তেজপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
তেজপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা এখন বিস্তারিত জানব। যারা এই বিষয়ে জানতে আগ্রহী। এবং বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। তাদেরকে আমাদের এই আর্টিকেলে স্বাগতম। আজ আমরা তেজপাতা খাওয়ার কিছু ভেষজ পুষ্টিগুলো গুণ সম্পর্কে আলোচনা করব। তাই এ আর্টিকালটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।
তেজপাতা খাওয়ার উপকারিতাও এই আর্টিকালে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আপনি এই আর্টিকেল পড়লে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। যাই হোক, কথা না বাড়িয়ে চলুন বিস্তারিত শুরু করা যাক। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
উপস্থাপনা
আমরা অনেকেই জানি তেজপাতা শুধু রান্নার কাজে ব্যবহার হয়। এর গুনাগুন সম্পর্কে আমরা জানিনা। এটি শুধু রান্নার স্বাদই বাড়ায় না। বরং এর গুণ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা রাখতে সাহায্য করে। তেজপাতায় রয়েছে ভিটামিন ’সি’ ও ’ই’। এছাড়াও হয়েছে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আয়রন, কপার, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি। এই গুণাগুণ ও পুষ্টির কারণে বাংলাদেশ, চায়না, নেপাল, ভুটান, ভারত সহ আরো অনেক রাষ্ট্রে এর উৎপাদন শুরু হয়ে গিয়েছে।
এইগুলো দেশে তেজপাতা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। তেজপাতা মানব দেহের বিভিন্ন উপকারে আসে। যেমন শরীরের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়, হার্টের প্রবলেম থাকলে সলভ করে ইত্যাদি আরো সমস্যা সমাধান করে।
তেজপাতা খাওয়ার উপকারিতা
তেজপাতা খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। ইতিমধ্যে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন। নিম্নে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১। ত্বকের জন্য তেজপাতার উপকারঃ তেজপাতা ত্বক পরিষ্কার ও ব্রণ মুক্ত রাখতে এর জুড়ি মিলা দায়। কয়েকটি তেজপাতা প্রয়োজন অনুসারে পানিতে দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। পানি ঠান্ডা করে সেই পানি মুখে নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক পরিষ্কার, উজ্জল, ব্রণ মুক্ত, এবং তেলতেলে ভাব দূর হবে চিরতরের জন্য।
২। শরীরের দুর্গন্ধ কমাতে তেজপাতার ব্যবহারঃ অনেক সময় আমাদের শরীর ঘেমে দুর্গন্ধ বের হয়। তেজপাতার গুঁড়ো একটি পরিষ্কার নেকরাতে বেঁধে নিন। কিছুক্ষণ কুসুম গরম বাড়িতে ডুবিয়ে রাখুন। তারপর সেই পানি দিয়ে গোসল সেরে নিন। আশা করা যায়, এইভাবে নিয়মিত কিছুদিন ব্যবহার করলে শরীরের দুর্গন্ধ দূর হবে। এই শীতে এটিই হবে আপনার জন্য উত্তম উপায়।
৩। দাঁতের হলদেটে ভাব দূর করতেঃ দাঁত উজ্জ্বল করতে কাঁচা তেজপাতা ব্যবহার করতে পারি। আমরা ব্রাশ করতে করতে দাঁতের মাংস ক্ষয় করে ফেলেছি। সুতরাং এটি ব্যবহার করলে দাঁতের হলদেটে ভাব দূর হবে এবং উজ্জ্বল থাকবে। এটি নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন।
৪। তেজপাতা ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ তেজপাতাতে এমন কিছু ভেষজ উপাদান রয়েছে যা খিদে কে নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের ওজন কমাতে সহায়ক হয়। স্বাস্থ্য গবেষকরা বলেছেন, তেজপাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি। যারা অতিরিক্ত ফ্যাট তারা এই ঘরোয়া টোটকাটি ট্রাই করতে পারেন।
৫। তেজপাতা চুল ঘন ও মজবুত করবেঃ চুল ঘন ও মজবুত করতে তেজপাতার পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। কয়েকটি পরিষ্কার তেজপাতা নিয়ে পরিষ্কার একটি পাত্রে এক লিটার পরিমাণ পানি নিয়ে ফুটিয়ে নিন। পানি ঠান্ডা হলে মাথা এবং চুল ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত কয়েকদিন করুন। এতে আপনার চুল ঘন ও মজবুত হবে এবং চুল পড়া সমস্যা থাকলে সেটাও দূর হয়ে যাবে।
৬। ঠান্ডা ও খুসখুসে কাশিতেঃ ঠান্ডা ও খুসখুসে কাশি নিরাময়ের জন্য ভালো উপকরণ হবে তেজপাতা। এটি চার থেকে পাঁচটি পাতা, প্রয়োজন অনুসারে পরিষ্কার পাত্রে পানি নিয়ে ফুটাতে হবে। কুসুম কুসুম গরম থাকতে ওই পানি একটি পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে বুক মুছে দিলে, আশা করা যায় অল্প দিনে এ রোগ থেকে মুক্তি মিলবে ইনশাআল্লাহ।
৭। হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ তেজপাতা খাবার হজম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তেজপাতা সেবনের ফলে টক্সিন নামক অতিরিক্ত পদার্থ শরীর থেকে বের করে দেয়। বদহজমের সমস্যা থাকলে সেটা দ্রুত সারিয়ে তুলে। প্রসাবের কোন সমস্যা হলে তেজপাতা ম্যাজিক এর মত কাজ করে।
৮। ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়ঃ তেজপাতা ব্যথা সারাতে দারুন উপকারে। তেজপাতা সেবনে বাত ব্যথা সহ পুরাতন ব্যথা নিরাময় করে। এবং মাথাব্যথা সারাতেও দারুন কার্যকারী।
৯। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ তেজপাতা প্রতিরোধ সেবন করলে যাদের ডায়াবেটিস অতিরিক্ত তারা এটি ভালো উপকার পাবে। এবং দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে আপনাকে রাখবে সুস্থ।
১০। মহিলাদের মাসিক নিয়ন্ত্রণ করেঃ যারা এই সমস্যায় ভুগছেন তারা এটা ট্রাই করতে পারেন। কয়েকটি তেজপাতা নিয়মিত চিবিয়ে খেলে এই রোগ থেকে মুক্তি মিলবে।
১১। ব্রণের সমস্যাঃ বয়সন্ধিকালে মুখে ব্রণ হওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রয়োজন অনুসারে পানিতে কয়েকটি তেজপাতা দিয়ে ১০-১৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন। তারপর পাতাগুলো ছেঁকে একটু ঠান্ডা করে সেই পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলে ব্রণ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
১২। তেজপাতা কোলেস্টেরল এবং হার্টের জন্য উপকারীঃ যারা কোলেস্টেরল এবং হার্ট রোগে ভুগছেন তারা তেজপাতা ব্যবহার করতে পারেন। তেজপাতাতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার ফলে কোলেস্টেরল এবং হার্টের রোগীর খুব উপকারী হয়।
১৩। চা তে তেজপাতার ব্যবহারঃ প্রতিদিন চা তে তেজপাতা দিয়ে পান করলে ঠান্ডা জনিত এবং গলার কোন সমস্যা থাকলে দূর হয়ে যায়।
১৪। কিডনি রোগের সমস্যা হলেঃ যাদের কিডনির সমস্যা তারা তেজপাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। যদি ও খেতে হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত।
১৫। ক্ষত নিরাময় করেঃ তেজপাতা ক্ষত নিরাময়ে ভেষত ঔষধ হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন গবেষণা করে দেখা গেছে তেজপাতাতে রয়েছে অতুলনীয় সব গুনাগুন।
১৬। রান্নার স্বাদ বাড়ায়ঃ আমরা রান্নাতে দুই তিনটা তেজপাতা দিয়ে রান্নার স্বাদ বাড়াতে পারি। এছাড়াও তেজপাতাতে রয়েছে ভেষজ পুষ্টি গুনাগুন।
১৭। খুশকি তাড়াতে তেজপাতার ব্যবহারঃ খুশকির কারণে মাথার চুল উপ্রা নিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। প্রথমে কয়েকটি তেজপাতা বেটে নিতে হবে। বাটা তেজপাতার সাথে একটু টক দই মিক্স করে মাথার চুল সহ চামড়াতে পেস্ট করে দিতে হবে। এভাবে বেশ কয়েকদিন করলে আশা করা যায় খুশকি থেকে মুক্তি মিলবে।
তেজপাতার অপকারিতা
- তেজপাতা খাওয়া যেমন উপকার, তেমনি এর অপকারও রয়েছে। মাত্রা অতিরিক্ত তেজপাতা ব্যবহার করলে উপকারের চাইতে অপকারই বেশি। নিম্নে কিছু অপকারিতার কথা উল্লেখ করা হলো
- ডাইবেটিকস রোগীদের তেজপাতা ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তেজপাতা অতিরিক্ত ব্যবহার করা যাবে না। কারণ এতে ব্লাড সুগারের নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটায়। যার ফলে এই সমস্ত রোগীদের তেজপাতা ব্যবহারে সতর্ক অবলম্বন করতে হবে।
- তেজপাতা ব্যবহারে গর্ভবতী মহিলাদের সতর্ক থাকতে হবে। তেজপাতা অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে গর্ভের সন্তানের সমস্যা হতে পারে।
- সার্জারি রোগীদের তেজপাতা সেবন করা যাবে না। কারণ তেজপাতাতে ব্যবহারে স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে। তাই সার্জারি রোগীদের এটা সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে।
- যাদের এলার্জি রয়েছে তারা ভুলেও তেজপাতা খাবেন না। কেননা তেজপাতা খাওয়ার ফলে এলার্জি বেড়ে যেতে পারে।
প্রতি ১০০ গ্রাম তেজপাতার পুষ্টি উপাদান
- ভিটামিন সি ৪৭.৫ মিলিগ্রাম
- প্রোটিন ৭.৬২ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম ৮৩৫ মিলিগ্রাম
- কার্বোহাইডেট ৭৪.৯৮ গ্রাম
- আয়রন ৪৩. ৪২ গ্রাম
- ফ্যাট ৮.১৪ গ্রাম
- ফাইবার ২৬.৫ গ্রাম
- খাদ্যশক্তি ৩১৫ ক্যালোরি
- পানি ৪. ৪৫ গ্রাম
উপসংহার
সমস্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যেতে পারে, তেজপাতা হলো ভেষজ পুষ্টি উপাদান। যা মানব দেহের অত্যন্ত উপকারী উপাদান। এই উপাদানটি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
পাঠকের লক্ষণীয় বিষয়, আমাদের আর্টিকেলের মধ্যে যদি কোন প্রকার ভুল পরিলক্ষিত হয়। তাহলে আমাদেরকে অবহিত করলে, পরবর্তীতে আমরা সংশোধন করে দিব। এবং আমাদের আর্টিকেলটি কেমন লাগলো কমেন্ট বক্সে আপনার সুন্দর মতামত জানিয়ে দিন। আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
শালা মজিদ বাটপাড়