পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়
পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় সম্পর্কে এ ব্লগে বিস্তারিত আলোচনা করব। যারা এ
বিষয়ে জানতে আগ্রহী আমাদের এ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে পারেন।
পাইলস রোগের লক্ষণ সম্পর্কেও আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। জানতে চাইলে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।
পোস্ট সূচিপত্র.
পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়
বর্তমান সময়ে পাইলস একটি সুপরিচিত রোগ। এই রোগ কমবেশি সকলেরই রয়েছে। অনেক
সময় এটি খুব যন্ত্রণাদায়ক হয়ে থাকে। তাই সঠিক সময় এর চিকিৎসা না নিলে জটিল ও
কঠিন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি অপারেশনেরও প্রয়োজন হতে পারে। তাই
অবহেলা না করে এই রোগের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এই রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখতে হবে। জটিল হওয়ার পূর্বেই
এর সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। তাহলে সহজেই পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। আজ আমরা এই ব্লগে
এই রোগ সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। আশা করছি, এটি শুরু
থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে অনেক উপকৃত হবেন।
মুক্তির উপায়
শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিলেঃ শরীরে পানি
শূন্যতা দেখা দিলে অর্শ বা পাইলস রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নিয়মিত
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। মধু ও লেবু একসাথে মিশ্রণ বানিয়ে দিনে অন্তত
দুই থেকে তিনবার সেবন করতে পারেন। এতে পাইলস বা অর্শ রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
তুলসী পাতার রস সেবন করতে পারেনঃ প্রতিদিন সকালে ১০ থেকে ১৫ মিলি তুলসী পাতার রস সাথে স্বাদ অনুযায়ী মধু মিক্স করে সেবন করতে পারেন। এতে পাইলসের ব্যথা উপশম হবে। এবং পাইলস স্বাভাবিক মাত্রায় পৌঁছাবে।
বারবার কোষ্টকাঠিন্য হওয়াঃ খাদ্যাভ্যাসের কারণে বারবার কোষ্টকাঠিন্য হয়। কোষ্টকাঠিন্য হলে, মলদার ফেটে যায় ও রক্তপাত হয়। এটি দ্রুত নিরাময় না করলে পাইলস বা অর্শ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এইজন্য আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা খুবই জরুরী।
আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করাঃ নিয়মিত আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে।
আঁশযুক্ত খাবার যেমন সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, লাল শাক, ইসবগুলের ভুষি, বাদাম বীজ,
পেস্তা দানা, সিমের বিচি, খেসারি ও মসুর ডাল, ছোলা বুট, মটরশুঁটি, বাঁধাকপি,
তোকমা ইত্যাদি আরো আঁশযুক্ত খাবার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবেঃ মসলাযুক্ত খাবারের কারণে পেটের নানান
সমস্যা দেখা দেয়। যেমন বদহজম, আলচার, গ্যাস ইত্যাদি আরও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মূলত এই সমস্যা থেকে প্রথমে শুরু হয় কোষ্ঠকাঠিন্য, তারপর মলদ্বার ফেটে রক্ত বের
হওয়া, এবং তারপর অর্শ বা পাইলস রোগের সূচনা হয়। সুতরাং সর্ব অবস্থায় মসলাযুক্ত
খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
মধু ও দুধের ব্যবহারঃ প্রতিদিন মধু ও দুধ একসাথে পান করতে পারেন। এক গ্লাস
দুধে স্বাদ অনুযায়ী অথবা এক চা চামচ মধু মিক্স করে প্রতিদিন সেবন করতে পারেন এতে
পাইলসের ব্যথা নিরাময় হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম করাঃ নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করতে হবে। যেমন ভার উত্তোলন
করা, দৌড়াদৌড়ি করা, পরিশ্রম করা এবং শরীরের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি করা থেকে বিরত
থাকতে হবে। নিয়মিত এগুলো যোগব্যায়াম করলে পাইলস বা অর্শ রোগ থেকে দ্রুত
মুক্তি পাওয়া যাবে।
টয়লেটের পর ঢিলা কুলুপ ব্যবহার করাঃ টয়লেট করার পর সর্বদায় ৩টি ঢিলা
কুলুপ বা টয়লেট টিস্যু ব্যবহার করতে পারেন। এটা ছিল রাসুল সাঃ এর সুন্নাত। আর
সুন্নাত পালন করলে অবশ্যই পাইলস বা অর্শ রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
বাম পায়ে ভর দিয়ে টয়লেট করাঃ বাম পায়ে ভর দিয়ে টয়লেট করা মূলত রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত। যারা এই সুন্নাত মেনে চলবে তাদের
পাইলস বা অর্শ রোগ হবে না।
পাইলস রোগের লক্ষণ
পাইলস বহুল আলোচিত একটি রোগ। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ এই রোগে ভূগে থাকেন। এটি অনেক
সময় যন্ত্রণার কারণ হয়েও দাঁড়ায়। প্রথমত আমরা কিভাবে বুঝবো যে পাইলস বা অর্শ
হয়েছে। এর কিছু যৌক্তিক কারণ ও লক্ষণ রয়েছে নিম্নে বর্ণনা করা হলো;
পাইলস বা অর্শ সাধারণত দুই ধরনের লক্ষণ হয়ে থাকে
১.. অভ্যন্তরীণ পাইলস
২..
বহিরাগত পাইলস
১.. অভ্যন্তরীণ পাইলস এর লক্ষণ
- মলত্যাগের সময় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব
- টয়লেটের বেগ দিলে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব
- মলত্যাগের সময় রক্তপাত
- মলত্যাগের সময় রক্তপাত হয় কিন্তু ব্যথা হয় না
- টয়লেটের সাথে রক্ত লেগে থাকা
- মলদ্বারের ভিতরে শিরা ফুলে ওঠা
- মলদ্বারের কাছে মাংসের টুকরা বৃদ্ধি
- মলদ্বারের চারপাশে ফুলে ওঠা
- মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি ও লাল হয়ে ওঠা
- বসলে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব
- সর্বদায় অস্থিরতা
- মলদ্বারে রক্তক্ষরণ
- মালদ্বার সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া
বিভিন্ন কারণ জনিত পাইলস রোগ হতে পারে। তবে এটি নির্দিষ্ট ভাবে বলা বহুল্য। নিম্নে এর কয়েকটি বিশেষ কারণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো;
- আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া
- বহুদিন যাবত কোষ্ঠকাঠিন্য
- গর্ভকালীন সময়ে
- টয়লেট কষা হলে
- পায়ুপথে স্ত্রী সহবাস করলে
- বংশগত কারণে
- বার্ধক্য জনিত কারণে হতে পারে
- দীর্ঘ সময় টয়লেট করা
- পুরনো ডায়রিয়া থাকলে
- দীর্ঘদিন আমাশয় থাকলে
- লিভার সিরোসিস হলে
- দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলে
পাইলস এর লক্ষণ ও প্রতিকার
প্রতিকার
অনিয়ম জীবনযাত্রাঃ অনিয়মের কারণে আমাদের পাইলস
হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নিয়মের মধ্যে জীবন পরিচালনা করে সুস্থ থাকায় বেটার
হবে।
মলদ্বারের সমস্যা হলেঃ মলদ্বারে যেকোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের
শরণাপন্ন হওয়া উচিত। রোগের সূচনাতে চিকিৎসা করলে দ্রুত উপশম হয়। তাই
রোগকে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া দরকার।
মলদ্বারে ইনফেকশন হলেঃ মলদ্বারে ইনফেকশন হলে সঙ্গে সঙ্গে কোন ভাল
ব্র্যান্ডের মলম ব্যবহার করতে হবে।
পাইলস এর চিকিৎসা কোথায় ভালো হয়
১.. সরকারি অধ্যাপক ডাক্তার এই.চ এন. এম শফিকুজ্জামান (মলদ্বার ও পায়ুপথ
বিশেষজ্ঞ সার্জন রাজশাহী)
২.. ডাক্তার তামান্না তাসনিম (মলদ্বার ও
পাইপদ বিশেষজ্ঞ সার্জন রাজশাহী)
৩.. ডাক্তার ফারহান ইমতিয়াজ চৌধুরী
(মলদ্বার, পায়ুপথ ও বেস্ট সার্জন বিশেষজ্ঞ সার্জন রাজশাহী)
কি খেলে পাইলস ভালো হয় ?
প্রাকৃতিকভাবে চিরতরে পাইলস থেকে মুক্তি পেতে চাইলে খাদ্যাভাসে আনতে হবে
পরিবর্তন। তাহলে পাইলস বা অর্শ থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া যাবে। নিম্নে কয়েকটি
খাবার ট্রাই করতে পারেন।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন
- টমেটো
- শসা
- লাল শাক
- পালং শাক
- কলমি শাক
- পিয়াজ
- ফুল কপি
- বাঁধা কপি
- সবুজ শাকসবজি
- খনিজ পদার্থ
- আঙ্গুর
- কিসমিস
- আলুর বোখড়া
- আপেল
- কমলা
- বেদানা
- পাকা কলা
- ড্রাগন ফল
- পেয়ারা
- মাল্টা
- পাকা পেঁপে
পাইলস থেকে কি ক্যান্সার হয় ?
হ্যাঁ, পাইলসের কারণে মলদ্বারে মরণব্যাধি ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পাইলসের জন্য এইচ পি ভি নামক সংক্রমিত রোগ দায়ী। এই ভাইরাস যৌনক্রিয়ার মাধ্যমে
সংক্রমিত হয়। এটি ক্যান্সারের কারণ হিসেবে পরিচিত। এর মাধ্যমে ক্যান্সার
সংক্রমিত হয়। প্রাণনাশের হুমকিও রয়েছে। তাই এই রোগের সূচনাতেই দ্রুত চিকিৎসা
নেওয়া উচিত।
পাইলস হলে কি খাওয়া যাবে না ?
- আমিষ জাতীয় খাদ্য যেমন ডিম
- টক জাতীয় খাবার (যেমন তেতুল অথবা তেতুলের আচার ইত্যাদি)
- টক দই
- ধূমপান ও মদ্যপান
- চা অথবা কফি পান
পাইলস হলে কি মাছ খাওয়া যাবে ?
হ্যাঁ, পাইলস হলে মাছ খাওয়া যাবে। কেননা মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পুষ্টি গুনাগুন। মাছ, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পায়খানা নরম ও হালকা করে। এবং কোষ্টকাঠিন্য দ্রুত দূর হয়ে যায়। ফলে পাইলস বা অর্শ হওয়ার চান্স অনেকটাই কমে যায়।
অর্শ হলে কি খাওয়া উচিত ?
অর্শ বা পাইলস হলে সবুজ শাকসবজি, ফাইবার, আইরন ইত্যাদি খাবার বেশি বেশি গ্রহণ করা
উচিত। এ জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে কোষ্টকাঠিন্য থেকে রেহাই পাওয়া যায়। অর্শ বা
পাইলসের জন্য কোষ্টকাঠিন্য দায়ী।
পাইলস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে ?
পাইলস রোগীদের জন্য ডিম খাওয়া উচিত নয়। কেননা ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আমিষ। ডিম কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে। এই জন্য পাইলস রোগীরা খাদ্য তালিকায় ডিম রাখা থেকে বিরত থাকুন।
দুধ খেলে কি পাইলস বাড়ে ?
আমরা জানি দুধ মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী উপাদান। তাই আমরা খাদ্য তালিকায় এই
উপাদানটি প্রতিনিয়ত রাখি। দুধ যেমন খুবই উপকারী তেমনি এর ক্ষতির দিকও রয়েছে।
তবে যারা পাইলস বা অর্শ রোগে ভুগছেন তাদের জন্য ডিম অত্যান্ত ক্ষতি বয়ে আনে।
কারণ ডিম পেটের নানান সমস্যা ঘটাতে পারে যেমন ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা, অম্বল, বদহজম
সহ আরো নানান জটিলতা হতে পারে। তাই পাইলস রোগীদের ডিম এড়িয়ে চলাই উত্তম।
এনাল ফিসার থেকে মুক্তির উপায়
- নিয়মিত পানি পান করা
- খাদ্যাভাস পরিবর্তন করা
- টয়লেট দীর্ঘ সময় চেপে না থাকা
- নিয়মিত হালকা ব্যাম করা
- ইসবগুলের ভুষি সেবন করা
- তোকমা পারিতে ভিজিয়ে খাওয়া
- সবুজ শাকসবজি খাওয়া ইত্যাদি।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, আজ আমরা পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি, এই ব্লগটি সম্পূর্ণ পড়লে উপকৃত হবেন। আমাদের
আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url