গ্যাস্ট্রোলিভার রোগের লক্ষণ
গ্যাস্ট্রো লিভার রোগের লক্ষণ সম্পর্কে আমরা এই আর্টিকেলে আলোচনা করব। যারা এ
বিষয়ে জানতে আগ্রহী অবশ্যই আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার দাওয়াত রইলো।
গ্যাস্ট্রো লিভারের কারণে দেহের নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে। যাই হোক কথা না বাড়িয়ে চলুন মূল আলোচনা করা যায়।
পোস্ট সূচিপত্র.
গ্যাস্ট্রোলিভার রোগের লক্ষণ
গ্যাস্ট্রোলিভার রোগ সম্পর্কে আমাদের দেশে এখনো অনেকেই অজ্ঞ। মানুষের লাইফ স্টাইল
এবং খাদ্যাভাস এর কারণে গ্যাস্ট্রোলিভার এর সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে খাদ্যে
ভেজাল থাকার কারণে অধিকাংশ মানুষের লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই খাদ্য গ্রহণের
পূর্বে ভালোভাবে জেনে বুঝে সতর্কতার সাথে খাওয়াই উচিত।
গ্যাস্ট্রোলিভার হলে বুক জ্বালা পোড়া, হালকা ব্যথা অনুভব, অল্প কাজে
হাঁপিয়ে ওঠা, এবং মনের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ। অনেক সময় এর ব্যতিক্রমও হতে পারে।
তাই লিভারের কোন সমস্যা বুঝতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে
হবে। আজ আমরা এই ব্লগে গ্যাস্ট্রোলিভার সম্পর্কে কিছু কথা আলোচনা করব
ইনশাআল্লাহ।
রোগের লক্ষণ
১.. খাবারে অরুচিঃ লিভারের কোন সমস্যা হলে খাবারের রুচি
নষ্ট হয়ে যায়। এই রোগের সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা না নিলে লিভার আরও ক্ষতিগ্রস্ত
হয়ে যায়। এবং ধীরে ধীরে এর কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের
পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
২.. বমি বমি ভাবঃ লিভারের যেকোনো সমস্যা হলে বমি বমি ভাব হয়, আবার অনেক সময় বমিও হয়। এবং খাবারে অরুচি। শরীর রোগা পাতলা হয়ে যায়। চেহারা অত্যন্ত খারাপ হয়ে যায়। এজন্য এ রোগকে অবহেলা করা উচিত নয়।
৩.. প্রস্রাবের রং পরিবর্তন হতে পারেঃ লিভারের সমস্যার কারণে প্রস্রাবের রং পরিবর্তন হতে পারে। যেমন অনেক সময় হলদে বর্ণের হতে পারে। আবার হালকা লাল বর্ণেরও হতে পারে। পর পর এক সপ্তাহ এরকম সমস্যা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
৪.. পায়খানার রং পরিবর্তন হতে পারেঃ পায়খানার রং স্বাভাবিকের চেয়ে ভিন্নরকম হতে পারে। এবং এটি ধীরে ধীরে আরো বেশি খারাপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৫.. ত্বক ও চোখ হলদে ভাব হওয়াঃ ত্বক ও চোখ হলুদ বর্ণের হলে বুঝতে হবে লিভারের কোন সমস্যা হয়েছে। তবে সব সময় হলদে ভাব হলে যে লিভারের সমস্যা হবে তা কিন্তু নয়। এটি অন্য কিছু হতে পারে। এই রোগ নির্ণয় করার জন্য অবশ্যই সার্জন ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
৬.. পা ও গোড়ালি ফুলে যাওয়াঃ লিভারের সমস্যা হলে পা ও গোড়ালি ফুলে যায় এবং
হালকা ব্যথাও অনুভব হতে পারে।
৭.. পেট ফুলে ওঠাঃ পেট ফুলে ওঠা এটি লিভারের সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। যাদের
লিভারের সমস্যা রয়েছে তাদের পেট ফুলে ওঠে।
৮.. দীর্ঘস্থায়ী পেট ব্যথাঃ লিভারের সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন যাবত পেটে ব্যথা
অনুভব হয়। সুতরাং রোগকে অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৯.. শরীরের ওজন কমে যাওয়াঃ লিভারের সমস্যা থাকলে খাবারে অরুচি হয়। তাই আস্তে
আস্তে শরীর রোগা পাতলা হয়ে যায়।
১০.. শরীরে টক্সিন এর মাত্রা বেড়ে যাওয়াঃ লিভারের কোন প্রকার সমস্যা থাকলে শরীরে টক্সিন এর মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
লিভার বড় হওয়ার লক্ষণ
লিভার বড় বা ফুলে গেলে শরীরের নানান জটিলতা দেখা দেয়। বর্ধিত লিভার দ্রুততার
সাথে চিকিৎসা নিতে হবে। নিম্নে কয়েকটি লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা
হলো;
লিভার বড় বা ফুলে যাওয়ার যৌক্তিক কিছু কারণ
- শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়া
- সকালে বমি বমি ভাব হয় আবার কখনো বমিও হয়
- পায়খানার রং পরিবর্তন হয়
- প্রস্রাবের রং গাঢ় হলদে রং হয়
- কখনো কখনো আবার ত্বকে চুলকানি হয়
- শরীরের ওজন কমে যায়
- শরীর রোগা পাতলা হয়ে যায়
- চেহারা শুকিয়ে যায়
- বুক ব্যথা করা
- পায়ে রস নেবে ফুলে যাওয়া
- অল্প পরিশ্রমে হাপিয়ে ওঠা
- জন্ডিসের উপসর্গ
- কখনো কখনো প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়া
- হজমে সমস্যা হওয়া
লিভার বড় বা ফুলে যাওয়ার কারণ
অধিক মাত্রায় অ্যালকোহল সেবন করলেঃ যারা প্রতিনিয়ত অ্যালকোহল গ্রহণ করে
তাদের লিভার ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এতে কিছু ক্ষতিকার পদার্থ
রয়েছে, যা লিভারের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। এতে লিভার আস্তে আস্তে ড্যামেজ
হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই অ্যালকোহল সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে।
লিভার ক্যান্সার হলেঃ মূলত আগে লিভারে ক্যান্সার হয় না। প্রথমে অন্য কোন
অঙ্গে সমস্যা হলে, আস্তে আস্তে লিভারে ছড়িয়ে যায়। তারপর লিভার ক্যান্সারে রূপ
নেয়। তাই এটি দ্রুত নিরময় করতে হবে।
বিষাক্ত হেপাটাইটিস আক্রমণ করতে পারেঃ বিষাক্ত হেপাটাইটিস প্রথমে লিভারের
উপর আক্রমণ করে। ফলে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এবং আস্তে আস্তে এর
কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। তাই হেপাটাইটিস দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
লিভারের রোগ নির্ণয় করা
লিভারের রোগ নির্ণয় করার জন্য ভালো কোন এমবিবিএস এবং সার্জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের
পরামর্শ নিতে হবে। কিছু চেকআপের মাধ্যমে লিভারের কোন সমস্যা আছে কিনা তা জানতে
পারবেন। নিম্নে তা বর্ণনা করা হলো;
- এন্ডোসকপির মাধ্যমে নির্ণয় করা
- আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে পেটের অন্যান্য অঙ্গ পরীক্ষা করা
- পেটের এক্সরে করে অন্যান্য অঙ্গের এমাইজিং পরীক্ষা করা
- পেটে বিশেষ কিছু অঙ্গের বিস্তারিত চিত্রের জন্য এমআরআই করা
ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুনঃ রক্তে যদি শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি
পায় তাহলে ফ্যাটি লিভার হতে পারে। তাই কম চিনি যুক্ত খাবার খেতে হবে। পর্যাপ্ত
পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবেঃ শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে ফ্যাটি লিভার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সর্বদাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবেঃ সকালবেলা নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়াম
করার ফলে শরীরের কোষগুলো সচল থাকে এবং দ্রুত রক্ত চলাচল হয়। তাই শরীর সতেজ ও
সুস্থ রাখতে ব্যায়ামের ভূমিকা অপরিসীম। সঠিক নিয়মে ব্যায়াম করলে ফ্যাটি
লিভারের যন্ত্রণাদায়ক কষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
খাদ্য তালিকায় সবুজ শাকসবজি রাখতে হবেঃ অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার গ্রহণ
করলে শরীরে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। কেননা মাছ, মাংসতে রয়েছে প্রচুর
পরিমাণে চর্বি। তাই এগুলো খাবার এড়িয়ে চলুন। এবং সুস্থ থাকতে চাইলে খাদ্য
তালিকায় নিয়মিত সবুজ শাক সবজি রাখুন।
নেশা দ্রবীয় এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুনঃ নেশা দ্রবীয় যতগুলো উপকরণ রয়েছে সবকটি মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সুস্থ থাকতে চাইলে এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
ডাল ও বীজ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করাঃ ডাল জাতীয় খাদ্য যেমন মসুর, খেসারি,
এংকার ডাল ইত্যাদি। বীজ জাতীয় খাদ্য যেমন মটরশুঁটি, বাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তা,
আখরোট, সিমের বীজ, ছোলা বুট ইত্যাদি। এইগুলো খাবার নিয়মিত গ্রহণ করতে হবে।
লিভার ইনফেকশনের লক্ষণ
জ্বর অনুভবঃ লিভারের জটিলতার কারণে রাত্রি বেলায় শরীরে প্রচন্ড মাত্রায়
জ্বর আসতে পারে। এটি দিন দিন প্রকোপ হতে পারে। এমনটা হলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ
ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
পেট দ্রুত ফোলে উঠেঃ লিভারের ইনফেকশনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো পেট দ্রুত
ফুলে ওঠা। এবং পেটে প্রচন্ড ভাবে ব্যথা অনুভব করা। দীর্ঘদিন যাবত পেট ব্যাথা হলে
অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
পায়ের গোড়ালি ফোলা এবং পায়ে রস নামাঃ ফ্যাটি লিভারের আরো একটি অন্যতম কারণ হলো পায়ের গোড়ালি ফোলা এবং পায়ে পানি বা রস নামা।
হঠাৎ ওজন কমে যাওয়াঃ লিভার ইনফেকশন হওয়ার কারণে খাবারে অরুচি হতে পারে।
এজন্য দ্রুত ওজন হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে রোগী অল্প কিছুদিনের মধ্যেই
রোগা পাতলা এবং চিকন হয়ে যান। সুতরাং লিভার ইনফেকশন হলো একটি মরণব্যাধি রোগ। তাই
এই রোগ অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। সঠিক চিকিৎসা নিলে দ্রুত ভালো হবে
ইনশাআল্লাহ।
পেটের ডান পাশে ব্যথা হতে পারেঃ লিভার যখন ক্ষতিগ্রস্ত অথবা ইনফেকশন হয়।
তখন পেটের বাম পাশে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয়। তাই ব্যথা অনুভব হলে কিছু পরীক্ষার
মাধ্যমে আপনার লিভার চেকআপ করে নিন।
শরীরে চুলকানিঃ লিভারের সমস্যা থাকলে গায়ে এলার্জি বা চুলকানির প্রকোপ হতে পারে। এই চুলকানি শরীরে চাকা চাকা হয়ে ভেসে ওঠে।
লিভার ক্যান্সার লক্ষণ
- মুখ দিয়ে রক্ত বমি ওঠে
- বমি বমি ভাব হয়
- শরীর ক্লান্তি অনুভব আসে
- ওজন কমে যাওয়া
- শরীরে অস্থিরতার ভাব বিরাজ করে
- পেট ফোলা
- ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া
- ওজন কমে যাওয়া
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, আজ আমরা গ্যাস্ট্রোলিভার রোগের লক্ষণ সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করার
চেষ্টা করেছি। অবশ্যই লিভার সংক্রান্ত সকল রোগ গুরুত্বসহকারে চেকআপ করে নিতে হবে
এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মেডিসিন সেবন করতে হবে। আমাদের
আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url