মসুর ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা
মসুর ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা এই ব্লগে বিস্তারিত জানতে পারবো।
আগ্রহী ব্যক্তিরা এই ব্লগটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে পারেন।
মসুর ডাল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় সম্পর্কে আমরা এই ব্লগে বিস্তারিত জানতে পারবো। তাই এটি পাঠকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
পোস্ট সূচীপত্র.
মসুর ডালের উপকারিতা
বাঙালিদের প্রিয় খাবারের মধ্যে একটি হল মসুর ডাল। ভাতের সাথে ডাল না খেলে ভালো
লাগে না। এতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। মুসুর ডালে যেমন উপকার রয়েছে এবং তার
কিছু অপকারিতা রয়েছে। নিম্নে মসুর ডাল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
(১) উচ্চমাত্রার ফাইবার রয়েছে: মুসুর ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার।
যা পেট পরিষ্কার করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দ্রুত নিরাময় করে। যাদের
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিনিয়ত মসুর ডাল খাদ্য তালিকায়
অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
(২) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: মসুর ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি করে। এবং
মানব দেহের ক্যান্সার ও হৃদরোগের সমস্যা থেকে দ্রুত রেহাই মিলতে পারে।
(৩) ক্যান্সার প্রতিরোধকারী: মসুর ডাল ক্যান্সার প্রতিরোধকারী উপকরণ। এতে
এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে দ্রুত কাজ করে। একদল বিশেষজ্ঞরা
মন্তব্য করেছেন মুসুর ডাল কোমল মাত্রার ক্যান্সার প্রতিরোধকারী। এটি শরীরের ফ্রি
রেডিক্যাল থেকে দ্রুত মুক্তি দেয়। এবং ক্যান্সারের মত দুরারোগ্য নিরাময় হয়।
(৪) বার্ধক্য রোধ করে: মসুরের ডাল নিয়মিত পাতে তুললে বার্ধক্য রোধ করতে সক্ষম। এতে রয়েছে এন্টি এজিং, যা বয়সের বার্ধক্য দ্রুত নিরাময় করে। তাই প্রতিনিয়ত মসুর ডাল পাতে তুলতে পারেন।
(৫) গর্ভকালীন সময়: মসুর ডাল গর্ভবতী মায়েদের শরীরে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে। তাই গর্ভবতী মাদের সুস্থ রাখতে প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় মসুর ডাল অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এবং গর্ভকালীন সময় মায়েদের আরো একটি বড় সমস্যা হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। এই খাদ্য খেলে দ্রুত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
(৬) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: মসুর ডাল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে
সাহায্য করে। এই খাদ্য রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। তাই
প্রতিদিন ডায়াবেটিস রোগীরা এই উপাদানটি খাদ্য তালিকায় যোগ করতে পারেন।
(৭) খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সক্ষম: শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে মসুর
ডালের ভূমিকা অপরিসীম। মসুর ডাল শরীর সুস্থ এবং সবল রাখতে খুবই উপকারী। এটি দ্রুত
শরীরে মিশে গিয়ে অক্সিজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
(৮) ওজন নিয়ন্ত্রণ করে: মসুর ডালে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা দীর্ঘ সময়
খিদের ভাব কাটিয়ে রাখতে পারে তাই বেশি খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। এজন্য অতিরিক্ত
ওজন বৃদ্ধি পায় না। এটি বিপাকক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে। ফলে হজম শক্তি
বৃদ্ধি পায়।
(৯) হাড় ও দাঁতের ক্ষয় রোধ করে: মসুর ডাল হাড় ও দাঁতের ক্ষয় রোধ করে।
কেননা এতে রয়েছে ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি, যা হাড় ও দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। এবং
এইগুলো ভিতর থেকে শক্তিশালী ও মজবুত করে তুলে।
মসুর ডালের অপকারিতা
১/ এলার্জির সমস্যা হতে পারে: অতিরিক্ত পরিমাণে মসুর ডাল সেবন করলে
এলার্জির প্রবলেম হতে পারে। যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা এই ডাল খাওয়া
থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা মসুর ডাল খাওয়ার কারণে এলার্জির সমস্যা প্রকোপ হতে
পারে।
২/ হজম শক্তি হ্রাস পেতে পারে: মসুর ডাল অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করলে অনেক
সময় হজম শক্তি হ্রাস পেতে পারে। কেননা এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লেকটিন, যা
মানব দেহের হজম শক্তি নষ্ট করে দিতে পারে। তাই এটি খাওয়া অনেক সময় বিপদজনক হতে
পারে।
৩/ কিডনির সমস্যা হতে পারে: যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে। তাদের মসুর ডাল
খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা এটি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে অক্সালেট এর
পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। এটি বেড়ে গেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা
রয়েছে। তাই মসুর ডাল খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করাই জরুরি।
৪/ ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে: মসুর ডাল অতিরক্ত পরিমাণে খেলে
শরীরের ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে। এবং এই ডাল খাওয়ার জন্য জয়েন্টের
ব্যথার পরিমাণ বাড়াতে পারে। তাই এটি খাওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ মতে
খাওয়া উচিত।
৫/ গ্যাসট্রিকের সমস্যা হতে পারে: মসুর ডাল অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার কারণে পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। তাই এই খাবারটি অতিরিক্ত গ্রহণ না করাই উচিত।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: যাদের এ সমস্যাগুলো নাই তারা মসুর ডাল খেতে পারেন। তবে
পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। এতে বিপরীত হতে পারে। তাই সাবধানতার
সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এই ডাল খাওয়া উচিত।
মসুর ডাল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
১.. ২/৩ চা চামচ পরিমাণ মসুরের ডাল সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর সকাল বেলা ভেজা ডাল ভালোভাবে বেটে নিতে হবে। এরপর এর সাথে গাভীর কাঁচা দুধ ২/৩ চা চামচ পরিমান ভালোভাবে মিক্সড করে নিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। এই পেস্ট সমস্ত মুখে লাগিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট মুখে রাখতে হবে। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে আলতোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
২.. ১০০ গ্রাম মসুরের ডাল এবং ১০০ গ্রাম গাভীর খাঁটি দুধে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালবেলা মসুরের ডাল ভালোভাবে বেটে নিতে হবে। এবং তার সাথে আরো যুক্ত করতে পারেন ৫০ গ্রাম চন্দন পাউডার এবং কমলার খোসার গুড়া। এরপর এই তিন মিশ্রণ একসাথে মিক্সড করে মুখে লাগাতে পারেন। এতে ত্বক উজ্জ্বল এবং ত্বকের অবাঞ্ছিত লোম দূর হয়ে যাবে।
৩.. ৫০ গ্রাম মসুর ডাল সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। এবং সকালবেলা ভালোভাবে বেটে নিন। তার সাথে যুক্ত করতে পারেন এক চা চামচ পরিমাণ গাভীর ঘাঁটি দুধ এবং অলিভ অয়েল তেল। এই তিন উপকরণ একসাথে মিক্সড করে মুখে লাগাতে পারেন। আর ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে মুখের শুষ্ক ভাব দূর হয়ে যাবে।
৪.. এক চা চামচ পরিমাণ মসুরের ডাল বেটে নিতে হবে। তারপর তার সাথে এক চা চামচ পরিমাণ মধু ভালোভাবে মিক্সড করে নিতে হবে। এই পেষ্টটি মুখে ব্যবহার করতে পারেন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট মুখে রাখতে হবে। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে স্কিনের ময়লা দূর হবে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
৫.. এক চা চামচ পরিমাণ মসুর ডাল বেটে নিন, এক চা চামচ পরিমাণ বেসন, এক চা চামচ পরিমাণ চাউলের গুড়া, এই তিন উপকরণ ভালো করে মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এর সাথে ৩/৪ ফোঁটা অলিভ অয়েল তেল মিক্সড করতে হবে। এইভাবে এই মিশ্রণটি মুখে মাখাতে হবে। ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে মুখের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার হবে।
আলু ও মসুর ডালের ফেসপ্যাক
আলু ও মসুর ডালের ফেসপ্যাক তৈরি করতে চাইলে চাইলে বেশ কয়েকটি উপকরণ লাগবে।
নিম্নে তা আলোচনা করা হলো;
আলুর রস ২ চা চামচ, মুলতানি মাটির গুড়া এক চা চামচ, গোলাপজল দুই চা চামচ। এই তিন
উপকরণ একসাথে ভালো করে মিক্সড করে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করা যেতে
পারে। এইগুলো ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনবে এবং ত্বক অনেক সুন্দর হবে।
১০০ গ্রাম মসুর ডালে রয়েছে
- প্রোটিন ২৫ গ্রাম
- আয়রন ৪.৮ মিলিগ্রাম
- ক্যারোটিন ২৭০ মাইক্রো গ্রাম
- খনিজ পদার্থ ২.২ গ্রাম
- চর্বি ০.৭ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম ৬৯ মিলিগ্রাম
- ফাইবার ০.৭ গ্রাম
- শর্করা ৫৯ গ্রাম
- ভিটামিন বি২ ০.৫০ গ্রাম
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে মসুর ডাল
প্রথমে ৫০ গ্রাম মসুরের ডাল বেটে নিতে হবে, এরপর বেসন ২০ গ্রাম, ৪০ গ্রাম দুধ, ভালো ভাবে পেষ্ট তৈরি করতে হবে। এই পেষ্টটি ভালোভাবে সমস্ত মুখে মাখতে হবে। এরপর ১৫ থেকে ২০ মিনিট মুখে রাখতে হবে। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এইভাবে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন ব্যবহার করলে আশা করা যায় ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হবে।
ব্রণের দাগ দূর করতে মসুর ডাল
মুখের ব্রণের দাগ দূর করার জন্য প্রয়োজন ১০০ গ্রাম মসুর ডাল বাটা, ২০ গ্রাম চন্দন কাঠের গুড়া, এক চা চামচ পরিমাণ গাভীর খাঁটি দুধ, কমলার খোসার গুড়া। এ কয়েকটি উপকরণ একত্রে ভালোভাবে মিক্সড করতে হবে। এটি ত্বকে ব্যবহার করে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখতে হবে। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি ব্রণের জন্য দারুন উপকারী।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, আজ আমরা মসুর ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত
আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এটি পাঠ করে নিশ্চয়ই আপনি উপকৃত হয়েছেন। যদি
আমাদের এই ব্লগটি ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
“ধন্যবাদ’’
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url