মাল্টার উপকারিতা - মাল্টা ফলের অপকারিতা

আমরা মাল্টার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। যারা জানতে আগ্রহী তাদেরকে এই ব্লগটি পড়ার অনুরোধ রইলো।

মাল্টার উপকারিতা

মাল্টা ফলের অপকারিতা সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। তাই এ ব্লগটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।

পোস্ট সূচিপত্র.

মাল্টার উপকারিতা

আমরা জানি, মাল্টা অনেক সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। এটি মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। মাল্টাতে রয়েছে ভিটামিন সি এর বড় একটি উৎস। যা আমাদের দেহের বিভিন্ন পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে থাকে। নিম্নে এ সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করা হলো;

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে: নিয়মিত মাল্টা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। যেমন ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকার। কেননা মাল্টাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা ত্বক সুস্থ এবং ভালো রাখতে অতুলনীয়। ত্বকের ব্রণ এবং পদাহ দ্রুত নিরাময় করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধকারী: মালটাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা মানব দেহের ক্যান্সার প্রতিরোধকারী। একদল চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন মাল্টা ফল কোমল ক্যান্সার এবং ব্রেস্ট (মহিলাদের স্তন) ক্যান্সার থেকে মুক্তি দেয়। মাল্টাতে আরো রয়েছে পেকটিন নামক এক ধরনের ফাইবার। এটিও কোমল ক্যান্সার প্রতিরোধকারী।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে: মাল্টা নিয়মিত খেলে শরীরের ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে। মাল্টাতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, যা দ্রুত ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে। এবং এই ফল মানব দেহের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দ্রুত ধ্বংস করতে সক্ষম। এই ফল রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: মাল্টা নিয়মিত খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে, নিয়মিত মাল্টা খেলে যেমন ঠোঁট ফাটা, ঠোঁটের কোনা ফাটা, মুখে ও জিহ্বায় ঘা, গাল ফেটে যাওয়া ইত্যাদি। এগুলো রোগ দ্রুত নিরাময় করে। কেননা মাল্টাতে রয়েছে ভিটামিন সি এর একটি প্রধান উৎস।

পাকস্থলী সুস্থ রাখতে: মাল্টা পাকস্থলী সুস্থ রাখতে কাজ করে। এটি পেটের আলচার এবং গ্যাস্ট্রিক দ্রুত নিরাময় করে। হজম শক্তি বৃদ্ধি করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: এই ফল নিয়মিত খেলে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে উচ্চ রক্ত দেখা দেয় না। এবং সেটা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ হয়। এজন্য নিয়মিত খাদ্য তালিকায় পরিমাণ মতো মাল্টা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

মাল্টা ফলের অপকারিতা

পেটে গ্যাস্ট্রিক হতে পারে: অনেক সময় মাল্টা খাওয়ার কারণে পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের পূর্বে থেকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তাদের এই ফল এড়িয়ে চলাই ভালো হয়।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মাল্টা অত্যন্ত উপকারী ফল। কিন্তু অনেক সময় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভয়ঙ্কর এর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সেবনের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ট্রাই করা উচিত।

খালি পেটে খাওয়া যাবেনা: মাল্টার জুস খালি পেটে খাওয়া ঠিক নয়। কেননা অনেক সময় এটি এসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। যা বিরক্তের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই এর জুস খালি পেটে খাওয়া ঠিক নয়। তবে সামান্য পরিমাণে পান করা যেতে পারে।

ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে: মাল্টাতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। তাই মাল্টা লাভের আশায় অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়।

এলার্জির সমস্যা হতে পারে: মাল্টা খাওয়া শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকার। এই ফল বেশি পরিমাণে খেলে শরীরে এলার্জির প্রকোপ দেখা দিতে পারে। তাই যাদের এলার্জির সমস্যা আছে তারা এই ফল অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

মাল্টা খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে

হ্যাঁ, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মাল্টা এবং তার জুস খাওয়া যাবে। এই ফলে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং গ্লাইসেমিক নামক কিছু উপাদান। এইগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য দারুন উপকারী।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো উপকার পাওয়া যায় মাল্টার জুসে। একদল চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন। তারা বলেন মাল্টার চেয়ে এর জুসের ভালো উপকার পাওয়া যায়। এবং এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকার।

মাল্টার খোসার উপকারিতা

১.. প্রথমে মাল্টার খোসা পিষে অথবা ব্লেন্ডারে চূর্ণ করে নিতে হবে তার মধ্যে যুক্ত করতে হবে এলোভেরা জেল। তারপর এই মিশ্রণটি ভালোভাবে মিক্সড করতে হবে। এটি ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের সৌন্দর্য এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।

২.. প্রথমে মাল্টার খোসা চূর্ণ করে নিতে হবে তারপর সামান্য পরিমাণে গোলাপজল মিক্সড করে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। এই পেস্টটি ভালোভাবে মুখে লাগিয়ে নিন এবং ১০ থেকে ১২ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর করবে।

৩.. মালটার খোসার চূর্ণ এবং টক দই একসাথে মিক্সড করে একটি ব্যাগ তৈরি করতে হবে। এই উপকরণটি মুখে লাগিয়ে অন্তত ১৫ মিনিট ওয়েট করতে হবে। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর হবে।

মাল্টা খেলে কি ওজন বাড়ে?

মাল্টা খেলে ওজন বাড়ে না। বরং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। কেননা এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। ফলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমে যায়। তাই খিদের প্রবণতা কমে যায় এবং ঘন ঘন খাওয়া থেকে বিরত রাখে।

সবুজ মাল্টার উপকারিতা

  1. গর্ভের শিশুর অত্যন্ত উপকারী সবুজ মাল্টা। এতে রয়েছে ভিটামিন সি, যা শিশুর মস্তিষ্ক ত্বরান্বিত করতে দারুন ভূমিকা রাখে। এজন্য গর্ভবতী নারীকে পরিমাণ মতো মাল্টা খাওয়ানো খুবই জরুরি। মা এবং শিশুর উভয়েরই অনেক উপকারে আসে।
  2. সবুজ মাল্টা চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে দারুন কার্যকারী। কেননা এতে রয়েছে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং আরো রয়েছে ভিটামিন এ, যা দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে ভালো কাজ করে থাকে। তাই এই গুলো খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।
  3. পাকস্থলীকে সুস্থ রাখতে সবুজ মাল্টার ভূমিকা অপরিসীম। এই মাল্টাতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফাইবার, যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দ্রুত রেহাই পাওয়া যায়। এবং এতে আরো রয়েছে পটাশিয়াম, যা পাকস্থলীর ক্রিয়া সচল রাখে।
  4. সবুজ মাল্টা ব্লাড প্রেসার কমাতে সাহায্য করে। কেননা এতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। শুধু তাই না এতে ওজন ও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

প্রতি ১০০ গ্রাম মাল্টাতে পুষ্টিগুন রয়েছে

ভিটামিন সি ৫৩ মিলিগ্রাম
চর্বি  ০.১ গ্রাম
ফাইবার ২ গ্রাম
প্রোটিন ১ গ্রাম
ক্যালরি ৪৭ গ্রাম
আয়রণ ০.১ গ্রাম 
পটাসিয়াম ১৯৫ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ১২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৬   ০.১ মিলিগ্রাম

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, আজ আমরা মাল্টার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। কোন বাক্যে ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে “ধন্যবাদ’’।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url