আখের রসের উপকারিতা
আখের রসের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা এ আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করবো। যারা এই বিষয়ে জানার জন্য খুবই আগ্রহী, তাদেরকে আমাদের এই আর্টিকেলে স্বাগতম। কথা না বাড়িয়ে চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
আখের রসের অপকারিতা সম্পর্কেও আমরা আলোচনা করবো। যারা এ বিষয়ে জানতে আগ্রহী। তাদেরকে আমাদের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।
পোস্ট সূচীপত্র .
ভূমিকা
আখ আমাদের দেশের প্রাচীন ও অর্থকারী একটি ফসল। আখ থেকে চিনি এবং গুড় তৈরি করা
হয়। আমাদের বাংলাদেশ চিনি এবং গুড়ের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। আখের রসে অনেক
পুষ্টিগুণ এবং ভিটামিন রয়েছে। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যকর পানীয়। এই রস
আমাদের শরীরে শক্তি জোগাতে দারুণ ভূমিকা রাখে। নিম্নে কিছু আখের উপকারিতা
সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
আখের রসের উপকারিতা
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
আখের রসে রয়েছে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এই রস পান
করলে মানুষের দেহের সংক্রমণ রোগ এবং বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এবং
এতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ পদার্থ রয়েছে যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস,
আয়রন ইত্যাদি আরো খনিজ পদার্থ রয়েছে। এবং এই রসকে বলা হয় সুপার ক্যান জুস।
২. ক্যান্সার প্রতি রোধকারী
বর্তমান সময়ে মহিলাদের স্তন
(Breast) এবং নারী, পুরুষ উভয়ের প্রোটেস্ট (Prostate) ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
কেননা আখের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট। এক গবেষণায় উঠে
এসেছে, আখের রসে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট, যা মানবদেহের ক্যান্সারের ঝুঁকি
কমায় এবং দেহের কোষ গুলো ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
৩. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
আখের রস হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, কারণ
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। মানুষের পরিপাকতন্ত্রকে উন্নত করতে আখের রস
বিরাট ভূমিকা পালন করে। পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর করে, সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে
যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তাদের জন্য ম্যাজিক এর মত কাজ করে। এজন্য মাঝে মাঝে
আখের রস খাওয়া প্রয়োজন।
৪. কিডনির সমস্যা দূর করে
আখের রসে কম পরিমাণে
কোলেস্টেরল এবং সোডিয়াম থাকায়, এটি পান করলে কিডনি ভালো রাখতে সাহায্য
করে। কিডনি ভালো রাখতে এই উপাদানটি সেবন করতে পারেন।
৫. ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
আখের রস পান করলে ত্বক উজ্জ্বল
এবং সুন্দর হয়, কেননা এতে রয়েছে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড এবং আরো অন্যান্য উপাদান
সমূহ। এ আখের রস পান করলে মৃত কোষ গুলো পুনরুজ্জীবিত হয়। ফলে ব্রণ বা ব্রণের
দাগ, ত্বক মসৃণ এবং শুষ্ক থেকে রক্ষা করে।
৬. হাড় মজবুত করতে
আখের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম,
ফসফরাস ইত্যাদি। যা হাড় গঠনে দারুণ ভূমিকা রাখে। এবং হাড় শক্ত ও মজবুত করতে
দারুন ভাবে কাজ করে। তাই খাদ্য তালিকায় এই উপাদান অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
৭. দাঁত মজবুতে সহায়ক
আখের রস দাঁতের ক্ষয় রোধ করে এবং মজবুত
করে তোলে, এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস, যা দাঁতের ক্ষয় রোধে ভালো কাজ করে
থাকে। তাই প্রতিনিয়তন আখের রস খাদ্য তালিকায় যুক্ত করা যেতে পারে।
৮. জন্ডিস ও লিভারের সমস্যা দূর করে
যারা জন্ডিস রোগে এবং
লিভারের রোগে আক্রান্ত তাদের জন্য আখের রস দারুন উপকারী হতে পারে। আখের রসে
এমন কিছু উপাদান ও পুষ্টিগুণ রয়েছে। যা জন্ডিস এবং লিভারের যাবতীয় সমস্যা দূর
করে সুস্থতা দান করে।
৯. খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ
আখের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন সহ আরো নানান উপকারিতা। আর মানব দেহের জন্য এই
খনিজ উপাদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই খনিজ পদার্থ গ্রহণ করলে শরীরে নানান রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
১০. গর্ভাবস্থায় উপকারী
গর্ভবতী নারীরা অনেক সময় ক্লান্ত হয়ে
যায়। তখন এই আখের রস পান করলে শরীরে অনেক প্রশান্তি পাওয়া যায়। এবং শুধু তাই
নয় এতেও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যা অত্যন্ত উপকারী বিশেষ করে
গর্ভবতী নারীদের বেশি উপকারী বলে দাবি করেছেন একদল বিশেষজ্ঞরা।
১১. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে
আখের রস পান করলে ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণে থাকে, এতে রয়েছে প্রাকৃতিক শর্করা। যা মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী
বলে দাবি করেছেন একদল বিশেষজ্ঞরা। আখের রসে আরো রয়েছে মানব দেহের জন্য
ইনসুলিন উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে দারুন ভূমিকা রাখে।
আখের রসের অপকারিতা
আলসার বা এসিডিটির সমস্যা হতে পারে
আমরা অনেকেই জানি, আখের রসে
রয়েছে উচ্চমাত্রার অ্যাসিড। যা পান করলে অনেক সময় আলসার বা গ্যাস্টিকের সমস্যা
হতে পারে। তবে এটি অতিরিক্ত পান করলে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই রস
নির্দিষ্ট পরিমাণে পান করা যেতে পারে।
পেটে গন্ডগোল হতে পারে
আখের রস অতিরিক্ত পরিমাণে পান করলে পেট ব্যথা
সহ আরো নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে যেমন পেটব্যথা, ডায়রিয়া, গ্যাস্ট্রিকসহ আরো
নানান রোগ হতে পারে। এজন্য এ রস বুঝে শুনে পান করাই উচিত।
রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে
আখের রস অতিরিক্ত পান করলে
রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা আখের রসে রয়েছে
প্রাকৃতিক চিনি। অতিরিক্ত এই রস পান করলে শরীরে নানান ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা
রয়েছে। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা এ রসকে এড়িয়ে চলবেন।
ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে
আখের রস অতিরিক্ত পরিমাণে পান করলে ওজন বেড়ে
যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ক্যালরি, যা মানব দেহের
জন্য খুবই ক্ষতি। তাই এই রস পান করার পূর্বে ভালোভাবে সতর্কতার সাথে পান করতে
হবে।
ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকতে পারে
আখের রস যেহেতু কাঁচা অবস্থায় সংরক্ষণ
করা হয়, তাই এই রসে বিভিন্ন দূষিত পদার্থ থাকতে পারে। ফলে এই রস পান করলে,
ইনফেকশন সহ নানান জটিল ও কঠিন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই রস সতর্কতার
সাথে পান করা উচিত।
গর্ভাবস্থায় আখের রস পান করার উপকারিতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
গর্ভবতী নারীদের বিভিন্ন রোগ হওয়ার
ঝুঁকি বেশি থাকে। এই সময় আখের রস পান করলে অনেক উপকার ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি করে। কেননা এতে রয়েছে, নানান পুষ্টি উপাদান যেমন শর্করা, মিনারেল,
সুক্রোজ, গ্লুকোজ, ভিটামিন ইত্যাদি।
কোষ্টকাঠিন্য ভালো করে
গর্ভবতী নারীদের অনেক সময়
কোষ্টকাঠিন্য হয়ে থাকে, যা অনেক বেদনাদায়ক। আখের রস নিয়মিত গর্ভবতী
নারীরা পান করলে খুব উপকার পাওয়া যায়। এই রসে রয়েছে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন।
এইগুলো মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী।
গর্ভবতী নারীদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
অনেকের মনে প্রশ্ন,
গর্ভাবস্থায় আখের রস পান করা ক্ষতি হবে কি না? এটা মনে রাখবেন ফলের রস বা ফল
কখনোই ক্ষতি হয় না। তবে মাত্র অতিরিক্ত পান করলে সেক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হতে
পারে। এই রস গর্ভাবস্থায় পান করা যাবে।
আখের রস পান করার নিয়ম
অতিরিক্ত পান করবেন না
অতিরিক্ত পরিমাণে আখের রস কখনোই পান করবেন না,
কেননা আখের রসের রয়েছে উচ্চমাত্রার শর্করা। এই কারণে শরীরে নানান সমস্যা দেখা
দিতে পারে।
খালি পেটে পান করবেন না
আখের রস খালি পেটে সকালে কখনোই পান করবেন না।
খালি পেটে পান করলে পেটে বদহজম সহ আরো অনেক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সকাল
বেলা হালকা কিছু খাওয়ার পর এই রস পান করতে পারবেন।
লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন
আখের রসে হালকা লেবুর রস ও আদা দিয়ে
সেবন করতে পারেনা। এতে আখের রসের টেস্ট পাওয়া যায়। এবং খেতেও অনেক ভালো লাগে।
সংশ্লিষ্ট কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর
১ নং প্রশ্নঃ আখের রস খেলে কি মোটা হয়?
উত্তরঃ আখের রস খেলে মূলত
মোটা হওয়া যায় না, কেননা আখের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও
কার্বোহাইড্রেট। এটিতে কোন প্রকার চর্বি নেই। এটি পান করলে মোটা হওয়া যায় না।
বরং অনেক উপকার মিলে।
২ নং প্রশ্নঃ আখের রসে কতগুলি ক্যালরি থাকে?
উত্তরঃ ২৫০ থেকে
৩০০ মিলি আখের রসে রয়েছে ১১১ ক্যালরি, এবং ২৭ গ্রামে স্বাস্থ্যকর ও
কার্বোহাইডেট। এতে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন
ইত্যাদি উপাদান রয়েছে।
৩ নং প্রশ্নঃ আখের রস পান করলে কি প্রেশার বাড়ে?
উত্তরঃ হ্যাঁ,
আখের রস পান করলে প্রেসার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা এতে রয়েছে প্রয়োজনীয়
ক্যালোরি, মিনারেল এবং ভিটামিন, যা অতিরিক্ত সেবনের ফলে দেহের ওজন বেড়ে যাওয়ার
সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই রস ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এই রস মানব দেহের আরও একটি ক্ষতি ঘটাতে পারে তা হলে উচ্চ রক্তচাপ।
৪ নং প্রশ্নঃ আখের রস কখন পান করা উচিত?
উত্তরঃ খালি পেটে আখের রস পান করা খুবই
উপকারী। এটি সকালে খালি পেটে পান করলে আরো ভালো হয়। আখের রসে রয়েছে পর্যাপ্ত
পরিমাণে শর্করার উপস্থিতি, যা মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী। এতে আরো রয়েছে
প্রাকৃতিক চিনি, সুক্রোজ এবং গ্লুকোজ, যা পরিমাণ মতো পান করলে অনেক উপকার
মিলে।
৫ নং প্রশ্নঃ আখের রস থেকে কি কি তৈরি হয়?
উত্তরঃ আখের রস থেকে তৈরি হয়
যেমন চিনি, গুড় এবং পশুর খাদ্যের জন্য ঝোলা গুড়, ইত্যাদি আখের গুড় থেকে তৈরি
হয়।
৬. নং প্রশ্নঃ আখ চিবিয়ে খেলে কি হবে?
উত্তরঃ আখ চিবিয়ে
খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। যেমন দাঁত মজবুত, মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়, হাড়
মজবুত হয় ইত্যাদি। এছাড়াও আখের রসে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট, যা হিউম্যান বডির
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এবং সংক্রমণে আক্রান্তের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য
করে।
লেখকের মন্তব্য
আমরা উপরোক্ত আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনার চেষ্টা
করেছি। এই রসগুলো নানান ভিটামিন সমৃদ্ধ। তাই এই রস সেবন করলে হিউম্যান বডির
অনেক উপকার হয়ে থাকে।
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url