শীতকালে এলার্জি প্রতিরোধের উপায় জেনে নিন

শীতকালে এলার্জি প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানতে পারবো। যারা এই সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ভুগছেন, তাদেরকে এই আর্টিকেলে স্বাগতম। এলার্জি হলে চাই আমাদের কিছু সতর্ক। নিম্নে কিছু ঘরোয়া উপায়ে আমরা আমাদের এলার্জি ভালো করতে পারে। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

শীতকালে এলার্জি প্রতিরোধের উপায় জেনে নিন

ঘরোয়াভাবে এলার্জি দূর করার সহজ উপায় সম্পর্কেও আমরা এই আর্টিকেলে জানতে পারবো। এলার্জি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং এলার্জি থেকে রেহাই পেতে আমরা কত কিছুই না করছি। যাই হোক, কথা না বাড়িয়ে চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক, নিম্ন বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

সূচনা

শীতকালে কম বেশি আমাদের সকলেরই এলার্জির সমস্যা রয়েছে। এই এলার্জি আবার কারো জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। এলার্জিতে হাঁচি সহ অসহ্য শ্বাসকষ্ট হয় এবং রোগীর অনেক কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়াও এলার্জির কারণে মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্যহীনতা ঝুঁকির মধ্যে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এইজন্য অল্পতেই এলার্জি প্রতিরোধ করতে হবে।

আমাদের খাদ্য থেকেই এলার্জির সূচনা হয়। যেমন: হাঁসের ডিম, হাঁসের মাংস, গরুর মাংস, পুঁইশাক, বেগুন, ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, গরুর দুধ ইত্যাদি থেকে আমাদের এলার্জির সূচনা হয়। এনার্জির উপসর্গ হলো গায়ে লাল লাল চাকা হওয়া। নাক চুলকানো, আবার কখনো নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি হওয়া, আবার কখনো কখনো চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া। এগুলো দেখলেই বুঝতে হবে শরীরে এলার্জি হয়েছে।

ঘরোয়া ভাবে এলার্জি দূর করার উপায়

১। এলার্জিতে মধু ব্যবহার
মধু পরীক্ষিত এক ভেষজ উপাদান। মধু যে কোন রোগের অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে এলার্জি ও সর্দি কাশিতে মধুর কার্য ক্ষমতা অনেক বেশি। এলার্জির কারণে নাক বন্ধ হয়ে গেলে অথবা নাক দিয়ে পানি পরলে, নিয়মিত মধু সেবনে এই রোগ থেকে উপশম পাওয়া যায়।

২। নারিকেল তেল ব্যবহার
নারিকেল তেল ব্যবহারে ত্বকের ময়েশ্চারাইজিং ঠিক রাখে। এবং ত্বকের কোষ সচল রাখতে অত্যন্ত ভূমিকা রাখে। শুধু তাই না, নারিকেল তেল এলার্জির চুলকানির স্থানে ব্যবহার করলে তার পাওয়া যায়। এই তেলে কোন প্রকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।

ব্যবহার বিধি
প্রয়োজন অনুসারে নারিকেলের তেল নিতে হবে। এবং সেই তেল হালকা কিছু গরম করে এলার্জির আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে। এই তেল দুই থেকে তিন ঘন্টা পর্যন্ত রাখতে হবে। এভাবে নিয়মিত কয়েক দিন নারিকেলের তেল ব্যবহার করলে চিরতরে এলার্জির চুলকানি দূর হবে।

৩। এলার্জি দূর করতে নিম পাতার ব্যবহার
নিমপাতা এলার্জির জন্য জাদুকরি মেডিসিন। যাদের শরীরে এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত নিমপাতা ব্যবহার করতে পারেন। এতে এলার্জির ভালো উপশম পাওয়া যাবে।

৪। এলার্জি দূর করবে অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরা জেল এলার্জি এবং চুলকানিতে বেশ কার্যকারী। অ্যালোভেরা আমরা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে থাকি। কেউ অ্যালোভেরার শরবত বানিয়ে সেবন করে। কেউ বা আবার চুলে ব্যবহার করে করে। মূলত এলোভেরা জেল এলার্জি, চুলকানি এবং চুলের জন্য বেশ কার্যকারী হিসেবে কাজ করে থাকে।

৫। এলার্জিতে পিপারমিন্ট তেলের ব্যবহার
পিপারমিন্ট তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি ইনফ্লেমেটরি। যা মানব দেহের প্রদাহ কমাতে বেশ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও পিপারমিন্ট তেল হাঁপানি, শ্বাসনালীর যে কোন সমস্যা ও এলার্জির সমস্যা সারাতে বেশ কার্যকারী।

৬। এলার্জি এড়াতে নিয়মিত ভিটামিন ‘‘সি” গ্রহণ
ভিটামিন সি মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই সব ঋতুতেই ভিটামিন সি পাতে রাখা চাই। সাধারণত মানবদেহে এলার্জি হয় ইমিউন সমস্যার কারণে। তাই ভিটামিন সি গ্রহণ করতে হবে ন্যাচারাল মেডিসিন হিসেবে। পুষ্টিবিদ্যার মধ্যে, প্রতিদিন ভিটামিন সি ১৫০০ থেকে ২০০০ মিলিগ্রাম গ্রহণ করলে দেহে হিস্টামিনের মাত্রা কমবে বলে মন্তব্য করেছেন।

৭। ব্রেকিং সোডার ব্যবহার
ব্রেকিং সোডাও এলার্জিতে বেশ কার্যকারী। ব্রেকিং সোডা ত্বকের ফাঙ্গাস বিরোধী। ব্রেকিং সোডাতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা এলার্জি উপশমে কার্যকারী।

ব্যবহার পদ্ধতি
প্রয়োজন অনুসারে কিছু বেকিং সোডা একটি পরিষ্কার পাত্রে নিতে হবে। তারপর তাতে পানি মিশাতে হবে। এই দুই উপকরণ একত্রে মিক্স করে একটি পেস্ট তৈরি করতে। এবং এই পেস্টটি এলার্জি আক্রান্ত স্থানে নিয়মিত কয়েক দিন ব্যবহার করতে হবে। এভাবে এলার্জির হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

এলার্জির লক্ষণ

এলার্জির লক্ষণগুলো অনেক রকম হয়ে থাকে। তবে সাধারণ লক্ষণ এর মধ্যে রয়েছে চোখের ভেতরে চুলকানো এবং চোখ লালচে হয়ে যাওয়া। শরীরে চাকা চাকা লাল দাগ হয়ে ফুলে যাওয়া এবং শরীর চুলকানো। শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া। সর্দিতে নাক ভরাট হয়ে যাওয়া। হাঁচি হওয়া। রক্তের চাপ কমে যাওয়া। গলা ব্যথা ও শক্ত হয়ে যাওয়া। মাথা ঘুরা ও বমি বমি ভাব হওয়া ইত্যাদি।

এলার্জি রোগের প্রতিরোধ

এলার্জির রোগ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য যেসব খাবার এবং বস্তুতে এলার্জি রয়েছে সেইগুলো মেনে চলা। এলার্জি রোগের প্রতিরোধ করার কয়েকটি নিয়ম নিম্নে আলোচনা করা হয়।
  • গোসল করার পর কাপড় সূর্যের আলোতে শুকানো
  • পরনের কাপড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা
  • গবাদি পশুর বাসস্থান পরিষ্কার রাখতে হবে
  • এলার্জি জাতীয় খাদ্য সেবন করা যাবে না
  • শোয়ার বিছানা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে
  • বাড়ির আশেপাশে ময়লা পরিষ্কার রাখতে হবে
  • প্রতিদিন গোসল করতে হবে

এলার্জির কয়েকটি ঔষধের নাম

Loratadine 10 mg
Fexofenadine 60 mg
Cetirizine 10 mg
Histakind 120 mg
Alernex 120 mg

যে সময় ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন

  • এলার্জির উপসর্গ হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন
  • ডাক্তারের দেওয়া ওষধ খেয়ে সমস্যা হলে
  • ঔষধ খাওয়ার পর ভালো না হলে
  • ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ সেবন করে এলার্জির উপসর্গ বেড়ে গেলে
  • ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে হাত পা ফুলে গেলে

এলার্জি মুক্ত খাবার

১। আপেল
আপেল বহুগুনে সমৃদ্ধ পুষ্টিকর একটি ফল। কমবেশি আমরা আপেল খেয়ে থাকি। আমরা এলার্জির ভয়ে কোনটা রেখে কোনটা খাব বুঝতেই পারেনা। তবে নির্ভয়ে আপেল খেতে পারেন। আপেলে এলার্জির তেমন কোনো ক্ষতিকর পদার্থ নাই।

২। লাল আঙ্গুর
লাল আঙ্গুর আমাদের সকলের কাছে একটি সুস্বাদু ফল। লাল আঙ্গুর কয়েকটি ছেলে ক্ষুধার ভাব নিয়ন্ত্রণ করে। সেই সাথে লাল আঙ্গুরেও এলার্জির কোন ক্ষতিকারক পদার্থ নাই। এজন্য এই ফল খাওয়া যাবে।

৩। মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলু খেতে খুব সুস্বাদু। মিষ্টি আলুতে এলার্জির কোন ক্ষতিকর পদার্থ নাই। সুতরাং এটাও খেতে পারবেনা।

৪। দই
দই আমাদের সকলের কাছে একটি পরিচিত নাম। পুষ্টিবিদরা বলেন, দইয়ে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি।  যা নিয়মিত সেবনে এলার্জি দূর হয়ে যায়। এবং দই খেলে এলার্জি হয় না।

৫। ভিটামিন “ই” জাতীয় খাবার খাওয়া
নিয়মিত ভিটামিন ই জাতীয় খাবার না খেলে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই জন্য আমাদের খাদ্যাভাসে ভিটামিন এ জাতীয় খাবার রাখতে হবে। ভিটামিন এ জাতীয় খাবারের নাম সূর্যমুখীর বীজ, বাদাম, আখরোট, ইত্যাদি। এসব খাবার খেলে এলার্জি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

লেখকের শেষ কথা

উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে এলার্জি সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানলাম। তাই আমাদের উচিত যেগুলো খাবার খেলে এলার্জি হয় সেগুলো এড়িয়ে চলা। এবং যেগুলো খাবার খেলে এলার্জি হয় না সেগুলো নিয়মিত গ্রহণ করা।

আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনার কাছে কেমন লেগেছে। আপনার মতামত আমাদের কমেন্ট বক্সে লিখে যাবেন। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুল করবেন না। আমাদের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url