পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়

পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়, এ সম্পর্কে আমরা এই আর্টিকেলে আলোচনা করব। যারা এ বিষয়ে জানতে আগ্রহী। চলুন, কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক। আমাদের এই আর্টিক্যাল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।

পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়

প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কেও আমরা এই আর্টিকেলে আলোচনা করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। যারা জানতে আগ্রহী পড়ার অনুরোধ রইলো।

পোস্ট সূচীপত্রঃ পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয় .

প্রস্রাবে ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার

প্রস্রাবে বা (ইউরিন) ইনফেকশনের সাথে কমবেশি আমরা সকলেই পরিচিত। এই রোগ প্রাপ্তবয়স্ক থেকে বৃদ্ধ এবং ছোটদেরও হতে পারে। তবে এটা ভয়ের কোন কারণ নেই। সঠিক নিয়ম এবং চিকিৎসা মেনে চললে এই রোগ থেকে রেহাই মিলবে।

প্রস্রাবে ইনফেকশনের কিছু লক্ষণসমূহ

  • শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলে
  • প্রস্রাবে প্রতিরক্ত দুর্গন্ধ হলে
  • তলপেটের নিচের অংশে সব সময় ব্যথা হলে
  • প্রস্রাব করার সময় প্রচন্ড জ্বালাপোড়া হলে
  • রাতে কিছুক্ষণ পর পর প্রস্রাবের প্রচন্ড বেগ আশা
  • কোমরের পিছনে অথবা পাঁজরে ব্যথা হলে
  • কিডনিতে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়লে জ্বর অথবা ঠান্ডা লাগা
  • মাঝে মাঝে প্রস্রাবের সাথে রক্ত বের হলে
  • ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া এবং এর পরিমাণ কম হওয়া
  • বমি বমি ভাব হওয়া
  • প্রস্রাবের রং গাঢ় হলুদ হয়ে যাওয়া
  • প্রসাব করার সময় ব্যাথা ও জ্বালাপোড়া হওয়া
  • মুখের রুচি কমে যাওয়া
  • প্রস্রাব অস্বাভাবিক গন্ধ এবং ঘোলাটে হয়
  • মাঝে মাঝে জ্বর আসে ( কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে)
  • মাথা সর্বদায় ভোঁ ভোঁ করে ঘোড়া ইত্যাদি।

চিকিৎসা ও প্রতিকার

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা: পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে প্রস্রাবের সাথে ভিতরের সকল জীবানু বের হয়ে যায়। ফলে ইনফেকশনের প্রবণতা অনেকটাই কমে যায়।

যৌনাঙ্গ পরিষ্কার রাখা: নাভির নিচের পশম মাঝে মাঝে পরিষ্কার করা বা কাটা। যৌনাঙ্গ শুকনো রাখা। ভেজা রাখলে অনেক সময় যৌনাঙ্গের মাধ্যমে প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া খুবই জরুরী।

প্রবায়োটিক খাবার গ্রহণ করা: শরীর সুস্থ রাখার জন্য প্রবায়োটিক এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করার কোন বিকল্প নাই। প্রোবায়োটিক খাবার শরীরের ইমিউন সিস্টেম মজবুত ও শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখে। তাই নিয়মিত এই খাবার আমরা খাদ্য তালিকা রাখতে পারি।

ধূমপান ও অ্যালকোহল জাতীয় জিনিস পরিহার করা: নেশাদ্রব্যেয় সকল পণ্য ইনফেকশনের জন্য দায়ী। নিশা দ্রব্যীয় সকল জিনিস পরিহার করলে দ্রুত প্রস্রাবের ইনফেকশন থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। তাই এইগুলো দ্রুত পরিহার করার চেষ্টা করুন।

সহবাসের পর দ্রুত ধৌত ও প্রসাব করা: সহবাস করার পর স্বামী-স্ত্রীর উভয়ে যৌনাঙ্গ দ্রুত ধোয়া ও প্রস্রাব করা। নয়তোবা নাপাকি থেকে প্রস্রাবে ইনফেকশন দ্রুত ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ক্র্যানবেরি জুস: প্রস্রাবের ইনফেকশন থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য মাঝে মাঝে ক্র্যানবেরি জুস পান করা অনেকটাই নিরাপদ।

ঢিলে ঢালা সুতির পোশাক পরিধান করা: টাইট ফিট পোষাক পরিধান থেকে পরিহার করুন। এরকম ধরনের কাপড় পরিধান করার কারণে ইনফেকশন আরো সংক্রমিত হতে পারে। তাই সর্বদাই ঢিলে ঢালা সুতির পোশাক পরিধান করাই উচিত।

জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি এড়িয়ে চলা: অনেক সময় এই পদ্ধতি অবলম্বন করার কারণে প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবং দ্রুত এর মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো।

পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়

প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা

পাথরকুচির পাতা: পাথরকুচির পাতার রস দিনে ১ থেকে ২ বার খাওয়া যেতে পারে। এই পাতার রসে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা প্রস্রাবের ইনফেকশন ভালো করতে এবং কিডনির পাথর গলিয়ে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

ডাব বা নারকেলের পানি পান করা: ডাবের পানি শরীর ঠান্ডা রাখে। যদি প্রস্রাবের ইনফেকশন হয় তাহলে এই সংক্রমিত রোগ ডাবের পানি প্রতিহত করতে সাহায্য করে। যদি সম্ভব হয় তাহলে প্রতিদিন  ডাবের পানি পান করা যেতে পারে।

লেবুর শরবত: লেবুর রস অত্যন্ত উপকারী উপাদান। দেহ ঠান্ডা এবং পানিশূন্যতা দূর করতে এর গুনাগুন অনেক। বিশেষ করে যাদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া অথবা ইনফেকশন রয়েছে তারা নিয়মিত লেবুর শরবত পান করতে পারেন। এতে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও ইনফেকশন ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তুলসী পাতার রস পান করুন: তুলসী পাতার রস নিয়মিত পান করলে সংক্রামিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এতে প্রস্রাবের ইনফেকশন অথবা যেকোনো ইনফেকশন থেকে দ্রুত রেহাই পাওয়া যায়। সুতরাং আমরা অবহেলিতভাবে তুলসী পাতা যেখানে সেখানে ফেলে রাখি। এই পাতা মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী উদ্ভিদ।

শসার জুস পান করুন: শসাতে রয়েছো অনেক গুনাগুন। শসা শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। তাই যাদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও ইনফেকশন রয়েছে, তারা নিয়মিত জুস বানিয়ে খেতে পারেন। সমস্যা কিছুদিনের মধ্যেই সমাধান হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মধু ও লেবুর রস: এক গ্লাস কুসুম কুসুম গরম পানিতে এক থেকে দুই চা চামচ পরিমাণ মধুর মিক্সড করে, তার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে প্রস্রাবের যাবতীয় ইনফেকশন ভালো হবে। এবং সংক্রমিত হওয়ার চান্স অনেকটাই কমে যাবে।

টক দই খেতে পারেন: প্রতিদিন এক থেকে দুই কাপ পরিমাণ টক দই খেতে পারেন। এতে ইনফেকশন মত জটিল রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। এবং শরীরে ইনফেকশনের সংক্রমিত হওয়ার বাধা সৃষ্টি করে থাকে।

পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া ঔষধ

প্রসাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া অথবা ইনফেকশন হলে, বাজারে অনেক ঔষধ পাওয়া যায়। নিম্নে কয়েকটি ঔষধের নাম উল্লেখ করা হলো-

প্রাথমিক অবস্থায় নিম্নে এইগুলো ঔষধ নিয়মিত সেবন করতে পারেন।
এন্টিবায়োটিক
1..Tab. Ciprofloxacin         (সিপ্রোফ্লক্সাসিন)
2..Tab. Trimethoprim         (ট্রাইমেথোপ্রিম)
3..Tab. Sulfamethoxazole   (সালফামেথোক্সাজোল)

ব্যথা বা জ্বালাপোড়া হলে এগুলো ঔষধ খেতে পারেন
1..Tab. Paracetamol             (প্যারাসিটামল)
2..Tab. Ibuprofen                  (ইবুপ্রোফেন) 

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এইগুলো ঔষধ সেবনের পূর্বে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই সেবন করবেন।

প্রসাবে জ্বালাপোড়া কিসের লক্ষণ

প্রসাবে জ্বালাপোড়া হলে তাকে ইউটিআই (UTI) বলে। এটি অনেক সময় তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। ইউ টি আই এর প্রধান লক্ষণ হল প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে রক্তক্ষরণ, তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করা, পাঁজরে প্রচন্ড ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে। এগুলো লক্ষণ বুঝতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

প্রস্রাবের রাস্তায় ঘা হলে করণীয়

প্রস্রাবের রাস্তায় ঘা, এটি একটি জটিল ও কঠিন রোগ। সঠিক সময়ে যদি এর চিকিৎসা না নেওয়া হয় তাহলে এটি আরো জটিল হতে পারে। প্রথমে এটি সংক্রমিত হতে পারে। তারপর ধীরে ধীরে ক্যান্সারের রূপ নিতে পারে। তাই এটি দ্রুত নিরাময়ের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরী। নিম্নে কিছু প্রাথমিক করণীয়র কথা উল্লেখ করা হলো।

স্ত্রীর সহবাস এড়িয়ে চলুন: যতদিন পর্যন্ত প্রস্রাবের রাস্তায় ঘা ভালো না হয় ততদিন পর্যন্ত স্ত্রী সহবাস এড়িয়ে চলুন। কারণ এর জন্য ঘা আরও জটিল হতে পারে। তাই পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত এড়িয়ে চলুন। ঘা শুকিয়ে গেলে এই কাজ চলমান রাখুন।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে: সর্ব অবস্থায় পাক পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। নাভির নিচেকার পশম নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। এবং যৌনাঙ্গের আশেপাশে সর্বদাই পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রস্রাবের পর যৌনাঙ্গ উত্তম রূপে ধৌত করতে হবে।

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে: পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে দুইটা লাভ হয়। ১. প্রস্রাবের মাধ্যমে ইনফেকশনের জীবাণু বের হয়ে যায়। ২. ইনফেকশনের কারণে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হলে কিছুটা ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এজন্য সর্বদাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে: প্রস্রাবের রাস্তায় যদি ঘা অথবা ইনফেকশন হয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। নইলে সমস্যা আরো জটিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডাক্তারেরা আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে দেখবেন এবং প্রস্রাব পরীক্ষা করে দেখবেন। ডাক্তারেরা যে সমস্ত ঔষধ দিবেন এবং নিয়ম শিখিয়ে দিবেন তা মেনে চলতে হবে।

প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে কি খেতে হয়

প্রসাবে ইনফেকশন হলে প্রথমত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এবং সেই অনুপাতে ঔষধ সেবন করতে হবে। তবে ঘরোয়া ভাবে কিছু জিনিস খেতে পারেন তা হলো সবুজ শাকসবজি, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি, শসা বা খিরা, ঝোল যুক্ত তরকারি, আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। যেকোনো ফল বেশি বেশি খেতে হবে। নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: প্রস্রাবে ইনফেকশন বা মূত্রনালীর সমস্যা হলে মসলাযুক্ত খাবার সর্বদাই এড়িয়ে চলতে হবে। মদ্যপান, ধূমপান এবং নিশা জাতীয় সকল দ্রব্য থেকে সর্বদাই বিরত থাকতে হবে। নিশা এমন একটি উপাদান, যা মানুষের প্রাণনাশের হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, আমরা পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়, এ সম্পর্কে উপরোক্ত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আমাদের এই আর্টিকেলটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url