মেথি চিপিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
পুরুষদের জন্য মেথির উপকারিতা সম্পর্কে এই ব্লগে কিছু আলোকপাত করা হবে। আগ্রহী ব্যক্তিরা এটি পাঠ করতে পারেন।
পুরুষদের জন্য মেথির অপকারিতা সম্পর্কেও এই ব্লগে আলোচনা করা হবে। তাই এই ব্লগটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
পোস্ট সূচিপত্র.
পুরুষদের জন্য মেথির উপকারিতা
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে: মেথি হজম শক্তি বৃদ্ধিতে দারুন কার্যকরী। কেননা
মেথিতে রয়েছে ফাইবার, যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। এবং আরো রয়েছে কারকুমিন ও বদহজম
দূরকারী উপাদান। এগুলো পেটের জন্য খুবই আরামদায়ক। তাই হজম শক্তি বৃদ্ধিতে খাদ্য
তালিকায় মেথি রাখা যেতে পারে।
কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে: মেথি মানব দেহের রক্তের কোলেস্টেরলের
মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ভালো ভূমিকা রাখে। মেথি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল ধ্বংস
করে ভাল কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে। যারা এ সমস্যায় ভুগছেন তারা মেথির
সঙ্গে চিয়া সিড যুক্ত করে নিয়মিত খেতে পারেন। এতে কোলেস্টেরল এর মাত্রা
নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
দুগ্ধ পানকারী মায়ের জন্য উপকারী: যে সমস্ত মায়ের স্তনে দুধ খুবই কম এবং
বাচ্চা দুধ পায় না। তারা নিয়মিত মেথি, খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
এটি দ্রুত স্তনে দুধ উৎপন্নকারী।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে: যাদের উচ্চ ডায়াবেটিস রয়েছে
তারা নিয়মিত মেথি সেবন করতে পারেন। মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা হজম
শক্তি বৃদ্ধি করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা শোষণ করে নেয়। ফলে ডায়াবেটিসের
মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ ভূমিকা রাখে।
যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়: যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে দারুণ কার্যকরী মেথি। মেথিতে
এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা পুরুষের যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে। এই উপাদান নিয়মিত
খেলে স্বপ্নদোষের মতো কঠিন রোগ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
ক্যান্সার প্রতিরোধকারী: মেথি ক্যান্সার প্রতিরোধকারী। মেথিতে রয়েছে
উচ্চমাত্রার এন্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য
করে। গবেষকদের মতে, অল্প মাত্রায় বা কোমল ক্যান্সার ভালো করে। মেথি শরীরের ফ্রি
রেডিক্যালের মাত্রা কমায় এবং মহিলাদের স্তন ক্যান্সার রক্ষা করতে ভালো ভূমিকা
রাখে।
স্মৃতিশক্তি বিকাশে: মেথি মস্তিষ্ক বা স্মৃতি শক্তি বিকাশে ভালো ভূমিকা রাখে। এবং ছোট শিশুদের জন্য এটি আরো বেশি কার্যকারী। এই উপাদান ছোট শিশুকে সেবন করালে বহুদিন পর্যন্ত যেকোনো জিনিস মনে রাখতে পারে। এজন্য মেথির ভূমিকা অপরিসীম।
ত্বকের যত্নে: মেথিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা ত্বকের জন্য খুবই
উপকারী। প্রথমে মেথি পেস্ট অথবা পাউডার করে নিয়ে নিয়মিত কয়েক দিন মুখে ব্যবহার
করলে ব্রণ, ব্রণ দাগ, মুখে নানান কারণে প্রদাহ দ্রুত নিরাময় করতে সাহায্য
করে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: নিয়মিত মেথি সেবন করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে
সাহায্য করে। কেননা এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে
সাহায্য করে।
হাড় মজবুত করে: মেথি নিয়মিত সেবন করলে হাড় মজবুত ও শক্তিশালী করে। মেথি নিয়মিত সেবন করলে হাড়ের গঠন শক্তিশালী, মজবুত এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ দ্রুত নিরাময় করে।
পুরুষের জন্য মেথির অপকারিতা
শিশুদের জন্য সতর্কতা: মেথির গন্ধ ছোট শিশুর পছন্দ নাও হতে পারে। এই
গন্ধের কারণে সে অজ্ঞান ও হয়ে যেতে পারে। তাই শিশুদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন
করা খুবই জরুরী।
শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি রোগীর জন্য প্রযোজ্য নয়: যারা এই দুই রোগে ভুগছেন
তারা মেথিকে এড়িয়ে চলাই ভালো। কেননা এটি গ্রহণ করার কারণে শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির
রোগ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো।
গর্ভবতীদের জন্য প্রযোজ্য নয়: গর্ভবতী মহিলারা অবশ্যই উপকারের আশায় মেথি
খাওয়া থেকে বিরত থাকাই উচিত। কেননা মেথি সেবন করলে অনেক সময় গর্ভপাত হয়ে
যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এটি গর্ভবতীদের জন্য এড়িয়ে চলাই ভালো।
পেটের সমস্যা থাকলে: পূর্বে থেকে পেটের সমস্যা থাকলে যেমন ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, অথবা অন্য কোন সমস্যা থাকলে মেথি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কেননা এটি রোগের প্রকোপ বাড়িয়ে তুলতে পারে।
এলার্জির সমস্যা হতে পারে: প্রতিদিন মেথি খাওয়ার কারণে শরীরে এলার্জির
উৎপাত দেখা দিতে পারে। তাই মেথি খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করাই জরুরী।
ঘাম ও প্রস্রাবের দুর্গন্ধ হতে পারে: নিয়মিত মেথি খেলে ঘাম ও প্রস্রাবের
দুর্গন্ধ হতে পারে। কেননা মেথির নিজস্ব একটি গন্ধ রয়েছে, যা অনেকের বিরক্তের
কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই লাভের আশায় অতিরক্ত সেবন করা যাবে না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: মেথিতে কোন প্রকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তবে এর
একটি নিজস্ব গন্ধ রয়েছে যার কারণে অনেকেই পছন্দ করেনা। তাই এটি খেতে পারলে
শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকার এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।
মেয়েদের জন্য মেথির উপকারিতা
- ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে
- স্তনের দুধ উৎপন্নতে
- পিরিয়ডের ব্যথা নিরাময়ে
- মেয়েদের ওজন কমাতে
- প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে
- গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে
- হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
- মাথার চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
- শরীরের প্রদাহ নিরাময় করে
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করণ ইত্যাদি।
গ্যাস্টিকের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম
১..সকাল বেলা খালি পেটে পানির সাথে মেথি ভিজিয়ে পান করতে পারেন। এক গ্লাস পানিতে
এক চা চামচ মেথি ঢেলে দিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর খালি পেটে
এই উপকরণটি পান করতে পারেন। পান করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
২..সারারাত এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ মেথি ভিজিয়ে রেখে একসাথে পান করতে পারেন।
তবে স্বাদ বাড়ানোর জন্য মধু অথবা বাতাসা মিক্সড করে সেবন করলে আরও দ্বিগুণ উপকার
পাওয়া যায়। গ্যাস্ট্রিকের জন্য এগুলো নিয়মিত পান করতে পারেন।
৩..যদি মেথি ভিজিয়ে খেতে কারো কোন সমস্যা হয়। তাহলে শীল পাটাতে বেটে ভাতের সাথে
খেতে পারেন। এতেও অনেক উপকার পাওয়া যায়।
ডায়াবেটিসে মেথি খাওয়ার নিয়ম
১। প্রথমে এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ মেথি বীজ দিয়ে দিতে হবে। তারপর এই উপকরণটি
সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে মেথি দানা ছেঁকে ফেলে দিতে হবে। এবং এক গ্লাস
পানি সব পান করতে হবে। এভাবে দুই তিন সপ্তাহ পান করলে আশা করা যায় ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণে আসবে ইনশাআল্লাহ।
২। স্বাদ বাড়ানোর জন্য মেথি ভেজানো এক গ্লাস পানির সাথে মধু মিক্সড করে পান করতে
পারেন। এতেও অনেক উপকার মিলবে। মধুতে কোন প্রকার সুগার থাকে না তাই ডায়াবেটিস
রোগীর জন্য এটি অনেক নিরাপদ।
চুল লম্বা করতে মেথির ব্যবহার
১/ খাঁটি নারিকেলের তেল এবং মেথি বীজের গুড়া। এই দুই উপকরণ ভালোভাবে মিক্স করে
হালকা গরম করে নিতে হবে। তারপর চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত ভালো করে
নিয়মিত কয়েকদিন ব্যবহার করলে চুল ঘন কালো এবং লম্বা হবে।
২/ অলিভ অয়েল জেল এবং মেথির গুড়া। এই দুই উপকরণ ভালোভাবে মিক্স করে চুলের গোড়া
থেকে আগা পর্যন্ত ভালোভাবে কয়েকদিন ব্যবহার করলে চুল লম্বা কালো এবং ঘন হবে।
৩/ মেথি বীজ ভালো করে ব্লেন্ডার মেশিনে গুড়া করে নিন। এবং এই গুড়া ভালোভাবে
চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে নিন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে আশা করা
যায় চুল লম্বা হবে।
চুলের যত্নে মেথি ও কালোজিরা
- খুশকি মুক্ত করে
- চুল পড়া বন্ধ করে
- চুল লম্বা ও ঘন করে
- মাথার চুল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে
- চুল পাকা দূর করে
- চুলের খসখসে ভাব দূর করে
- আরো নানান পুষ্টিগুণে ভরপুর
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, আজ আমরা পুরুষদের জন্য মেথির উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
করার চেষ্টা করেছি। এটি পাঠ করলে অনেক উপকৃত হবেন। আর ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে
শেয়ার করতে ভুলবেন না ধন্যবাদ।
ফিউচার লাইফ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url