কবুতরের মাংসের উপকারিতা
কবুতরের মাংসের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা এই আর্টিকেলে আলোচনা করব। যারা এ বিষয় নিয়ে ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি করছেন, আজ আমাদের এই আর্টিকেলের তাদেরকে স্বাগতম। আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন।
কবুতরের মাংসের অপকারিতাও সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। যারা এ বিষয়ে জানতে আগ্রহী
তাদেরকে আমাদের এই আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত করার অনুরোধ রইলো।
পোস্ট সূচীপত্রঃ কবুতরের মাংসের উপকারিতা .
উপস্থাপনা
কবুতর গৃহপালিত একটি প্রাণী। এর মাংস হালাল এবং বিশ্বের কয়েকটি দেশে এটি একটি
জনপ্রিয় খাদ্য। এই মাংস মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী। এই মাংস যেমন সুস্বাদু
তেমনি এর পুষ্টিগুণও রয়েছে, যেমন এতে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন,
ক্যালোরি ইত্যাদি আরো অনেক পুষ্টিগুণ। এই প্রাণীর মাংসের পুষ্টিগণ প্রায় নয়টি
মুরগির মাংসের সমান।
কবুতরের মাংসের উপকারিতা
হাড় ও দাঁতের ক্ষয় রোধ করে
কবুতরের মাংস খেলে হাড় ও দাঁতের ক্ষয় রোধ
করে, কেননা এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম। এই উপাদান গুলো মানব
দেহের হাড় ও দাঁত ক্ষয় রোধ করে মজবুত ও শক্তিশালী করে। দীর্ঘকাল পর্যন্ত হাড় ও
দাঁত ঠিক রাখতে দারুন সহায়ক।
স্মৃতিশক্তির উন্নতি
এই কবুতরের মাংসে বেশ কিছু উপাদান রয়েছে, তার
মধ্যে হলো ভিটামিন বি, অমেগা-৩ ইত্যাদি। যা নিয়মিত সেবন করলে স্মৃতিশক্তির
উন্নতি ঘটায়। এছাড়া আরো কবুতরের মাংসে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি।
কবুতরের মাংসে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে, এমনটা মন্তব্য করেছেন একদল
বিশেষজ্ঞরা।
ত্বক উজ্জ্বল করে
কবুতরের মাংসে রয়েছে ভিটামিন এ, যা ত্বকের
উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। যাদের ত্বক শীতকালে শুষ্ক ও মসৃণ হয়ে যায়। তারা কবুতরের
মাংস খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। ত্বকের জন্য এই উপাদানগুলো শীতকালে
খুবই কার্যকারী।
লিভার ও কিডনি ভালো রাখে
কবুতরের মাংসে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা
কিডনি ও লিভার সুস্থ রাখতে বেশ ভূমিকা রাখে। এতে অতিরক্ত ফ্যাট বা অতিরিক্ত
প্রোটিন বিদ্যমান নেই। যার কারণে এটি খেলে তেমন ক্ষতি হয় না। এই মাংসকে সুপার
ফুড বলে আখ্যায়িত করা হয়।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
কবুতরের মাংস খেলে উচ্চ রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণ করে, কেননা এতে রয়েছে প্রয়োজনীয় মিনারেল, পটাশিয়াম ইত্যাদি আরো
অন্যান্য উপাদান। যা উচ্চ রক্তচাপ দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করে। যারা এ রোগে ভুগছেন তারা
এই খাবারটি ট্রাই করতে পারেন। এই সমস্ত রোগীদের জন্য এটি মহৌষধ হিসেবে কাজ
করবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
কবুতরের মাংস মানব দেহের পুষ্টির
চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরক্ষ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এই মাংসে
রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও প্রোটিন। যে সমস্ত নারীর সিজারের ক্ষত এবং
অস্ত্র পাচারের ক্ষত রয়েছে, তারা এই মাংস খেতে পারে না।
রক্ত বৃদ্ধি করণ
কবুতরের মাংস এমন কিছু খনিজ পদার্থ রয়েছে, যা
মানুষের শরীরের রক্ত বৃদ্ধি করণে দারুণ ভূমিকা রাখে। যেমন আয়রন, জিংক, ফসফরাস,
সোডিয়াম, কপার সহ আরো অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। এইগুলো রক্তবৃদ্ধি করণে দারুন
সহায়ক।
উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ
এই মাংসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, যা
মানুষের দেহ সচল রাখতে সাহায্য করে। যেমন পেশি শক্তি বৃদ্ধি, কোষ সচল এবং মানুষের
দেহের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শক্তিশালী করে। প্রোটিন জাতীয় খাদ্য হিউম্যান বডির
জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এই উপাদান গুলো কোষ গঠনে অত্যন্ত কঠিন ভূমিকা পালন
করে থাকে।
ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ
এই মাংসে রয়েছে ভিটামিন ও মিনারেল এর মত
খনিজ পদার্থ। এইগুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো
- ম্যাগনেসিয়াম
- পটাশিয়াম
- ওমেগা-৩
- ওমেগা-৬
- ফসফরাস
- ভিটামিন ১২
- ক্যালসিয়াম
- কপার
- অ্যামিনো এসিড
- সোডিয়াম
- আয়রন
- প্রাকৃতিক ফ্যাট
- ভিটামিন ৬
- প্রোটিন
- জিংক
- উপকারী কোলেস্টেরল
- ফলিক অ্যাসিড
- রিবোফ্লাবিন
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
কবুতরের মাংস খেলে হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে।
কেননা এতে রয়েছে প্রোটিনের উৎস, যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্টকাঠিন্যের
মত কঠিন রোগ ভালো করতে সাহায্য করে।
দুর্বল কাটিয়ে তুলে
এই মাংসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি,
প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিংক, আয়রন ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি আরো পুষ্টিগুণ।
যারা শারীরিকভাবে দুর্বল তারা এই মাংস খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
কারণ এই মাংস হিউম্যান বডির জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাদ্য।
বার্ধক্য রোধ করতে সাহায্য করে
কবুতরের মাংসে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান
বিদ্যমান রয়েছে, যা মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী। তা হলো খনিজ উপাদান যেমন
আয়রন, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন সহ আরো খনিজ পদার্থ রয়েছে। এই মাংস সেবন
করলে ত্বকে বয়সের ছাপ সহজে বোঝা যায় না।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
কবুতরের মাংসে রয়েছে সেলেনিয়াম, যা
হিউম্যান বডির রেডিক্যাল রক্ষা করে। তাই এর ফলে মানবদেহের ক্যান্সারের ঝুঁকি
অনেকটা কমে যায়।
কবুতরের মাংসের অপকারিতা
কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি
কবুতরের মাংসে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট এবং
কোলেস্টেরলের মাত্রা কিছুটা বেশি রয়েছে। ফলে এগুলো অতিরিক্ত গ্রহণ করলে ফ্যাট
এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এ খাবার মাত্রা
অতিরিক্ত না খাওয়াই উত্তম হবে।
উচ্চমাত্রার ক্যালরি থাকতে পারে
কবুতরের মাংসে এমনিতেই অনেক
পুষ্টিগুণ রয়েছে। এই মাংসে উচ্চমাত্রায় ক্যালরি রয়েছে, যা অতিরিক্ত গ্রহণ করলে
শরীর বিভিন্ন ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। তার মধ্যে হলো, ওজন বেড়ে যাওয়া,
স্থূলতা ইত্যাদি রোগ হতে পারে। এজন্য এই মাংস থেকে একটু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা হতে পারে
অনেক বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন যে,
কবুতরের মাংসে এলার্জি রয়েছে। যাদের পূর্বে থেকে এলার্জির সমস্যা রয়েছে, তারা
এই খাদ্য থেকে একটু বিরত থাকবেন। এই খাবার শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসের নানান জটিলতায়
ভোগাতে পারে।
অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট
কবুতরের মাংসে কিছু পরিমাণে স্যাচুরেটেড
ফ্যাট থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যা হিউম্যান বডির জন্য খুবই ক্ষতিকর। যারা
প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করে থাকেন, তারা এই মাংস সীমিত পরিমানে সেবন
করতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় কবুতরের মাংস খাওয়ার উপকারিতা
ভিটামিন “এ” সমৃদ্ধ
কবুতরের মাংসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “এ”
রয়েছে, যা চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে দারুন সহায়ক হতে পারে। এবং শরীরে
বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই গর্ভবতী নারীদের
কবুতরের মাংস খেতে দেওয়া উচিত।
ওমেগা-৩ এবং ফ্যাটি অ্যাসিড থাকতে পারে
কবুতরের মাংসে
ওমেগা-৩ এবং ফ্যাটি অ্যাসিড পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। যা মস্তিষ্ক বিকাশে
দারুন ভূমিকা রাখে, বিশেষ করে গর্ভের সন্তানের মেধাবিকাশে খুবই কার্যকারী। সুতরাং
গর্ভবতী নারীদের খাদ্য তালিকায় এই মাংস রাখা যেতে পারে।
আয়রন রয়েছে
যে সমস্ত নারীদের গর্ভে সন্তান ধারণের ফলে শরীরের
রক্তশূন্যতা দেখা দিয়েছে, তারা নিয়মিত এই মাংস সেবন করতে পারেন। কেননা এই খাবার
খেলে গর্ভবতী নারীদের রক্তশূন্যতা পূরণ করে এবং রক্তের হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন
বাড়াতে সাহায্য করে। আর এইগুলো মা এবং গর্ভের সন্তানের অক্সিজেন সরবরাহ করতে
অত্যন্ত ভূমিকা পালন করে।
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স পাওয়া যায়
এই মাংস রয়েছে ভিটামিন বি
কমপ্লেক্স, যা শিশুর শারীরিক গঠনে ও বিকাশে সাহায্য করে। এতে রয়েছে ভিটামিন
বি১২, ভিটামিন বি৬। এবং শিশুর নার্ভ সিস্টেম বিকাশেও দারুন ভূমিকা রাখে।
কবুতরের মাংসের রেসিপি
- কবুতরের মাংসের রেসিপি কেনা পছন্দ করে। একথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে জিহ্বায় জল চলে আসে। নিম্নে একটি রেসিপি উল্লেখ করা হলো।
- রেসিপি উপকরণসমূহ
- প্রথমে প্রয়োজন মত কবুতরের মাংস
- মরিচের গুঁড়া
- হলুদের গুড়া
- রসুন বাটা
- টুকরা করা পিয়াজ
- আদা বাটা
- জিরা বাটা
- গরম মসলার গুড়া স্বাদমতো
- লবণ স্বাদ মতো
- তেল স্বাদমতো
- টমেটো কুচি
- ধনেপাতা কুচি
রান্নার পদ্ধতি
- প্রথমে কবুতরের মাংস পিচ পিচ করে কেটে নিয়ে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে।
- একটি কড়াই চুলার উপর বসিয়ে তেল গরম করে পিয়াজ কুচি তার ওপর দিয়ে ভালোভাবে ভেজে নিতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত বাদামী রং না আসে ততক্ষণ ভাজতে হবে।
- তারপর আদা বাটা ও রসুন বাটা যোগ করে সুন্দরভাবে ভেজে নিতে হবে।
- এরপর মরিচের গুড়া, হলুদের গুড়া এবং গরম মসলার গুড়াও দিয়ে ভালোভাবে ভেজে নিতে হবে।
- টমেটো কচিও যোগ করতে পারেন।
- এরপর মাংস মসলার উপর ঢেলে দিয়ে স্বাদমতো লবণ দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে নিতে হবে।
- কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন এরপর মাঝে মাঝে চামচ দিয়ে নাড়াচাড়া করুন।
- কিছুক্ষণ সিদ্ধ হওয়ার পর এর সাথে প্রয়োজন অনুযায়ী পানিযুক্ত করুন।
- মাংস সিদ্ধ হওয়ার উপক্রম হলে আবার কিছু মসলা যুক্ত করুন।
- রান্না শেষে ধনেপাতার কুচি যুক্ত করতে পারন।
- এইভাবে তৈরি হয়ে যাবে কবুতরের মাংসের রেসিপি।
সংশ্লিষ্ট কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর
কবুতরের মাংস খাওয়া কি ভালো?
উত্তরঃ নিঃসন্দেহে কবুতরের মাংস
খাওয়া ভালো, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, পুষ্টিগুণ, খনিজ উপাদান
ইত্যাদি। এই মাংস মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী। তাই এগুলো নির্ভয়ে প্রয়োজন
অনুযায়ী সেবন করতে পারেন।
কবুতর খাওয়া কি ক্ষতিকর?
উত্তরঃ আসলে মূলত কবুতরের মাংস
খাওয়া ক্ষতিকর নয়। এবং এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং পুষ্টিগুন। এ
মাংসের মাধ্যমে কোন সংক্রমণ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এটি একটি নিরাপদ
খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
কবুতরের মাংস খাওয়া কি জায়েজ?
উত্তরঃ কবুতর একটি হালাল প্রাণী,
তাই এই প্রাণীর মাংসও হালাল। মাংস খাওয়া ও জায়েজ রয়েছে। নিঃসন্দেহে এর মাংস
খেতে পারেন।
লেখক এর মন্তব্য
পরিশেষে আমরা, কবুতরের মাংসের পুষ্টিগুণ ও খনিজ উপাদান সম্পর্কে বিস্তারিত
জানলাম। আমাদের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো। যারা
বসেছেন তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url