খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয়
ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয়? এমন প্রশ্ন আমাদের অন্তরে ঘুরপাক খাচ্ছে। যারা পেটের নানান জটিলতায় ভুগছেন তাদেরকে আমাদের এই আর্টিকেলে স্বাগতম। এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি না করে আমাদের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো।
ইসুবগুলের ভুসি সেবনের উপকারিতা সম্পর্কেও আমরা জানতে পারবো। এই ভেষজ উপাদান নিয়মিত সেবনে ভালো প্রকার পাওয়া যায়। যাই হোক কথা না বাড়িয়ে চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
উপস্থাপনা
ইসবগুলের ভুসি চেনে না এমন লোক খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি সেবনে পেটের নানান জটিল ও কঠিন রোগ নিরাময় করে। এর মধ্যে পেটের উল্লেখযোগ্য সমস্যা হলো আলচার, গ্যাস, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি আরো জটিল ও কঠিন রোগ নিরাময় করে। এইজন্য ইসবগুলের ভুসি আমরা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখতে পারে।
এক গবেষণায় উঠে এসেছে ইসবগুলের ভুসি মানব দেহের আরো উপকার করে। যেমন পুরুষদের পুরুষত্ব ঠিক রাখতে ইসবগুলের ভুসি বেশ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও মহিলাদের সাদাস্রাবের সমস্যা থাকলে নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি সেবন করলে এই রোগ থেকে রেহাই মিলবে। আমরা ইসবগুলের ভুসিকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে সেবন করি না। ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ইসবগুলের ভুসি সেবনের উপকারিতা
প্রস্রাবের জ্বলাপোড়া দূর করতে ইসবগুলের ভূমিকা
শরীরের নানা রকম জটিলতার কারণে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া সমস্যা হতে পারে। তবে ভয়ের কোন কারণ নেই। এই সমস্যার সমাধানও রয়েছে ইসবগুলের ভুসিতে। নিয়মিত সেবনে এই জটিল সমস্যা থেকে রেহায় মিলবে।
ব্যবহার পদ্ধতিঃ পরিমাণ মতো ইসবগুলের ভুসি নিতে হবে। তারপর পানিতে কিছুক্ষণ (যতক্ষণ না পর্যন্ত নরম হয়) ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর এগুলো সকাল বিকাল সেবন করতে পারবেন। যদি ডায়াবেটিস সমস্যা না থাকে তাহলে এই ভেজানো ইসবগুলের ভুসির সাথে একটু আখের রস অথবা একটু মিশরি দানা মিশিয়ে সেবন করতে পারেন। এতে আরো বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
হার্টের সমস্যা দূর করে
ইসুবগুলের ভুসি নিয়মিত সেবনে হার্টের যাবতীয় সমস্যা দূর করে রাখে সুস্থ। যাদের হার্টের প্রবলেম রয়েছে তারা নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি দিনে দুইবার খেতে পারেন। এতে হার্টের জন্য ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
ব্যবহার পদ্ধতিঃ ২ চা চামচ ইসবগুলের ভুসি এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পানি নিতে হবে। তারপর সেগুলো কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। যখন ভিজে ফুলে উঠবে তখন সেবন করলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে। এইভাবে নিয়মিত কয়েকদিন ইসবগুলের ভুসি সেবন করতে হবে। তাহলে হার্টের প্রবলেম থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
কোষ্ঠকাঠিন্যতে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম
ইসবগুলের ভুসি কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য বেশ উপকারী একটি ঔষধ। যাদের এই সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিনিয়ত ইসবগুলের ভুসি সেবন করতে পারেন। ইসবগুলের ভুসি প্রথমে পাকস্থলীতে গিয়ে পাচন প্রক্রিয়া দ্বিগুন গুনে বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
সেবন পদ্ধতিঃ প্রথমে গরম এক গ্লাস দুধের মধ্যে দুই চা চামচ ইসবগুলের ভুষি দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে সেবন করলে কোষ্ঠকাঠিন্যর মত কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এটি সেবন করবেন আর রাতে ঘুমানোর পূর্বে।
ওজন কমাতে ইসবগুলর ভুসির ব্যবহার
ইসবগুলের ভুসি অতিরিক্ত ওজন কমাতে বেশ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি সেবনে অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। এজন্য দিনে কমপক্ষে সকাল বিকাল দুইবার এই ভেষজ উপাদান সেবন করা উচিত।
ডায়রিয়া সাড়াতে
ডায়রিয়া প্রতিরোধে ইসবগুলের জুড়ি নাই। পাতলা পায়খানাকে দ্রুত স্বাভাবিক মাত্রায় আনার জন্য ইসবগুল ভুসি বেশ ভূমিকা রাখে। ইসুবগুলের ভুসির সাথে দই মিক্স করে খেলে আরও বেশি উপকার পাওয়া যায়। দইয়ে রয়েছে প্রবায়োটিক। এটি পাকস্থলীর ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে।
সেবন পদ্ধতিঃ ডায়রিয়া হলে ইসবগুলের ভুসি তিন চা চামচ এবং দই ২ চা চামচ দিয়ে মিক্স করে নিয়মিত দিনে দুইবার সেবন করলে ডায়রিয়া রোগ থেকে রেহাই মিলবে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে
মানব দেহের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো গ্যাস্ট্রিক। এই গ্যাস্ট্রিক থেকে সমস্ত রোগের উৎপত্তি। সুতরাং এই রোগকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। এ রোগের জন্য চাই বাড়তি টেক কেয়ার। আমরা গ্যাস্ট্রিকের জন্য অন্য কোন ওষুধ না খেয়ে। প্রাকৃতিকভাবে এ রোগ নিরাময় করতে পারি। তার মধ্যে হলো ইসবগুলের ভুসি। এটি হলো ভেষজ উপাদান। যা খুবই উপকারী।
সেবন পদ্ধতিঃ প্রথমে এক গ্লাস হালকা গরম দুধের মধ্যে ২ চা চামচ ইসবগুলের ভুসি দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে। তারপর সেটা সেবন করলে পেটে গ্যাস ও আলজার থাকলে নিরাময় হবে ইনশাআল্লাহ।
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম
ইসবগুলের ভুসি দিনে দুইবার খেতে পারবেন। খাবার পরপর ইসুবগুলের ভুসি খেতে পারবেন। খাবারের পূর্বেও খেতে পারবেন। তবে উত্তম হলো খাবারের পরপর সেবন করা। প্রথমে এগুলো পানিতে ভিজিয়ে কিছুক্ষণ রাখতে হবে। তারপর প্রয়োজন অনুসারে সেইগুলো সেবন করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার পর বেশি করে পানি পান করতে হবে। দিনে দুই লিটার পানি পান করতে হবে।
ইসুবগুলের ভুসির অপকারিতা
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার কারণে বিভিন্ন রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে এই জটিলতা সবার ক্ষেত্রে নাও হতে পারে। যাদের এইগুলো সমস্যা হবে তারা ইসবগুলের ভুসি এড়িয়ে চলবেন। নিম্নে তা বর্ণনা করা হলো-
- গ্যাস ব্যতীত পেটের অন্য কোন সমস্যা থাকলে
- ডায়রিয়া হলে বেশি বেশি সেবন না করা
- বমি বমি ভাব হলে
- পেটে ফুড পয়জনিং হলে
- মুখ ফুলে গেলে
- কোন খাবার গিলতে সমস্যা হলে
ওজন কমাতে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম
ওজন কমাতে হলে ইসবগুলের ভুসির তুলনা হয়না। এইগুলো খাওয়ার নিয়ম হলো দিনে দুইবার করে খেতে পারবে না। একবারও অর্থাৎ সকালবেলাও খেতে পারবে না। খাওয়ার নিয়ম হলো এক গ্লাস পানিতে ২ চা চামচ ইসবগুলের ভুসি দিয়ে কিছুক্ষন ওয়েট করুন। তারপর সেইগুলো খানা খাওয়ার পর সেবন করতে পারেন। এভাবে নিয়মিত কয়েক দিন খেলে ওজন কমে যাবে ইনশাআল্লাহ।
ইসবগুলের ভুসি খেলে বীর্যগাঢ় হয়
ইসবগুলের ভুসি খেলে বীর্য কারো হয় হ্যাঁ। ইসবগুলের ভুসিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার। এই দুই উপাদান এই ভেষজ ঔষধের মধ্যে রয়েছে। এই জন্য নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি খেলে বীর্য গাঢ় হবে। এবং বীর্যের শুক্রাণু দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পাবে। বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পাবে। এইজন্য ইসবগুলের ভুসি নিয়মিত খাদ্যাভাসে রাখা জরুরি।
লেখকের মন্তব্য
উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে আমরা বুঝতে পারলাম যে, আমাদের পেটের কোন সমস্যা হলে ইসবগুলের ভুসি নিয়ম করে কয়েকদিন ছেলে পেটের যাবতীয় সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে যা আলোচনা করা হলো। তা আমরা নিয়মিত পালন করলে পেটের সমস্যা দূর হবে। এবং মানসিকভাবে প্রশান্তি ও মিলবে।
লেখকের লক্ষণীয় বিষয়, আমাদের এই আর্টিকেলে কোন প্রকার ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকলে আমাদেরকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ রইল। এবং এই আর্টিকেলটি আপনার কাছে কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্টে জানিয়ে যাবে না। আমাদের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url