লাল শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
এই ব্লগে শাকের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। আগ্রহী ব্যক্তিরা এই
আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে পারেন।
লাল শাকের অপকারিতার বিষয়ও আলোচনা করা হবে। তাই ধৈর্য নিয়ে পড়ার অনুরোধ রইলো।
পোস্ট সূচীপত্র.
লাল শাকের উপকারিতা
লাল শাক আমাদের সকলের কাছে একটি পরিচিত উদ্ভিদ। লাল শাক খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি
এটি পুষ্টিগুণেও ভরপুর। বর্তমান সময়ে ৪০ থেকে ৪৫ বৎসর পার হলই লক্ষ্য করা যায়
শরীরে নানান রকম রোগ বালাই বাসা বেধেছে। রোগ নিরাময়ে লালশাক একটি গুড অপশন হতে
পারে। এ সম্পর্কে নিম্ন আলোকপাত করা হলো;
হার্ট ভালো রাখ: লাল শাকে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এই শাক সাপ্তাহে দুই থেকে তিনবার খেতে পারেন। এটি হার্টের জন্য খুবই উপকারী। এই শাক হার্ট অ্যাটাক এর ঝুঁকি কমায়।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: লাল শাকে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট
এবং ভিটামিন সি, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এজন্য
প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় শাকসবজি রাখা খুবই জরুরী।
শরীরের রক্তশূন্যতা বাড়াতে পারে: লাল শাক নিয়মিত খেলে রক্তের লোহিত
কণিকা বৃদ্ধি পেতে পারে। কেননা এতে রয়েছে আয়রনের বড় একটি অংশ। তাই এই শাক
নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য: গর্ভবতী মায়েদের জন্য লাল শাক অত্যন্ত উপকারী।
এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং নানান পুষ্টিগুন, যা গর্ভবতী মা এবং নবজাতকের জন্য
খুবই উপকারী। তাই নিয়মিত গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকায় এই শাক রাখা যেতে
পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: লাল শাক ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য
করে। কেননা এটি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই এই
উদ্ভিদটি রক্তে গ্লুকোজ এর মাত্রা কমায়।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে: নিয়মিত লাল শাক খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। কেননা
এতে রয়েছে উচ্চ মানের ফাইবার বা আঁশ, যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। এবং কোষ্ঠকাঠিন্য
থেকে দ্রুত মুক্তি দান করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে: যাদের ওজন বেড়ে গিয়েছে তারা নিয়মিত কয়েকদিন লাল
শাক খেতে পারেন। এই শাক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এতে উপস্থিত কিছু
ফাইবার থাকার কারণে বারবার খাওয়ার ইচ্ছে থাকে না। তাই ওজন বাড়ারও কোন সম্ভাবনা
থাকে না।
কিডনি সুস্থ রাখে: লাল শাক নিয়মিত খেলে কিডনির যাবতীয় সমস্যা থেকে
সুরক্ষিত রাখে। প্রস্রাব পরিষ্কার রাখে এবং কিডনি সুস্থ রাখতে দারুন ভূমিকা
রাখে।
দাঁত ও হাড় মজবুত করে: লাল শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও
ম্যাগনেসিয়াম, যা শরীরের হাড় মজবুত করে এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। আর দাঁতকে খুব
শক্তিশালী এবং মজবুত করে তোলে।
শরীরের খারাপ টক্সিন দূর করে: লাল শাক শরীরের খারাপ টক্সিন দ্রুত অপসারণ
করে। এবং শরীরে এক ধরনের কোষ তৈরি করে, যা ক্যান্সার বিরোধী। এতে শরীরে ক্যান্সার
রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
লাল শাকের অপকারিতা
হজমে সমস্যা হতে পারে: গর্ভবতী মহিলা লাল শাক লাভের আশায় অতিরিক্ত খেলে
হজমে সমস্যা হতে পারে। এতে গর্বের সন্তানের সমস্যা হতে পারে। তাই এই শাক পরিমাণের
চেয়ে বেশি খাওয়া যাবে না।
লিভার ও হৃদরোগের সমস্যা হতে পারে: যাদের পূর্বে থেকেই হৃদরোগ এবং লিভারের
সমস্যা রয়েছে তারা এই শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কেননা এটি আরো সমস্যা
বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ঘুমের সমস্যা হতে পারে: এই শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রনের
প্রাদুর্ভাব, যা রাতে ঘুমের সমস্যা ঘটাতে পারে। তাই এই শাক খাওয়ার পূর্বে
সাবধানতা অবলম্বন করা খুবই জরুরী।
রাতে খেলে সমস্যা হতে পারে: লাল শাক রাতে খেলে পেটে নানান সমস্যা হতে
পারে। কেননা এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফাইবার, যা অতিরিক্ত খেলে পরিপাকতন্ত্রের
গন্ডগোল হতে পারে। তাই এই শাক সাবধানতার সাথে খাওয়াই উচিত।
এলার্জির সমস্যা হতে পারে: এই শাক খেলে অনেক সময় এলার্জির প্রকোপ হতে
পারে। তাই এটি খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হতে হবে।
এসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে: লাল শাক খাওয়ার কারণে অনেক
সময় পেটে এসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। কারণ লাল শাক পেটে হজম
শক্তির ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এতে পাতলা পায়খানা, ডায়রিয়া, পেট ব্যথা ইত্যাদি
হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
১০০ গ্রাম লাল শাকে পুষ্টিগুন রয়েছে
প্রোটিন ৫.৩৫ মিলিগ্রাম
খনিজ পদার্থ ১.০৭ মিলিগ্রাম
ক্যারোটিন
১১.৯৫ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি ৪২.৯০ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি২ ০.১৩
মিলিগ্রাম
চিনি ৪.৯৫ মিলিগ্রাম
খাদ্য শক্তি/ ক্যালরি
৪৫ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ৩৭৫ মিলিগ্রাম
আমিষ ৫.৩ গ্রাম
শর্করা ৫.০
গ্রাম
চর্বি ০.৫ গ্রাম
জলীয় অংশ ৮৮.০ গ্রাম
লাল শাক খাওয়ার নিয়ম
লাল শাক সুস্বাদু করে রান্না করলে দারুন লাগে। নিম্নে লাল শাকের রেসিপি সম্পর্কে
আলোকপাত করা হলো;
প্রথমে ভাজি করে খেতে পারেন
- লাল শাক সাইজ মত কেটে পিয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচ, হলুদের গুড়া, সরিষার তেল, লবণ ইত্যাদি যোগ করে ভাজি করতে পারেন।
- লাল শাক, শুকনো মরিচ, সরিষার তেল, লবণ, পাঁচফোড়ন ইত্যাদি যোগ করে ভাজি করতে পারেন।
- লাল শাক, ছোট আলু, নারিকেল কোরা, লবণ, কালিজিরা, চিনি, সরিষার তেল ইত্যাদি যোগ করে ভাজি করতে পারে না।
- লাল শাক, আলু, চিংড়ি মাছ, শুকনা মরিচ, রসুন, পেঁয়াজ, লবণ, হলুদের গুড়া, সরিষার তেল ইত্যাদি যোগ করে রান্না করতে পারেন।
- লাল শাক, চীনাবাদাম ভাজা, নারিকেল কোরা, জিরা, পেস্তাদানা, কাঁচা মরিচ, শুকনো মরিচ, লবণ, সরিষার তেল ইত্যাদি যুক্ত করে ভর্তা বানাতে পারেন।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, আজ আমরা লাল শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এটি পাঠ করলে অনেক উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ। তাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল। এবং ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। সম্পর্ণ পোস্ট পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url