কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ
রইল। যার শরীর দুর্বল এবং নানান সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এটি একটি বেস্ট অপশন
হতে চলেছে।
কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কেও এ আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে। যারা এ বিষয়ে জানতে আগ্রহী। তারা এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
পোস্ট সূচিপত্র.
কিসমিসের উপকারিতা
কিসমিস চাষিরা শুকনো অবস্থায় বাজারে রপ্তানি করে থাকে। এটি একটি সুস্বাদু এবং
স্বাস্থ্যকর উপাদান। এটি যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিগুণেও ভরপুর। মানব দেহের জন্য
এই ফল খুবই উপকারী। তাই নিয়মিত এই ফল খাদ্য তালিকায় রাখলে শারীরিকভাবে দারুণ
উপকার মেলে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে: গ্যাস্টিক কমাতে কিসমিসের ভূমিকা
অপরিসীম। কেননা কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম, যা
শরীরের টক্সিন প্রতিহত করে গ্যাস্ট্রিক ও আলচারের মত ব্যাধি দ্রুত নিরাময় করে।
এছাড়াও হৃদরোগ ভালো করে এবং কিডনির পাথর গলিয়ে দিতে দারুণ সহায়ক হতে পারে।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে: হজম ভালোভাবে না হওয়ার কারণে
কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো জটিল ও কঠিন রোগ প্রায় সময় দেখা দিতে পারে। তাই কিসমিস
এরূপ ভালো হওয়ার ব্যতিক্রম অপশন হতে পারে। কেননা এই ফলটাতে রয়েছে প্রচুর
পরিমাণে প্রাকৃতিক ফাইবার, যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত জটিল ও
কঠিন রোগ দ্রুত নিরময়ে দারুন ভূমিকা রাখে।
ক্যান্সার প্রতিরোধকারী: কিসমিস এমন ধরনের খাদ্য, তাতে রয়েছে প্রচুর
পরিমাণে প্রাকৃতিক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা শরীরের ফ্রী রেডিক্যাল প্রতিরোধ করে
ক্যান্সারের মত কঠিন রোগ ভালো করতে কাজ করে। এটি এমন একটি খাদ্য যা মানুষের
শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
রক্তশূন্যতা কমায়: কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি, যা
মানব দেহের রক্ত দ্বিগুণ হাড়ে বৃদ্ধি করে। এছাড়াও কিসমিসে রয়েছে প্রচুর
পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি আরো অনেক
উপাদান। এতে দ্রুত রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে রক্ত শূন্যতা বৃদ্ধি করে।
মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটায়: আমরা সকলেই জানি মস্তিষ্ক শরীরের এমন একটি অঙ্গ,
যা ব্যাহত হলে মানুষ নানান ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাই মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটাতে
চাইলে প্রতিদিন কিসমিস খাওয়া খুবই জরুরী। এবং এই ফলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা
মানুষের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে পারে। এবং মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটায়।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে: কিসমিসের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি
অক্সিডেন্ট। এছাড়াও রয়েছে প্রাকৃতিক কিছু উপাদান, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে
রাখতে বেশ ভূমিকা পালন করে। তাই নিয়মিত কিসমিস খাদ্য তালিকায় রাখা খুবই
জরুরী।
হাড় ক্ষয় রোধ করে: কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম ও
ক্যালসিয়ামের উপাদান, যা হাড় ক্ষয় রোধ করে। এবং হাড় দ্বিগুণ হারে মজবুত করতে
সাহায্য করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখে: কিসমিস এমন একটি উপাদান, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক উপাদান, যা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এতে বেশি খাবার অভ্যাস কমে যায়। বেশি না খাওয়ার কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি করে: কিসমিস মানুষের শরীরের জন্য খুবই
একটি উপকারী ফল। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি
অক্সিডেন্ট, যা শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
এবং শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে বৃদ্ধি করতে দারুণভাবে কাজ করে।
চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে: কিসমিসে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ম্যাগনেসিয়াম, খনিজ পদার্থ, ফাইবার, আয়রন, পটাশিয়াম, এন্টি অক্সিডেন্ট ইত্যাদি আরো অনেক উপাদান। কিসমিসে আরও রয়েছে বিটা ক্যারোটিন,যা ফ্রি রেডিক্যাল থেকে মুক্ত করে, এবং চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই কিসমিস প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রাখা খুবই জরুরী।
কিসমিসের অপকারিতা
এলার্জির সমস্যা হতে পারে: যাদের পূর্বে থেকেই এলার্জির সমস্যা রয়েছে
তারা কিসমিস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়ার কারণে এই সমস্যা
দ্বিগুণ হতে পারে। এবং এলার্জির সাথে হজমের ও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডায়রিয়া হতে পারে: কিসমিস সঠিক নিয়মে খেলে নানান উপকার পাওয়া যায়।
কিন্তু অতিরিক্ত এই ফল খেলে কিছু ক্ষতি হতে পারে। কেননা কিসমিসে রয়েছে
প্রাকৃতিক ফাইবার, যা বেশি পরিমাণে খেলে হজম তন্ত্রের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এর
থেকে ডায়রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে।
রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে: কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক শর্করা, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। তাই এ সমস্ত রোগীদের কিসমিস পরিমাণ মতো সেবন করাই উচিত। নইলে উপকারের চাইতে ক্ষতিই বেশি মিলতে পারে।
দাঁতের ক্ষতি হতে পারে: কিসমিস খেতে বেশ মিষ্টি এবং কিছুটা নরম, যার কারণে দাঁতে লেগে ক্যাভিটির সৃষ্টি হতে পারে। আঁশযুক্ত খাবার বেশি পরিমাণে খেলে দাঁতের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই ফল খাওয়ার পর ভালোভাবে কুলি করা উচিত।
উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে: অতিরক্ত পরিমাণে কিসমিস খেলে উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই ফলটি অতিরিক্ত না খাওয়াটাই উচিত।
পেট ফাঁপার ঝুঁকি হতে পারে: কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা
বেশি পরিমাণে সেবন করলে পেট ফাঁপার মত মারাত্মক অসুখ হতে পারে। তাই কোন জিনিস
লাভের আশায় বেশি খাওয়া উচিত নয়।
ওজন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে: অনেক সময় এই ফল খাওয়ার কারণে শরীরের ওজন
বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক
চিনি এবং ক্যালোরি, যা শরীরের ওজন বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই সাবধানতার সাথে এই
ফল খাওয়া উচিত।
প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত?
কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সকল ভিটামিনের উৎস। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
কিসমিস খাওয়ার নিয়ম ২০ থেকে ৩০ গ্রাম। এবং কোন কোন স্বাস্থ্যবিদদের মতে, দিনে
২২ থেকে ৩৪ গ্রাম কিসমিস খাওয়া উচিত। এর থেকে বেশি খেলে নানান জটিলতা দেখা
দিতে পারে। তাই সাবধানতার সাথে উপরোক্ত এই নিয়ম মেনে চলা খুবই জরুরী। তবে মনে
রাখতে হবে যে জিনিসের উপকার রয়েছে, তার ক্ষতিও রয়েছে। তাই এটি নিয়ন্ত্রণ
মাত্রায় খাওয়াই উচিত হবে।
কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম
কিসমিস সাধারণত দুই ভাবে খাওয়া যায়। এক শুকনা অবস্থায় খাওয়া যায়। দুই পানিতে
ভিজিয়ে খাওয়া যায়। তবে ভিজিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। নিম্নে কিছু
উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
- শরীরে সহজে শোষণ করে: কিসমিস ভেজিয়ে খেলে শরীর দ্রুত শোষণ করতে পারে। এতে শরীরের অনেক উপকার পাওয়া যায়।
- শরীরের দুর্বলতা দ্রুত কাটিয়ে তুলতে পারে।
- মেহরোগ ভালো করে।
- বীর্যের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে
- মহিলাদের সাদাস্রাব দূর করে
কিসমিস খেলে কি মোটা হয়?
প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় ২০ থেকে ৩০ গ্রাম কিসমিস খাওয়া যেতে পারে। এতে রয়েছে
প্রচুর পরিমাণে এনার্জি। শুধু কিসমিস খেলে মোটা হওয়া যায় না। এর সাথে কিছু
প্রয়োজনীয় ব্যায়াম এবং নিয়ম মেনে চলতে হয়।
- প্রতিদিন প্রয়োজন অনুযায়ী কিসমিস খেলে ওজন ঠিক থাকে
- সকালে খালি পেটে ১০ থেকে ১৫ টি কিসমিস খাওয়া যেতে পারে
- শরীরচর্চা যেমন খেলাধুলা, দৌড় প্রতিযোগিতা খেলা ইত্যাদি শরীর চর্চা করা
শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়?
শুকনো কিসমিস নিয়মিত খেলে নানান উপকার পাওয়া যায়। নিম্নে বর্ণনা করা
হলো-
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি হয়
- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়
- চুল শক্ত ও মজবুত করে
- হার্ট ভালো রাখে
- হার মজবুত ও শক্তিশালী করে
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
- এনার্জি বৃদ্ধি করে
- রক্তশূন্যতা দূর করে
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
- ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধির কারণ
বিশেষ দ্রষ্টব্য: কিসমিস ভিজিয়ে খেলে আরো বেশি উপকার পাওয়া যায়। শুকনোর
চাইতে ভেজানো কিসমিসের উপকার বেশি। এবং সেই পানিরও অনেক উপকার রয়েছে।
লেখকের মন্তব্য
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, কিসমিস খাওয়ার অনেক উপকার
রয়েছে। তবে এই কিসমিস ভিজিয়ে খেলে আরো বেশি উপকার পাওয়া যায়। তবে কিসমিস
উপকারের আশায় বেশি খেলে ক্ষতি হতে পারে।
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url