জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব
জন্ডিস হলে কি ওষুধ খাব? সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
যারা এ বিষয়ে জানতে আগ্রহী তাদেরকে আমাদের এই আর্টিকেল সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ
রইল।
জন্ডিস হলে কি খেতে হয় সে সম্পর্কেও আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই সম্পূর্ণ কন্টিনিউ করার জন্য অনুরোধ করা হইল।
পোস্ট সূচিপত্র.
জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব
আয়রন জাতীয় খাবার খেলে অ্যানিমিয়া নামক খাবার গ্রহণের মাধ্যমে জন্ডিস ভালো করা হয়। হেপাটাইটিস চিকিৎসার মাধ্যমে জন্ডিস রোগও নিরাময় করা হয়। হেপাটাইটিস এমন একটি রোগ, যা প্রথমে লিভার অ্যাটাক করে তারপর ক্যান্সারে রূপ নেয়।
জন্ডিস হলে ঘরোয়া চিকিৎসা
জন্ডিস একটি মারাত্মক ও ঝুঁকিপূর্ণ রোগ। এই রোগ প্রথমে লিভারের কার্যক্ষমতা ধীরে
ধীরে নষ্ট করে দেয়। তারপর লিভার ক্যান্সারের রূপ নেয়। এজন্য এই রোগকে অবহেলা না
করে সঠিক সময়ের চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ থাকতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় কিছু ঘরোয়া
চিকিৎসা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো;
ভিটামিন সি যুক্ত খাবার গ্রহণ: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলমূল যেমন, মাল্টা, লেবু, কমলাসহ টক জাতীয় ফল বেশি বেশি গ্রহণ করা। তাহলে জন্ডিসের ভাইরাস দ্রুত নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবং ফ্রি রেডিক্যাল লিভারের ক্ষতি থেকে দ্রুত রক্ষা করে। এজন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে।
বিশ্রাম নেয়া: জন্ডিস যখন লিভারকে অ্যাটাক করবে তখন বেশি বেশি বিশ্রাম নিতে হবে। এবং হার্ডওয়ার্কিং থেকে একদম বিরত থাকতে হবে। নিয়মিত কয়েকদিন বিশ্রাম নিলে আশা করা যায় জন্ডিস দ্রুত নিরাময় হবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন: জন্ডিস ধরা পড়লে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি
পান করতে হবে। কেননা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন বের
করে ফেলে। এবং শরীর হাইড্রেট থাকে।
স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন: স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন ফলমূল, শাকসবজি এবং
শস্য জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। এক কথায় বলা যেতে পারে সুষম জাতীয় খাদ্য
গ্রহণ করতে হবে। চর্বি ও ফ্যাটিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এই খাদ্যগুলো
জন্ডিসের হাত থেকে আপনাকে রক্ষা করতে পারে।
অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন: অ্যালকোহল জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা
অ্যালকোহলের কারণে লিভারের জটিলতা বেড়ে যেতে পারে। তাই এগুলো এড়িয়ে চলা খুবই
জরুরী।
ধমপান থেকে বিরত থাকতে হবে: ধুমপান থেকে সর্বদায় বিরত থাকতে হবে। কেননা ধূমপান লিভারের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর ধোয়ার কারণে লিভারে নানান জটিল ও কঠিন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
ভাজা ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা: জন্ডিসের উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই
ভাজা ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। নইলে লিভারে আরো নানান জটিলতা দেখা
দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।
ভারী মসলা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা: ভারী মসলা জাতীয় খাবার খেলে লিভারে
সমস্যা হতে পারে। এজন্য ভারী মসলা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।
জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার
জন্ডিসের লক্ষণ উল্লেখ করা হলো;
- শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া
- কখনো কখনো রক্ত বমি হওয়া
- পেট ব্যথাও হতে পারে
- শরীরে জ্বর জ্বর ভাব হতে পারে
- পায়ে পানি এসে ফুলে যাওয়া
- পায়খানার রং কালো হয়
- শরীরে এলার্জি বৃদ্ধি পায়
- চোখের সাদা অংশ হলুদ বর্ণের হয়
- শরীর ফেকাশে ও ক্ষীণ হয়ে যায়
- বমি বমি ভাব হতে পারে
- খাবারের অরুচি হতে পারে
জন্ডিসের প্রতিকার;
- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এড়িয়ে চলা
- খাবারে পরিচ্ছন্নতা বোঝায় রাখা
- বিশুদ্ধ পানি পান করা
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা
- অ্যালকোহল ও নেশা জাতীয় সকল বস্তু পরিহার করা
- বাজারের খোলাখাবার বর্জন করা
- শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলা
জন্ডিস হলে কি খেতে হয়
সবুজ শাক সবজি খাওয়া যেতে পারে: পরিপাকতন্ত্রের জন্য সবুজ শাকসবজি অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। এইগুলো হজমে দারুন উপকারি। লিভারের সমস্যা নিরাময়ের জন্য সবুজ শাকসবজি প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
পেঁপে ও তরমুজ: জন্ডিস হলে ঘরোয়া ভাবে পেঁপে আর তরমুজ নিয়মিত খাদ্য
তালিকায় রাখতে পারেন। এই ফলগুলো পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং শরীরের হাইড্রেটিং চাহিদা
পূরণ করে। যা জন্ডিস রোগীর জন্য খুবই উপকারী।
টমেটো এবং চাল কুমড়া: টমেটো এবং চাল কুমড়া লিভারের জন্য অত্যন্ত উপকারী
ফল সমূহ। এইগুলো লিভারের জন্য পুষ্টি সমৃদ্ধ। এই ফলগুলো পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ
রাখতে দারুন ভাবে কাজ করে থাকে।
আদা এবং রসুন: জন্ডিস রোগের জন্য আদা এবং রসুন খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে। কেননা এইগুলো উপকরণ শরীরের প্রদাহ নিরাময় করে।
গাজর খেতে পারেন: গাজর জন্ডিস রোগীর জন্য খুবই উপকারী।
সাইট্রাস ফল অর্থাৎ লেবু: লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা জন্ডিস রোগীর জন্য দারুন উপকারি। জন্ডিস রোগীর জন্য এই ফল বেশি বেশি খাওয়ানো যেতে পারে।
চা কফি খেতে পারেন: চা এবং কফিতে রয়েছে উচ্চমানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা
হজমে উন্নতি করে। এবং পরিপাকতন্ত্র দ্বিগুণ কাজ করে। আর সংক্রমণ রোগ থেকে দ্রুত
নিরাময় করে।
বাদাম জাতীয় খাবার খেতে পারেন: জন্ডিস রোগীর জন্য বাদাম অত্যন্ত উপকারী বস্তু। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং নানান পুষ্টিগুনে ভরপুর। যা জন্ডিস রোগীর জন্য দারুন উপকারী। তাই নিয়মিত এই খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।
জন্ডিস হলে কি খাওয়া যাবে না
- ধমপান করা যাবে না
- চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না
- ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলতে হবে
- মদ্যপান করা যাবে না
- মসলযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না
- আয়রন যুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না
- ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না
- চিনি যুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না
বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়
রক্তে বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ০.৫ থেকে ১.২ মিলিগ্রাম। এটি যদি কোন কারণে ১.৫ মিলিগ্রামের ওপরে উঠে যায় তাহলে ধরে নিতে হবে জন্ডিস হয়েছে।
জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে
হ্যাঁ জন্ডিস হলে সিদ্ধ ডিম খাওয়া যাবে। তবে ডিমের সাদা অংশকে বেশি প্রাধান্য
দিতে হবে। জন্ডিস রোগীর জন্য ডিমের সাদা অংশতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিনের
উৎস। জন্ডিস রোগীদের জন্য হালকা ফাইবার যুক্ত, প্রোটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন
ইত্যাদি পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। এতে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা
রয়েছে।
জন্ডিস হলে কি স্যালাইন খাওয়া যাবে
জন্ডিস হলে খাবার স্যালাইন খাওয়া যাবে। কেননা জন্ডিস হলে শরীরে পানি শূন্যতা
দেখা দেয়। তখন পানি শূন্যতা দূর না করতে পারলে কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা
রয়েছে। আর এই পানি শূন্যতা দূর করতে পারে একমাত্র খাবার স্যালাইন। তাই জন্ডিস
হলে খাবার স্যালাইন নিয়মিত সেবন করতে পারেন। তাহলে শরীরের পানি শূন্যতা দূর হয়ে
যাবে ইনশাআল্লাহ।
জন্ডিস হলে কি কলা খাওয়া যাবে
যাদের শরীরে জন্ডিসের উপসর্গ দেখা দিয়েছে তাদের কাঁচা/পাকা কলা খাওয়ার উচিত
নয়। কেননা কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও আয়রন। এই দুই উপকরণ হলো
জন্ডিসের শত্রু। তাই ফাইবার যুক্ত খাবার, এ সমস্ত রোগীদের এড়িয়ে চলাই ভালো। আর
যদি খেতেই হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, আজ আমরা জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব? সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আমরা আশাবাদী, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ। তাই অনুরোধ রইলো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url