শীতে ত্বক ফাটে কেন? শীতকালে মুখে কি মাখা উচিত। আজ আমরা এ বিষয়ে জানতে পারব। যারা এই সমস্যা নিয়ে ভুগছেন তাদেরকে এই আর্টিকেলে স্বাগতম। শীতে চাই একটু বাড়তি সতর্ক। কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে শীতের প্রকোপ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো।
শীতে ত্বক ফাটে কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলতে পারি, শীতকালে বাতাসের আদ্রতা কম থাকায় আমাদের ত্বক এবং শরীর থেকে পানি শোষণ করে। এর কারণে আমাদের ত্বক ফেটে যায়। যাই হোক, কথা না বাড়িয়ে চলুন আলোচনা করা যাক। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
উপস্থাপনা
শীতকালে বাতাসের আদ্রতা কমে যাওয়ার কারণে, বাইরের পরিবেশ আমাদের শরীর থেকে আদ্রতা শুষে নেয়। ফলে আমাদের ত্বক, ঠোঁট, পায়ের গোড়ালি, ত্বক টানটান ভাব সহ শরীরের আরো অনেক জায়গা ফেটে যায়। তখন ত্বক ফাটা একটি বিরক্তের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ সময় ত্বক সুস্থ রাখার জন্য আমরা শীতকালীন ক্রিম ব্যবহার করে থাকি। তবে ঘরোয়া ভাবে আমরা কিছু টেকনিক অবলম্বন করতে পারি।
মানব দেহের শরীরে ১০০ ভাগের ৫৬ ভাগই পানি। আর ত্বক গ্রহণ করে শতকরা ১০ ভাগ। যখন এ পানি কম হয়ে যায় তখন ত্বক ফাটা, পায়ের তালু ও গোড়ালি ফাটা সহ দেহের আরো অনেক জায়গা ফেটে যায়। তাই শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়া উচিত। আজ এই আর্টিকালের মাধ্যমে ঘরোয়া ভাবে ত্বক ফাটা রোধ সম্পর্কে আলোচনা করব। নিম্নে আলোচনা করা হলো।
শীতে ত্বক ফাটে কেন ?
শীতকালে ত্বক ফেটে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো এই সময় আবহাওয়া শুষ্ক থাকে। স্বাস্থ্যবিদদের মতে, শীতকালীন সময় বাতাসের তেমন জলীয়বাষ্প থাকে না। তাই বাতাসের আদ্রতা কম থাকায় চারপাশের পরিবেশ থেকে পানি জলীয়বাষ্পে পরিণত হয়। এবং ত্বক থেকেও পানি জলীয় বাষ্প হয়। তখন ত্বকের যতটুকু পানি প্রয়োজন ততটুকু পানি না পেলে ত্বক ফেটে যায়।
বাহিরের পরিবেশ শুষ্ক থাকার কারনে আমাদের ত্বক থেকে পানি শুষে নিয়ে পানি শূন্যতা করে দেয়। আর গ্রীষ্মকালে ত্বক ঘেমে যায় ও তৈলাক্ত ভাব হয়। এই দুই উপকরণ একত্রিত হয়ে ত্বক ফাটা রোধ করে। শীতকালে ত্বকে যতটুকু সমস্যা দেখা দেয় গ্রীষ্মকালে তা দেখা দেয় না। এইজন্য শীতকালে ত্বকের যত্ন নিতে হবে।
শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়ার উপায়সমূহ
শীতকালে চাই একটু বেশি সতর্ক। কেননা, এই সময় ত্বকের উপর যে আজাব যায় অন্য ঋতুতে এমনটা হয় না। এজন্য চাই বাড়তি যত্ন। ত্বকের যত্ন আমরা বিভিন্নভাবে নিতে পারি। নিম্নে কিছু উপায় সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।
১। শীতকালে বেশি বেশি পানি পান করা
শীতকালে বেশি বেশি পানি পান করার অভ্যাস করা। কেননা এই সময় বাতাস ত্বকের আদ্রতা কেড়ে নিয়ে পানি শূন্যতা করে দেয়। এইজন্য বেশি বেশি পানি পান করলে ত্বকের আদ্রতা ফিরে পায় এবং পানি শূন্যতা পূরণ করে।
শীতকালে বেশি পানি পান করলে জয়েন্টের হাড় সহ পেশির বেশ উপকার করে। শুধু তাই না, বেশি পানি পান করার ফলে শরীরের মৃত কোষগুলো সচল করতে বেশ ভূমিকা রাখে। এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বিগুণ হারে বাড়িয়ে তুলে। বেশি পানি পান করার ফলে কিডনির যাবতীয় সমস্যা দূর করে কিডনি রাখে সুস্থ।
২। শরীরে সূর্যের আলো লাগান
শীতকালে সকালবেলা শরীরে সূর্যের আলো লাগালে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তার মধ্যে একটি হলো ত্বক সুন্দর ও মসৃণ হয়। কেননা সকালের সূর্যের আলোয় রয়েছে ভিটামিন ডি। যা ত্বকের অনেক উপকার করে।
৩। তেল বা লোশন ব্যবহার করুন
শীতকালে ত্বকের আদ্রতা হারিয়ে ফেললে তখন ত্বক, ঠোঁট, হাত পা ফেটে যায়। ত্বক ফাটার পূর্বেই তেল বা লোশন ব্যবহার করতে হবে। অথবা ফাটা ত্বকের উপর তেল বা লোশন মাখতে হবে। রাতে ঘুমানোর পূর্বে সমস্ত শরীর তেল অথবা লোশন ব্যবহার করতে হবে।
৪। অলিভ অয়েল ব্যবহার
শীতকালে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। অলিভ অয়েল নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের মৃত কোষগুলো ঠিক হয়ে যায়। এই তেলগুলো পা থেকে গলা পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন। শীতে ত্বক অনেক সুন্দর রাখে।
৫। সুতি কাপড় পরিধান করুন
এলার্জি শীতকালে একটি কমন সমস্যা। যাদের এই সমস্যা রয়েছে তারা এলার্জি থেকে রেহাই পেতে ও ত্বকের যত্ন নিতে সুতি কাপড় পূরণ। এবং তার ওপরে উল বা শীতের কাপড় পরিধান করুন।
৬। গোলাপজল ও গ্লিসারিন
শীতকালে গোলাপজল ও গ্লিসারিন একসাথে ব্যবহার করলে ত্বক সুন্দর হয়। তাই ত্বকের যত্নে এই দুই উপকরণের ভূমিকা অপরিসীম। শীতকালে গ্লিসারিন ব্যবহার করলে ত্বক মোলায়েম ও মসৃন হয়।
৭। গরম পানি দিয়ে গোসল
এমনিতেই শীতকালে ত্বকের কোষগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই ত্বক সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত গোসল করতে হবে। হালকা গরম পানির সাথে গোসল করে নিলে আরো ভালো হয়। মনে রাখবেন, প্রতিদিন বেশি গরম পানি দিয়ে গোসল করবেন না। এতে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৮। নারিকেলের তেল ব্যবহার
শীতকালে নারিকেলের তেল ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ করে শরীরের যে অংশ ফেটে গিয়েছে সেই স্থানে নারিকেলের তেল ব্যবহার করতে পারেন। মনে রাখবেন, শীতকালে ঠোঁট, পায়ের গোড়ালি, হাঁটু ইত্যাদি ফেটে যেন কালো না হয়ে যায়।
শীতকালে যেসব খাবার খেতে হবে
আমাদের আশেপাশে অনেক খাবার রয়েছে যেগুলো খেলে শীতে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এবং আমাদের দেহে পানি শূন্যতা বজায় রাখে। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১। মধু পান করুন
মধু এমন একটি উপকারী খাবার। যা নিয়মিত সেবন করলে শরীরের আদ্রতা বজায় রাখতে বেশ ভূমিকা রাখে। তাই খাদ্য তালিকায় মধু রাখা জরুরী।
২। সবুজ শাকসবজি খাওয়া
শীতকালীন সময় খাদ্য তালিকায় শাকসবজি রাখা উচিত। কেননা সবুজ শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। সবুজ শাক সবজির মধ্যে যেমন বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, লাল শাক, পুঁই শাক, পালং শাক ইত্যাদি। এছাড়াও খাদ্য তালিকায় আরো রাখতে পারেন গাজর, শসা ইত্যাদি।
৩। সিদ্ধ ডিম খান
শীতকালে ত্বক ও স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সিদ্ধ ডিম নিয়মিত খান। কেননা সিদ্ধ ডিমে রয়েছে বেশ কয়েকটি অ্যামাইনো এসিড। সিদ্ধ ডিম শরীরের ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, মিনারেল, ভিটামিন ইত্যাদি পূরণ করতে বেশ ভূমিকা রাখে। এই জন্য খাদ্য তালিকায় সিদ্ধ ডিম রাখা প্রয়োজন।
৪। খেজুর
খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। শীতকালে খেজুর খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। খেজুর ও মধু একত্রে মিক্স করে খেলে শরীরের উষ্ণতা ফিরে আসে। এবং তার সাথে যৌনের বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়।
৫। কলা
কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। কলা শরীরের যেকোনো চাহিদা পূরণ করতে বেশ ভূমিকা রাখে।
৬। কমলা লেবু
শীতকালে কমলা খেতে পারেন। কেননা কমলালেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি। ত্বক সুন্দর রাখতে ভিটামিন সি এর ভুমিকা অপরিসীম। তাই খাদ্য তালিকায় কমলা লেবু রাখতে পারেন।
শীতকালে মুখে কি মাখা উচিত
যে সমস্ত ক্রিম অথবা লোশন আমাদের ত্বকে ভিটামিন জোগাতে সাহায্য করে। সেগুলো ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা উচিত। শীতকালে কয়েকটি ক্রিম ও লোশনের নাম তুলে ধরা হলো।
কয়েকটি ক্রিমের নাম
Nivea cream
Cold cream
Night cream
Himalaya nourishing skin cream
Simple vital vitamin cream
Pond`s moisturizing cold cream
Dabur Gulabari moisturizing cold cream
কয়েকটি লোশনের নাম
Pond`s moisturizing body lotion
Dove body lotion
Vaseline intensive care deep restore
LAFZ cocoa butter body lotion
Nivea nourishing lotion with body milk
লেখকের শেষ কথা
উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যেতে পারে, আমরা শীতকালীন কয়েকটি সমস্যা নিয়ে এই আর্টিকেল আলোচনা করেছি। এগুলো অবশ্যই আমাদের লক্ষণীয় বিষয়। কেননা, শীতে যদি আমরা ত্বকের যত্ন না নেই। তাহলে পড়তে পারি বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।
পাঠকের লক্ষণীয় বিষয়, আমাদের আর্টিকেলের মধ্যে কোন প্রকার ভুল পরিলক্ষিত হলে অবশ্যই আমাদেরকে অবহিত করবেন। এবং আমাদের আর্টিকেলটি কেমন লেগেছে? ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আমাদের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url