খেজুরের রসের উপকারিতা শোল মাছ খাওয়ার উপকারিতা আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবো। যারা এ
বিষয়ে জানতে আগ্রহী। তাদেরকে আমাদের এই আর্টিকেলে স্বাগতম। আপনি এতদিন খুজে খুজে
করে তেমন কোন এ ব্যাপারে তথ্য পাননি। তাদের জন্যই আমাদের এ আয়োজন। শুরু থেকে শেষ
পর্যন্ত পড়লে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আমরা এর মাধ্যমে আপনাদের বেশ কিছু ধারণা দেওয়ার জন্য এটা রচনা করেছি। সুতরাং
আপনি মনোযোগ সহকারে তা পড়ুন। অনেকেই তো আছে শোল মাছ দেখলে খেতে চায় না। তারা এই
পোস্টটি পড়লে। এর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। যাইহোক কথা না বাড়িয়ে, চলুন
বিস্তারিত শুরু করা যাক।
পোস্ট সূচিপত্র.
ভূমিকাঃ শোল মাছ খাওয়ার উপকারিতা
বাঙালির খাবারের তালিকায় একটি অন্যতম উপাদান হলো মাছ। এজন্য বাঙ্গালীদের বলা হয়
মাছে ভাতে বাঙালি। অন্য খাবারের চাইতে মাছের পুষ্টিগুন অনেক বেশি। কিন্তু সব
মাছের চাইতে শোল মাছের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। চীন, পাকিস্তান ও দক্ষিণ নেপাল
ছাড়াও বাংলাদেশের পুকুরে ও নদীতে এই শোল মাছের দেখা মিলে।
আরো পড়ুনঃ
ঘরোয়া ভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায় জানুন।
এই মাছের পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক এবং দামও বেশি। এই
মাছের চাহিদা বেশি থাকায় এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। স্বাদে ভরপুর শোল
মাছ ভোক্তার পাতে আসে ভাজি ও ভুনা হিসেবে এবং যেকোনো সবজি মেশালে ভোক্তার পাতে
আনে ভিন্ন রকম স্বাদে। শোল মাছ একটি রুচিবর্ধক মাছ। মাঝে মাঝে এই মাছ খেলে
মুখের রুচি ভালো থাকে।
বাংলাদেশে মাছের তালিকায় শোল মাছ একটি অন্যতম মাছ। শোল মাছকে রাক্ষসে মাছ
বলা হয়। কারণ এই মাছ অন্য সব পোনা মাছ বা ছোট মাছকে খেয়ে ফেলে। এই মাছ অন্য
সব মাছের চাইতে সব ধরনের প্রতিকূল অবস্থা সহ্য করতে পারে। এইজন্য এই মাছ চাষ
করা অনেক লাভজনক এবং চাষে অনেক বেশি সুবিধা রয়েছে।
শোল মাছ খাওয়ার উপকারিতা
গবেষণায় বলছে ভিটামিন ডি কমপ্লেক্স, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন ছাড়াও শোল মাছে
আছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও জিংক। আবার বিভিন্ন গবেষণায় দেখা
যায় রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে কাজ করে শোল মাছের আয়রন। আর গর্ভবতী মায়ের
পুষ্টির চাহিদা মেটাতে কাজ করে শোল মাছের ঝোল। বাড়ন্ত শিশুর হার ও মাংস পেশি
গঠনে কাজ করে শোল মাছ।
আর এতে থাকা ফাইবার হজমে সাহায্য করে দূর করে কোষ্ঠকাঠিন্য। চোখের দৃষ্টি
শক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শোল মাছ। পুষ্টিবিজ্ঞানীরা
বলেছেন, শোল মাছের প্রোটিন পেশীর ক্ষয় রোধ করে, আয়রন থাইরয়েড উন্নতিতে কাজ
করে থাকে এবং বেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে থাকে।
প্রতি ১০০ গ্রাম শোল মাছে রয়েছে
- ক্যালোরি ৯৪ গ্রাম
- ফসফরাস ২৯৮ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম ১৪০ মিলিগ্রাম
- ফ্যাট ৩৬০ মিলিগ্রাম
- আয়রন ০.৫ মিলিগ্রাম
- জিংক রয়েছে ১০৮০ মাইক্রোগ্রাম
- প্রোটিন ১৬.২ গ্রাম
শোল মাছ খাওয়ার অপকারিতা
শোল মাছের উপকারিতা অনেক বেশি। কিন্তু এই শোল মাছের কোন অপকারিতা নেই। এই মাছ
মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি মাছ। এই মাছ রোগ নিরাময়ের একটি পণ্য।
রোগের জন্য এই মাছ ভীষণ উপকারী। এই মাছের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি থাকে। তাই এই
মাছের উপকারিতা সবচেয়ে বেশি অপকারিতা নেই বললেই চলে।
এই মাছ খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। অ্যানিমিয়া রোগীকে
নিয়মিত শোল মাছ খাওয়ালে খুব উপকার হবে। পিত্ত, মানব দেহের একটি
গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পিত্তরস বৃদ্ধি হলে মানুষের দেহে বমি বমি ভাব হয়। মাছের
ঝোল খেলে এই অবস্থা হতে রেহাই পাওয়া যাবে। শোল মাছ মানব দেহের রক্ত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
শোল মাছ চাষের জন্য কেমন ধরনের পরিবেশ প্রয়োজন
শোল মাছ যেকোনো ধরনের পুকুরের চাষ করা যায়। শোল মাছ চাষের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি
করার পর শোল মাছের পোনা পুকুরে ছাড়তে হবে। পুকুরের মধ্যে শোল মাছের জন্য
কচুরিপানা ও কলমি লতা রাখতে হবে। শোল মাছের পুকুরে কচুরিপানা ও কলমি লতা রাখা
ভালো খেয়াল রাখতে হবে যে, কচুরিপানা ও কলমি লতা দিয়ে পুকুর যাতে ভরে না যায়।
পুকুরে তিন ভাগের এক ভাগ কচুরিপানা রাখতে হবে।
শোল মাছ কি কি খাবার খায়
শোল মাছের ছোট পোনার ভালো খাবার শুটকি মাছের গুড়া। এইজন্য শোল মাছের ছোট পোনার
জন্য চিংড়ির শুটকি গুঁড়া ভালোভাবে পিসে নিতে হবে। শুটকির গুড়া ১৬ দিন
খাওয়ানোর পর শোল মাছের পোনার সাইজ হবে দুই থেকে তিন ইঞ্চি। পোনার সাইজ যখন দুই
থেকে তিন ইঞ্চি এসে যাবে তখন শোল মাছকে কার্পজাতীয় মাছের ধানি পোনা খাদ্য
হিসেবে দিতে হয়।
একসঙ্গে ছোট ছোট ব্যাঙ বাঙাচি ও দেয়া যাবে। শোল মাছের পোনাকে প্রোটিন সমৃদ্ধ
খাবার দিতে হবে। শোল মাছ যখন বড় হয়ে যাবে তখন শোল মাছকে ছোট ছোট পোনা খাবার
হিসেবে দিতে হবে। এই শোল মাছের সাথে দেশি তেলাপিয়ার মাছ চাষ করে তেলাপিয়ার পোনা
শোল মাছ খেতে পারবে। এতে শোল মাছ চাষ করতে অনেক খরচ কমে যায়। এতে শোল মাছ চাষ
করতে অনেক খরচ কমে যাবে।
এই পদ্ধতি অনুযায়ী শোল মাছ চাষ করলে ছয় মাসের মধ্যে শোল মাছের ওজন হবে ৭৫০
থেকে ১০৫০ গ্রাম পর্যন্ত এবং এর সাইজ হবে ২,৩,৪,৫ ফিট পর্যন্ত। শোল
মাছ চাষের জন্য উন্নত জাতের পোনা পুকুরে চাষ করতে হবে। এতে মাছ চাষে অনেক খরচ কমে
আসবে এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যাবে।
শোল মাছ চেনার উপায়
শোল মাছ দেখতে সাধারণত কালো রঙ্গের হয়ে থাকে। কিন্তু পেটের নিচে সাদা
রঙ্গের হয়। এটি একটি আঁশযুক্ত মাছ। শোল মাছের শরীর এক থেকে তিন ফিট লম্বা হয়ে
থাকে এবং চওড়া দেহ থেকে তিন ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই মাছের মাথা লম্বা হয়।
শোল মাছের ওজন ৭০০ থেকে ১০০০ গ্রাম ওজন পর্যন্ত হয়ে থাকে।
শোল মাছের মা মাছ এবং বাবা মাছ চেনার উপায়
শোল মাছের মা এবং বাবা চেনার উপায় হলো। শোল মাছ ধরার পরে পরিষ্কার কাপড় বা
টিস্যু দিয়ে নাভি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর নাভির ওপর র আস্তে আস্তে
চাপ দিতে হবে। চাপ দেওয়ার পর নাভির মধ্যে হতে যদি সাদা রঙের লালা বের হয় তাহলে
বুঝতে হবে যে, এটি বাবা মাছ। আর চাপ দেওয়ার পর যদি হলুদ রঙের লালা বের হয় তাহলে
বুঝতে হবে যে এটি মা মাছ।
শোল মাছ চাষে কেমন খরচ হয়
অন্য যেকোনো মাছের চাইতে এই শোল মাছ চাষের খরচ অনেক কম। অল্প স্থানে অল্প খরচে
এইসব মাছের চাষ করা যায়। অন্য মাছের চাইতে এই শোল মাছের খাবার অনেক কম লাগে। তাই
এই মাছ অল্প খরচে চাষ করা যায়। কচুরিপানা এবং কলমি লতা শোল মাছের খাবার হিসেবে
পুকুরে দেওয়া হয়। এতে বাড়তি খাবার কম লাগবে এবং মাছ চাষে খরচ কমে যাবে। এতে
করে বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
শোল মাছের ঝোল ভূনা রেসিপি
উপকরণঃ প্রথমে প্রয়োজন অনুসারে শোল মাছ নিতে হবে। এরপর প্রতিটি
মাছের ওপরের চামড়া ছাড়িয়ে নিতে হবে। তারপর ছয় সাতটি পেঁয়াজ কুচি কুচি করে
নিতে হবে। প্রয়োজন অনুসারে কাঁচামরিচ কেটে নিতে হবে, তারপর তিন চার চামচ আদা
বাটা, জিরা বাটা, ২ চামচ রসুন বাটা, চার পাঁচটা দারচিনি, প্রয়োজন অনুসারে মরিচের
গুড়া, হলুদের গুড়া, ধনিয়ার গুড়া, এবং পরিমাণ মতো সয়াবিন তেল ও লবণ দিতে
হবে।
রান্নার পদ্ধতিঃ
প্রথমে শোল মাছ নিয়ে তার চামড়া খসিয়ে সুন্দর করে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর একটি
কোড়াইতে সয়াবিন তেল দিয়ে গরম করে নিতে হবে। তাতে টুকরো করা পেঁয়া শোল মাছ
খাওয়ার উপকারিতাজ, মরিচ, এবং ওপরের সব উপকরণ দিয়ে পাঁচ থেকে ছয় মিনিট কষিয়ে
নিতে হবে।
কষানো শেষে শোল মাছ তার মধ্যে দিয়ে দিতে হবে। দেওয়ার পর দশ থেকে পনের মিনিট জাল
দিতে হবে। এর মধ্যে মাঝেমধ্যে নেড়েচেড়ে দিতে হবে।
তারপর প্রয়োজন অনুসারে পানি দিতে হবে। পানি দেওয়ার পর আবার ১০ মিনিট জ্বাল করতে
হবে। যখন ঝোল গাঢ় হয়ে আসবে তখন তা নামিয়ে ফেলতে হবে।
নামানোর আগে জিরা ভাজার গুঁড়া বেটে তার মধ্যে দিলে আরো বেশি টেস্ট হবে। এইভাবে
গরম গরম শোল মাছের ঝোল পরিবেশন করলে অনেক ভাল এবং মজাদার হবে।
লেখক এর মতামতঃ শোল মাছ খাওয়ার উপকারিতা
আশা করা যায় এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আমাদের এই আর্টিকেলটি শুরু
থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। যদি আপনার কাছে ভালো লাগে তাহলে
বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুল করবেন না। সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে এখানেই শেষ করছি।
পাঠকের লক্ষণীয় বিষয়, আমাদের এই আর্টিকেলে কোন প্রকার ভুল পরিলক্ষিত হলে,
আপনার সুন্দর মতামত আমাদের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন। আপনাদের প্রতিটি কমেন্ট
পর্যবেক্ষণ করে দেখা হবে। এবং আমরা পরবর্তীতে সেই ভুল সংশোধন করে দেয়ার চেষ্টা
করব ইনশাআল্লাহ।
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url