ফুড পয়জনিং হলে করণীয় এবং ঘরোয়া ভাবে এর চিকিৎসা জেনে নিন

ফুড পয়জনিং হলে করণীয় এবং ঘরোয়া ভাবে এর চিকিৎসা সম্পর্কে আমরা এই আর্টিকেলে বিস্তারিত জানতে পারবো। যারা এই সমস্যায় দীর্ঘদিন ভুগছেন। চিকিৎসা করে তেমন ফল পাচ্ছেন না তাদেরকে এই আর্টিকেলে স্বাগতম। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের এই সমস্যা সমাধান মিলবে। নিম্নে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো।

ফুড পয়জনিং হলে করণীয় এবং ঘরোয়া ভাবে এর চিকিৎসা জেনে নিন

ফুড পয়জনিং এর লক্ষণ সম্পর্কেও আমরা এই আর্টিকেলে জানতে পারবো। এই রোগের জন্য আমরা কত না কিছু করেছি কিন্তু কিছুই হয়নি। আজ আপনাদের জন্য এই আর্টিকেলটি অনেক হেল্পফুল হবে। যাই হোক, কথা না বাড়িয়ে চলুন বিস্তারিত জানা যাক। নিম্নে এসব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

সূচনা

ফুড পয়জনিং এই নামটির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। কমবেশি আমরা সকলেই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছি। যখন কেউ এই রোগে আক্রান্ত হয় তখন পেটে নানান জটিলতা দেখা দেয়। মূলত এই রোগ হয়, খাদ্যে ভেজাল, ময়লাযুক্ত খাবার, খাবারের বাসনে ময়লাযুক্ত ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে। যদিও ফুড পয়জনিং হলে তেমন মৃত্যুর ঝুঁকি নেই।

আরো পড়ুনঃ হানি নাট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

ফুড পয়জনিং আবার কখনো মৃত্যুর কারণ হয়েও দাঁড়ায়। এই রোগে আক্রান্ত হলে দেহে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। ফলে মৃত্যুর মতো ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনা ঘটতে পারে। এই রোগ শিশুদের হলে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে। আমাদের বাংলাদেশে ১০০ শতাংশের ১৮ % শিশু এই রোগ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। সুতরাং এই রোগ হলে আমাদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এ ব্যাপারে নিম্নে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো।

ফুড পয়জনিং এর লক্ষণ

ফুড পয়জনিং বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তার মধ্যে একটি হল খাদ্যে ভেজাল। এর কারণে আমাদের পেটে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফুড পয়জনিং এর লক্ষণ নিম্নে বর্ণনা করা হলো-

  • পেট ফাঁপা
  • বমি বমি ভাব হওয়া
  • হজমে সমস্যা হওয়া
  • আমাশয় হওয়া
  • ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া
  • বমি হওয়া
  • পাতলা পায়খানা হওয়া
  • ডায়রিয়া হওয়া
  • মাথাব্যথা হওয়া
  • শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া
  • কোন কাজে মন না বসা
  • পেটে খিচুনি হওয়া
  • জ্বর হওয়া
  • পেট ব্যথা
  • পেট ভারী অনুভব করা

ফুড পয়জনিং হলে ঘরোয়া কিছু চিকিৎসা

ফুড পয়জনিং হলে কি জ্বালা, যার হয় সে বুঝে। এমনটা সমস্যা হলে ঘরোয়া ভাবে কিছু টোটকা ব্যবহার করলে এই রোগ থেকে রেহাই মিলবে। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

আরো পড়ুনঃ মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত

মধু পান করুন
মধু নিয়মিত সেবনে বিভিন্ন জটিল রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তার মধ্যে একটি হলো ফুড পয়জনিং। এজন্য মধু নিয়মিত সেবল করলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে ফুড পয়জনিং এর হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

কালিজিরা সেবন করুন
ফুড পয়জনিং এর সমস্যা হলে কালিজিরা বেশ ভূমিকা রাখে। কয়েকটি কালোজিরার দানা নিয়ে চিবিয়ে খেলে পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একমাত্র মৃত্যু ব্যতীত কালিজিরা প্রতিটি রোগের মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। এই জন্য ফুড পয়জনিং হলে কালিজিরা সেবন করতে পারেন না।

লেবুর রস পান করুন
লেবুর রসে রয়েছে এক ধরনের এসিড। যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে বেশ ভূমিকা রাখে। প্রথমে এক গ্লাস পানিতে পরিমাণ মত লেবুর রস এবং পরিমাণ মতো লবণ নিয়ে তার সাথে হালকা চিনি মিক্স করে নিয়মিত সেবন করলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। এতে হজম শক্তিও বৃদ্ধি পাবে।

আরো পড়ুনঃ পুরুষদের জন্য খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

টক দই সেবন করুন
টক দইয়ে রয়েছে ভিটামিন এবং মিনারেল। যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে বেশ সহায়ক। নিয়মিত টক দই সেবনে পেটের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। টক দই ফুড পয়জনিং এবং কোষ্ঠকাঠিন্য এর মত কঠিন রোগ থেকে রেহাই দেয়। এজন্য আমাদের উচিত খাদ্য তালিকায় টক দই রাখা।

রসুন সেবন করুন
আপনি কি ফুড পয়জনিং এবং পেটের সমস্যা নিয়ে ভুগছেন? তাহলে নিয়মিত রসুন সেবন করুন। প্রথমে রসুনের কয়েকটি কোয়া নিয়ে চিবিয়ে খেলে পেটের যাবতীয় সমস্যা থেকে রেহায় পাওয়া যাবে। এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে পেট রাখবে পরিস্কার।

কলা সেবন করুন
কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। ফুড পয়জনিং এর মত বড় সমস্যার দিতে পারে সামান্য একটি পাকা কলা। যখন ফুড পয়জনিং হবে তখন একটি পাকা কলা খেতে পারেন। এতে ফুড পয়জনিং থেকে রেহাই পাবেন না।

তুলসী পাতা সেবন করুন

পেটের যাবতীয় সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে তুলসী পাতাতে। বিশেষ করে ফুড পয়জনিং এর জন্য তুলসী পাতা মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। এর ব্যবহার হল, প্রথমে কয়েকটি তুলসী পাতা পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি পান করলে পেটের যাবতীয় সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে।

আদা সেবন করুন
এক কুচি আদার সঙ্গে কয়েক ফোঁটা মধু মিক্স করে নিয়মিত সেবন করতে পারেন। এতে ফুড পয়জনিং তো দূর হবেই এবং পেটের কোন সমস্যা থাকলে ভালো করবে ও পেট পরিষ্কার রাখবে। তাই নিয়মিত আদা সেবন করতে পারেন।

ফুড পয়জনিং কেন হয়?

ফুড পয়জনিং সাধারণত খাদ্যে ভেজাল ও বিষক্রিয়া থাকার কারণে আমাদের এই রোগ হয়। এছাড়াও স্বাস্থ্যবিদরা বলেছেন, বাজারের হোটেলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য তৈরি এবং খোলা স্থানের খাদ্য খেলে এমনটি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং সতর্কতার সাথে খাদ্য তৈরি করে সেটা সেবন করতে হবে।

ফুড পয়জনিং এর প্রতিকার

আমাদের কিছু সচেতনতার মাধ্যমে ফুড পয়জনিং এর প্রতিকার করতে পারি। নিম্নে ফুড পয়জনিং এর প্রতিকার সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো-

  • টয়লেট থেকে এসে হাত সাবান দিয়ে ধোয়া
  • রান্না করার পূর্বে শাকসবজি, ফলমূল, তরিতরকারি ইত্যাদি ধুয়ে নেওয়া
  • বাসি খাবার এড়িয়ে চলা
  • দুধ, কলা, শাকসবজি, ভাত ইত্যাদি বেশিদিন হয়ে গেলে সেইগুলো না খাওয়া
  • মাংস ভালো ভাবে সিদ্ধ করতে হবে
  • খাবার সর্বদাই ঢেকে রাখতে হবে
  • বাহিরের খোলা খাবার খাওয়া যাবে না
  • পানি ফুটিয়ে খেতে হবে
  • বেশি বেশি পানি পান করতে হবে

ফুড পয়জনিং হলে কি খাওয়া যাবে না

ফুড পয়জনিং এর জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। কেননা অনেক সময় না বুঝে অনেক খাবার খেয়ে থাকি। এবং সেই খাবার স্বাস্থ্যকর কিনা তাও যাচাই-বাছাই করে না। নিম্নে ফুড পয়জনিং হলে কি কি খাবার থেকে বেঁচে থাকতে হবে তা বর্ণনা করা হলো-

চর্বি যুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকুন
ফুড পয়জনিং হলে চর্বিযুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকুন। কেননা চর্বিযুক্ত খাবার পেটের সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে তোলে। তাই এই রোগ হলে এ সমস্ত খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।

অতিরিক্ত ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকুন
ফুড পয়জনিং হলে মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে। এবং পেটের হজম শক্তিতে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই যতটুকু সম্ভব এ রোগ হলে এরকম ধরনের খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। তা না হলে সমস্যা আরো জটিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অ্যালকোহল ও নেশা দ্রব্য থেকে বিরত থাকুন
যখন ফুড পয়জনিং হবে তখন অ্যালকোহল ও নেশা দ্রব্য থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা নেশা দ্রব্য পান করলে পেটে নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে। এতে 
ফুড পয়জনিং এর সমস্যা দ্বিগুণ হতে পারে। সুতরাং এগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে।

পনির এবং আইসক্রিম থেকে বিরত থাকুন
ফুড পয়জনিং হলে পনির এবং আইসক্রিম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এগুলো খেলে পেটের হজম শক্তিকে কমিয়ে দিয়ে পেটের আরও ঝামেলা বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

ধূমপান থেকে বিরত থাকুন
ধূমপান মানব দেহের নানান ক্ষতিসাধিত করে। যত সম্ভব ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।

উপসংহার

পরিশেষে বলা যেতে পারে, উপরোক্ত বিষয়ে আমাদের সকলকে সতর্ক হয়ে চলতে হবে। এই রোগ তেমন জটিল না। আবার কিছু সময় জটিল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই অল্পতেই আমাদের চিকিৎসা নিতে হবে। অথবা ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। সর্বদাই আমরা সতর্ক হয়ে চললেই এই সমস্ত রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

পাঠকের লক্ষণীয় বিষয়, আমাদের এই আর্টিকেলে কোন প্রকার ভুল পরিলক্ষিত হলে আমাদেরকে অবহিত করবেন। এবং আমাদের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url