তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আজ আমরা এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে তেঁতুল খাওয়া উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। অতিরিক্ত তেঁতুল খেলে ভালোর চাইতে ক্ষতির দিকটাই বেশি হবে। এই জন্য যারা এ বিষয় নিয়ে জানতে আগ্রহী তারা আমাদের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।

তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আমরা আরো জানতে পারবো তেঁতুলের বীজের গুড়া খেলে কি কি উপকার মেলে। সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাই এদিক সেদিক ঘোরাফেরা না করে আমাদের এই আটিকালটি শরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।

উপস্থাপনা

তেঁতুল একটি জনপ্রিয় ও প্রাচীনকালীন ফল। এর স্বাদ কমবেশি আমরা সকলেই গ্রহণ করেছি। এই ফলটির কথা শুনলেই আমাদের জিহ্বায় জল চলে আসে। নারী পুরুষ সকলেই এই ফলটি পছন্দ করে। তেতুলের স্বাদ আমরা বিভিন্নভাবে গ্রহণ করে থাকি। যেমন তরকারিতে এর স্বাদ গ্রহণ করি। আবার আচার বানিয়ে এর স্বাদ  গ্রহণ করি। এবং বিভিন্ন খাবারের সাথে এর স্বাদ গ্রহণ করে থাকি।

আরো পড়ুন: তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন

অধিকাংশ মানুষের ধারণা তেতুল খেলে রক্ত পানি হয় এবং ব্রেন ইত্যাদি শরীরের অঙ্গের নানান ক্ষতি সাধিত হয়। বর্তমান চিকিৎসাবিদদের মতে এই ধারণাটি ভুল। তেঁতুল যেমন স্বাদে ভরপুর তেমনি এটির ঔষধি গুণাগুণও রয়েছে। যেমন কোষ্টকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়। পেটের আরো জটিল ও কঠিন রোগ থেকে রেহাই মিলে। এছাড়াও আরো উপকার রয়েছে।

তেঁতুলের উপকারিতা

কোষ্ঠকাঠিন্য ভালো হয়
তেঁতুল আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে বেশ ভূমিকা রাখে। হজমে ব্যাঘাত ঘটলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত কঠিন রোগ হয়। তাই তেঁতুল আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। কেননা তেঁতুলে রয়েছে টারটারিক অ্যাসিড ও ম্যালিক নামক পদার্থ। যা হজম তান্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। এইজন্য পরিমাণ মতো তেঁতুল খাদ্য তালিকায় রাখা খুবই প্রয়োজন।

আরো পড়ুন: তেলাপিয়া মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

মস্তিষ্ক ও হারের ক্ষয় রোধ
অল্পমাত্রায় তেঁতুল মানব দেহের জন্য খুবই উপকার। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাড়ন্ত বাচ্চাকে অল্পমাত্রায় তেঁতুল খাওয়ালে মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারে আসে। তেঁতুল ছোট বাচ্চার হাড় ক্ষয় রোধ করে মজবুত করে। তাই আমরা তেঁতুল খাদ্য তালিকায় রাখতে পারি।

কাটা জায়গা দ্রুত শুকায়
অনেকেরই এই ভুল ধারণা রয়েছে যে, তেঁতুল খেলে কাটা জায়গা পেকে যায়। এবং অনেক ক্ষতির সাধিত হয়। এটি একটি ভুল ধারণা। পরিমাণে অল্প তেঁতুল খেলে কাটা জায়গা দ্রুততার সাথে শুকিয়ে যায়।

কোলেস্টেরল ও হৃদরোগ ভালো করে
তেঁতুল মানবদেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তেঁতুল হৃদরোগের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। এই ফলের নির্যাস স্টোকের মত বড় একটি রোগ থেকে রক্ষা করে। এবং দ্রুত রক্ত সঞ্চালন করতে সক্ষম। তাই আমরা প্রতিনিয়ত এই ফলটি খাদ্য তালিকায় রাখতে পারি।

রক্তে শর্রকরার মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে
তেঁতুল মানব দেহের কার্বোহাইড্রেট নামক পদার্থ নিয়ন্ত্রণ করে। যারা দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন তাদের জন্য এই ফলটি মহা ঔষধ হিসেবে কাজ করবে। এটি রক্তের গ্লোকোসের মাত্রা কমায়। এই ফলটিতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি যা ভগ্নতান্তের বেশ উপকার করে।

যাদের লিভারে চর্বি জমে গিয়েছে
তেঁতুলে রয়েছে এক ধরনের এন্ট্রি অক্সিডেন্ট নাম পদার্থ। তেঁতুল লিভারের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে সক্ষম। বিশেষ করে, যাদের লিভারে চর্বি জমে গিয়েছে তারা খাদ্য তালিকায় তেঁতুল রাখতে পারেন। এন্ট্রি অক্সিডেন্ট মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অল্পমাত্রায় তেঁতুল খাদ্য তালিকায় রাখলে আপনার লিভারের যাবতীয় সমস্যা দূর হবে ইনশাআল্লাহ।

তেঁতুল চোখের ড্রপ তৈরীর কাজে ব্যবহার হয়
তেঁতুল ফলের নির্যাস আদিকাল থেকে বিভিন্ন ঔষধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তার ব্যতিক্রম ঘটেনি চোখের ড্রপ তৈরির ঔষধে। এর থেকে বোঝা যায় যে, এই ফলটি চোখ সুস্থ সবল রাখতে তেঁতুলের ভূমিকা অপরিসীম। তাই তেঁতুল ঔষধ হিসেবে প্রতিদিন কিঞ্চিত হলেও খাওয়া খুবই প্রয়োজন।

ওজন কমাতে তেঁতুলের ভূমিকা
মানবদেহে ওজন বেড়ে গেলে শরীরে নানান রোগের সৃষ্টি হতে পারে। এই সমস্ত রোগ প্রতিহত না করতে পারলে ভবিষ্যতে বড় আকার ধারণ করতে পারে। সেইগুলো রোগের নাম হলো যেমন: কিডনির সমস্যা, ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা, হৃদরোগের ঝুকি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তাই তেঁতুল প্রতিনিয়ত ঔষধ হিসেবে সেবন করা যেতে পারে।

ক্যান্সার প্রতিরোধকারী
আমরা সকলেই জানি ক্যান্সার একটি মরণব্যাধি। ক্যান্সারের সূচনায় এই ফলটি জাদুর মত কাজ করে থাকে। এই ফলটিতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং এন্ট্রি ইনফ্লামেটরি যা ক্যান্সারের মতো জটিল ও কঠিন রোগ থেকে রক্ষা করতে বেশ ভূমিকা রাখে।

মুখ ও ত্বকের খুবই উপকারী
তেঁতুল মুখ ও ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। কেননা তেঁতুলে রয়েছে “ভিটামিন সি” তেঁতুল খেলেও উপকার মিলে এবং এর রস ত্বক ও মুখে ব্যবহার করলে বেশি উপকারী পাওয়া যায়। তাই এই ফলকে খাওয়ার পাশাপাশি শরীরের বাহ্যিক ব্যবহার করতে পারি।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
তেঁতুলে রয়েছে এক ধরনের অ্যান্টিসেপটিকের বৈশিষ্ট। যা শরীরে জমে থাকা কঠিনতর জীবাণু ধ্বংস করতে সক্ষম। যেমন: ফ্লু, সর্দি-কাশি, ক্যান্সার ইত্যাদি কঠিন জীবাণু ধ্বংস করতে সক্ষম। তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি এর উপাদান। এই দুই উপাদান মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী বলে গণ্য হবে।

তেঁতুলের অপকারিতা

সঠিক মাত্রায় তেঁতুল খেলে অবশ্যই উপকার মিলবে। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় তেঁতুল খেলে শরীরের নানান রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। এইজন্য উপকারের আশায় বেশি পরিমাণে তেঁতুল খাওয়া ঠিক নয়। নিম্নে অতিরিক্ত তেঁতুল খাওয়ার কিছু অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

(ক) বেশি পরিমাণে তেঁতুল খেলে রক্তের শর্করা বৃদ্ধি পায়।
(খ) তেঁতুলের মধ্যে টারটানিক অ্যাসিড থাকার কারণে দাঁতের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
(গ) দ্রুত ওজন কমাতে সক্ষম। যাদের রোগা পাতলা শরীর তারা তেঁতুল এড়িয়ে চলবেন।
(ঘ)  রক্তের গ্লকোজ এর মাত্র কমিয়ে দেয়।
(ঙ) যাদের অ্যালাজি আছে তারা পরিমাণে তেঁতুল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
(চ) যাদের পেটের সমস্যা রয়েছে তারা তেঁতুল এরিয়ে চলুন।
(ছ) তেঁতুলে রয়েছে এক ধরনের অ্যাসিড। বেশি পরিমাণে খেলে হজম প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটায়।
(জ) দুগ্ধ পানকারিনী মায়েদের তেঁতুল খাওয়া নিষিদ্ধ।
(ঞ) যেকোনো ধরনের সার্জারির ২০ দিন পূর্বে তেঁতুল খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
(ট) যৌন স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। যে সমস্ত পুরুষদের হরমোনের পরিমাণ কম তারা তেঁতুল          খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ তেঁতুল একটি স্বাস্থকারী ও উপকারী ফল। কিন্তু এটি উপকারের আশায় বেশি পরিমাণে খেলে ক্ষতিই বেশি হবে। তাই এই ফলটির ব্যাপারে সতর্ক থাকা। এবং পরিমাণ মতো সেবন করা।

তেঁতুল বীজের গুড়ার উপকারিতা

তেঁতুল যেমন স্বাদে গুনে ভরপুর তেমনি এর বীজও দারুন পুষ্টি গুণে ভরপুর। তেঁতুল বীজের গুড়া প্রাচীনকাল থেকে ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

১.    পুরুষের বীর্যের শুক্রাণু বৃদ্ধি করে
২.    নিয়মিত তেঁতুল বীজের গুড়া সেবনে শরীরে বল শক্তি আনে।
৩.    স্বপ্নদোষ এর মতো কঠিন রোগ ভালো করে।
৪.    উচ্চ রক্ত চাপ ভালো করে।
৫.    কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
৬.    বীর্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৭.    মহিলারদের জরায়ুর শক্তি বাড়িয়ে তুলে।
৮.    যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে। 

পুরুষদের তেঁতুল খেলে কি হয়
পুরুষদের অতিরিক্ত তেঁতুল খেলে পুরুষত্ব কমে যাওয়ার সম্ভাবনা নয়। কেননা তেঁতুলের রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট। এই ফলটি পুরুষদের খাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে মন্তব্য করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞরা। এইজন্য পুরুষত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য তেঁতুল খাওয়ার অভ্যাস কমিয়ে দিন।

মন্তব্য

পরিশেষে বলা যেতে পারে, তেঁতুল যেমন উপকার রয়েছে তেমনি ক্ষতির দিকটাও রয়েছে। মাত্রা অতিরিক্ত তেতুল সেবনে শরীরে নানান ক্ষতি সাধিত হতে পারে। এজন্য পরিমাণ মতো এই ফলটি খেলে উপকার মিলবে এবং শরীরে ঔষধ হিসেবে কাজ করবে। আমাদের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url