ডুমুর ফল এর উপকারিতা
ডুমুর ফল এর উপকারিতা সম্পর্কে এই আর্টিকেলে বিস্তারিত জানতে পারবো। যারা এই
বিষয় নিয়ে খোঁজাখুঁজি করছেন তাদেরকে আমাদের এই আর্টিকেল স্বাগতম। চলুন কথা না
বাড়িয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
ডুমুর ফলের অপকারিতা সম্পর্কেও আমরা জানতে পারবো। যারা জানতে খুবই আগ্রহী তাদেরকে আমাদের এই আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।
পোস্ট সূচিপত্র.
ডুমুর ফল এর উপকারিতা
হাড় মজবুত করেঃ হাড় মজবুত ও শক্তিশালী করতে ডুমুরের গুরুত্ব অপরিসীম। ডুমুর ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আর এটি হাড়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব। তাই যাদের হাড়ের সমস্যা রয়েছে তারা এই ফলটি নিয়মিত খেতে পারেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ ডুমুরে রয়েছে ফাইবার, যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং
কোষ্ঠকাঠিন্যের মত জটিল ও কঠিন রোগ ভালো করে। পেটের পাচনতন্ত্র উন্নত করে। এই
ফলটি পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে ম্যাজিকের মত কাজ করে থাকে। তাই প্রতিদিন
কিছু ডুমুর খাওয়া খুবই জরুরী।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ ডুমুর ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক ফাইবার।
যা খিদের ভাব দূরে রাখতে এবং ঘনঘন খাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে তুলে। তাই অতিরিক্ত ওজন
নিয়ন্ত্রণে রাখছে সাহায্য করে। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাচ্ছেন তারা
প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় এই ফলটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে
থাকতে সাহায্য করবে।
কিডনির পাথর অপসারণ করেঃ কয়েকটি ডুমুর ফল পানিতে দিয়ে সিদ্ধ করে সেই
পানি নিয়মিত কয়েকদিন পান করলে কিডনির পাথর অপসারণ হয়। কেননা এই ফলটিতে রয়েছে
এমন কিছু উপাদান, যা কিডনির পাথর অপসারণ করতে দারুণভাবে কাজ করে।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করেঃ ডুমুর এমন একটি ফল, যা মানব দেহের রক্তের
শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক ফাইবার, যা
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে। এবং ইন্সুলিন এর মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধকারীঃ ডুমুর ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
এন্টিঅক্সিডেন্ট। এটি ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এবং ফ্রী
রেডিক্যাল থেকে স্বাস্থ্যকে রক্ষা করে। ফলে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং শরীরের আরো
নানান জটিল রোগ থেকে রক্ষা করে।
ত্বকের জন্য উপকারিঃ অনেক সময় ত্বকে এলার্জি ও চর্ম রোগ হয়ে থাকে। এটি অনেক সময় যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এলার্জি ও চর্ম রোগে ডুমুর দারুন কার্যকারী। তাই নিয়মিত খাদ্য তালিকায় এই ফলটি রাখা খুবই জরুরী।
প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ ডুমুর ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম সহ আরো অনেক খনিস পদার্থ, যা মানব দেহের জন্য খুবই
উপকারী। বিশেষ করে যারা ছোট বাবু নিতে ইচ্ছুক অথবা সদ্য গর্ভবতী হয়েছেন, তারা এ
ফলটি নিয়মিত সেবন করতে পারেন। এই ফল পুরুষ মহিলার উভয়ের প্রজনন ক্ষমতা দ্বিগুণ
হারে বাড়িয়ে তুলে।
মহিলাদের অতিরিক্তি ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ঃ চিনি ও দুধের সঙ্গে এই ফলের রস মিশিয়ে নিয়মিত পান করলে মহিলাদের অতিরিক্ত ঋতুস্রাব বন্ধ হয়।
শরীর সুস্থ রাখতেঃ ২ অথবা ৩টি পাকা ডুমুর, হালকা পানিতে রেখে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালবেলা সেই পানিতে স্বাদ অনুযায়ী মধু মিক্সড করে পানিসহ ডুমুর একসাথে পান করলে শরীরের রোগবালায় নিরবে ধ্বংস হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
দুর্বলতা দূর করেঃ ডুমুর ফলটিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা শরীরের দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে সক্ষম। এতে রয়েছে আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আরো অনেক খনিজ পদার্থ।
বার্ধক্য নিয়ন্ত্রণ করেঃ অনেক সময় বার্ধক্যের কারণে মুখে বয়সের ছাপ পড়ে যায়। এ সময় এই ফলটির নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। এতে রয়েছে ভিটামিন সি, আয়রন, খনিজ পদার্থ সহ আরো অনেক উপাদান, যা মুখে বয়স্কের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।
ডুমুর ফল খাওয়ার নিয়ম
- ডুমুর কাঁচা অবস্থায় খেতে পারেন
- পানিতে ভিজিয়ে খেতে পারেন
- মধু ও দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন
- সকালে খালি পেটে খেতে পারেন
- চিনির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন
- সিদ্ধ করে খেতে পারেন
- সিদ্ধ করে তার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন
- রান্না করে খেতে পারেন
- ঝোলের তরকারি হিসেবে খেতে পারেন
- মাছ দিয়ে রান্না করে খেতে পারেন
ডুমুরের অপকারিতা
এলার্জির কারণ হতে পারেঃ যাদের পূর্বে থেকে এলার্জির সমস্যা রয়েছে। তারা
অতিরিক্ত ডুমুর সেবন করা থেকে বিরত থাকুন। কেননা ডুমুর ফল খাওয়ার ফলে এলার্জির
প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে। এজন্য পরিমাণমতো এই ফল সেবন করা উচিত।
পেটের সমস্যা হতে পারেঃ লাভের আশায় অতিরিক্ত পরিমাণে ডুমুর সেবন করলে
পেটের নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন পাতলা পায়খানা ডায়রিয়া ইত্যাদি হতে
পারে। তাই এই ফলটি বুঝেশুনে খাওয়াই উচিত হবে।
রক্তের সমস্যা দেখা দিতে পারেঃ যাদের শরীরে সবেমাত্র অস্ত্র পাচার করা
হয়েছে তারা এই ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রকোপ হয়ঃ ডুমুর ফল খেলে যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় তেমনি
অধিক পরিমাণে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ডায়াবেটিসের সমস্যা বেড়ে যেতে পারেঃ ডুমুর ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি, যা খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে। তাই যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যার রয়েছে তারা এই ফলটি এড়িয়ে চলবেন।
ডুমুর ফলের গুণাগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম ডুমুরে রয়েছে
- ক্যালসিয়াম ৮০ মিলিগ্রাম
- খনিজ পদার্থ ০.৬ গ্রাম
- চর্বি রয়েছে ০.২ গ্রাম
- আমিষ ১.৩ গ্রাম
- ক্যারোটিন ১৬২ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি১ ০.০৬ মিলিগ্রাম
- শর্করা ৭. ৬ গ্রাম
- জলীয় অংশ ৮৮.১১ গ্রাম
- আয়রন ১.১ মিলি গ্রাম
- ফাইবার ২.২ গ্রাম
- খাদ্যশক্তির ৩৭ ক্যালোরি
- ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি২ ০.০৫ মিলিগ্রাম
- খাদ্যশক্তির ৩৭ ক্যালোরি
ডুমুর ফল রান্নার পদ্ধতি
ডুমুর বিভিন্নভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। পছন্দ অনুযায়ী রান্নার পদ্ধতি ভিন্ন
হতে পারে। যেমন এটির গুনাগুন রয়েছে, তেমনি এই ফলটি রান্না করে খেতেও অনেক
সুস্বাদু লাগে। নিম্নে কিছু রান্নার পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো;
- ভাজি করে খাওয়া যায়
- এই ফল এবং মাছ দিয়ে ঝোল খাওয়া যায়
- পিয়াজ মরিচ দিয়ে ভর্তা করে খাওয়া যায়
- পুটি মাছ দিয়ে ঝোল খেতে অনেক মজা
- শোল মাছ দিয়ে ভর্তা খেতে ভালো লাগে
- আলু দিয়ে ভাজি করে খাওয়া যায়
- ডিম দিয়ে চপ বানিয়ে খাওয়া যায়
ত্বীন ফল কি ডুমুর ফল
হ্যাঁ ত্বীন ফল মানেেই ডুমুর ফল। ত্বীন এটি আরবি শব্দ, এর বাংলা অর্থ ডুমুর। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তায়ালা ত্বীন নামে একটি সূরাই নাযিল করে দিয়েছেন। এবং আল্লাহ ত্বীন ও জাইতুনের কসম খেয়েছেন। এইজন্য ত্বীন ফলের গুরুত্ব অনেক।
কুরআনে বর্ণিত ফলের নাম
ত্বীন বা ডুমুর ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। এই ফলের ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা একটি সূরাই
নাযিল করে দিয়েছেন। এবং এই ফলের কসম খেয়েছেন। তাই এই ফলের গুরুত্ব খুবই বেশি।
যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, ত্বীন ও জাইতুনের কসম। (সূরা ত্বীন, আয়াত - ১)
অর্থাৎ আল্লাহ যে জিনিসের কসম খেয়েছেন তার গুরুত্ব অনেক। এই ফল মানব দেহের জন্য
অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। তাই অবহেলা না করে এই ফলের উপর গুরুত্ব দেওয়া খুবই
জরুরী। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বোঝার তৌফিক দান করুন আমীন।
ডুমুর পাতার উপকারিতা
- হৃৎপিণ্ডের ক্ষতিকারক চর্বি দূর করে
- শরীরে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে
- মুখের ব্রণ দূর হয়
- মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়
- কিডনি সুস্থ থাকে
- লিভার ভালো রাখে
- এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
- কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
কোন ভাষায় ডুমুরের কি নাম
আরবিতে বলে ত্বীন
বাংলাতে বলে ডুমুর
ফারসি ভাষায় আঞ্জির
এবং
অন্যান্য ভাষাতেও আঞ্জির
ইংরেজিতে বলা হয় ফিগ ইত্যাদি।
কাচা ডুমুরের উপকারিতা
হার্ট সুস্থ রাখতে সহায়ক হয়ঃ এই ফলটিতে রয়েছে এমন কিছু উপাদান, যা মানব দেহের
জন্য খুবই উপকারী এবং বিশেষ করে হার্টের জন্য খুবই উপকারী। তাই নিয়মিত এই ফলটি
খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধঃ এই ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ম্যাগনেসিয়াম,
ক্যালসিয়াম, ফাইবার, আয়রন, ক্যালরিসহ আরো অনেক পুষ্টি উপাদান। যা মানব দেহের
জন্য খুবই উপকারী।
হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখেঃ হৃৎপিণ্ডের বাড়তি পেশার এই ফল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। কেননা এতে রয়েছে কিছু বড় বড় উপাদান, যা হৃদপিন্ডের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এমনটি দাবি উঠে এসেছে কিছু বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে।
লেখকের শেষ মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, আমরা এই আর্টিকেলে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করেছি। আশা করছি শুরু থেকে
শেষ পর্যন্ত পড়লে অনেক ভালো লাগবে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে
ধন্যবাদ।
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url