শীতকালে ঠোঁটের যত্ন কিভাবে নিবেন। ঠোঁট ফাটা কমানোর ঘরোয়া উপায়
শীতকালে ঠোঁটের যত্ন কিভাবে নিবেন। এ সম্পর্কে এই আর্টিকালে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। শীতকাল আসলেই যাদের ত্বক এবং ঠোঁটের সমস্যা, তাদেরকে এই আর্টিকেলে স্বাগতম। যারা ঠোঁট ফাটা সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ভুগছেন। তাদের জন্য এই আর্টিকেলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ঠোঁট ফাটা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কেও এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে। তো যাই হোক, কথা না বাড়িয়ে চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।
উপস্থাপনা
মানুষের আরেকটি সৌন্দর্যের প্রতীক হলো তার ঠোঁট। শীতকালে ঠোঁট ফেটে গেলে আমরা অনেক কষ্ট পাই। শীতকালে ঠোঁট ফাটার কারণ হলো বাতাসের আদ্রতা কম থাকায় আমাদের ঠোঁট সহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফেটে চৌচির হয়ে যায়। তাই শীতকালে বেশি পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এবং তার সাথে আনুন খাদ্যাভাসে পরিবর্তন।
আরো পড়ুনঃ
খাদ্যাভাসে রাখতে পারেন সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল। শীতকালে শরীরের আদ্রতা ধরে রাখতে পানি এবং সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল বেশ ভূমিকা পালন করে। এজন্য আমাদের উচিত প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় এগুলো রাখলে ঠোঁট ফাটা সহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ গুলো ফাটা রোধ হবে। এবং ঠোঁট সুন্দর ও গোলাপি রঙের হবে। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ঠোঁট ফাটা কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায়
শীতকালে ঠোঁট ফাটা একটি অস্বস্তির কারণ। তাই আমরা ঘরোয়া ভাবে কিছু উপায়ে ঠোঁট ফাটা থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে পারি। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ঠোঁটে অ্যালোভেরা ব্যবহার করুন
অ্যালোভেরা জেল প্রতিদিন রাতে ব্যবহার করলে ঠোঁট ফাটা এবং ত্বকের শুষ্ক ভাব দূর করে। কেননা অ্যালোভেরাতে রয়েছে ভেষজ উপাদান। এইগুলো ব্যবহারে চুল এবং ত্বকের ভালো উপকার দেয়।অ্যালোভেরা জেলের আরো অনেক উপকার রয়েছে।
বেশি বেশি পানি পান করা
মানুষের শরীরের চার ভাগের তিন ভাগই পানি। আর শীতকালে মানব দেহের জন্য পানি খুবই প্রয়োজন। কেননা শীতকালে মানুষের ত্বকের আদ্রতা হারিয়ে ফেলার কারণে ত্বক শুষ্ক ও মসৃণ হয়ে পড়ে। তাই পানির গুরুত্ব অপরিসীম। এজন্য শীতকালে বেশি বেশি পানি পান করতে হবে।
ঠোঁটে দুধের ব্যবহার
দুধ যেমন মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী তেমনি দুধ ঠোঁটের জন্যও উপকারী। দুধ ঠোঁটের ময়েশ্চারাইজার ধরে রাখে। দুধ পান করার পাশাপাশি ফাটা ঠোঁটে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ঠোঁটের জন্য ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
ঠোঁটে লিপজেল ব্যবহার করা
শীতকালে ঠোঁট শুকিয়ে গেলে বারবার জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজাবেন না। কেননা এমনটা করার ফলে ঠোঁট আরো ফেটে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং কোন ভালো ব্র্যান্ডের লিপজেল ব্যবহার করুন। যখন ঠোঁট শুকিয়ে যাবে। তখন লিপজেল ঠোঁটে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এইভাবে ঠোঁট ফাটা থেকে মুক্তি মিলবে।
নারিকেলের তেল ব্যবহার করুন
নারিকেলের তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড। যা শীতকালে ত্বক ফাটা দূর করতে বেশ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে ঠোঁট ফাটা রোধ করে। তাই নারিকেলের তেল নিয়মিত ঠোটে ব্যবহার করুন। এতে ঠোঁট সুন্দর হবে এবং ঠোঁটের আদ্রতা ফিরে পাবে।
ঠোঁটে শসা ব্যবহার করুন
শসা শুষ্ক ত্বক ও ঠোঁট ফাটাতে দারুন কার্যকারী। শসা একটি ভেষজ উপাদান। প্রতিদিন এক টুকরো শসা নিয়ে ঠোঁট ও শুষ্ক ত্বকে মালিশ করুন। এতে ত্বক ও ঠোঁট সুন্দর হবে।
গ্লিসারিন ব্যবহার
শীতকালে গ্লিসারিনের ব্যবহার সম্পর্কে সবাই অবগত। বলতে পারেন, শীতকালে গ্লিসারিন ত্বকের বন্ধু। গ্লিসারিন শরীরে মাখার পাশাপাশি রাতে ঘুমানোর পূর্বে কিছু গ্লিসারিন হাতে নিয়ে প্রতিদিন ঠোঁটে মেসেজ করতে পারেন না। এতে ঠোঁট মসৃণ ও সুন্দর হবে।
অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার
অলিভ অয়েল তেলে রয়েছে ফ্যাটি এসিড। অলিভ অয়েল তেল ত্বক ও ঠোঁটে দিনে দুইবার ব্যবহার করলে সুন্দর এবং মসৃণ হয়। কেননা অলিভ অয়েল তেলে রয়েছে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। এই তেল নিয়মিত কয়েকদিন ব্যবহার করলে ত্বকের যাবতীয় সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।
প্রথমে কিছু দুধ নিন তারপর তার মধ্যে কয়েকটি লাল গোলাপের পাপড়ি ভিজিয়ে রাখুন। এইভাবে কয়েক ঘন্টা ভিজিয়ে রাখার পর। সেই পাপড়িগুলো বেটে ঠোঁটে লাগাতে পারেন। তারপর এইভাবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এইভাবে নিয়মিত কয়েকদিন ব্যবহার করলে ঠোঁট ফাটা রোধ হবে।
অলিভ অয়েল তেল, মধু, হালকা চিনির সাথে দারচিনির গুড়া মিক্স করে এই উপকরণ গুলো নিয়মিত ঠোঁটে ব্যবহার করলে সুন্দর ও মসৃণ হবে।
ঠোঁট ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে
শীতকালে নারী এবং পুরুষের ঠোঁট ফাটা উভয়ে ভুক্তভোগী। আদৌ আমরা জানি না কোন ভিটামিনের অভাবে আমাদের ঠোঁট ফাটে। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ভিটামিন “সি”
ভিটামিন সি এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড। ফ্যাটি অ্যাসিড এমন একটি ভিটামিন যা মানব দেহের শীতকালে ত্বক ও ঠোঁটের আদ্রতা ফিরিয়ে আনতে বেশ ভূমিকা রাখে। এইজন্য প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি রাখা জরুরি। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার হলো- লেবু, পেঁপে, কমলা, আনারস, মাল্টা, জাম, আঙ্গুর, আমড়া, কামরাঙ্গা ইত্যাদি।
এছাড়াও টক জাতীয় ফল খেতে পারেন। সবুজ শাকসবজিতেও ভিটামিন সি পাওয়া যায়। মসলার কাজে ব্যবহৃত কিছু উদ্ভিদ হলো- কাঁচামরিচ, পার্সেল পাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে। যাদের শরীরে অস্ত্র পাচার বা ক্ষত অথবা ঘা রয়েছে তারা খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি যুক্ত খাবার রাখতে পারেন। এতে ক্ষতস্থান দ্রুত সারাতে ভূমিকা রাখবে।
ভিটামিন বি
ভিটামিন বি এর অভাবে মুখে নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে হলো-মুখে ঘা, ঠোঁট ফাটা, ইত্যাদি আরো জটিলতা দেখা দিতে পারে। এজন্য আমাদের উচিত ভিটামিন বি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা। ভিটামিন বি জাতীয় খাদ্য হলো-দুধ, ডিম, কলা, ছোলা, কাজুবাদাম, দই, মাংস, মুরগির মাংস, ইত্যাদি। এই খাবারগুলো নিয়মিত গ্রহণ করলে মুখের নানা জটিলতা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
আয়রন
আয়রন এমন একটি পদার্থ। প্রতিটি মানব দেহের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় আয়রন যুক্ত খাবার রাখা। আয়রন যুক্ত খাবার হলো-মটরশুঁটি, ডাল, গম, ডুমুর, কিসমিস ও খেজুর, কাজুবাদাম, বাদাম, আলু, টমেটো, পালং শাক, কুমড়ো বীজ ইত্যাদি। দেহের আয়রন শক্তি বৃদ্ধি করতে এইসব খাবার কম হলেও প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।
জিংক
জিংক আমাদের প্রত্যেকের দেহে প্রয়োজন। জিংক মানব দেহের কাম শক্তি অর্থাৎ যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে বেশ সহায়ক। এইজন্য খাদ্য তালিকায় জিংক যুক্ত খাবার প্রয়োজন। জিংক যুক্ত খাবারের তালিকা হলো-খেজুর ও কিসমিস, মধু, কাজুবাদাম, মাংস,, ডিম, দুধ, সবুজ শাকসবজি, মিষ্টি কুমড়ার বীজ, ওট, মাশরুম ইত্যাদি। এই সমস্ত খাবার খেলে ত্বক এবং মুখের উপকার তো হবেই। তার সাথে যৌনে কোন সমস্যা থাকলে সমাধান করবে ইনশাআল্লাহ।
অতিরিক্ত ঠোঁট ফাটার কারণ
অতিরিক্ত ঠোঁট ফাটার কারণ হলো দেহে পানি শূন্যতা দেখা দিলে। বিশেষ করে শীতকালে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে। যার কারণে প্রকৃতি আমাদের দেহ থেকে পানি শোষণ করে নেয়। এই কারণে ঠোঁট এবং ত্বকের বিভিন্ন অংশ ফেটে চৌচির হয়ে যায়। এইজন্য আমাদের উচিত শীতকালে বেশি বেশি পানি পান করা। এবং যে খাবার খেলে দেহে পানি শূন্যতা পূরণ করবে সে সমস্ত খাবার, খাদ্য তালিকায় রাখ।
ঠোঁট ফাটা ক্রিমের নাম কি
ঠোঁট ফাটা ক্রিমের কয়েকটি নাম নিম্নে বর্ণনা করা হলো
- মেরিল পেট্রোলিয়াম জেলি
- ভ্যাসলিন ক্রিম
- তিব্বত লিপজেল
- ফ্রুটি লিপবাম
- কিউট লিপজেল
- ওয়াটার মিলন হেভেন
উপসংহার
পরিশেষে বলা যেতে পারে, উপরোক্ত বিষয় সম্পর্কে আমাদের সকলের জ্ঞান রাখা আবশ্যক। কেননা আমরা শীত আসলেই বুঝতে পারি। তখন আমাদের ত্বক এবং ঠোঁট ফেটে চৌচির হয়ে যায়। এইজন্য আমাদের ত্বক এবং ঠোঁটের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url