে। এবং নিম পাতা ফাঙ্গাস বিরোধী। নিম পাতা নিয়মিত ব্যবহারে চর্মরোগ তো দূরীই হবে সাথে ত্বক সুন্দর ও উজ্জ্বল হবে।
ব্যবহারের পদ্ধতি
প্রথমে প্রয়োজন অনুসারে কিছু নিম পাতা নিয়ে বেটে নিতে হবে। তারপর সে বাটা নিম পাতা মুখে এবং সমস্ত শরীরের মাখতে হবে। শরীরে যদি কোন ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাস থাকে তাহলে তার ধ্বংস করবে।
৩। নিম পাতার ফেসপ্যাক ব্যবহার
ত্বকে কোন প্রকার ইনফেকশন অথবা সাধারণ ক্ষত থাকলে নিম পাতা ব্যবহারে আপনার রোগ নিরাময় হবে। নিমপাতা দিয়ে নিয়মিত মুখ ধৌত করলে, মুখে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
আরো পড়ুনঃ ঘরোয়া ভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায় জানুন।
ব্যবহারের পদ্ধতি
প্রথমে কয়েকটি নিম পাতা শুকিয়ে গুড়ো করে নিন। তারপর দুই চা চামচ পরিমাণ নিম পাতার গুঁড়ো এবং তার সাথে দুই চা চামচ পরিমাণ চন্দনের গুড়া, এর সাথে পরিমাণ মতো গোলাপজল এবং হালকা পানি দিয়ে মিক্স করে নিন। তারপর মুখে লাগিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট ওয়েট করুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার মুখের আদ্রতা ও উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
৪। চুলের উপকার
নিম পাতা নিয়মিত চুলে ব্যবহার করলে চুল উঠা সহ চুলের যাবতীয় সমস্যা সমাধান করে চুলকে রাখবে সতেজ এবং সুন্দর কালো ও ঘন। অনেকের চুল উঠে মাথা ফাঁকা হয়ে যায়। তারা নিয়মিত নিমপাতা ব্যবহার করতে পারেন। নিমপাতা চুলের খুশকি থেকেও মুক্তি দেয়।
ব্যবহারের পদ্ধতি
প্রথম কয়েকটি নিমপাতা বেটে নিন। তারপর বাটা নিমপাতা চুল ফাঁক করে মাথার চামড়াতে লাগিয়ে দিন। এতে আপনার চুলের খুশকি, চুল উঠা, মাথার মধ্যে ঘা, ইত্যাদি সমস্যা সমাধান করে আপনার মাথা রাখবে সুস্থ।
৫। ব্রণের সমস্যা
ব্রণের সমস্যা সকলেরই রয়েছে। এই সমস্যা বয়সন্ধিকালে বেশি লক্ষ্য করা যায়। নিমপাতা নিয়মিত ব্রনের খতে ব্যবহার করলে অবশ্যই ব্রণ ভালো হবে। তাতে দ্রুত ব্রণের ক্ষত নিরাময় হবে। এবং ত্বক থাকবে উজ্জ্বল।
ব্যবহারের পদ্ধতি
প্রথমে কয়েকটি নিম পাতা বেটে নিন। ২ চা চামচ পরিমাণ বাটানিমের পাতা এবং এক চা চামচ পরিমাণ মধু। দুই উপকরণ মিক্স করে সকাল সন্ধ্যা ব্রণের ক্ষত জায়গাতে লাগান। এতে ব্রণের সমস্যা এবং ব্রণের ক্ষত থেকে নিরাময় পাওয়া যাবে। যাদের ত্বক শুষ্ক এবং আদ্রতা হারিয়ে ফেলেছে। তারা নিয়মিত নিম পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
৬। শরীরের দুর্গন্ধে নিমপাতার ব্যবহার
কঠিন পরিশ্রম করার কারণে শরীর থেকে ঘাম বের হয় এবং ব্যাকটেরিয়ার কারণে গায়ের দুর্গন্ধ হয়। আমরা গায়ের দুর্গন্ধের কারণে বিভিন্ন বডি স্প্রে ব্যবহার করি। কিন্তু এগুলোতে অনেক ক্ষতি রয়েছে। প্রাকৃতিক উপায়ে নিম পাতা ব্যবহার করলে এই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
ব্যবহারের পদ্ধতি
কয়েকটি নিম এক অথবা দেড় লিটার পানিতে দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। হালকা গরম থাকবে পরিষ্কার পানি নিয়ে সে পানিতে গোসল করুন। আশা করা যায় গায়ে কোন দুর্গন্ধ থাকলে দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
৭। জ্বরে নিম পাতার ব্যবহার
যদি কারো জ্বর আসে ফার্মেসি থেকে বিভিন্ন ঔষধ না এনে, প্রাকৃতিক উপায়ে নিমপাতা সেবন করলে জ্বর উপশম হবে।
ব্যবহারের পদ্ধতি
প্রথমে নিম পাতা মিহি করে বেটে নিন। ওই নিম পাতা বড়ি করে রোদের শুকিয়ে, শুকনো জায়গাতে রেখে দিন। যখন জ্বর আসবে তখন একটা করে বড়ি সেবন করুন। এতে জ্বর থেকে মুক্তি মিলবে।
৮। নিমপাতা কৃমিনাশক
নিমপাতা হল ভেষত কৃমিনাশক উপাদান৷ নিয়মিত নিম পাতা সেবন করলে, পেটের ভেতর কৃমি সহ যাবতীয় ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।
ব্যবহার পদ্ধতি
প্রথমে কিছু পরিষ্কার নিম পাতা পরিমাণ মতো বেটে নিতে হবে৷ তারপর সেগুলো নিয়মিত কয়েকদিন সেবন করলে পেটের কৃমি দূর হয়ে যাবে।
৯। রক্ত পরিষ্কারে নিম পাতার ব্যবহার
নিম পাতার রস প্রতিদিন পরিমাণ মতো পান করলে, রক্তে থাকা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া দূর করে রক্ত করে পরিষ্কার।
১০। তৈলাক্ত ত্বকে নিম পাতার ব্যবহার
নিমপাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন যা তৈলাক্ত ত্বকে নিয়মিত কয়েকদিন ব্যবহার করলে ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর করে ত্বক করবে উজ্জ্বল।
১১। নিমপাতা ছত্রাকের ইনফেকশন দূর করে
নিমপাতা ছত্রাকের ইনফেকশন দূর করতে বেশ ভূমিকা পালন করে। যাদের শরীরে চর্ম রোগ আছে তারা নিয়মিত নিমপাতা ব্যবহার করতে পারেন। নিম পাতা শরীরের ফাঙ্গাস নিরাময় করে চামড়া সচল করে।
নিমপাতা সেবনের অপকারিতা
যেই জিনিসের যত উপকার রয়েছে তার তত অপকারিতা ও রয়েছে। তাই বিষয়টা মাথায় রেখে নিমপাতা সেবন করা উচিত। উপকারের আশায় বেশি সেবন করবেন না। এতে লাভের চেয়ে, বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিমপাতা সেবন করবেন। নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১। গর্ভাবস্থায় সমস্যা
যে সমস্ত নারী নতুন গর্ভবতী হয়েছেন বা হবেন, তারা ভুলেও নিমপাতা সেবন করার চেষ্টা করবেন না। যদি প্রয়োজনই হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ট্রাই করুন।
২। নিমপাতা ব্যবহারে শিশুদের সতর্কতা
ছোট শিশু বাচ্চাদের নিমপাতা সেবনে সতর্ক অবলম্বন করতে হবে। তবে চিকিৎসকের মতে শিশুদের নিমপাতা সেবন না করালেই ভালো হয়।
৩। অপারেশন রোগীদের জন্য
কোন কারণবশত যারা অপারেশন করবেন তারা অন্তত তিন থেকে দুই সপ্তাহ আগে নিমপাতা সেবন এবং ব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন।
৪। বন্ধ্যাত্বের কারণ
নিমপাতা মাত্রাতিরিক্ত সেবন করলে উপকারের চাইতে বেশি ক্ষতি হয়। অনেক সময় অধিক হারে নিমপাতা সেবনে বন্ধ্যাত্বের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
৫। নিম্ন রক্তচাপ বা লো প্রেসার
নিম্ন রক্তচাপ বা লো পেশার রোগীদের বেশি পরিমাণে নিমপাতা সেবন করা যাবেনা। নিমপাতা সেবন করতে চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেবন করতে হবে।
৬। দীর্ঘমেয়াদি নিমপাতা সেবন
দীর্ঘমেয়াদি নিমপাতা সেবনে শিশুসহ প্রাপ্তবয়স্কদেরও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি নিমপাতা সেবনে ছোট বাচ্চাদের খিচুনি, তন্দ্রা, কমা, বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদিসহ আরো জটিল ও কঠিন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং নিমপাতা সেবনের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৭। নিম পাতা ওজন কমায়
নিমপাতা নিয়মিত সেবনে শরীরের বাড়তি ওজন কমায়। নিম পাতা বাটার সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে সেবন করলে আরো বেশি ফল পাওয়া যায়। যারা ওজন সমস্যা নিয়ে ভুগছেন তারা এই ঘরোয়া টিপস রায় ট্রাই করতে পারেন।
নিমপাতার ক্ষতিকারক দিক
নিম পাতা উপকারের আশায় বেশি ব্যবহার বা সেবন করলে উপকারের চাইতে অপকারই মিলে। তাই নিয়ম মেনে নিমপাতা ব্যবহার করা উচিত। অথবা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে। নিম্নে কয়েকটি ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
- কিডনির সমস্যা হতে পারে
- লিভারের সমস্যা হতে পারে
- ফুসফুসের সমস্যা হতে পারে
- হজম শক্তির সমস্যা হতে পারে
- ইত্যাদি আরও সমস্যা হতে পারে
নিমপাতা সেবনের নিয়ম
আমরা নিমপাতা বিভিন্নভাবে সেবন করতে পারি। নিম্নে কয়েকটি সেবনের পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১। নিমপাতার পাউডার
কয়েকটি নিমপাতা সূর্যের আলোতে শুকিয়ে নিতে হবে। সেই শুকনো পাতা পিষে, শুকনো বাসনে রেখে খেতে পারেন।
২। নিমপাতার জুস
কয়েকটি নিমপাতা পিষে হালকা তরল করে সেবন করতে পারেন।
৩। নিমপাতার বড়ি
নিমপাতা পিষে হালকা নরম করে ছোট ছোট বড়ি বানিয়ে সূর্যের আলোতে শুকিয়ে, শুকনো বাসনে রেখে খেতে পারেন।
৪। নিমপাতার তেল
নিম পাতা বাটা থেকে এক ধরনের তেল তৈরি হয়। এই তেল ত্বকে দিলে, ত্বকের পরজীবী ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ত্বককে সতেজ ও উজ্জ্বল করে।
৫। চা বানিয়ে খেতে পারেন
নিমপাতার চা বানিয়ে নিয়মিত সেবন করলে ভালো উপশম পাওয়া যায়। এবং পেটে যাবতীয় ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে পেট রাখে সুস্থ।
উপসংহার
উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আমরা জানতে পারলাম। এবং বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে। এ ব্যাপারে আমাদের সকলের জ্ঞান রাখা উচিত। আর নিম পাতার যথার্থ মূল্যায়ন করতে যেন ভুল না করি।
পাঠকের লক্ষণীয় বিষয়, আমাদের আর্টিকেলের মধ্যে কোন প্রকার ভুল পরিলক্ষিত হলে অবশ্যই আমাদেরকে অবহিত করবেন। এবং আমাদের আর্টিকেলটি আপনার কাছে কেমন লেগেছে? ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url