ঘরোয়া ভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায় জানুন।
ঘরোয়া ভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায় সম্পর্কে আমরা সকলেই পরিচিত। যারা দীর্ঘকাল এই সমস্যায় ভুগছেন তাদেরকে এই আর্টিকেলে অভিনন্দন। আমরা আশা করছি, এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনি এই রোগ থেকে চিরতরে মুক্তি পাবেন।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায় সমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো। যারা এই সমস্যায় ভুগছেন এই আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো। তাহলে চলুন, কথা না বাড়িয়ে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
উপস্থাপনা
মুখে দুর্গন্ধের কারণে একে অপরের সাথে কথা বলতে অস্বস্তি ভাব লাগে। আমরা দিনে দুই তিন বার ব্রাশ ও মেসওয়াক করার পরও যেন মুখে দুর্গন্ধ লেগেই থাকে। কারো সাথে বসে মুখোমুখি গল্প করতে গিয়ে বিব্রত হতে হয়। মন খুলে কথা বলা এবং হাসতেও ভয় লাগে।
আরো পড়ুনঃ খাদ্যের প্রধান পুষ্টি উপাদান গুলো কি কি? তা জেনে নিই।
অনেকের মুখের গন্ধ হওয়ার কারণ, মুখের মধ্যে জমে থাকা কিছু ব্যাকটেরিয়ার কারণে হতে পারে যেমন দাঁতের মাড়িতে খাদ্য কণা জমে থাকা। অথবা কারো লিভারের সমস্যা হলে এমনটা হয়ে থাকে। মুখের দুর্গন্ধের কারণে আমরা কারো সাথে মন খুলে কথা এবং হাসতে পারি না।
আরো পড়ুনঃ রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা কিছু ঘরোয়া সহজ উপায়ে মুখের দুর্গন্ধের মত রোগ থেকে রেহাই পেতে পারি। নিম্নে যে উপকরণগুলো বলা হবে তা আপনার নাগালের মধ্যেই রয়েছে। নিম্ন বর্ণনা করা হলো।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায় সমূহ
১। পুদিনা পাতাঃ মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে পুদিনা পাতার জুড়ে নেই। এটিকে প্রাকৃতিক মাউন্ট ফ্রেশনার হিসেবে অবহিত করা হয়। যা মুখের ব্যাকটেরিয়া ও দুর্গন্ধ দূর করতে সহায়তা করে। পুদিনা পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি এবং খনিজ পদার্থ। তাই পুদিনা পাতা প্রতিদিন দুইটি অথবা তিনটি করে পাতা চিবিয়ে খেলে এ রোগ থেকে মুক্তি মিলবে।
২। দারচিনি ও মধুঃ বিভিন্ন গবেষণা থেকে উঠে এসেছে দারচিনি ও মধুতে শক্তিশালী এন্ট্রি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্ট্রি ইনফ্লেমেটরির মত পদার্থ বিদ্যমান রয়েছে। যা মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে বেশ ভূমিকা পালন করে। দারচিনি ও মধু দাঁতের ক্ষয় রোধ করে দাঁতকে করে শক্তিশালী ও মজবুত। এবং মুখে দুর্গন্ধ দূর করে আনে স্বস্তিকর একটি মুহূর্ত।
৩। লেবুর রসঃ লেবুর রসে রয়েছে ভিটামিন সি। যা মানব দেহের মহা ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে উঠে এসেছে লেবুর পাশে রয়েছে অ্যাসিটিক পদার্থ যা নিয়মিত সেবন করলে মুখের দুর্গন্ধের ঝুঁকিপূর্ণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
৪। মেথি বীজঃ বহুকাল থেকে এর ব্যবহার চলে আসছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন মেথি বীজ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে এর ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন হজমের সমস্যা, কষ্টকাঠিন্য, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, তল পেট ব্যথা সহ যাবতীয় রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য হলো মুখের দুর্গন্ধ, এক চা চামচ পরিমাণ মতো মেথি বীজ নিয়ে অল্প কিছু পানিতে মিশিয়ে তা কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন। ফোটানো শেষ হয়ে গেলে মেথি বীজ সেঁকে নিয়ে কয়েকদিন নিয়মিত ব্যবহার করলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে।
৫। আপেলের ভিনেগারঃ মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে আপেলের ভিনেগার এই প্রাকৃতিক উপাদানটি অত্যন্ত কার্যকারী। শুধু তাই না, এটি ব্যবহারে দাঁতের যাবতীয় সমস্যা গুলো দূর করে দেয় এবং দাঁত রাখে সতেজ।
৬। ব্রেকিং সোডাঃ মুখের দুর্গন্ধ সহ যাবতীয় মুখের সমস্যা সমাধানের আরেক নাম হলো ব্রেকিং সোডা। পরিমাণ মতো ব্রেকিং সোডা, এক গ্লাস পানির মধ্যে মিক্স করে, প্রতিদিন নিয়মিত কুলি করলে আশা করা যায়, মুখের বাজে দুর্গন্ধসহ যাবতীয় সমস্যা দূর করবে।
৭। নারিকেলের তেলঃ মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে আরেকটি কার্যকারী প্রাকৃতিক উপাদান হলো নারিকেলের তেল। এতে রয়েছে এন্টি ইনফ্লেমেটরি যার ফলে মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। আর মুখকে রাখে দুর্গন্ধ মুক্ত ও ফ্রেশ।
এটি ব্যবহারের পদ্ধতি হলো, এক চা চামচ নারিকেলের তেল মুখে নিয়ে পাঁচ মিনিট রাখতে হবে এবং হালকা গরম পানি দিয়ে কুলি করতে হবে। এতেই এই রোগ থেকে আপনার মুক্তি মিলবে।
৮। পানিঃ পানির অপর নাম হল জীবন। পানি ছাড়া কেউ বাঁচতে পারে না। তাই মানবদেহের জন্য পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। এতে আপনার মুখের দুর্গন্ধ রোধ হবে। আর নিঃশ্বাস থাকবে সতেজ।
৯। লবঙ্গঃ রান্নার কাজে আমরা লবঙ্গ ব্যবহার করে থাকি। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে এক টুকরো লবঙ্গ মুখের মধ্যে রাখতে পারি। এতে মুখের ব্যাকটেরিয়ার মত সমস্যা দূর করে আপনার নিঃশ্বাসকে বিশ্বাসই করে তুলে। লবঙ্গ প্রতিনিয়ত সেবন করলে দাঁতের ক্ষয় রোধ এবং মুখের যাবতীয় প্রবলেম সল্ভ করে দেয়।
১০। তুলসির পাতাঃ মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য তুলসির পাতা প্রতিদিন সকাল বিকাল একটা অথবা দুইটা পাতা মুখের মধ্যে রাখতে হবে। তুলসী পাতাতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে বেশ কার্যকারী। এবং তুলসী পাতা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে ছোট শিশুর ঠান্ডা জনিত সমস্যা হলে তুলসীর পাতা মহা ঔষধ হিসেবে কাজ করে।
১১। তেজপাতা ও দারচিনিঃ আমরা জানি তেজপাতা ও দারচিনি রান্নার মসলা হিসেবে ব্যবহার হয়। কিন্তু এই দুই উপকরণ মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ঔষধ হিসেবে কাজ করে। এটি ব্যবহার করার নিয়ম হলো, কয়েকটি তেজপাতা এবং অল্প কয়েকটা দারচিনির ছাল পরিমাণমতো পানি দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর ফুটনো পানি হালকা ঠান্ডা করে, কয়েকবার কুলি করলে আশা করা যায় মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে।
১২। সরিষার তেল ও লবণঃ মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য সরিষার তেল ও লবণ একসাথে মিক্স করে দিনে অন্তত একবার ব্যবহার করলে এই রোগ থেকে মুক্তি মিলবে। শুধু তাই না, এর সাথে দাঁতের হলদেটে ভাব থাকলে পরিষ্কার হবে এবং মুখে ফ্রেশনের আসবে।
১৩। লবণ ও পানিঃ পানির মধ্যে হালকা লবণ দিয়ে কিছুক্ষণ গরম করার পর তা দিয়ে কুলি করলে চিরতরে মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে।
১৪। নিম গাছের মেসওয়াকঃ যাদের মুখের দুর্গন্ধ নিয়ে দীর্ঘকাল ভুগছেন তারা নিম গাছের মেসওয়াক দিয়ে প্রতিনিয়ত মেসওয়াক করলে চিরতরে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
১৫। জিহ্বা পরিষ্কার রাখুনঃ প্রতিদিন সকালে ব্রাশ করার পাশাপাশি জিহ্বা পরিষ্কার রাখুন। কেননা জিহ্বা থেকেও দুর্গন্ধ বের হয়।
১৬। ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবেঃ ধূমপান একটি মারাত্মক বদ অভ্যাস। ধূমপানের কারণে মুখের দুর্গন্ধ হয়। শুধু তাই না, ধূমপানের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
১৭। ব্রাশ করতে হবেঃ যদি কারো মুখের দুর্গন্ধের সমস্যা থাকে। তাহলে দিনে অন্তত দুইবার করে ব্রাশ করা উচিত। এতে মুখের দুর্গন্ধ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
১৮। ডাক্তারের পরামর্শ নিনঃ যদি আপনার এই সমস্যা থেকে থাকে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url