চুলের যত্নে মেহেদি পাতার উপকারিতা

চুলের যত্নে মেহেদি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা এই আর্টিকালে জানতে পারবো। যারা দীর্ঘদিন চুলের সমস্যা নিয়ে ভুগছেন তাদেরকে আমাদের এই আর্টিকেলে স্বাগতম। আর্টিকেলটি চুলের রোগীর জন্য হেল্পফুল হতে চলেছে। তাই এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর পড়ার অনুরোধ রইল। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

চুলের যত্নে মেহেদি পাতার উপকারিতা

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে মেহেদি পাতার অপকারিতা সম্পর্কেও জানতে পারবো। আমরা চুলের যত্নে নিম্নে বর্ণিত অনুযায়ী মেহেদি পাতার ব্যবহার করতে পারি। যাই হোক কথা না বাড়িয়ে, চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। নিম্নে এসব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো।

উপস্থাপনা

চুলে মেহেদি পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের সকলের অজানা নয়। মেহেদি পাতাতে রয়েছে ভিটামিন ই। এইজন্য মেহেদি পাতা চুলের খুবই উপকারী। এছাড়াও মেহেদি পাতা চুলের প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে থাকে। এবং মেহেদি পাতা নিয়মিত ব্যবহারে খুশকি, চুল পড়া, চুল ড্যামেজ, ইত্যাদি চুলের জটিল ও কঠিন সমস্যা দূর করে রাখে সুস্থ ও মসৃণ।

আরো পড়ুনঃ শীতকালে ঠোঁটের যত্ন কিভাবে নিবেন। ঠোঁট ফাটা কমানোর ঘরোয়া উপায়

হাদিস শরীফে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত মাথার চুল ও দাড়িতে মেহেদি ব্যবহার করতেন। নিয়মিত মেহেদি ব্যবহার করলে চুল সুস্থ রাখার পাশাপাশি মাথা রাখে ঠান্ডা। আমরা বাজারে যে সমস্ত কেমিক্যাল যুক্ত মেহেদি ব্যবহার করি তা ব্যবহারে আমাদের চুল ও ত্বকের নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে। সুতরাং আমরা গাছের যে মেহেদী পাতা আছে সেটা নিয়মিত ট্রাই করতে পারি।

চুলের যত্নে মেহেদি পাতার উপকারিতা

চুল বৃদ্ধিতে মেহেদি দারুন কার্যকারী
চুল বৃদ্ধিতে মেহেদি পাতা দারুন কার্যকার হিসেবে কাজ করে থাকে। কেননা মেহেদি পাতাতে রয়েছে প্রাকৃতিক উপাদান। যা চুল বৃদ্ধিতে দারুন কার্যকারী। এছাড়াও মেহেদি পাতাতে রয়েছে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার। এইগুলো চুল ঘন, মোটা এবং মসৃণ করতে বেশ ভূমিকা রাখে।

ব্যবহার বিধিঃ প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু মেহেদি পাতা নিয়ে উত্তম রূপে পিষে নিতে হবে। এরপর সেই মিশ্রণটি হালকা নরম করে দিনে একবার করে চলে প্রলেপ দিতে হবে। এইভাবে নিয়মিত কয়েকদিন মেহেদি পাতা ব্যবহার করলে চুল বৃদ্ধিতে বেশ ভূমিকা রাখবে।

আরো পড়ুনঃ শীতকালে এলার্জি প্রতিরোধের উপায় জেনে নিন

মেহেদি চুল পড়া বন্ধ ও ত্বকের উপকার করে
মেহেদি পাতা নিয়মিত চুলে ব্যবহার করলে চুল পড়ার সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। এবং চুল ঘন ও লম্বা হবে। মেহেদি পাতা মাথার ত্বকেরও বেশ কার্যকারী। নিয়মিত মাথার ত্বকে ব্যবহার করলে যে কোন সমস্যা দূর করে মাথার ত্বক রাখবে সুস্থ। কেননা মেহেদি পাতাতে রয়েছে ভিটামিন ই যেটা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।

ব্যবহার বিধিঃ প্রথমে কিছু মেহেদি পাতা প্রয়োজন অনুযায়ী পিষে নিতে হবে। তারপর সে পিষা পাতা হালকা নরম করে নিতে হবে। সেই মিশ্রণটি মাথার ত্বক সহ চুলে উত্তমরূপে প্রলেপ দিতে হবে। এইভাবে নিয়মিত কয়েকদিন ব্যবহার করলে বেশ উপকার মিলবে।

খুশকি দূর করতে মেহেদি পাতার ব্যবহার
চুল পড়ার একমাত্র কারণ হলো খুশকি। যদি মাথায় অতিরিক্ত খুশকি হয় তাহলে মাথার চুল উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এজন্য চুল ওঠা রোধ করতে হলে আগে খুশকি বন্ধ করতে হবে। আমরা খুশকি দূর করার জন্য বিভিন্ন কেমিক্যাল যুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকি। এগুলো ব্যবহারে আমাদের চুল ও ত্বক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

আরো পড়ুনঃ ফুড পয়জনিং হলে করণীয় এবং ঘরোয়া ভাবে এর চিকিৎসা জেনে নিন

খুশকি দূর করতে আমরা মেহেদি ব্যবহার করতে পারি। মেহেদি পাতা পিষে মাথাতে ব্যবহার করতে পারি। এভাবে নিয়মিত কিছুদিন ব্যবহার করলে খুশকি থেকে রেহাই মিলবে। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো মেহেদি পাতা প্রতিদিন ব্যবহার করা সম্ভব না হলে অন্তত এক সপ্তাহ পর পর ব্যবহার করতে পারি। এভাবে ব্যবহার করলে আশা করা যায় এই রোগ থেকে রেহাই মিলবে।

মেহেদি পাতা চুলের গোড়া মজবুত করে
চুলের সমস্যায় ভুগছেন অনেকেই। অনেকের চুল বাহির থেকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। কিন্তু আপনার চুলের গোড়া মজবুত রয়েছে কিনা সেটা জানা জরুরী। চুলের সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন শ্যাম্পু, সাবান, ইত্যাদি ব্যবহার না করে নিয়মিত কয়েকদিন মেহেদি ব্যবহার করলে এই সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে। তবে এইগুলো অন্তত এক সপ্তাহ পরপর ব্যবহার করতে পারবেন।

চুলের রুক্ষতা দূর করতে মেহেদি পাতার ব্যবহার
চুলের রুক্ষতার কারণে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। এর কারণে চুল ভেঙ্গে যাওয়া, চুল উঠে যাওয়া, চুলের আগা ভাঙ্গা ইত্যাদি আরও চুলের সমস্যা দেখা দিতে পারে। চুলের রুক্ষতার কারণে আমরা কয়েকভাবে মেহেদি পাতা ব্যবহার করতে পারি। নিম্নেতা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

প্রথম পদ্ধতিঃ প্রথমে কয়েকটি গাছের মেহেদি পাতা নিতে হবে। তারপর সেইগুলো উত্তম রূপে পিষে নিতে হবে। এই পিসা মিশ্রণের মধ্যে কিছু এলোভেরা মিক্সড করতে হবে। আপনি চাইলে ভিটামিন ই ট্যাবলেটও ব্যবহার করতে পারবেন। এসব উপকরণ একত্রে মিক্সড করে চুলে ব্যবহার করতে পারবেন।

দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ প্রথমে কয়েকটি মেহেদি পাতা বেটে নিতে হবে। তারপর বাটা মেহেদির মধ্যে ডিমের সাদা অংশ দিয়ে মিক্সড করে এক সপ্তাহ পর পর এই মিশ্রণটি চুলে ব্যবহার করলে চুলের রুক্ষতা থেকে রেহাই মিলবে।

সাদা চুল ঢাকতে মেহেদি পাতার ব্যবহার
বয়স বাড়ার সাথে সাথে চুল পাক ধরা শুরু হয়। পাকা চুলকে ন্যাচারাল লুক দেওয়ার জন্য মেহেদি পাতা ব্যবহার করতে পারেন। এতে চুল সুন্দর থাকবে এবং দেখতেও ভালো লাগবে। নিম্নে এর পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

ব্যবহার পদ্ধতিঃ প্রথমে এক চা চামচ কফি পাউডার পানিতে ভালোভাবে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিন। এবং তাতে ৫ চা চামচ মেহেদি পাতার গুড়া নিয়ে ভালো করে মিক্স করুন। সে মিশ্রণটি পাকা চুলে ব্যবহার করুন। এতে চুল ভালো থাকবে এবং দেখতেও সুন্দর লাগবে।

মেহেদি পাতার অপকারিতা

এলার্জি সমস্যা থাকলে
শরীরে এলার্জি থাকলে মেহেদি ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করবেন। মেহেদি পাতা ব্যবহারে এলার্জি যুক্ত শরীরে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে একটি হলো ফাঙ্গাস এর বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যাদের এলার্জি রয়েছে তারা মেহেদি পাতা ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করবেন। এবং নিজের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখবেন।

আরো পড়ুনঃ হানি নাট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

এছাড়াও মেহেদি ব্যবহারে আর কোন অপকারিতা নাই। আপনারা ন্যাচারাল অর্থাৎ গাছের মেহেদি গুলো নির্ভয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতে তেমন স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই। শিশুরাও গাছের মেহেদি ব্যবহার করতে পারবে। মেয়েরা হাতে, পায়ে এবং মাথার চুলে ব্যবহার করতে পারবে। এবং পুরুষরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস অনুযায়ী, মাথার চুলে ও দাঁড়িতে ব্যবহার করতে পারবেন।

বাজারের টিউব মেহেদি ব্যবহারে সতর্কতা
বর্তমান সময়ে বাজারে কিছু মেহেদি পাওয়া যায় তাতে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এই জন্য এই মেহেদি ব্যবহারে আমাদের শরীরে নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে। শিশুদের হাতে ব্যবহারে চাকা চাকা ফুলে যায় এবং অনেক ব্যথা হয়। এজন্য বাজারের টিউব মেহেদি ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করবেন। বিশেষ করে এইগুলো ছোট বাচ্চাদের নাগালের বাহিরে রাখবেন। যদি ব্যবহার করতেই হয় তাহলে গাছের মেহেদি গুলো ব্যবহার করতে পারেন। এতে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নাই।

চুলে মেহেদি দেওয়ার পর করনীয়
চুলে মেহেদি দেওয়ার পর তা বেশিক্ষণ রাখা উচিত নয়। মাথায় বেশিক্ষণ মেহেদি রাখলে অনেক সময় স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তাই মেহেদি পাতা চুলে দেওয়ার পর ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট পর্যন্ত রাখা উচিত। এতে চুলের অনেক উপকার হয়। আর এরকম রাখলে ক্ষতি নেই বরং কোন লাভ পাওয়া যাবে না।

মন্তব্য

পরিশেষে বলা যেতে পারে, মেহেদি পাতা আমাদের চুল, ত্বক এবং মাথার অনেক কাজ করে। তাই আমরা মেহেদি পাতা ব্যবহার করতে পারি। আজ থেকে বহু বছর আগে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়ি এবং মাথার চুল মেহেদি ব্যবহার করেছেন। তাই এর গুরুত্ব অনেক বেশি।

পাঠকের লক্ষণীয় বিষয়, আমাদের এই আর্টিকেলের মধ্যে কোন প্রকার ভুল পরিলক্ষিত হলে আমাদেরকে অবহিত করবেন। এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনি উপকৃত হলে অবশ্যই আপনার সুন্দর মতামত আমাদের কমেন্ট বক্সে লিখে যাবেন। আপনাদের প্রত্যেক কমেন্ট রিভিউ করা হবে। আমাদের এই আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url