ঘরোয়াভাবে মোটা হওয়ার কিছু টিপস জেনে নিন
ঘরোয়া ভাবে মোটা হওয়ার কিছু টিপস সম্পর্কে আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে। যারা রোগা পাতলা স্বাস্থ্য নিয়ে টেনশনে রয়েছেন আজ এই আর্টিকেলটি তাদের জন্য। স্বাস্থ্যবান হওয়া আমাদের প্রত্যেকেরই জরুরী। আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
মোটা হওয়ার সহজ উপায় সম্পর্কেও এই আর্টিকেলে জানতে পারবেন। যারা এই সমস্যা নিয়ে ভুগছেন। তারা আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন। যাই হোক কথা না বাড়িয়ে চলুন, মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ভূমিকা
অতিরিক্ত চিকন হলে যেমন বিরক্তিকর। তেমনি অতিরিক্ত মোটা হলেও অস্বস্তিকর। যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছেন। তাদের উচ্চতা এবং বয়সের তুলনায় ওজন কম বা আন্ডার ওয়েট। আবার যাদের বয়সের তুলনায় বেশি মোটা হয়ে গিয়েছেন তারা বিভিন্ন চিন্তা টেনসনে ডুবে রয়েছে। কিভাবে এটা সারানো যায়। এই আর্টিকেলে এ বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করা হবে।
আরো পড়ুনঃ সকালে খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
আমরা অতিরিক্ত চিকন হলে বিভিন্ন ঔষধ সেবন করে থাকি। স্বাস্থ্য চিকন হওয়া বা ভেঙ্গে পড়ার বিভিন্ন কারণ হতে পারে। তার মধ্যে একটি হল থাইরয়েডিজমের অভাব। আরেকটি হলো কিডনির সমস্যা হলে মানুষের স্বাস্থ্য নষ্ট এবং ভেঙ্গে পড়ে। তাই আমাদের উচিত স্বাস্থ্য এবং খাদ্য তালিকার দিকে লক্ষ্য রাখা। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মোটা হওয়ার সহজ উপায়
১। নিয়মিত ব্যায়াম করাঃ নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীর স্বাস্থ্য ভালো হয় এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে যা পূরণ করতে আলাদা খাবার লাগতো। অনেকের ধারণা ব্যায়াম করলে শরীরের ওজন কমে। কিন্তু এই ধারণা ভুল। নিয়মিত ব্যায়াম করলে স্বাস্থ্যবান হওয়া সম্ভব।
আরো পড়ুনঃ ঘরোয়াভাবে মোটা হওয়ার কিছু টিপস জেনে নিন
২। গরুর মাংস খাওয়াঃ গরুর মাংসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন জিং ও ভিটামিন বি১২। যা মানব দেহের বিভিন্ন ঘাটতি পূরণ করতে বেশ ভূমিকা পালন করে। গরুর মাংস মাসে অন্তত দুই থেকে তিনবার খাওয়া উচিত।
৩। ঘন ঘন খাদ্য গ্রহণ করাঃ কারো স্বাস্থ্য রোগা পাতলা হলে তার উচিত ঘন ঘন খাদ্য গ্রহণ করা। এবং সেই খাদ্য হতে হবে প্রোটিনযুক্ত। যেমন দুধ, ডিম, ঘি, ফলমূল, পনির, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি।
৪। খেজুর ও মধু মিক্স করে খাওয়াঃ খেজুর ও মধু দুইটাই মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী। এবং যৌনের জন্য এই দুইটা উপকরণ বেশ কার্যকারী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর এবং মধু খেয়েছেন। মোটা হওয়ার জন্য এই দুইটা উপকরণেই হবে বেস্ট।
আরো পড়ুনঃ দাড়ি গজানোর সহজ নিয়ম জানন
৫। কার্বোহাইড্রেড খাদ্য গ্রহণঃ নিয়মিত কার্বোহাইড্রেড খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেড রয়েছে ভাত এবং রুটিতে। কার্বোহাইড্রেড যুক্ত খাবার দিনে অন্তত তিন ঘন্টা পর পর গ্রহণ করতে হবে। আবার অতিরিক্ত ফ্যাটের দিকেও আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৬। নিয়মিত কিসমিস গ্রহণ করাঃ যারা স্থায়ীভাবে মোটা হতে চান। তাদের খাদ্যাভাসে কিসমিস রাখা জরুরি। কেননা কিসমিসে রয়েছে খনিজ পদার্থ। যা মোটা ও ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
৭। বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণঃ খাদ্য তালিকায় ক্যালোরি জাতীয় খাবার যুক্ত করা। ওজন দ্রুত বাড়াতে চাইলে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ ক্যালোরি গ্রহণ করতে হবে। এবং কেউ যদি অল্প ওজন বাড়াতে চায় তাহলে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ ক্যালোরি গ্রহণ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা এমনটাই মন্তব্য করেছেন।
আরো পড়ুনঃ সূর্যের আলোর উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
৮। বেশি বেশি তেল জাতীয় খাদ্য খাওয়াঃ বেশি বেশি তেল জাতীয় খাদ্য খেলে দেহের ওজন ও দেহ মোটা করে তোলে।
৯। টেনশন মুক্ত থাকাঃ বর্তমান সময়ে টেনশন একটি কমন ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। টেনশন মুক্ত এমন কেউ নাই বললেই চলে। সুতরাং টেনশন করলে যেমন ওজন কমে যায়। তেমনি টেনশন করলে ওজন বেড়েও যায়। এজন্য স্বাস্থ্য ভালো চাইলে যতটুকু সম্ভব টেনশন মুক্ত থাকা।
১০। ডিম খাওয়াঃ ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি, প্রোটিন ও ফ্যাট। এছাড়াও রয়েছে খনিজ পদার্থ, মিনারেল, অ্যামিনো এসিড, অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন। তাই ডিম নিয়মিত গ্রহণ করলে স্বাস্থ্যবান হওয়া সম্ভব।
আরো পড়ুনঃ ছোট বাচ্চাকে ঠান্ডা লাগলে ঘরোয়া ভাবে কিছু চিকিৎসা জেনে নিন
১১। পরিমাণ মতো ঘুমানোঃ মানব দেহের জন্য ঘুম একটি ঔষধ। শরীর সুস্থ রাখতে চাইলে রাতে কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। এর কম হলে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কিছু সময় ধরে বাহিরে হাটাহাটি করুন এবং বাহিরের হাওয়া ও সকালে সূর্যের আলো শরীরে লাগান। এতে স্বাস্থ্য ও মন দুইটাই ভালো থাকবে।
মোটা না হওয়ার কারণ
মোটা না হওয়ার কারণ অনেকগুলো হতে পারে। তবে নিজের কিছু ভুলের কারণে মোটা বা স্বাস্থ্যবান হয় না। নিম্নে সে বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
- অনিয়মিত খাদ্যাভাস
- টেনশন করা
- নিয়মিত ও সময় মত ঘুম না পাড়া
- খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার না রাখা
- ডায়রিয়া, জন্ডিস, ডায়বেটিস, যক্ষ্মা, ক্যান্সার, ফুসফুসের সমস্যা, এইডস, কিডনির সমস্যা, লিভারের সমস্যা এইসব রোগের চিকিৎসা না করা।
- মাদক আসক্ত হওয়া
- বেশি বেশি ধূমপান করা
- হস্তমৈথুন করা
- নিয়মিত ব্যায়াম না করা
- ওষুধ খেয়ে মোটা হওয়া
ইসলামে মোটা হওয়ার উপায়
ইসলামে মোটা হওয়ার বিষয়ে কয়েকটি খাদ্যের কথা উল্লেখিত রয়েছে। নিম্নে আলোচনা করা হলো।
১। খেজুর ও শসাঃ রাতে ঘুমানোর পূর্বে খেজুর এবং শসা একত্রে মিক্স করে খেলে স্বাস্থ্যবান হওয়া সম্ভব।
২। কিসমিস ও মধুঃ কিসমিস ও মধু একত্র মিক্স করে নিয়মিত কয়েকদিন সেবন করলে মোটা বা স্বাস্থ্যবান হওয়া সম্ভব।
৩। মধু ও কালিজিরাঃ নিয়মিত মধু এবং কালিজিরা সেবন করলে শরীরের দুর্বল কাটিয়ে স্থায়ীভাবে স্বাস্থ্যবান করে তুলে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মৃত্যু ব্যতীত সমস্ত রোগের ঔষধ মধু ও কালিজিরা।
মোটা হওয়ার ব্যাপারে আয়েশা (রাঃ) এর হাদিস
১। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন, আয়েশা রদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আগেই বলে নেওয়া ভালো, আমার বিবাহের পূর্বে আমি ছিলাম হালকা পাতলা। আমার মা চাচ্ছিলেন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাড়িতে যাওয়ার পূর্বে মোটা বা স্বাস্থ্যবান হই।
আরো পড়ুনঃ চুলকানিতে নিমপাতার ব্যবহার | নিমপাতা খাওয়ার নিয়ম।
কিন্তু কোনভাবেই আমি স্বাস্থ্যবান হচ্ছি না। তখন আমার মা আমাকে পাকা খেজুরের সাথে শসা মিক্স করে নিয়মিত কয়েকদিন খাওয়াতে শুরু করেন। এতে আমি উত্তমরূপে হালকা স্বাস্থ্যবান হয়ে যাই। (সুনানে আবু দাউদ হাদিস সংখ্যা- ৩৯০৩)
২। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রদিয়াল্লাহু আনহা নিজের বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমার মা বিবাহের পূর্বে ঘটনা। আমার মা আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাড়িতে পাঠাতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু আমি স্বাস্থ্যবতী ছিলাম না। তিনি আমাকে অনেক কিছু খাইয়েছেন। কিন্তু কোনটাতেই ফল মেলেনি। তিনি পরে আমাকে তাজা খেজুরের সাথে শসা মিক্স করে খাওয়ালে আমি উত্তম রূপে স্বাস্থ্যবতী হয়ে যাই। (আবু দাউদ হাদিস সংখ্যা- ৩৩২৪) একসাথে খেজুর ও শসা খাওয়া হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নত।
মোটা হওয়ার ব্যায়াম
১। (Race)দৌড়ঃ প্রতিদিন নিয়ম করে কিছু সময় দৌড়ানো। সকালে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দৌড়ানো উচিত। এতে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
২। (Weight lifting exercise) ভার উত্তোলনঃ প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে ভার উত্তোলন। বডি ফিটনেস ভালো হয়। এবং স্বাস্থ্যবান হতে বেশ ভূমিকা পালন করে।
সাত দিনে মোটা হওয়ার কিছু সিরাপ
১। সিনকারা সিরাপঃ সিনকরা সিরাপ সেবনে ক্ষুধামন্দা দূর করে দ্রুত মুখের রুচি বৃদ্ধি করে। এই সিরাপ সেবনের পর ওজন মাত্রাতিরিক্ত যাতে বেড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
২। কারমিনা সিরাপঃ কারমিনা সিরাপও দ্রুত ক্ষুধামন্দা দূর করে। শরীরের দুর্বলতা কাটিয়ে সুস্থ করে তুলে। এই সিরাপে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। নির্ভয়ে এই সিরাপ সেবন করতে পারে।
৩। আমরুদ প্লাস সিরাপঃ আমরুদ প্লাস সিরাপ মোটা হওয়ার অতুলনীয় ঔষধ। এই সিরাপ সেবনের ফলে দ্রুত ক্ষুধামন্দা বাড়িয়ে তুলবে এবং শরীর দুর্বল সারিয়ে তুলে।
৪। পিউটন সিরাপঃ যারা দ্রুত মোটা হতে চান তাদের জন্য এই সিরাপ খুব কার্যকারী হবে। এই সিরাপ শরীর মোটা হওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। যারা এই সিরাপ নিয়মিত ব্যবহার করবেন। তাদের ওজন বৃদ্ধি পাবে এবং মোটাতাজা হবে।
৫। হাই ভি সিরাপঃ হাই ভি হারবাল জাতীয় সিরাপ। এই সিরাপ সেবনের ফলে দ্রুত হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। এবং শরীরের দুর্বলতা কমায়। শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে চিকন স্বাস্থ্য মোটা করে। এছাড়াও সাধারণ দুর্বলতা, প্রধান অঙ্গসমূহের দুর্বলতা, মানসিক অবসাদ ক্লান্তি, সহজ দেহশক্তির অভাব, রোগ প্রবণতা, ভিটামিন বি, যৌগ রাজির অভাবজনিত রোগ ব্যাধি ইত্যাদি রোগের জন্য হাই ভি সিরাপ ব্যবহার করা হয়।
আরো পড়ুনঃ তেজপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
৬। অরেঞ্জ ই সিরাপঃ এই সিরাপ মূলত মোটা হওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। যারা চিকন স্বাস্থ্য নিয়ে বেশি চিন্তিত। তারা এই সিরাপ কন্টিনিউ ব্যবহার করতে পারেন। এই সিরাপ অল্প দিনে মুখের রুচি বাড়িয়ে তুলে এবং মোটা ও ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
এই সিরাপ গুলি সেবনের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ক্রমে সেবন করতে হবে। তাছাড়া অনেক বড় সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
লেখকের মন্তব্য
পরিশেষে বলা যেতে পারে, উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে মোটা হওয়ার কিছু টিপস সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানলাম। তবে যারা স্বাস্থ্যহীন তারা এ বিষয়ে মাথায় রেখে কাজ করা উচিত। কেননা স্বাস্থ্যই সম্পদ। সুতরাং স্বাস্থ্য যদি ভালো না হয়। তাহলে সব শেষ।
পাঠকের লক্ষণীয় বিষয়, আমাদের আর্টিকেলের মধ্যে কোন প্রকার ত্রুটি বিচ্যুতি অথবা ভুল পরিলক্ষিত হলে আমাদেরকে অবশ্যই অবহিত করবেন। এবং আমাদের আর্টিকেলটি কেমন লেগেছে কমেন্ট বক্সে সুন্দর মন্তব্য করে যাবেন। আমাদের আর্টিকেল সম্পূর্ণ করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url